রোহিঙ্গাদের জোর করে ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে: অ্যামনেস্টি
২১ নভেম্বর ২০২০
রোহিঙ্গাদের জোর করে ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
বিজ্ঞাপন
চরটি বসবাসের জন্য এখনো নিরাপদ নয় এবং রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে চায় না বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি৷
অ্যামনেস্টি বলছে, বাংলাদেশ সরকার চলতি মাসে তিনশ' থেকে চারশ' রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে বসাবসের জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি শেষ করেছে৷ পরিকল্পনা অনুসারে, ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়টি নিজেদের ইচ্ছাধীন হওয়ার কথা, অর্থাৎ যেসব রোহিঙ্গা নিজেদের ইচ্ছায় চরটিতে যেতে চাইবে তাদেরকেই পাঠানো হবে৷
কিন্তু ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা জোর করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে নিবন্ধন করিয়েছে বলে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে সংগঠনটি৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া প্রধান বলেন ওমার ওয়ারাইখ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘চরটি বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়৷ তাছাড়া স্থানান্তর প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ৷ আমরা যেসব রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছি তাদের অনেকেই সেখানে যেতে স্বেচ্ছায় সম্মতি দেয়নি৷’’
স্থানান্তর করা হবে এমন একজন রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধৃত করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, অনেকেই বাধ্য হয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন৷ সেই নারী দাবি করেছেন যে তিনি সেখানে যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে নিবন্ধন করেছেন কেননা তার স্বামী সেখানে রয়েছে৷ অ্যামনেস্টিকে তিনি বলেন, ‘‘সেখানে থাকা খুব কষ্টের৷ আমার মনে হচ্ছে সরকার আমার স্বামীকে চর থেকে ফিরতে দেবে না৷ তাই আর কোন উপায় নেই আমার৷''
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা' আনার পাশাপাশি নতুন কাউকে সেখানে না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ পাশাপাশি ইতিমধ্যে চরটিতে স্থানান্তর করা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি৷
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালে দেশটির রাখাইন অঞ্চল থেকে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷
আরআর/এআই (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল)
কেমন আছে রোহিঙ্গারা?
মিয়ানমারে সেনা সদস্যদের নির্বিচার হত্যা-নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো৷ কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে কেমন চলছে অসহায় এসব মানুষের জীবন, সে চিত্রই তুলে আনার চেষ্টায় এই ছবিঘর৷
ছবি: Jibon Ahmed
এক ঘরে ১০ জনের বসবাস
আট সন্তান নিয়ে এক ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন জোহার ও উম্মে কুলসুমা দম্পতি৷ তাঁদের দুই মেয়ে বড় হয়েছে৷ আর সবার ছোটটার বয়স দুই বছর৷ রাখাইনে কৃষি কাজ করতেন জোহার৷ এখন কাজ নেই, সাহায্যে চলছে তাঁদের জীবন৷
ছবি: Jibon Ahmed
এক টিউবওয়েলে চলে ৯৯ পরিবার
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ পানি সরবরাহে ক্যাম্পে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ৷ একটি নলকূপের পানি নিয়ে চলছে তিন ব্লকের ৯৯টি পরিবার৷
ছবি: Jibon Ahmed
৩৩ পরিবারের জন্য চার টয়লেট
বাঁশ আর প্লাস্টিক দিয়ে পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে টয়লেট৷ এক জায়গায় পাশাপাশি চারটি টয়লেট দিয়ে কাজ চালাতে হয় ৩৩টি পরিবারের সদস্যদের৷ আর দুটো গোসলখানা ব্যবহার করে ২০ থেকে ৩৫টি পরিবার৷
ছবি: Jibon Ahmed
নিউমোনিয়া
রোহিঙ্গা শিবিরের শিশুদের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার এখনো বেশ৷ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আট মাসের জাইনুকা বিবিকে বালুখালীতে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের চিকিৎসকদের কাছে এনেছেন মা খালেদা বানু৷
ছবি: Jibon Ahmed
ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম
ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে বেশ কয়েকটি সংস্থা ও সংগঠন৷ এ রকম একটি টিমের চিকিৎসক সোহেল জানান, প্রতি দিন ৪০-৫০ জন রোগী দেখেন৷ তাঁদের অধিকাংশ পানিবাহিত, ঠান্ডা ও ইনফেকশনের সমস্যা নিয়ে আসেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
ঈদে জন্ম ‘কোরবান আলীর’
শরণার্থী শিবিরে ২১ সেপ্টেম্বর জন্ম হয়েছে এজাহার হোসেন ও রেনুর একমাত্র ছেলে সন্তানের৷ কোরবানির ঈদের দিন জন্ম হওয়ায় তার নাম রাখা হয়েছে কোরবান আলী৷ এনজিও পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া এই শিশু ও তার মা সুস্থ আছে বলে জানান এজাহার হোসেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
অপরিকল্পিত বসতি
স্বল্প সময়ের মধ্যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আসায় তাঁদের আশ্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে তোলা হয় ঘর৷ বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো৷
ছবি: Jibon Ahmed
ঝুঁকিপূর্ণ ঘর
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার এই বসতিতে আছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা৷ পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে তাঁদের ঘর৷ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব ঘর থেকে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া পরিকল্পনা করেছে সরকার৷ এরইমধ্যে কিছু পরিবারকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে৷