শরীরের ভিতরে যে ঘড়ি আছে, তার ছন্দেই আমাদের জীবন কাটে৷ ক্যানসারের মতো দুরূহ রোগে জোরালো সব ওষুধের সাইড এফেক্ট কমানোর জন্যও নাকি ‘বায়োরিদম' ব্যবহার করা সম্ভব, যেমন দিনের বদলে রাতে ওষুধ দিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
প্যারিসের পোল ব্রুস ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক৷ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ফ্রঁসিস লেভি প্রায় তিন দশক ধরে এখানে ক্যানসার রোগীদের ‘ক্রোনোথেরাপি' নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ কিন্তু আজও তাঁর ভোরে ওঠার অভ্যেস হল না৷ লেভির ভাষায়, ‘‘আমি ভোরে ওঠার লোক নই৷ ভোরবেলা উঠতে আমার ঘোর আপত্তি৷''
আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে একটি ঘড়ি আছে, যার কল্যাণে কিছু কিছু মানুষ একটু বেলা না হলে ঠিক চাঙ্গা হয়ে ওঠেন না৷ শরীরের কিছু কিছু দেহযন্ত্র দিনের বেলা বেশি সক্রিয় থাকে, অন্যগুলি রাত্রে৷ শরীরের বহু প্রক্রিয়া যেন একটি ২৪ ঘণ্টার ছন্দে কাজ করে৷
ফ্রঁসিস লেভি এই ‘বায়োরিদম'-এর উপর নির্ভর করে তাঁর রোগীদের ক্যানসার চিকিৎসা চালান৷ ‘ক্রোনোথেরাপি'-র অর্থ হল, দিন বা রাতের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ ওষুধ দেওয়া৷
লেভি বললেন, ‘‘ব্যাপারটা চিরকালই রহস্যময় ছিল৷ অন্তত গোড়ায় আমরা ক্রোনোথেরাপির কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানতাম না৷''
প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখার ৬ উপায়
সমীক্ষায় জানা যায়, বিভিন্ন দেশে নানা রকম ক্যানসারের মধ্যে পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসার হয় সবচেয়ে বেশি৷ অথচ কিছুটা সচেতন হলেই এই ক্যানসারকে দূরে রাখা সম্ভব৷ জেনে নিন কিভাবে৷
ছবি: picture alliance / dpa
ব্রকোলি ও অন্যান্য সবজি
টরন্টোর ‘জার্নাল অফ দ্য ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সটিটিউট’-এ প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ব্রকোলি, ফুলকপি ও সবুজ শাক-পাতা প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা ব্রকোলি, ফুলকপি ও শাক-পাতা খেয়েছেন প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি তাঁদের ক্ষেত্রে আসলেই বেশ কম৷
ছবি: Fotolia/Mariusz Blach
ওমেগা-৩
ওমেগা-৩ প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে সহায়তা করে৷ এ তথ্য জানা গেছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার ফলাফল থেকে৷ তাতে বলা হয়, যে সমস্ত পুরুষ প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার স্যামন মাছ খান, তাঁদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি শতকরা ৬৩ ভাগ কম, যাঁরা এ মাছ খাননি তাঁদের তুলনায়৷ তবে যাঁদের এই মাছ পছন্দ নয়, তাঁরা বিকল্প হিসেবে স্যামন মাছের তেল দিয়ে তৈরি ওমেগা-৩ ক্যাপসুল খেতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Printemps
আখরোট ও বেদানা
অন্যান্য অনেক অসুখের মতো খাবার-দাবারের সাথে প্রস্টেট ক্যানসারেরও সম্পর্ক রয়েছে৷ তাই বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে মাংস এবং দুধ কম খেয়ে বেশি করে বেদানা ও আখরোট খান৷ বেদানা ও আখরোটে যে উদ্ভিদ উপাদান রয়েছে, তা প্রস্টেট টিউমার বড় হতে বাঁধার সৃষ্টি করে থাকে৷
ছবি: Colourbox
পলিফেনলযুক্ত পানীয়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনলের মতো অরগ্যানিক উপাদান থাকা পানি বা জল প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে সহায়তা করে৷ যেমন টমেটোর রস, গ্রিন টি বা সবুজ চা, ঔষুধি চা, আঙুরের রস এবং বীট-পালং ইত্যাদিতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে পলিফেনল৷
কোলেস্টোরল কমাতে হবে
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যে সব পুরুষের কোলেস্টোরলের মাত্রা ২২ মিলি গ্রামের নীচে, তাঁদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় ৬০ ভাগ কম৷ স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে কোলেস্টোরলের মাত্রা কমাতে পারলে প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/britta pedersen
প্রয়োজন ভিটামিন ডি
সূর্যের তাপের মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয় আর ভিটামিন ডি প্রস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসার একটি কার্যকর অংশ৷ ইউরোলজিস্টদের মতে, ‘পিএসএ’ নামের একটি রাসায়নিক উপাদানের ক্ষরণ বেড়ে গেলে প্রস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসার হয় সবচেয়ে বেশি৷ তারপর অ্যামেরিকা এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Müller
6 ছবি1 | 6
লেভির গবেষণার ফলে পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গেছে৷ প্রথম সমীক্ষাগুলি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি আল্যাঁ পেরেনো-র মতো ক্যানসার রোগীদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন৷ পেরেনো-র বয়স ৬০; বেশ বর্ধিত পর্যায়ের আন্ত্রিক ক্যানসারের রোগী৷ সাধারণ চিকিৎসা তাঁকে সাহায্য করতে পারেনি৷ অপরদিকে রোগীর বায়োলজিক্যাল ক্লক অনুযায়ী ক্রোনোথেরাপি চলে বলে তা রোগীর শরীরের উপর অনেক কম চাপ দেয়৷
লেভি জানালেন, ‘‘ওষুধটা কখন দেওয়া হচ্ছে, সে অনুযায়ী তার বিষক্রিয়া কম কিংবা বেশি হতে পারে – কেননা শরীরের যে প্রণালীটি ওষুধের বিষক্রিয়া রোধ করছে, সেটি চলে ঐ অভ্যন্তরীণ ঘড়ি অনুযায়ী৷''
ওষুধের বিষক্রিয়া কমানোর জন্য রোগীদের একটি পাম্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা বিশেষ বিশেষ সময়ে ওষুধের কার্যকরী উপাদানগুলি রোগীর শরীরে পাম্প করে৷
পেরেনো-র চারটি ওষুধের একটি দেওয়া হয় দুপুরবেলা; অন্য তিনটি প্রধানত রাত্রে, যখন শরীরের সুস্থ কোষগুলির বিভাজন ক্যানসারগ্রস্ত কোষগুলির তুলনায় কম হয় – ফলে সুস্থ কোষগুলির উপর ওষুধের প্রকোপও কম হয়; যার ফলে ওষুধের সাইড এফেক্ট বা আনুষঙ্গিক উপসর্গ কমে যায়৷
আল্যাঁ পেরেনো বলেন যে, তাঁর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসার শুভ দিক বাকি সব অসুবিধাকে ছাড়িয়ে গেছে: ‘‘কিছু কিছু সাইড এফেক্ট বাদ দেওয়ার উপায় নেই, যেমন চুল পড়ে যাওয়া কিংবা খিদে কমে যাওয়া৷ কিন্তু এই সব অনুষঙ্গ প্রথাগত চিকিৎসার চেয়ে অনেক কম৷ আর চুল কমায় দুঃখেরই বা কী আছে – চুল পড়ার আওয়াজ তো আর শোনা যায় না, কাজেই ওতে আমার কিছু আসে যায় না৷''
প্রতিদিনের খাবারেই লুকিয়ে আছে ক্যানসারের কারণ
আপনার খাবার ঘরে এই জিনিসগুলোর অবশ্যই দেখা মিলবে৷ আর এগুলোতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ছবিঘরে সেই সব খাদ্যের তালিকাই তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Printemps / Fotolia
সাদা ময়দা
ময়দা সাদা করার জন্য গমকে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং তাতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়৷ এই একই ক্লোরিন কিন্তু কাপড়ের রং ওঠাতেও ব্যবহার করা হয়৷ বলা বাহুল্য, এই ক্লোরিন ব্যবহারের ফলে খাদ্যের সব পুষ্টিগুণ কমে যায়৷
ছবি: Fotolia/BK
লবণাক্ত স্ন্যাকস
পট্যাটো বা আলুর চিপসে অতিরিক্ত লবণ থাকে৷ তাই খুব বেশি চিপস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত৷ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য সব ধরনের উপাদান রয়েছে এই চিপসে৷ এছাড়া চিপসকে মচমচে করতে যে অ্যাক্রিলামাইড ব্যবহার করা হয়, সেই একই উপাদান পাওয়া যায় সিগারেটেও৷
ছবি: picture-alliance/Romain Fellens
লাল মাংস
অল্প মাত্রায় এ ধরনের মাংস খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ কিন্তু ‘লাল মাংস’ যদি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে কোলন বা প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, রেড মিট বা গরু, ছাগল এবং ভেড়ার মাংসে এক ধরনের সিলিসিক অ্যাসিড থাকে, যেটা ক্যানসারের কারণ৷
ছবি: Fotolia/hjschneider
কোমল পানীয়
কোকাকোলা, পেপসি এবং এ ধরনের অন্যান্য পানীয়তে উচ্চ মাত্রায় চিনি রয়েছে, যা কৃত্রিমভাবে রং করা৷ এ ধরনের কোমল পানীয় ভীষণ ক্ষতিকর৷ এছাড়া কৃত্রিম সুইটেনারে বেশি মাত্রায় সোডিয়াম থাকে৷ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও মাদক প্রশাসন জানিয়েছে, এ সব কোমল পানীয় গ্রহণ করলে মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে৷
ছবি: Fotolia/B. Hofacker
ভেজিটেবল তেল
সূর্যমুখী তেলে এক ধরনের রং ব্যবহার করা হয়, যাতে তা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে৷ এই তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর৷ কিন্তু তেলে যদি রঙের পরিমাণ বেশি হয়, তবে তা স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি৷
ছবি: Printemps / Fotolia
প্রক্রিয়াজাত মাংস
সসেজ, নানা রকম সালামি – এগুলো দেখতে এবং খেতে ভালোই লাগে৷ কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের জন্য উচ্চমাত্রার ‘প্রিজারভেটিভ’ ব্যবহার করা হয়৷ যত বেশি প্রিজারভেটিভ থাকে খাবারে বিষাক্ত সোডিয়াম নাইট্রেটের পরিমাণ তত বেড়ে যায়৷ ফলে ক্যানসারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়৷
ছবি: eyewave - Fotolia.com
নন-অরগ্যানিক ফল
সেসব ফলের বাগানে সার হিসেবে নাইট্রোজেন ব্যবহার হয় এবং গাছে পোকা মারার বিষ দেয়া হয়, সেই সব ফল খাওয়া খুবই বিপজ্জনক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে মাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ তাই এ রকম ‘নন-অরগ্যানিক’ ফল বেশি খেলে দীর্ঘদিন পর এর ক্ষতিকর প্রভাব শরীরেও দেখা যায়৷
ছবি: Fotolia
7 ছবি1 | 7
ক্রোনোথেরাপি আল্যাঁ পেরেনো-র ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছে৷ কিন্তু এই থেরাপি সব ক্যানসার রোগীর ক্ষেত্রে কাজ করে না বলে বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে৷
একজন পেশেন্টের ‘বায়োরিদম' বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করে৷
দিবারাত্রির ছন্দ
চোখে আলো ঢুকলে, মস্তিষ্কের একটি কেন্দ্রীয় ঘড়ির কাছে সংকেত যায়, যা আমাদের বায়োলজিক্যাল ক্লক-এর সময় নির্দিষ্ট করে৷ বস্তুত আমাদের জিন নির্ধারণ করে, আমরা দিনের মানুষ না রাতের মানুষ! আমরা কখন খাই বা চলাফেরা করি কিংবা ঘুমোই, তা থেকেও শরীরের ‘ছন্দ' প্রভাবিত হয়৷
ফ্রঁসিস লেভি ও তাঁর সহকারীরা প্রত্যেক রোগীর ব্যক্তিগত অভ্যন্তরীণ ঘড়িটির সঙ্গে পরিচিত হবার চেষ্টা করেন৷
পেশেন্টের বুকে বসানো একটি সেন্সর থেকে মিনিটে মিনিটে গবেষকদের কাছে তথ্য পাঠানো হয় – যার মধ্যে পড়ে ত্বকের উপরিভাগের তাপমাত্রা, পেশেন্টের বর্তমান গতিবিধির পর্যায়, এমনকি পেশেন্ট বসে আছেন না শুয়ে আছেন, সে খবর পর্যন্ত৷ চিকিৎসকরা এভাবে পেশেন্টের বায়োরিদম নির্ধারণ করতে পারেন – যেমন তারা ঘুমোচ্ছেন, নাকি জেগে আছেন৷
ক্রোনোথেরাপির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে, কিন্তু আপাতত অধিকাংশ ক্যানসার রোগীর জন্য তা একটি আশাজনক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ছাড়া আর কিছু নয়৷৷
মাটিয়াস ট্যারটিল্ট/এসি
ত্বক ক্যানসার ঠেকাতে রোদ থেকে দূরে থাকুন
শরীরে ভিটামিন ডি-এর জন্য একদিকে সূর্যের তাপ যেমন প্রয়োজন, তেমনি অন্যদিকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শরীরে অতিরিক্ত হলে তা ত্বক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ ত্বক ক্যানসার ঠেকাতে কিছু উপায় থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
ঘণ্টার পর ঘণ্টা সূর্যস্নান করেন
শীতের দেশের মানুষরা একটু খানি রোদ পেতে কত টাকা খরচ করে ছুটি কাটাতে যান সমুদ্র সৈকতে, সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সূর্যস্নান করেন৷ যার স্থায়ীত্ব হয়ত মাত্র দু’সপ্তাহ৷ অন্যান্য ক্যানসারের মধ্যে এখন ত্বক ক্যানসারই হয় সবচেয়ে বেশি৷ তার মধ্যে রয়েছে সাদা এবং কালো ত্বক ক্যানসার৷ তবে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে শুধু ক্যানসারই হয় না, ত্বকে বলিরেখা ও দাগ পড়ে আর ত্বক যায় বুড়িয়ে, হয় অ্যালার্জিও৷
ছবি: DW/R. Richter
সাদা এবং কালো ত্বক ক্যানসার
সাদা ত্বক ক্যানসার, অর্থাৎ যা দেখতে হালকা গোলাপি থেকে বাদামি রং-এর, বেশিরভাগই হয় মুখমণ্ডল, গলা, কান, হাত এবং ঠোঁটে৷ জার্মানিতে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয় আনুমানিক ২২ হাজার মানুষ৷ আর কালো ত্বক ক্যানসার ‘মেলানোম’ নামে পরিচিত, যাতে আক্রান্ত হয় ২৮ হাজার৷ তবে এই ক্যানসার বেশি পরিচিত এবং মারাত্বক৷ এ ক্যানসার প্রথমদিকে হয়ত তেমন বোঝা যায় না৷ এটা অনেকটা আঁচিলের মতো মনে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সানক্রিম
বলা বাহুল্য ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে শরীরের নানা সমস্যা দেখা দেয়, তবে শরীরে অতিরিক্ত সূর্যের তাপই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ তাই রোদ শরীরের অবশ্যই দরকার, তবে তা পরিমিত, অর্থাৎ ২০ থেকে ২৫ মিনিটের বেশি নয় এবং তা সকাল দশটার আগে এবং বিকেল চারটার পরে৷ তাছাড়া বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই এলএসএফ ৫০+সানক্রিম ব্যবহার করা উচিত৷ পরামর্শ ত্বক বিশেষজ্ঞদের৷
ছবি: Raedle/Getty Images
গ্রীষ্ম প্রধান দেশে
অনেকের ধারণা, গ্রীষ্মের কড়া রোদই কেবল ক্ষতিকর তাই শীতকালের রোদে যতক্ষণ খুশি থাকা যায়! এই ধারণা মোটেই ঠিক নয়৷ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ বেশি তখনই ক্ষতি করে, সারা বছরই ১০টা থেকে চারটা – এই সময়টুকু সরাসরি সূর্যের তাপ গ্রহণ না করাই ভালো৷ কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার সময়, রিক্সা, গাড়ি বা বাসে বসে থাকায় সময় অবশ্যই সানক্রিম ব্যবহার করা উচিত তা বাইরে বের হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে মুখ, হাত, পা, গলা এবং ঠোঁটে৷
ছবি: DW/A. Islam
শুধু সৌন্দর্য রক্ষায় নয়!
পশ্চিমা বিশ্বের মেয়েরা যেমন একটু রোদে পোড়নো গায়ের রং কে পছন্দ করে আর প্রাচ্যের মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো৷ সৌন্দর্য সচেতন মেয়েরা মুখমণ্ডল বা গায়ের রং কালো হয়ে যাবার ভয়ে তারা রোদে যেতে চায় না৷ তাদের প্রতি পরামর্শ, রোদে না গেলেও অন্তত গ্রীষ্মকালে মেকআপের আগে হালকা সানক্রিম ব্যবহার করলে গায়ের রং সুন্দর থাকার পাশাপাশি ত্বককে ক্যানসার থেকেও দূরে রাখবে৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
সানগ্লাস
আরো কিছু সতর্কতা, একটু মোটা কাপড়ের পোশাক পরা এবং সম্ভব হলে মাথা ঢেকে রাখা৷ চোখকে বাঁচাতে ‘আল্ট্রা ভায়োলেট রে-প্রুভ’ সানগ্লাস পরতে হবে৷ ত্বকের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো পরিবর্তন হলো কিনা, কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত৷ আর সানগ্লাস, হ্যাট নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু আধুনিক হলেই হবে না, যতটা সম্ভব চোখ এবং আশেপাশে ঢেকে রাখে সেরকম রোদ চশমা ব্যবহার করা শ্রেয়৷
ছবি: Colourbox
ত্বক ক্যানসার ও পেশাজীবী
বিশেষ করে যারা মাঠ, ক্ষেত, বাড়ি তৈরির মিস্ত্রির কাজ – সোজা কথায় যারা বাড়ির বাইরে রোদের ভেতর কাজ করে তাদের ত্বকের কোষে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি বা আল্ট্রা ভায়োলেট রে এতটাই মারাত্মক যে, জার্মানিতে পেশাগত কারণে যাঁদের এ ধরনের ত্বক ক্যানসার হয়, তাঁদের চিকিৎসার ভার চাকরি দাতা বহন করবে, এই অল্প কিছুদিন আগেই এই নিয়ম স্বীকৃতি পেয়েছে৷
ছবি: imago/R. Lueger
পাইলটদের ক্যানসার বেশি হয়
অন্যান্যদের তুলনায় পাইলটদের ত্বক ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ৷ কারণ অনেক লম্বা সময় গ্লাসের জানালা দিয়ে তাদের শরীর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি গ্রহণ করে থাকে৷ অ্যামেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা একটি গবেষণার ফলাফলে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷