1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা নিয়ে উভয় সংকটে বাংলাদেশ

৭ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাঁদের মিয়ানমারে পাঠানোর বিরোধিতা করেছে জাতিসংঘ৷ অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ(আইসিজি) রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে নিরাপত্তা সংকটের আশঙ্কা করছে৷ তাহলে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে?

রোহিঙ্গা শরণার্থী
ছবি: picture-alliance/abaca

জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো যাবে না৷ যখন তাঁরা নিরাপদ বোধ করবেন, কেউ যখন তাঁদের জোর করে কোথাও যেতে বাধ্য করবে না, কেবল তখনই তাঁরা নিজের দেশে ফিরে যাবেন৷ জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নিউইয়র্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন৷

এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রাদ আল হোসাইন জেনেভায় বিশেষ মানবাধিকার অধিবেশনে বলেছেন, কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করে পূর্ণ প্রস্ততি ছাড়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না৷ কাউকেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠানো যাবে না৷ যদি সেখানে তাঁদের নিরাপত্তা, সম্মান, অধিকার নিশ্চিত না হয় এবং মুক্ত বোধ না করেন, তাহলে তাঁদের ফেরত পাঠানো যায় না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, তাদের দু:খ কষ্ট নিয়ে আরো উচ্চকিত হতে বলব৷ তাঁরা মিয়ানমারে যে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, একই সঙ্গে বাংলাদেশে যে করুণ অবস্থায় আছে, দুটোই তুলে ধরতে হবে৷''

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বড় ধরনের নিরাপত্তার সংকট তৈরি করতে পারে৷'' তারা বলছে, ‘‘জঙ্গি দলে ভেড়ানোর জন্য উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের টার্গেট করা হচ্ছে৷'' তারা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্যে আরসা'র রিক্রুটমেন্টের কথাও বলেছে৷ বাংলাদেশকে ব্যবহার করে আরসা আন্তঃসীমান্ত হামলার দিকেও যেতে পারে৷
 

আইসিজি মনে করে, রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতন মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে৷ মিয়ানমারে আল কায়েদা , আইএস, জিহাদী গ্রুপগুলোকে হামলার আহ্বান জানাচ্ছে তারা৷

Abdur Rashid - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

বংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কোনোভাবেই জোর করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে না৷ আমার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একদিন  আগেও কথা হয়েছে৷ বাংলাদেশ কোফি আনান কমিশনের আলোকেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায়৷ আর তাই এখানে শর্ত তিনটি৷ এটি নিরাপদ হতে হবে, স্থায়ী হতে হবে এবং দ্রুত হতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া বাড়িঘর নির্মান করে দিতে হবে, তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তাদের জন্য সেফ জোন তৈরি করতে হবে৷ বাংলাদেশ এই নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায়৷''

তিনি রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যদি এরকম হয় তা শুধু বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমার, চীন, ভারত সবার জন্যই হবে৷  তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে তাদের জীবন মান এবং বর্তমান অবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করা৷ তারা যাতে নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত গিয়ে অধিকার নিয়ে থাকতে পারে, তার ব্যবস্থা করা৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে এটা নিয়ে এক ধরনের প্রচারণা আছে৷ এখানে জঙ্গি তৎপরতা বাড়বে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা অনেকটা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে৷ বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা এসেছেন তাঁরা নিরীহ এবং সাধারণ৷ অল্পকিছু বিদ্রোহী বা আরসা থাকলেও থাকতে পারে৷ তবে তারা এখানে সক্রিয় হতে পারবে বলে মনে হয় না৷ বাংলাদেশের নজরদারী অত্যন্ত জোরালো৷''

S M Iqbal Hossain - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

এদিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এস এম ইকবাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়নি৷ আশা করি ভবিষ্যতেও হবে না৷ আর আমরা নানা ধরনের পদক্ষেপ ও নজরদারীর ব্যবস্থা নিয়েছি৷''

স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক মাসে টেকনাফ ও উখিয়া থানা পুলিশ রোহিঙ্গাদের সংঘটিত অন্তত ৩০টির মতো অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করেছে৷ আর হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাথে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন থেকেপালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য