বাংলাদেশে ডিম, মুরগি, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী৷ অন্যদিকে রোজার জন্য ছয়টি আমদানি নির্ভর ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলায় গতি নেই৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে রমজান এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে৷ সেখানে এবার রোজার আগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি৷ রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের আমদানিও গত বছরের তুলনায় কমেছে৷ তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে৷ তাই সংকট তৈরি হবে না৷ একই আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীও ভোক্তাদের একসাথে বেশি পণ্য না কেনার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ ভোক্তা অধিকারকর্মীরা মনে করেন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জরুরি৷
বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম
মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে রোজা শুরু হচ্ছে৷ প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও গত দুই সপ্তাহে মুরগি ও ডিমের দাম শতকরা ২৫ ভাগ বেড়েছে৷ প্রতিদিনই তা ক্রমাগত বাড়ছে৷
দুই সপ্তাহ আগে মুরগির প্রতি ডিমের দাম ছিল নয় টাকা৷ এখন তা ১২ টাকা৷ এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিলো ১৬০ টাকা৷ তা বেড়ে হয়েছে ২১০ টাকা৷ একইভাবে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ৷
কাঁঠাল বাগান বাজারের মাছ বিক্রেতা রতন মিয়া জানান, মাছের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে৷ রোজায় আরো বাড়বে৷ কারণ তখন চাহিদা আরো বেড়ে যাবে৷ কম দামের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়াও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে৷’’ তার দাবি, ‘‘সরবরাহ কম তাই মাছের দাম বাড়ছে৷ আর সব কিছুর দাম বাড়ায় মাছের দামও বাড়ছে৷ একটা বাড়লে আরেকটা বাড়ে৷’’
রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজের৷ রোজার আগে তাই এই ছয়টি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে৷
কিন্তু চলতি অর্থবছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এসব পণ্য আমদানি কমেছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি৷
ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলায় সমস্যা হওয়ায় কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়ায় বাজারে সেগুলো দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
গত বছর রমজানে ছোলার দাম ছিলো প্রতি কেজি ৭০ টাকা৷ এখন রোজা শুরুর আগেই কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা৷
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে জানুয়াারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন৷ এক বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন৷
এলসি খোলার পর বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে৷ গত তিন মাসে ছোলার আমদানি কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ৷ তবে চিনির আমদানি স্বাভাবিক আছে৷ তারপরও দাম বাড়ছেই৷
আমদানি কমেছে খেজুরেরও৷ গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয় ২২ হাজার মেট্রিক টন৷ গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিলো ৪০ হাজার মেট্রিক টন৷
বিশ্ববাজারে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে: মোস্তফা হায়দার
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস এবং পরবর্তী রোজার এক মাসের চাহিদা অনুযায়ী ওই ছয়টি পণ্য আমদানিতে ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন৷ আর শুধু রোজার এক মাসের চাহিদা পূরণে এসব পণ্য আমদানিতে প্রয়োজন ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার৷ কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপে এবার ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারেননি৷
বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল কি মিলবে?
টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘‘পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে৷ রোজার পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে৷ আমরা আগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি খুলতে পারছি৷ তবে নভেম্বর জানুয়ারিতে এই সুবিধা ছিল না৷ ফলে রমজানে গতবারের মত আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ থাকবে না৷”
তিনি জানান, বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলসহ আরো কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে৷ তবে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি৷ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বাজারে দাম কেমন হবে তা নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের উপরে৷ চাহিদার তুলনায় পণ্য কম হলে দাম বাড়তি হবে৷''
এদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেখানেও আমদানি করা পণ্যের সবরাহ কম৷
বাংলাদেশব্যাংকযাবলছে
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রমজানে খেজুর, সয়াবিন তেল, চিনিসহ যেসব নিত্যপণ্য ভোক্তাদের বেশি প্রয়োজন হয়, সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক ২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের হিসেব দিয়ে এই কথা বলেছেন৷ তার মতে, ‘‘যদি পণ্য সরবরাহ ও সাপ্লাই চেইন নিবিড়ভাবে তদারকি নিশ্চিত করা যায়, পণ্যগুলো যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে সহজভাবে সরবরাহ করা যায়, তাহলে রোজার মধ্যে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না৷”
তিনি আরো বলেন," বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমরা বাজার মনিটরিং করছি৷ যখন যে জায়গায় যে ধরনের নীতি সহায়তা দরকার হচ্ছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিচ্ছে৷ এলসির ক্ষেত্রে আরও কোনো সহযোগিতা দরকার হলে তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷”
সিন্ডেকেট বন্ধ করতে পারলে সংকটের আশঙ্কা নেই: নাজের হোসেন
সিন্ডিকেট বন্ধের আহ্বান
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য দিচ্ছে তাতে রমজানে আমদানি করা পণ্যের সংকট হওয়ার কথা নয়৷ তবে আমদানি পণ্যের সিন্ডিকেট আছে৷ কয়েকজন আমদানিকারক বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন৷ তাই তাদের এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে পারলে সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই৷ যখন ডলার সংকট বা এলসি খোলায় সংকট ছিল না তখনও তো তারা সংকট তৈরি করেছে৷ তাই এই সিন্ডিকেটকেই নজরে রাখতে হবে৷''
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী রমজান মাসের জন্য সব পণ্য এক সঙ্গে না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রেতাদের৷ তিনি বলেছেন, "রমজানের প্রথম সপ্তাহে ক্রেতারা যেভাবে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন, সেটা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে৷ দোকানে যখন ১০০ কেজি মাল থাকে, তখন যদি ১০ জন ক্রেতার প্রত্যেকে একসঙ্গে ১০০ কেজি করে কিনতে চায় তখন মনে হয় সংকট, যেটা আর্টিফিশিয়াল সংকট৷”
দেলোয়ারা বেগম, মুজিবুল হক, ঝর্ণা রানী দাশরা কারওয়ান বাজারে যান কিছুটা কম দামে নিত্যপণ্য কেনার আশায়৷ দু-একটি পণ্য ছাড়া বাকিগুলোর দাম এমন যে দেলোয়ারা বেগম জানতে চাইলেন, ‘‘গরিব মানুষ বাঁচবে কী করে?’’ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সয়াবিন তেলের দাম চড়া
সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে চার দিন আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৯২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৮৫ টাকা। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম সরকারিভাবেই নির্ধারণ করা আছে ৯৪৫ টাকা। কিন্তু কারওয়ান বাজারে পাইকারি মার্কেটে ৯২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন ব্যবসায়ী সুমন তালুকদার।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
চালও নাগালের বাইরে
সবচেয়ে মোটা চালের নাম স্বর্ণা। তা-ও কেজি ৫২ টাকা। মিনিকেট ৭৫ টাকা আর নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা জানালেন, দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি চালের দাম ৫ থেকে ৮ টাকা কম ছিল। গত দুই মাসে পর্যায়ক্রমে বেড়েছে চালের দাম। পরিস্থিতি এমন যে গরিবের পক্ষে মোটা চাল কিনে খাওয়াও দায়।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ডালের দামও বেশি
প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে ডালের দাম। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর পর্যায়ক্রমে এই দাম বেড়েছে। মসুর ডালের কেজি আগে ছিল ১১৫ টাকা, এখন ১৩০ টাকা। মোটা মসুরের ডালও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুগ ডাল ৮৫ টাকা থেকে হয়েছে ৯৫ টাকা। ছোলার ডাল ৬৫ টাকা থেকে হয়েছে ৭৫ টাকা।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
লাফিয়ে বাড়ছে মুরগির দাম
ব্রয়লার মুরগি এখন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। পাকিস্তানি কর্ক বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি দরে। আগে এই ধরনের মুরগির কেজি ছিল আড়াইশ’ থেকে ২৬০ টাকা। আর দেশি মুরগির দাম নাগালের বাইরে। সাড়ে ৪শ’ টাকা কেজি দরে এখনও বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৪০০ টাকার মতো।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
চাষের মাছও কেনা দায়
নদীর কোনো মাছ এখন আর ৫০০ টাকা কেজির কমে পাওয়া যায় না। আগে একটু কম দাম ছিল চাষের মাছের। যেমন, চাষের কই বিক্রি হতো ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, এখন বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ’ টাকায়। চাষের পাঙ্গাস মাছও এখন ৪০০ টাকা কেজি। চাষের রুই মাছের কেজি সাড়ে ৩শ’ টাকা। এছাড়া নদীর মাছের মধ্যে পাবদা, চিংড়ি, ট্যাংড়া, পুঁটি, বাইম, আইড়- এর দাম ৫৫০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সবজির দামে সামান্য স্বস্তি
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছিল সবজির দাম। তবে পর্যায়ক্রমে তা একটু কমেছে। আলুর কেজিপ্রতি দাম উঠেছিল ৪০ টাকায়, এখন তা নেমে এসেছে ২৫-৩০ টাকায়। বেগুন প্রকার ভেদে ৪০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। ঢেড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসবের দাম কয়েকদিন আগে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি ছিল।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
স্থিতিশীল পেঁয়াজ
বর্তমানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তবে কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। সেখানে অবশ্য ৫ কেজির কম কেনা যায় না। দুই সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে ৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে পেঁয়াজের বাজার।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
উত্থানের পর ডিমের দামে স্বস্তির পতন
ডিমের দাম হু হু করে বাড়ছিল। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হতো ব্রয়লার মুরগির ডিম। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর সেটা ১৫০ টাকায় উঠেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বানিজ্যমন্ত্রী ডিম আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর দাম কমতে শুরু করে। এখন আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মুরগির খামারিরা সিন্ডিকেট করে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়েছিলেন।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
কাঁচা মরিচে স্বস্তি
কাঁচা মরিচের বাজারে বেশ স্বস্তি ফিরেছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর কাঁচা মরিচের কেজি এক পর্যায়ে ৩০০ টাকায় উঠেছিল। তবে খুচরা বাজারেই এখন কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। কারওয়ান বাজারে দাম আরো কম। শনিবার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেল কেউ কেউ ৩০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করছেন কাঁচা মরিচ। বিক্রেতারা বলছেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় কাঁচা মরিচের গাছগুলো পচেনি, বরং ফলন ফালো হয়েছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
কারওয়ান বাজারে দাম একটু কম
শনিবার কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে দেখা গেল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ঝর্ণা রানী দাসকে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, তেঁজকুনি পাড়া থেকে বাজার করতে এসে তিনি দেখেছেন কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি সবজি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে পাওয়া যায়।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
‘হিসাব মিলছে না’
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অবসর নেয়া মুজিবুল হকের এখন চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। তারপরও কলাবাগান থেকে কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে তার হিসেব মিলছে না। একটু কমের আশায় কারওয়ান বাজার এসেছেন। একবারে পুরো সপ্তাহের বাজার করে নিয়ে যাবেন তিনি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
‘বেতন তো বাড়ছে না!’
সরকারি চাকরি করেন আহসান কবীর। নিজের পরিচয় খানিকটা লুকিয়ে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সবকিছুর দামই বেড়ে গেছে। কিন্তু বেতন তো বাড়েনি। মানুষ চলবে কিভাবে? তাই ছুটির দিনগুলোতে যে জিনিস যেখানে কমে পাওয়া যায় সেখান থেকে কিনি। সে কারণে এসেছি কারওয়ান বাজারে। পুরো সপ্তাহের বাজার এখান থেকে করলে অন্তত ৪-৫শ’ টাকা সেভ হবে।’’
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
গরিব মানুষের বেঁচে থাকা দায়
গৃহবধূ দেলোয়ারা বেগমের পাঁচ জনের সংসার। তারা স্বামী-স্ত্রী আর দুই সন্তান ও শ্বাশুড়ি। পাড়ার মোড়ে তার স্বামী চায়ের দোকান চালান। দোকান থেকে প্রতিদিন ৩-৪শ’ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া, থাকা-খাওয়া সব চালানো কঠিন৷ বললেন, ‘‘করোনার পর তো ছেলে-মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সংসারই চলে না, ওদের পড়াবো কীভাবে? এখন যে অবস্থা তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষের বেঁচে থাকাই দায়৷’’