বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বলে জানিয়েছে গবেষণা সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট, এএসপিআই৷
বিজ্ঞাপন
স্যাটেলাইট দিয়ে তোলা রাখাইন অঞ্চলের ছবি বিশ্লেষণ করে এমন মন্তব্য করেছে তারা৷
প্রতিষ্ঠানটির একজন গবেষক নাথান রাসার রয়টার্সকে জানান, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া ২০১৮ ও ২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখনও ঐ অঞ্চলে ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটছে - যা রোহিঙ্গাদের নিরাপদে পুনর্বাসিত করতে মিয়ানমার সরকারের আগ্রহের বিষয়টিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে৷
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রাখাইন প্রশাসনিক বিভাগের উপ-পরিচালক কিয়া সয়ার তুন৷ ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ সে সময় সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বহু রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ তদন্ত শেষে এ হামলাকে ‘জাতিগত নিধন' বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ৷
ঘটনার এক বছর পর বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছিল মিয়ানমার সরকার৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি৷ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করেছে মিয়ানমার৷
নাগরিকত্ব এবং রাষ্ট্রহীন মানুষের ঠিকানা
বিশ্বে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ দেশহীন৷ বঞ্চিত মৌলিক অধিকার থেকে৷ টিকে আছে কোনোরকম৷ চলুন দেখি, কোথায় আছে ঠিকানহীন মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
বাংলাদেশ/মিয়ানমার
১৯৮২ সালে বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাশ হয়৷ আর তাতেই নাগরিকত্ব হারায় মুসলিম প্রধান রোহিঙ্গারা৷ জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন৷ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় মানবিক বাংলাদেশ৷ জনসংখ্যার চাপে থাকা ছোট্ট দেশটিতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
আইভরি কোস্ট
ছয় লাখ ৯২ হাজার ঠিকানা বিহীন মানুষকে ঠাঁই দিয়েছে আইভরি কোস্ট৷ বুরকিনা ফাসো, মালি, ঘানা থেকে এই লোকগুলো এসছে আইভরি কোস্টে৷ দেশটির কফি এবং তুলা চাষের সঙ্গে জড়িয়ে কোনোরকম দিন যাপন করছে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষ৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিদেশি নাগরিক৷ যারা এখন বাস্তুচ্যুত৷
ছবি: Benoit Matsha-Carpentier/AFP/Getty Image
থাইল্যান্ড
চার লাখ ৭৯ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষের বসতি থাইল্যান্ডে৷ পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী ইয়াও, হ্যামং এবং কারেন সম্প্রদায়ের মানুষ এরা৷ মিয়ানমার এবং লাওস সীমান্তবর্তী পর্বত এলাকায় তাদের অস্থায়ী আবাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
ইস্তোনিয়া/লাটভিয়া
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বাল্টিক রাষ্ট্র গঠন হলে, কপাল পোড়ে অন্তত দুই লাখেরও বেশি মানুষের৷ কারণ তাদের আর কোনো ঠিকানা নেই, কোনো বসতি নেই৷ তাদের দুই লাখ ২৫ হাজার আছেন লাটভিয়াতে আর ৭৮ হাজার আছেন ইস্তোনিয়ায়৷
ছবি: Reuters/I. Kalnins
সিরিয়া
১৯৬২ সালের কথা৷ আরবকরণের প্রক্রিয়ায় বলি হয়ে, নাগরিকত্ব হারান কুর্দরা৷ গৃহযুদ্ধের আগে অন্তত তিন লাখ কুর্দ হয়ে পড়ে দেশহীন৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, এখনও সিরিয়ায় নাগরিকসুবিধা বঞ্চিত হয়ে বাস করছে ১ লাখ ৬০ হাজার কুর্দ৷ অনেকে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/M. Abu Ghosh
কুয়েত
১৯৬১ সালে স্বাধীনতা এলেও নাগরিক স্বীকৃতি জোটেনি যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত বেদুঈনদের৷ জাতিসংঘের তথ্য মতে, ৯২ হাজার বেদুঈন আছে কুয়েতে৷ যারা বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চাকরির মতো নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত৷
ছবি: AP
ডমিনিকান রিপাবলিক
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে, ২০১৩ সালে জাতীয়তা বিষয়ক আইনে পরিবর্তন আনার পর, আদালত থেকে রুল জারি করা হয়৷ আর তাতেই অনেকেই হয়ে যান দেশহীন৷ এমনকি, হাইতি থেকে আসা অনেক মানুষ ডমিনিকে জন্ম নিলেও মেলেনি নাগরিকত্ব৷ জাতিসংঘের ২০১৫ সালের হিসেব বলছে, এখানে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইরাক
নাগরিক সুযোগ বঞ্চিত সাড়ে ৪৭ হাজার মানুষের আবাস ইরাক৷ এদের মধ্যে আছেন, ঐতিহাসিকভাবে ইরাক-ইরান সীমান্তে বসবাসকারী কুর্দ, ফিলিস্তিনের শরণার্থী আর বেদুঈনরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইউরোপ
ভারতীয় বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রোমা৷ এই সম্প্রদায়ের হাজার দশেক মানুষের বাস, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে৷ তারাও আছেন নাগরিকত্ব সংকটে৷ চেকোশ্লাভাকিয়া ও যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে গেলে, তাদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় নতুন রাষ্ট্র৷ কসভো আর বসনিয়ায় ঠাঁই নেয়া রোমারাও যুদ্ধের কারণে পরিচয় সংকটে পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কলম্বিয়া
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে অনেক মানুষ পাড়ি জমান কলম্বিয়ায়৷ যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে অন্তত ২৫ হাজার শিশু৷ তারাও আছে পরিচয় সংকটে৷ কারণ, কলম্বিয়া নাগরিকত্ব পেতে বাবা-মায়ের মধ্যে একজনের সে দেশের নাগরিকত্ব থাকতে হয়৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
10 ছবি1 | 10
এএসপিআই বলছে, রাখাইন অঞ্চল পুনর্গঠনের কোনো চিহ্ন তাদের চোখে পড়েনি৷ ২০১৭ সালের পর থেকে এ অঞ্চলে নিরাপত্তারক্ষীদের উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে বলে সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ এমনকি রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে সেনাবাহিনীর ছয়টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে ধারণা করছে এএসপিআই৷
২০১৮ সালে রয়টার্সের এক তদন্তে দেখা গেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন অঞ্চলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য বসতঘর নির্মাণ করছে৷ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের নেওয়া পরিকল্পনায় দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ গ্রামে নয় বরং আলাদা এলাকায় প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷