রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পশ্চিমারা কি সহায়তা করতে পারে?
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা৷ গত কয়েক মাসে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আবার বেড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার৷ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রোহিঙ্গাদেরকে দ্রুত তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনে করার কথাও বলেছেন৷
২০১৭ সালে সামরিক বাহিনীর হামলা, নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ এরপর ২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হলে আবারো বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন বাড়তে থাকে৷ সম্প্রতি প্রায় আট হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখের বেশি৷
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেওয়া বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেন৷ এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে এবং তাদেরকে নিরাপদে, মর্যাদার সাথে এবং পূর্ণ অধিকার প্রদানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন৷’’
এরপর চলতি মাসে এক বক্তৃতায় ড. ইউনূস জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান৷ একইসাথে তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান৷
মিয়ানমারেফেরতপাঠানোয়অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে এরই মাঝে সাড়া দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার কাজে বাংলাদেশকে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ইইউ৷ এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে বন্যা দুর্গতদের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় প্রায় ৫০ লাখ ডলারের অর্থ ছাড় করেছে জোটটি৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে ইইউ'র এক মুখপাত্র জানান, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মনযোগ ধরে রাখা এই মুহূর্তে ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন দেশটিতে (বাংলাদেশে) এক জটিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তন চলছে৷
তবে ব্রাসেলস অবশ্য এখনো আশাবদী যে, দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান, যেমন মিয়ানমারে অবস্থার উন্নতি ঘটলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে পারে৷ যদিও বড় পরিসরে এমন প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে শঙ্কা রযেছে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা৷
তবে ওই সূত্র আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পরিস্থিতি নেই৷ আর অদূর ভবিষ্যতে যে এটি হবে, তা-ও অনিশ্চিত৷’’
রোহিঙ্গা মেয়েদের জন্য ‘মাইয়া স্কুল’
02:05
নিতেচায়যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তুসংখ্যায়কম
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশই আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে৷ অনেকে আবার বাংলাদেশ থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও আশ্রয় নিয়েছেন৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য মতে, ভারত, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন৷
এদিকে ২০২২ সালে কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানায় যক্তরাষ্ট্র৷ তবে পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কয়েকশ'র বেশি নয়৷
চলতি মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সহায়তার জন্য বড় পরিসরে আহ্বান জানানোর সুযোগ পাবেন৷
ইউরোপেসুযোগকম
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে এ বিষয়ে যুক্ত হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ হতে পারে মালয়েশিয়া৷ দেশটি ২০২৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সভাপতির দাযিত্ব নেবে৷ বাংলাদেশ সরকারের আশা, আসিয়ানে মালয়েশিয়ার নেতৃত্বের সুযোগে বাংলাদেশ ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোসহ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে৷
তবে রোহিঙ্গাদের বড় পরিসরে ইউরোপরে দেশগুলোতে পুনর্বাসনের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই৷ রোহিঙ্গাদের জন্য ইউরোপ হয়ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে৷
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামেরিকান বিশ্বিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসরিয়াল লেকচারার তাজরীনা সাজ্জাদ ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘ইইউ'র মতো তৃতীয় কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন একটি ধীর এবং নির্বাচনিক প্রক্রিয়া৷’’
তবে তৃতীয় কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ থাকলেও অনেকেই মনে করেন, এই রোহিঙ্গা সংকটের প্রকৃত সমাধান হতে পারে তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো৷ যদিও দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, এটি এই মুহূর্তে সম্ভব নয়৷
এ বিষয়ে তাজরীন বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব চায়, তাদের ভিটেমাটি ফেরত পেতে চায়, নির্যাতন থেকে সুরক্ষা চায় এবং পরিস্থিতি অনুকূলে এলে স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চায়৷’’
ডেভিড হুট/আরআর
নির্বাসিত রোহিঙ্গাদের জীবন ও বাংলাদেশের উভয় সংকট
গত আট দশক ধরে নির্বাসন ও প্রত্যাবাসনের চক্রে আটকা পড়েছেন রোহিঙ্গারা৷ সবশেষ যে আশার আলো দেখা গিয়েছিল তা-ও নতুন বাস্তবতায় ফিকে হতে শুরু করেছে৷ রোহিঙ্গাদের ঘরছাড়া করার ও ঘরে ফেরানোর প্রচেষ্টার কাহিনি থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: Mohibulla Mohib
রোহিঙ্গা কারা
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আরাকান রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিমরা রোয়াইঙ্গা, যাম্ভইকা, কামানচি, জেরবাদি ও দিন্নেত এই পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত৷ এর মধ্যে রোয়াইঙ্গা জাতিগোষ্ঠিই রোহিঙ্গা নামে পরিচিত৷ উদ্ভব নিয়ে নানা মত থাকলেও বাংলাপিডিয়া বলছে, ‘‘চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকান রাজ্যে বসতিস্থাপনকারী চট্টগ্রামি পিতার ঔরসজাত ও আরাকানি মাতার গর্ভজাত বর্ণসংকর জনগোষ্ঠীই রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গ্যা৷’’
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
প্রথম দাঙ্গা
১৯৪০ সাল থেকে আরাকানে বৌদ্ধ মগ জনগোষ্ঠী ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু হয়৷ ১৯৪২ সালে এক লাখ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হন৷ অনেকে আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন৷ ১৯৪৮ সালে তৎকালীন বার্মার স্বাধীনতার পর এবং ১৯৬২ সালে পুনরায় তারা নিপীড়ন, নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হন৷ এ সময় বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হয়ে আসতে বাধ্য হন তারা৷
স্বাধীন বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা
আরাকানে জাতিগত আন্দোলন দমনের জন্য মিয়ানমারের (তখন বার্মা) তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল নে-উইন (ছবিতে) ১৯৭৮ সালে ‘নাগামিন ড্রাগন অপারেশন’ নামের অভিযান চালান৷ আরাকান ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার কারণে নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হয়৷ অভিযানের কারণে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম প্রত্যাবাসন
সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য বাংলাদেশের তখনকার সরকার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানায়৷ জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামের চাপের মুখে নে-উইন সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সম্মত হয়৷ দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বড় অংশ নিজ দেশে ফিরে যান৷ থেকে যান ১৫ হাজার৷ ছবিটি ২০১৮ সালের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য বানানো একটি ‘মডেল গ্রাম’৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. H. Kyaw
আবারও সংকট
মিয়ানমার সরকারের আইন ও নীতির কারণে ১৯৯১ সালে আবারও রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ঘরছাড়া হন৷ ৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী অং সান সুচিকে বন্দি করার পর সেনাবাহিনী আবারও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত রাখাইনসহ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে৷ রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণে ১৯৯১ সালের ২৬ জুনের মধ্যে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
দ্বিতীয় প্রত্যাবাসন
দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি হয়৷ সে অনুযায়ী, এই দফায় আগতদের দুই লাখ ৩১ হাজার জনকে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নেয়৷ বাকি থাকে ২২ হাজার৷ তাদের ফেরানোর অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি দেশটি৷ প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং এবং টেকনাফ থানার নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Huda
২০১৬ সালের পর
মিয়ানমারে নির্যাতনের জেরে ২০১৬ সালের পর থেকে আবারও বড় আকারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন৷ বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরসিসিসি) হিসাবে ২০১৬ সালে ৮৭ হাজার এবং ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় নয় লাখ ৭২ হাজারে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিনটি ব্যর্থ উদ্যোগ
২০১৭ সালের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তিনটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে নেয়া এসব উদ্যোগের কোনোটিরই ফল মেলেনি৷ এর মধ্যে ২০১৮ সালে আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ৷ তার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়৷ পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১১৪০ জনকে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা ভেস্তে যায়৷
ছবি: bdnews24.com
উদ্যোগী চীন
গত বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সবশেষ উদ্যোগটি শুরু হয়৷ প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের একটি দল পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমারে যান৷ প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের বিশেষ দূত ডেং জিজুন দেশটি সফরে যান এবং রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে না, নিজ গ্রামে ফিরতে পারেন তার উদ্যোগ নেন৷ সেপ্টেম্বরে আলোচনার জন্য মিয়ানমারে যায় বাংলাদেশের একটি দল৷ এর অধীনে সে বছর ১২ হাজার জনকে পাঠানোর পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Qing
দুই ঝড়
এই পরিকল্পনায় প্রথম আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হামুন৷ এরপর সম্ভাবনাটিকে আরো ফিকে করে দেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী বিদ্রোহের নয়া ঝড়৷ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল লড়াই শুরু করে৷ আরাকান আর্মি রাখাইনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জান্তার ১৬০টি ঘাঁটি দখল করে৷
ছবি: Handout/Kokang Information Network/AFP
আন্তর্জাতিক বাধা
মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনায় শুরু থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলো৷ সম্প্রতি নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়৷’’
ছবি: AFP
‘ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ’
সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা ডিসপ্লেসড পিপলের কারণে আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতি বছর ৩৫ হাজার করে নতুন সন্তান জন্মগ্রহণ করে৷ এই পরিস্থিতিতে আসলে; মানবিকতার কারণে তখন আমরা রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছিলাম৷ আমরা মনে করি, মিয়ানমারে পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব৷’’ রাখাইনে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
শিবিরে বন্দি জীবন
বাংলাদেশে সীমিত জায়গায় বিপুল রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবেতর জীবন যাপন করেন৷ কিছুদিন পরপর আগুনে তাদের ঘর পোড়ে, ঝড়ে বিপদে পড়েন৷ ঘটে চলেছে সহিংসতাও৷ তাদের সন্তানেরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, নেই কর্মসংস্থানও৷ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহয়তার হারও চাহিদার চেয়ে ক্রমাগত কমছে৷ সর্বশেষ ২০২৩ সালে যা ৪৭ ভাগে নেমে এসেছে৷
ছবি: AFP via Getty Images
ভাসমান জীবন
ভাগ্যবদলের চেষ্টায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গা৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে, ২০২৩ সালে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের শিবির থেকে নৌকায় সাগরপথে রওনা দেন, যাদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন নারী ও শিশু৷ বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান পেরুতে গিয়ে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫৬৯ জন, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ৷ সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে তাদের আগমনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা৷