রোগা বা মোটা হওয়ার পেছনে অন্ত্রের মধ্যে গাট ফ্লোরা-র বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা এ ক্ষেত্রে একাধিক ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট ভূমিকা চিহ্নিত করেছেন৷ খাদ্য বাছাইয়ের মাধ্যমে মানুষ এই প্রক্রিয়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hesse
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞানীদের ধারণা, শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলে৷ ব্যাকটেরিয়া যখন অন্ত্রের মধ্যে কোনো দুগ্ধজাত পণ্য বা উচ্চ ফাইবারসম্পন্ন খাবার গলিয়ে ফেলে, তখন ফ্যাটি অ্যাসিড সৃষ্টি হয়৷ তাহলে কি খাদ্য বাছাইয়ের মাধ্যমে আমরা সরাসরি মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারি? প্রো. মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘‘খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে অবশ্যই আমরা গাট ফ্লোরার উপর প্রভাব রাখতে পারি৷ অন্ত্রের অবস্থা আসলে রান্না ও শরীরের মধ্যে সংযোগের প্রতিফলন৷ অর্থাৎ আমরা যা খাই, তা হজম করতে হয়৷ সেই খাবার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যকর উপাদানে রূপান্তরিত হলেই ভালো হয়৷''
এমন ক্যাটাবলাজিম বা তন্তুক্ষয়ের মাধ্যমে আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া আমাদের মনমেজাজ ও আচরণের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ কারণ বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া নানা রকম নিউরো মেসেঞ্জার উৎপাদন করে – যেমন ডোপামিন৷ সেটি আমাদের মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেনস ও নেশা সংক্রান্ত আচরণের উপর প্রভাব ফেলে৷ অথবা সেরেটোনিন, যে হরমোন সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে৷
অন্ত্র এবং আত্মার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ
সারা বিশ্বের শতকরা ১১ ভাগ মানুষই পেটের কোনো-না-কোনো সমস্যায় ভোগেন, যা জীবনযাত্রার মানোন্নয়নকে ব্যাহত করে৷ এ সমস্যার সমাধান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন জেনে নিন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: MDR
প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
জার্মানি এবং অ্যামেরিকার এক যৌথ গবেষণায় জানা গেছে, মানুষের ভয় এবং মানসিক চাপ অন্ত্র বা পেটের সমস্যায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এ সম্পর্কে জার্মান সোসাইটি ফর সাইকোসোমিক মেডিসিন অ্যান্ড মেডিক্যাল সাইকোথেরাপির পরামর্শ, ডাইরিয়া, পেটফাঁপা, বদহজম বা পেটের অন্যান্য সমস্যায় দেহমন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন৷
খাবারের প্রভাব কতটা
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ নানা দেশে ভ্রমণ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন, যা পেট হয়তো গ্রহণ করতে পারেনা৷ এক্ষেত্রে জার্মান গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ, বেশকিছুদিন ধরে নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপে থাকুন এবং সব বিষয়ে জানান, তবেই রোগের আসল কারণ জেনে সুচিকিৎসা করা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/CTK/digifoodstock
বয়স অবশ্যই একটা ব্যাপার
মানসিক চাপ এবং শারীরিক চাপ কতটা সেটাও বড় বিষয়৷ তাছাড়া বয়সের সাথে সাথে যে শরীরের গ্রহণক্ষমতা কমে যায়, সেটাও ভুলে গেলে চলবে না৷ তাই রোগীর বয়স বুঝে এবং সমস্যাকে ভালো করে গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত৷ একথা জানান হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের প্রধান ব্যার্ন্ড ল্যোভে৷
ছবি: Colourbox
ইতিহাস জানা
পেটের সমস্যা ও মানসিক চাপ একই সাথে শুরু হয়েছে কিনা, কিংবা আগে থেকেই আছে কিনা, এসব ইতিহাস জানা খুবই জরুরি৷ এসব জানলেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে মানসিক চাপ এবং ভয় বা আতঙ্কের সম্পর্ক কতটা তা বোঝা সম্ভব৷
ছবি: picture alliance/dpa Themendienst
ডায়রিয়া
ডায়রিয়ার ব্যাপারে মানসিক চাপের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ এক্ষেত্রে রোগী নারী না পুরুষ সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তাছাড়া কখনো কখনো অন্যান্য ইনফেকশনের কারণে ডায়রিয়ার মাধ্যমেও পেটের সমস্যা জটিল হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অন্য ওষুধের প্রভাব
একই সাথে অন্য কোনো ওষুধ সেবনের কারণেও ডাইরিয়া মারাত্মক আকার নিতে পারে৷ তবে এ রকমটা সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে৷ এমনটাই বেরিয়ে এসেছে গবেষণায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
মানসিক চাপে পুরুষরা তাড়াতাড়ি কাবু
অন্যদিকে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে পেটের নানা সমস্যা দেখা দেয়৷ মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের এই প্রবণতা বেশি, অর্থাৎ মানসিক চাপে পুরুষরা তাড়াতাড়ি কাবু হয়৷ কাজেই পুরুষরা সতর্ক থাকুন !
ছবি: Colourbox/S. Tryapitsyn
শরীর থেকে মনে
যৌথ গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন যে, মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ আর সে কারণেই শরীরের যে কোনো সমস্যায় মনের খোঁজ রাখতে হবে এবং এর উল্টোটাও একই রকম প্রয়োজন৷ অনেকের ক্ষেত্রে অনেকদিন কোনো মানসিক চাপে থাকার পর হঠাৎ করেই শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়৷ অন্যদিকে কেউ কেউ বহুদিন শারীরিক সমস্যায় থাকার কারণে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানসিক চাপ দূরে রাখার উপায়
মানসিক চাপ থেকে সময়মতো বেরিয়ে আসা বা চাপ সত্ত্বেও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব৷ সেজন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা, ব্যায়াম, খেলাধুলা ইত্যাদি৷ বলেন, মনোবিজ্ঞানী হারাল্ড গ্যুন্ডেল৷
ছবি: Colourbox/D.Vietrov
শেষ কথা
শারীরিক এবং মানসিকভাবে যিনি সুস্থ, তাকেই কেবল বলা যায় ‘সুস্থ’ মানুষ৷ জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করতে সুস্থ থাকাটাও জরুরি৷
ছবি: drubig-photo - Fotolia
10 ছবি1 | 10
এই সব পদার্থ আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর প্রভাব ফেলে৷ মানসিক অবসাদের মতো রোগের ক্ষেত্রেও এগুলির ভূমিকা রয়েছে৷ এমনকি শারীরিক ক্লান্তি ও ওজনের উপরেও এই পদার্থ প্রভাব ফেলে৷ প্রো. আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘‘অতিরিক্ত ওজনের মানুষ এবং যে সব মানুষ সহজেই রোগা থাকতে পারে, তাদের অন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ১০ বছর আগেই ধরা পড়েছে৷ প্রাণীর উপর পরীক্ষার মাধ্যমে আরও অগ্রগতি ঘটেছে৷ রোগা ইঁদুরের উপর মোটা ও রোগা মানুষের গাট ফ্লোরা প্রয়োগ করে দেখা গেছে, যে খুব কম সময়ের মধ্যে ইঁদুরের শরীরে দাতার ওজনের প্রতিফলন ঘটেছে৷''
এর কারণ হলো, অতিরিক্ত ওজনের মানুষের গাট ফ্লোরা-র গঠন আলাদা৷ রোগা মানুষের তুলনায় তাতে ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য কম৷ অন্যদিকে ফার্মিকিউটেস নামের বিশেষ এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য দেখা যায়৷ এই ব্যাকটেরিয়া খাদ্য হজম করার ক্ষেত্রে বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে৷ প্রো. মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘‘ফার্মিকিউটেস-এর অনুপাত মাত্র ২০ শতাংশ বেড়ে গেলেই আমাদের অন্ত্রের গাট ফ্লোরা খাদ্য থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ক্যালোরি শুষে নেয়৷ শুনতে বেশি মনে না হলেও সারা দিনে এর অর্থ ২৫০ ক্যালোরি৷ এমনটা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে ৮ থেকে ৯ কিলোগ্রাম বাড়তি ওজন যোগ হয়৷''
তবে এমন পরিস্থিতিতে অসহায় বোধ করার কোনো কারণ নেই৷ ফার্মিকিউটেস ব্যাকটেরিয়া ফাস্ট ফুড, চিনি ও অ্যালকোহলের মতো মেদভরা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি পছন্দ করে৷ অন্যদিকে খাবারে অনেক ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ফলমূল, শাকসবজি যোগ করলে রোগা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়া বহাল তবিয়েতে থাকে৷
আমাদের মনমেজাজ, আচরণ ও স্বাস্থ্যের স্বার্থে এমন ব্যাকটেরিয়া সযত্নে পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
স্টেফানি ক্র্যুগার/এসবি
পাতলা মানুষ বেশি দিন বাঁচে
সারা বিশ্বেই মোটা হওয়া বা মুটিয়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অতিরিক্ত মোটা মানুষদের দেখতে যে শুধু খারাপ লাগে তা নয়, বাড়তি ওজন মৃত্যু পর্যন্ত এগিয়ে আনে৷ এ বিষয়ে গবেষকদের দেওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/Beyond
রোগা মানুষ বেশি দিন বাঁচে
সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে করা গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, কর্মঠ বা সক্রিয়, মোটা মানুষের চেয়ে অলস, পাতলা মানুষই নাকি বেশি দিন বঁচে থাকে৷ গবেষণা বলছে, শারীরিক ফিটনেসের চেয়েও ওজন কম থাকা বেশি জরুরি এবং সে কারণেই তারা নাকি বেশি দিন বাঁচে৷ ৩০ বছর ধরে লাখ মানুষকে নিয়ে করা গবেষণাটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: haveseen - Fotolia
ওজন বাড়ার জন্য শুধু চর্বিই দায়ী নয়!
বিখ্যাত দ্য ল্যানসেট পত্রিকার ডায়াবেটিস ও অ্যান্ডোক্রিনলজি বিষয়ক সংখ্যায় প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা গেছে, ওজন বাড়ানোর জন্য শুধু চর্বি বা ফ্যাটই দায়ী নয়৷ এক বছর ধরে ৬৮ হাজার মানুষের মধ্যে করা সমীক্ষা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, যারা চর্বিজাতীয় খাবার বাদ দিয়েছিলেন তাদের চেয়ে, যারা শর্করা জাতীয় খাবার খাননি, তাদের ওজনই বেশি কমেছে৷ অর্থাৎ ওজন কমাতে চাইলে আগে শর্করা বাদ দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সঙ্গীরা সাবধান!
‘পোশাকগুলো তো দেখছি আজকাল গায়ে আরো টাইট হচ্ছে৷’ আপানার প্রিয়া বা প্রিয়তমকে এ ধরণের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন৷ কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল জানিয়েছেন, সঙ্গীর এ রকম বিরূপ মন্তব্যে ফল হয়েছে উল্টো৷ অর্থাৎ কম খাওয়ার পরিবর্তে তখন আরো বেশি করে খেয়েছেন সঙ্গীরা৷ অথবা খাওয়া নিয়ে নানা ধরণের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Andreas Gebert
ওজন কমাতে ভুল পানীয় নয়
ডায়েটিং করতে যেয়ে অনেকেই ‘ডায়েট কোক’-এর মতো মিষ্টি পানীয় পান করেন৷ এ সব মিষ্টি পানীয় নিজের অজান্তেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো নানা অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ এ কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি মিলার স্কুল অফ মেডিসিন-এর গবেষকরা৷ তাই ওজন কমাতে চাইলে সুগার-ফ্রি পানীয় নয়, বরং চিনি ছাড়া গ্রিন-টি এবং সাধারণ পানি পান করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ওজন কমানোর সহজ উপায়!
খাবারে কী কী উপাদান দিচ্ছেন, কেন দিচ্ছেন, কেমন করে রান্না করছেন এবং কতক্ষণ রান্না করছেন – তার দিকে খেয়াল রাখুন৷ সোজা কথা, খাবার নিজে তৈরি করুন এবং বুঝে-শুনে খান৷ দেখবেন খুব সহজেই ওজন কমে যাবে৷ কারণ ‘ঘরের রান্নাই ওজন কমানোর সহজ উপায়’৷ কোলন ও জুরিখের গবেষকরা একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন এ তথ্য৷ হেল্থ সাইকোলজি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি৷