বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কঠোর আন্দোলন শুরু করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে ঈদের আগেই৷ তবে তাঁর উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু জানান, মহাসমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে ঈদের পর৷
বিজ্ঞাপন
৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বেচনের পর থেকেই বিএনপির লাগাতার আন্দোলন শুরু করার কথা ছিল৷ কিন্তু তা হয়নি৷ পরে তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল গোছানোর কথা বলে উপজেলা নির্বাচনের পর আন্দোলন শুরুর কথা বলেছিল৷ কিন্তু তাও শেষ পর্যন্ত হয়নি৷ এরপর, গত মঙ্গলবার, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পরে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে৷ এ জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান৷
অন্যরকম নির্বাচন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়নি৷ নির্বাচনের দিনের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এজন্য ৫৯ জেলায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বাকি পাঁচটি জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অলস সময়
ভোটার না থাকায় ঢাকার মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলসভাবে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোটারের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি ভোটকেন্দ্রের ছবি এটি৷ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ভোটারদের জন্য বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটার নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখানেও একই অবস্থা
ছবিটি হারম্যান মাইনার কলেজ কেন্দ্রের৷ পাশাপাশি স্থাপিত কয়েকটি বুথ যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ এটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন৷ একতরফার সঙ্গে আছে ব্যাপক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিড়ম্বনার শিকার
নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে অনেক ভোটার ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে কেউ কেউ অবশ্য কষ্টটা শিকার করেই ভোট দিয়েছেন৷ ছবিতে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে দেখা যাচ্ছে৷ তাঁদের সহায়তা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
ভোটাধিকার প্রয়োগ
ভোট দিচ্ছেন একজন ভোটার৷ অবশ্য তাঁর মতো ভাগ্যবান হতে পারেননি দেশের মোট ভোটারের শতকার ৫২ জন৷ অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এসব ভোটারের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ এই কারণে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে পারেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ভোটার
ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের অপেক্ষায় কয়েকজন নারী ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
উৎসাহে কমতি নেই
আব্দুল হাকিম নামে ৮৯ বছরের এই ভোটার দুই ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেনা সদস্যদের পাহারা
দুজন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন৷ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেখানে ছিলেন সেনা সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
9 ছবি1 | 9
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলকে জানিয়েছেন যে, ঈদের পরে বলতে খালেদা জিয়া রোজার ঈদের কথাই বলেছেন৷ রোজার ঈদের পর ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়া আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন৷
কী ধরণের আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এবার আন্দোলনে প্রথম কাজ হবে জোটের ১৯ দলকে পুরোপুরি আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা৷ এ জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সনসহ শীর্ষ নেতারা শিগগিরই জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ এছাড়া তৃণমূলের সংগঠন গোছানোর কাজও এই সময়ের মধ্যে শেষ করে আনা হবে৷''
শামসুজ্জামান দুদু জানান, ‘‘পুরো রোজার মাসকে গণসংযোগের কাজে ব্যবহার করা হবে৷ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত, রাজধানী থেকে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইফতার মাহফিল থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই গণসংগের কাজ করা হবে৷''
র্যাব – বিতর্কিত এক বিশেষ বাহিনী
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন, ‘‘ঈদের পরপরই সংলাপ, সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে একটি সংক্ষিপ্ত সময় বেধে দেয়া হবে৷ আর সরকার তা মেনে না নিলে ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়া আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন৷'' তাঁর কথায়, ‘‘এই কর্মসূচিতে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও এবং লংমার্চের মতো কর্মসূচি থাকবে৷''
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সরকার র্যাব পুলিশ এবং প্রশাসন যন্ত্রকে বিরোধী দল দমনে ব্যবহার করছে৷ তবে নানা ঘটনায় তারা বিতর্কিতও হয়ে পড়েছে৷ তাই এবার তাদের তৎপরতা কম থাকবে বলেই মনে করি আমরা৷''
এদিকে সংলাপ নিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন শামসুজ্জামান দুদু৷ রাষ্ট্রপতি জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘সংলাপ হবে সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে৷''
দুদু বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি এই মন্তব্য করে দলীয় চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন৷ কিন্তু রাষ্ট্রপতি কোনো দলের হতে পারেন না, তিনি সবার৷''