বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত বলে জানান কোফি আনান৷ জাতিসংঘের এই সাবেক মহাসচিব মনে করেন, অন্যথায় বর্তমান সংকটের অবসান ঘটবে না৷
বিজ্ঞাপন
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সম্প্রতি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আনানের কমিশন৷ শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে৷
‘‘প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে সহায়তা দরকার৷ তাঁদের মিয়ানামারে ফিরে কোনো ক্যাম্পে অবস্থান করা উচিত হবে না", বলেন কোফি আনান৷
রোহিঙ্গা শিবিরে কলেরার টিকাদান অভিযান
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে শুরু হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলেরা নিরোধক টিকাদান অভিযান৷ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে পরিচালনা করছে এই কর্মসূচি৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
টিকাদান কর্মসূচি
মিয়ানমার থেকে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী দীর্ঘ সারিতে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে কলেরা ভ্যাকসিনের জন্য৷ সম্প্রতি আসা শরণার্থীদের মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত৷ ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগ মূলত পানীয় জল বা খাদ্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
সেবায় নিয়োজিত দুশ’ ভ্রাম্যমান দল
বাংলাদেশে আসা প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গাকে কলেরার টিকা দেয়ার দায়িত্বে রয়েছে দু’শ’ ভ্রাম্যমান দল৷ ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র এক প্রতিবেদনে তা জানানো হয়৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
শিশুদের জন্য...
ডাব্লিউএইচও এবং বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য, প্রথম ধাপে উখিয়া ও টোকনাফ শরণার্থী শিবিরের ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া৷ অক্টোবরের শেষে শুরু হবে টিকা দানের দ্বিতীয় পর্ব৷ পাঁচ বছরের কম বয়সি আড়াই লাখ শিশুকে কলেরা থেকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়া হবে তখন৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
কলেরা একটি বিপজ্জনক রোগ
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রধান এডুয়ার্ড বাইগবেডার বলেন, ‘‘কলেরা একটি বিপজ্জনক রোগ, বিশেষ করে যারা ঘনবসতিপূর্ণ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন করে, তাদের জন্য এটি আরো বেশি বিপজ্জনক৷’’
ছবি: Imago/Zumapress/M. alam
শুধু রোহিঙ্গা নয়
উখিয়া এবং টেকনাফে ৪০টি অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কলেরার ভ্যাকসিন খাওয়ানোর কার্যক্রম চলবে একযোগে৷ স্থানীয়দের মধ্যেও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এই টিকা কার্যক্রম শুরু করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Huwais
অন্য কোনো সংক্রামক রোগ
রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্য কোনো সংক্রামক রোগ রয়েছে কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য একটি বিশেষ মেডিকেল টিম কাজ করছে ক্যাম্পগুলোতে৷ ইতিমধ্যে টেকনাফে কয়েকজন হামে আক্রান্ত রোহিঙ্গা শিশু ও হেপাটাইটিস-বি ও সি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
6 ছবি1 | 6
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন
গত কয়েক সপ্তাহে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷ জাতিসংঘ মনে করে, সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ‘সিস্টেমেটিক' হামলা থেকে বাঁচতে দেশত্যাগে বাধ্য হন এ সব মানুষ৷
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, গত ২৫ আগস্ট ৩০টি পুলিশ চৌকিতে হামলার ঘটনার পর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী৷ জাতিসংঘের দাবি করা ‘জাতিগত নির্মূলের' ঘটনা রাখাইনে ঘটছে না বলেও দাবি করেছে মিয়ানমার৷
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সম্মত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কোফি আনান৷ এ জন্য মিয়ানমারে তাঁদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি জোর দিয়ে আনান সবাইকে সতর্ক করে বলেন যে, অন্যথায় বিশ্ব সম্প্রদায় এক দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যে পড়বে৷
অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী শুক্রবার জানিয়েছে যে, গত আগস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর পরিচালিত অভিযানে কোনো আইনবহির্ভূত ঘটনা ঘটেছে কিনা - তা খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে৷ তবে সেই অভিযান বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সংবিধান মেনেই পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী৷ ওদিকে দেশটির বেসামরিক নেতা অং সান সু চি বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সহায়তা কার্যক্রম দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷
নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় কোফি আনানের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন ফ্রান্সের প্রতিনিধি৷ তবে জাতিসংঘ মিশনে থাকা চীন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি৷
রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি
ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া, পেছনের টান আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা- এই সব নিয়ে একরাশ হতাশা আর বেদনা স্পষ্ট প্রতিটি রোহিঙ্গার চোখেমুখে৷ সম্প্রতি রয়টার্সের ক্যামেরায় ধরা পড়া এমন কিছু অবয়ব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/D. Sagoli
অশ্রু
মাত্র একদিন আগেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন ৩০ বছর বয়সি আমিনা খাতুন৷ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর প্রথম রাত কেটেছে কক্সবাজারের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের পাশের সড়কে৷ সাথে ছিল তারই মতো নতুন আসা আরও হাজার হাজার মানুষ৷ সামনের দিনগুলোর কথা ভেবেই হয়তো এই অশ্রুসজল চোখ!
ছবি: Reuters/D. Sagoli
শিশুদের চাহনি
ছবি তোলা হচ্ছে দেখলেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা দৌড়ে আসে- এই দৃশ্য খুবই পরিচিত৷ কিন্তু শিশুদের চোখেও এত অবিশ্বাস আর হতাশা বোধহয় পরিচিত নয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
জীবন যুদ্ধ
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৭০ এর বেশি বয়সি এই নারী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কিছুক্ষণ আগেই৷ জীবনের এই শেষ দিনগুলোতেও জীবন বাঁচাতে এমন যুদ্ধ করতে হবে কখনও হয়ত ভাবেননি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
অসহায়ত্ব
এই শরণার্থী শিশুর অপেক্ষা একটু ওষুধের জন্য৷ সারা মুখে নানা ক্ষত আর তার ওপর মাছির আনাগোনাতেই বোঝা যাচ্ছে, একটু ওষুধ কতখানি দরকার তার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
নিরুপায়
বৃষ্টি মাথায় ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা৷ আর তো কোন উপায় নেই!
ছবি: Reuters/C. McNaughton
আশ্রয়ের অপেক্ষা
মাত্রই বাংলাদেশে এসেছেন৷ শুরুতে জায়গা হয়েছে এক স্কুল ঘরে৷কিন্তু সেখানে তো আর থাকা যাবে না৷থাকতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রে৷নতুন সেই ঠিকানার অপেক্ষাতেই এখন তারা৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
ত্রাণের আশা
কক্সবাজারের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে আর সবার মতোই একটু ত্রাণের আশায় কোলের সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষায় এই নারী৷
ছবি: REUTERS
চৌদ্দ দিন পর
সালেহা বেগম নামের এই মা এতটুকুন শিশুকে নিয়ে ১৪ দিন ধরে জঙ্গল পথে হেঁটেছেন৷ তারপর পেরেছেন সীমান্ত পাড়ি দিতে৷ এখন অপেক্ষা একটু আশ্রয়ের৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
বিশ্রাম
টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত নৌকায় গাদাগাদি করে এসে কোনমতে পৌঁছেছে সবাই৷ নতুন আশ্রয়ে যাবার আগে তাই একটু বিশ্রাম৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
দায়িত্বের ভার
টেকনাফে পৌঁছেই ছুটতে হচ্ছে ত্রাণের আশায়৷ নিজেই এক শিশু, তার ওপর কোলে, পাশে আরও ভাই-বোন থাকায় দায়িত্ব যেন বেড়ে গেছে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
প্রতিক্রিয়া
এত মানুষের টানাহ্যাঁচড়ার মধ্যেই দাঁড়াতে হয় ত্রাণের লাইনে৷ ধাক্কাধাক্কি সহ্য করে আর কতক্ষণ৷ তাল সামলাতে না পেরে তাই চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
অনিশ্চয়তা
আদরের ধন নাতিকে কোলে নিয়ে এই নারী বসে আছেন ত্রাণের আশায়৷ কিন্তু একটু ত্রাণই তো সব নয়৷ নাতির ভবিষ্যত কী, সেই ভাবনাতেই খানিকটা উদাস হয়ে পড়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
12 ছবি1 | 12
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গারা গত কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইনে বসবাস করলেও সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাঁদের মিয়ানমারের নাগরিক মনে করে না৷ সেদেশের সরকারও মনে করে যে, রোহিঙ্গারা আসলে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে যাওয়া অভিবাসী৷ দেশটিতে ১৯৮২ সালে করা নাগরিকত্ব আইনের আওতায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়৷ ফলে রোহিঙ্গারা এক রাষ্ট্রহীন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়৷