1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোগীর চিকিৎসা দুর্লভ, স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত ১২৫

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ এপ্রিল ২০২০

করোনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতসহ সব খাতই বলতে গেলে বিপর্যস্ত৷ করোনার চিকিৎসা সহজ নয় আর সেই সঙ্গে ভেঙে পড়েছে অন্য রোগবালাইয়ের চিকিৎসাও৷ কষ্টে আছে বিভিন্ন খাতের শ্রমিক, কম আয়ের জনগণ৷

ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Ramany

চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনার চিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি৷  বিষয়ে সঠিক কোনো গাইডলাইন নেই৷ তারা আরো বলেন, চিকিৎসকেরাই এখন করোনা হুমকির মুখে আছেন৷ তারা যদি রক্ষা না পান তাহলে চিকিৎসা চলবে কিভাবে! 

‘এরইমধ্যে নকল পিপিই নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

করোনার চিকিৎসা কোথায় হয়?

করোনার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছয়টি হাসপাতালের কথা বলা হলেও বাস্তবে প্রস্তুত মাত্র দুইটি৷ বাকিগুলোতে শুধুমাত্র এখন পর্যন্ত টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আর ঢাকার বাইরে কয়েকটি হাসপাতালে টেস্টের ব্যবস্থা আছে৷

ঢাকার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে করোনার কোনো চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি৷ ওই হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘‘পুরোপুরি করোনা হাসাপাতাল করতে আরো সময় লাগবে৷ আমরা ফ্লু কর্নার করেছি৷ টেস্ট করে করোনা পজিটিভ পেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই৷''

তার মতে, ‘‘যে হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হবে সেখানে অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা করা ঠিক নয়৷'' 

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার বেড আছে ২২টি, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২৬টি , শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে ৮টি, সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৫টি, মিরপুর ও উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালে আছে ৬টি আইসিইউ করোনা বেড৷ ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে কেবল ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬টি, খুলনার ডায়াবেটিক হাসপাতালে আছে ৫টি আইসিইউ বেড৷ 

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের নার্সদের খাদ্য সংকট চলছিল কয়েকদিন ধরে৷ তাদের ৯৯ জন নার্সের মধ্যে ৭০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে একটি হোটেলে৷ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান জানান, ‘হোটেল কর্তৃপক্ষ বিল না পেয়ে খাবার নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করেছিল৷ এখন আমরা বিল দিয়ে দেয়ায় খাবার সংকট হচ্ছেনা৷' ঢাকায় স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের থাকার জন্য আরো কতগুলো হোটেল তালিকাভুক্ত করা হলেও তারা এখনো সেবা দেয়া শুরু করেননি৷

টেস্ট এখনো জটিল:

করোনা আক্রান্ত সন্দেহ হলে টেস্ট এখনো জটিল ও কঠিন৷ ১৪ এপ্রিল করোনা পজিটিভ হওয়া এক গণমাধ্যমকর্মী জানান, তিনি পাঁচ দিন চেষ্টার পর করোনা টেস্ট করাতে সক্ষম হয়েছেন৷ ওই পাঁচ দিন তিনি আইইডিসিআর ও বিএসএমইউতে দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এখন করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বাসায়ই আছেন আইসোলেশনে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাকে একটি টেলিফোন মেসেজ দিয়ে আলাদা থাকতে বলেছে৷ তিনি বলেন, ‘পুলিশ যোগাযোগ করছে৷ কিন্তু আমার চিকিৎসা কোথায় হবে আমি জানি না৷'
এখন ঢাকায় নয়টি ও ঢাকার বাইরে ছয়টি করোনা টেস্ট সেন্টার আছে বলে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে৷

চিকিৎসায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা:

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আসলে ঢাকা ছাড়া জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে করোনার চিকিৎসা নাই৷ এটা করা সম্ভবও নয়৷' তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের পিপিইর নামে যা দেয়া হচ্ছে তা মানসম্মত নয়৷ নকলও আছে৷ এই কারণে ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে এখন ১২৫ জন করোনা পজিটিভ৷ ডাক্তার আছেন ৬৩ জন৷ আমার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত ১০ ভাগের বেশি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি৷ নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি তুলে ধরছেন৷ এরইমধ্যে নকল পিপিই নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে৷'
আর ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘এখনো করোনা চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিক গাইড লাইন নাই৷ ফলে সাধারণ চিকিৎসাও বিপর্যস্ত৷' 

‘পুরোপুরি করোনা হাসাপাতাল করতে আরো সময় লাগবে’

This browser does not support the audio element.

যোগাযোগ ব্যবস্থা:

দেশে যাত্রী পরিবহণ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে৷ বাস-লঞ্চ-ট্রেন কিছুই চলছেনা৷ শুধুমাত্র জরুরি পণ্য ও সেবা পরিবহণ চালু আছে৷ বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. রস্তুম আলি খান জানান, ‘জরুরি পণ্য পরিবহনের অনুমতি থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়৷ এই খাতে ১২ লাখ শ্রমিক এখন কর্মহীন৷ অন্যদিকে বাস ও লঞ্চ মিলিয়ে কর্মহীন আরো প্রায় ৩০ লাখ৷' বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার এরায়েতুল্লাহ বলেন, ‘পরিবহণ খাতের এই বিপুল পরিমাণ শ্রমিক এখনো কোনো সহায়তা পাননি৷'

কৃষি শ্রমিকরা বিপাকে:

এই সময়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিকরা বেরো ধান কাটার জন্য দক্ষিণে যান৷ কিন্তু এবার সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারা ঘরেই বসে আছেন৷ খাবারও নেই৷ লালমনিরহাট সরকারি কলেজের ধ্যাপক আরমান রহমান জানান, ‘এই সময়ে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় এলাকা থেকে কমপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক কুমিল্লা, বগুড়া, ফেনী ও চট্টগ্রামে যান ধান কাটতে, কৃষি শ্রমিক হিসেবে৷ কিন্তু এবার তারা যেতে পারছেন না৷ তাদের ঘরে খাবারও নেই৷ আবার ওইসব এলকায় কৃষি শ্রমিকের অভাবে ফসল তোলা কঠিন হয়ে পড়বে৷'

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ