সহিংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অং সান সু চি৷ পাশাপাশি সংঘাতপ্রবণ রাখাইন রাজ্যে শান্তি ফেরাতে নতুন কমিটি করার ঘোষণাও দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে পুলিশ চেকপোস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইনে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের উপর অভিযান শুরু করে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী৷ সেই ঘটনার পর পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে৷ রোহিঙ্গাদের এই যাত্রা এখনো অব্যাহত রয়েছে৷
রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি
ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া, পেছনের টান আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা- এই সব নিয়ে একরাশ হতাশা আর বেদনা স্পষ্ট প্রতিটি রোহিঙ্গার চোখেমুখে৷ সম্প্রতি রয়টার্সের ক্যামেরায় ধরা পড়া এমন কিছু অবয়ব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/D. Sagoli
অশ্রু
মাত্র একদিন আগেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন ৩০ বছর বয়সি আমিনা খাতুন৷ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর প্রথম রাত কেটেছে কক্সবাজারের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের পাশের সড়কে৷ সাথে ছিল তারই মতো নতুন আসা আরও হাজার হাজার মানুষ৷ সামনের দিনগুলোর কথা ভেবেই হয়তো এই অশ্রুসজল চোখ!
ছবি: Reuters/D. Sagoli
শিশুদের চাহনি
ছবি তোলা হচ্ছে দেখলেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা দৌড়ে আসে- এই দৃশ্য খুবই পরিচিত৷ কিন্তু শিশুদের চোখেও এত অবিশ্বাস আর হতাশা বোধহয় পরিচিত নয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
জীবন যুদ্ধ
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৭০ এর বেশি বয়সি এই নারী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কিছুক্ষণ আগেই৷ জীবনের এই শেষ দিনগুলোতেও জীবন বাঁচাতে এমন যুদ্ধ করতে হবে কখনও হয়ত ভাবেননি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
অসহায়ত্ব
এই শরণার্থী শিশুর অপেক্ষা একটু ওষুধের জন্য৷ সারা মুখে নানা ক্ষত আর তার ওপর মাছির আনাগোনাতেই বোঝা যাচ্ছে, একটু ওষুধ কতখানি দরকার তার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
নিরুপায়
বৃষ্টি মাথায় ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা৷ আর তো কোন উপায় নেই!
ছবি: Reuters/C. McNaughton
আশ্রয়ের অপেক্ষা
মাত্রই বাংলাদেশে এসেছেন৷ শুরুতে জায়গা হয়েছে এক স্কুল ঘরে৷কিন্তু সেখানে তো আর থাকা যাবে না৷থাকতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রে৷নতুন সেই ঠিকানার অপেক্ষাতেই এখন তারা৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
ত্রাণের আশা
কক্সবাজারের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে আর সবার মতোই একটু ত্রাণের আশায় কোলের সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষায় এই নারী৷
ছবি: REUTERS
চৌদ্দ দিন পর
সালেহা বেগম নামের এই মা এতটুকুন শিশুকে নিয়ে ১৪ দিন ধরে জঙ্গল পথে হেঁটেছেন৷ তারপর পেরেছেন সীমান্ত পাড়ি দিতে৷ এখন অপেক্ষা একটু আশ্রয়ের৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
বিশ্রাম
টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত নৌকায় গাদাগাদি করে এসে কোনমতে পৌঁছেছে সবাই৷ নতুন আশ্রয়ে যাবার আগে তাই একটু বিশ্রাম৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
দায়িত্বের ভার
টেকনাফে পৌঁছেই ছুটতে হচ্ছে ত্রাণের আশায়৷ নিজেই এক শিশু, তার ওপর কোলে, পাশে আরও ভাই-বোন থাকায় দায়িত্ব যেন বেড়ে গেছে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
প্রতিক্রিয়া
এত মানুষের টানাহ্যাঁচড়ার মধ্যেই দাঁড়াতে হয় ত্রাণের লাইনে৷ ধাক্কাধাক্কি সহ্য করে আর কতক্ষণ৷ তাল সামলাতে না পেরে তাই চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
অনিশ্চয়তা
আদরের ধন নাতিকে কোলে নিয়ে এই নারী বসে আছেন ত্রাণের আশায়৷ কিন্তু একটু ত্রাণই তো সব নয়৷ নাতির ভবিষ্যত কী, সেই ভাবনাতেই খানিকটা উদাস হয়ে পড়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
12 ছবি1 | 12
‘রোহিঙ্গা' শব্দটি ব্যবহার করেননি সু চি
শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার কথা স্বীকার করেছেন সু চি৷ মিয়ানামারের এই অবিসংবাদিত নেতা চলমান সংকট নিরসনে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন৷ তিনি জানান যে, তাঁর সরকার বাংলাদেশে এখন যারা আছে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সেদেশের সঙ্গে আলোচনা করছে৷ তবে তিনি বক্তব্য দেয়ার সময় ‘রোহিঙ্গা' শব্দটি উচ্চারন করেননি৷ আর তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে, যা তিনি পরিষ্কার করেননি৷ এর আগে সেদেশের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, শুধুমাত্র তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে, যাদের মিয়ানমারে বসবাসের অনুমতিপত্র রয়েছে৷ এরকম অনুমতিপত্র খুব কম রোহিঙ্গার রয়েছে৷
মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের সেদেশের কোনো জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করে না৷ বরং তাদের ভাষ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সেদেশে গেছে এবং বসবাস করছে৷ সু চি অবশ্য তাঁর বক্তব্যে বলেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে যাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য রাখাইনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে৷ মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল হচ্ছে এই রাজ্য৷ সেখানে দেশি এবং বিদেশি সংগঠনগুলোর ত্রাণ কর্মকাণ্ডে সমন্বয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি ফিরিয়ে আনতে একটি নতুন কমিটির নেতৃত্বও দেবেন সু চি৷
ইসলামি দাতব্য সংগঠন নিষিদ্ধ
এদিকে, বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনটি ইসলামিক দাতব্য সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ৷ এগুলোর মধ্যে মুসলিম এইড এবং ইসলামিক রিলিফ আন্তর্জাতিক সংগঠন, অন্যদিকে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন একটি স্থানীয় সংগঠন৷ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যাতে কেউ উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করতে না পারে, সেজন্য এসব সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মেহজাবিন খালেদ৷
রোহিঙ্গাদের দিকে বাংলাদেশের সাহায্যের হাত
গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ তাঁদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি নানান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ছবিঘরে তারই কিছু নমুনা...
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে দীর্ঘ লাইন
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য রোহিঙ্গাদের লাইন৷ কুতুপালং ছাড়াও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে এই নিবন্ধন কার্যক্রম৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধনে বিজিবি
কতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে কাজ করছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা৷ একেকটি কেন্দ্রে দিনে গড়ে ৭০০ জনের মতো রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধিত
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পর দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী হারুনুর রশীদ ও মোহাম্মদ দিনার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
সরকারি ত্রাণ
রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে নানাভাবে এগিয়ে এসেছে বাংলদেশ সরকার৷ উখিয়ার কুতুপালংয়ে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী৷
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী৷ ৪৬টি দেশের কূটনীতিকরাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
কূটনীতিকদের আশ্বাস
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন কূটনীতিকরা৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তার ঘোষণাও দেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
শিশুসেবা
টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের টিকা দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন শিবির
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বালুখালীতে দুই হাজার একর জায়গায় শিবির গড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
তাঁবুর রাজ্য
শরণার্থীর চাপে এরইমধ্যে বালুখালীর এই অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের সীমানা কয়েকগুণ বড় হয়েছে৷ উখিয়ার পাহাড়-টিলার সবখানেই এখন শরণার্থীদের অস্থায়ী তাঁবু৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন বসতি
নতুন নতুন পাহাড়ের গাছপালা কেটে প্রতিদিনই নিজেদের বসতি গড়ছেন রোহিঙ্গারা৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
11 ছবি1 | 11
তবে এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদ বলেন, ‘‘নিরাপত্তার কারণে কারা সেখানে ত্রাণ দিচ্ছে এবং কেন দিচ্ছে, তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি৷ কারা তাদের অর্থায়ন করছে, এবং তারা টাকা দিয়ে কী করছে?''
নিষিদ্ধের তালিকায় নাম ওঠার পর ইসলামিক রিলিফের পরিচালক ওয়াসিম আহমেদ জানিয়েছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তোলা হলেও তা ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর৷ কেননা, সংগঠনটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে এখনো ত্রাণ তৎপরতা শুরুই করেনি৷ তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু আমরা এখনো সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছি এবং সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পগুলোতে কোনো প্রকল্প এখনো শুরু করিনি, তাই আমরা যা করিনি, তার সঙ্গে আমাদের নাম যুক্ত করলে তা অন্যায় হবে৷''
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সরকারের বেসরকারি উন্নয়নসংস্থা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এনজিও ব্যুরো এখন অবধি ত্রিশটি দেশি, বিদেশি সংগঠনকে রোহিঙ্গাদের সহায়তার করার অনুমতি দিয়েছে৷ এসব সংগঠন শুধুমাত্র দুই মাসের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে৷