রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল মিয়ানমার
১১ নভেম্বর ২০১৪
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ জানিয়েছিল সরকার৷ সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট৷ ফেসবুকে এ খবর জানিয়েছেন, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক মুখপাত্র৷
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র ইয়ে হটুট ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন বলেছেন, মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী ফিরিয়ে নেয়া শুরু করতে প্রস্তুত, তবে এ প্রক্রিয়া আমাদের চারটি নিয়মের আওতায় হতে হবে৷'' চারটি নিয়মের মধ্যে প্রধান হলো, বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটি৷ মিয়ানমার সরকার বলছে, যে শরণার্থীদের বাবা-মা দুজনই সে দেশের নাগরিক ছিলেন, তাঁদেরই শুধু ফিরিয়ে নেয়া হবে৷
জাতিসংঘের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, চট্টগ্রামের কক্সবাজারের দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজার মিলিয়ে বাংলাদেশে মোট ২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে৷ ১৯৮২ সালে প্রণয়ন করা নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী তাদের অধিকাংশের নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার সরকার৷ পিতা-মাতা দুজনই নাগরিক ছিলেন এমন শরণার্থীদেরই শুধু ফিরিয়ে নিতে রাজি মিয়ানমার৷
বাংলাদেশে শরণার্থী, বাংলাদেশের শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তেমনি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ নবম
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস-২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির তুলনায় ধারণক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশ৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
কতজন শরণার্থী?
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজারের মতো মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) শরণার্থী বসবাস করছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন৷ শিবিরের বাইরে আছে আরও দুই থেকে পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত ব্যক্তি৷
ছবি: AP
আশ্রয়প্রার্থী
হ্যাঁ৷ বাংলাদেশেও কেউ কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ ইউএনএইচসিআর ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ পাতায় এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন বলে জানানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা এমন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
বাংলাদেশের শরণার্থী
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে রওনা দেন৷ কেউ গন্তব্যে পৌঁছে গ্রেপ্তার হয়ে ফিরে আসেন৷ কেউ বা শরণার্থী পরিচয় পান৷ বাংলাদেশের এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৯,৮৩৯ জন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী
উন্নত বিশ্বে কোনোভাবে ঢুকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চল অনেকদিন ধরেই চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২,১২৮ জন৷ সংখ্যাটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters
স্বপ্নের শুরু টেকনাফে
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশি৷ এ জন্য তাঁরা দালালদের অনেক অর্থও দিয়ে থাকেন৷ তাঁদের এই যাত্রা শুরু হয় টেকনাফ থেকে৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায়
টেকনাফ থেকে প্রথমে ছোট নৌকায় যাত্রা শুরু হয়৷ তারপর একসময় মাছ ধরার বড় নৌকা বা কার্গোতে যাত্রীদের তুলে দেয়া হয়৷ সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Asiapics
খাবার, পানির অভাব
ইউএনএইচসিআর-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, যাঁরা সাগর পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদের অনেকে খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এছাড়া দালালরা অনেক সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
গত রবিবার বেইজিংয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনমিক ফোরাম, অর্থাৎ অ্যাপেক সম্মেলন শুরুর আগে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের আলোচনা হয়৷ দুই রাষ্ট্রপ্রধানের এ আলোচনা সম্পর্কে ফেসবুকে ইয়ে হটুট লিখেছেন, ‘‘থেইন সেইন বলেছেন, তাদেরকে (রোহিঙ্গা শরণার্থী) খুব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে নেয়া অসম্ভব৷''
২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার৷ বাংলাদেশ সরকার চায় নিজের দেশ ছেড়ে আসতে বাধ্য হওয়া এই মুসলিম শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরতে দেয়া হোক৷ কিন্তু মিয়ানমার সরকার এবং সে দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা গত দু দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোকে মিয়ানমারের নাগরিক মানতে নারাজ৷ তারা মনে করে, বাংলাদেশ সরকার যাদের মিয়ানমারের নাগরিক এবং রোহিঙ্গা বলছে, তাদের প্রায় সবাই মিয়ানমারের নাগরিক নয়, রোহিঙ্গাও নয়, তারা ‘বাঙালি'৷
এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে দু মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২,৪১৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল মিয়ানমার৷ প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের বর্তমান বক্তব্য খুব তাড়াতাড়ি সেই প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনারও পরিপন্থি৷