ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি এবং ভুয়া নাম-ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বাংলাদেশের মূলস্রোতে মিশে যেতে চাইছেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা৷
বিজ্ঞাপন
ভুয়া জাতীয়পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে এক রোহিঙ্গা নারী চট্টগ্রাম থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন প্রায় অর্ধশত এনআইডি বিতরণ স্থগিত করে৷ তারপর থেকে জালিয়াতি আটকাতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে৷
সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন কারিগরি, প্রশাসনিক ও সমন্বয় নামে তিনটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানায় ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
রোহিঙ্গাদের বন্ধে ওই তিন কমিটি সমন্বিতভাবে কাজ করবে৷
কোন দেশে কত রোহিঙ্গা
১৯৪৮ সালে স্বাধীন বার্মা রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে নিজভূমে অধিকার পাননি রোহিঙ্গা মুসলমানরা৷ সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ১৯৭০ থেকে দেশ ছাড়তে শুরু করেন তারা, এ পর্যন্ত ১৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Yasin
বাংলাদেশ
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে পৌঁছে যায় সাত লাখে৷ আর আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা৷
ছবি: Reuters
পাকিস্তান
দুই লাখের মত রোহিঙ্গা বর্তমানে পাকিস্তানে বসবাস করছেন৷ ১৯৪২ সালে বর্মায় সামরিক অভিযানের পর তারা পাকিস্তানে যেতে শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Yasin
থাইল্যান্ড
মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথ হিসেবে রোহিঙ্গারা থ্যাইল্যান্ডকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করত৷ এই দেশটিতে এখন এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Pruksarak
মালয়েশিয়া
ইউএনএইচসিআর এর হিসেব অনুযায়ী ৫৯ হাজার রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ায় রয়েছেন৷ দেশটি জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী না হওয়ার রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের স্বীকৃতি দেয়নি৷ এখন তারা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/C. Archambault
ভারত
মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতে গিয়ে বসবাস করছে৷ সীমান্তপথে ভারতে অনুপ্রবেশ করে পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও আসামে বসবাস করছেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
যুক্তরাষ্ট্র
এশিয়ার দেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ হাজারের মত রোহিঙ্গা বসবাস করছে৷ মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার এই জনগোষ্ঠীকে ২০০২ সাল থেকে সেখানে থাকতে দেওয়া হচ্ছে, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিকাগোতে বসবাস করে৷
ছবি: DW/A. Islam
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় ১১ হাজার ৯৪১ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী রয়েছে৷ মালয়েশিয়ার মতো ইন্দোনেশিয়াও জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী না হওয়ায় তারা প্রথমে রোহিঙ্গাদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়৷ পরে এদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নেপাল
নেপালে এখন ২০০ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছেন৷ বাংলাদেশে ও ভারত হয়ে এরা নেপালে চলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/abaca/O. Elif Kizil
8 ছবি1 | 8
ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মো. আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত আট সদস্যের কারিগরি কমিটি ভোটার তালিকা ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কারিগরি দিকগুলো যাচাই করে দেখবে৷ প্রয়োজনে সরেজমিন তদন্ত করে মতামত দেবে৷
জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ইসি বা প্রশাসনের কারা সম্পৃক্ত তা তদন্ত করে দেখবে যুগ্মসচিব কামরুল হাসানকে প্রধান করে গঠিত সাত সদস্যের প্রশাসনিক তদন্ত দল৷
এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্তি নিয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সমন্বয় কমিটি’৷
গত আগস্ট মাসে এক রোহিঙ্গা নারী ভুয়া এনআইডি নিয়ে চট্টগ্রামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে ধরা পড়েন৷
এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত এক রোহিঙ্গা ডাকাতের কাছ থেকেও জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) উদ্ধার করা হয়৷
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তুমুল হট্টগোল শুরু হলে জালিয়াত চক্রের খোঁজে নামে নির্বাচন কমিশন৷ রোহিঙ্গা সন্দেহে আটকে দেওয়া হয় অর্ধশত এনআইডির বিতরণ৷
তদন্তে এনআইডি জালিয়াতিতে জড়িত অভিযোগে চট্টগ্রাম নির্বাচন কার্যালয়ের এক অফিস সহায়ককে দুই সহযোগীসহ আটক করা হয়৷ তাদের কাছ থেকে ইসির চুরি যাওয়া একটি পুরনো ল্যাপটপ জব্দ করে পুলিশ৷
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এনআইডির একটি প্রকল্পে ঢাকায় কর্মরত আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কক্সবাজার জেলায় প্রায় চারশ’ রোহিঙ্গার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল৷
কক্সবাজারের তৎকালীন এমপি আবদুর রহমান বদি ওই জালিয়াতিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলেও খবর প্রকাশ পেয়েছিল৷
এসএনএল/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গত মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
সৌদি আরব যেতে চান বেশিরভাগ রোহিঙ্গা
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ১২৭৭ জনের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে৷ জরিপটি চলেছে চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলব্যাপী তিন সপ্তাহ৷ এক্সচেঞ্জ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনা করেছে৷
ছবি: Jibon Ahmed
বাসস্থান
জরিপে অংশ নেয়া রোহিঙ্গাদের ১০ জনের ৪ জন ক্যাম্পে তাদের থাকার জায়গা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ দশ জনের ৬ জন অসন্তোষ বা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তবে ৯৩ ভাগই মনে করেন, ক্যাম্পের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর৷ ৯৭ ভাগই স্বাস্থ্যসেবার পর্যাপ্ত সুবিধা আছে বলে জানিয়েছেন৷ কিন্তু ৪৭ ভাগই ক্যাম্পে বাড়ির মতো অনুভব করেন না৷
ছবি: Jibon Ahmed
শিক্ষার সুযোগ
৯৯ ভাগ রোহিঙ্গাই মনে করেন ১২ বছরের নীচের শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ রয়েছে৷ কিন্তু কিশোর বা বয়স্কদের উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷ মসজিদ, মাদ্রাসার মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন ৯৯ ভাগ৷ ৯৯ দশমিক ৮ ভাগ জানিয়েছেন, তাঁরা স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের সুযোগ পাচ্ছেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
যৌননিপীড়ন
চার জনের একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে যৌননিপীড়নের ঘটনা ঘটে৷ এর মধ্যে ৭৯ দশমিক ৮ ভাগ বলেছেন, তাঁরা রাস্তাঘাটে এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হন৷ ১৯ দশমিক সাত ভাগ জানিয়েছেন, সেখানকার হাট-বাজারগুলোতে বেশি যৌননিপীড়নের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Jibon Ahmed
ভাষানচরে না
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯৮ দশমিক ৭ ভাগই ভাষানচরে স্থানান্তরের সরকারি পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত৷ কিন্তু মাত্র ১ দশমিক ৬ ভাগ সেখানে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখছেন৷ ৯৮ দশমিক ৪ ভাগ সেখানকার পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং নিজেদের বাসভূমি মিয়ানমার থেকে দূরে যেতে হবে বলে কক্সবাজার ছাড়তে রাজি নন৷
মিয়ানমার নিয়ে আশা
আগামী দুই বছরের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ৬৯ ভাগই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ ৯৩ ভাগ আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাই এখনো সেখানে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন৷ তবে ৭৩ ভাগই মনে করেন সেটি অন্তত দুই বছরের মধ্যে সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
অন্য দেশে
মিয়ানমার ছাড়া অন্য বিকল্প কোন দেশে যাওয়ার সুযোগ হলে কোথায় যাবেন, এমন প্রশ্ন ছিল তাঁদের কাছে৷ সেখানে প্রতি তিনজনে একজন বা ৩৩ ভাগই বলেছেন তাঁদের প্রথম পছন্দ সৌদি আরব৷ ক্যানাডা আর যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক ২১ ভাগ৷ অস্ট্রেলিয়া যেতে চান ১৬ ভাগ৷ ১২ ভাগ বাংলাদেশ আর মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো বিকল্পের কথা বিবেচনায় নিতেই আগ্রহী নন৷