সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে রোনাল্ডোকে প্রথম থেকে নামাননি কোচ ফেরনান্দো সান্তোস। এনিয়ে ম্যাচের পর কী বললেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সান্তোস জানিয়েছেন, রোনাল্ডোকে প্রথম থেকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত ছিল কৌশলগত। আর কোনো কারণ নেই সিআর সেভেনকে বসানোর।
২০০৬ সালের পর দেশের হয়ে এই প্রথমবার কোনো ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকলেন তিনি। তাকে বসানোর সাহস দেখিয়েছেন সান্তোস। তার সেই বাজি খেটে গিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ম্যাচে রোনাল্ডোর হাবভাব মেনে নিতে পারেননি কোচ। কিন্তু সুইজারল্যান্ডেরম্যাচের পর সান্তোস বলেছেন, যা হয়েছে, তা অতীত। ক্লোজড চ্যাপ্টার। রোনাল্ডো বিশ্বের অন্যতম সেরা প্লেয়ার। তিনি পেশাদারত্ব নিয়ে খেলেন। তিনি আমাদের অধিনায়ক। কিন্তু আমাকে টিমের সকলকে নিয়ে ভাবতে হয়।
কোচ হিসাবে এটাই কি সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন শুনেই সান্তোসের জবাব, আমার সঙ্গে রোনাল্ডোর সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। ওর বয়স যখন ১৯, সেই সময় থেকে ওকে আমি চিনি। তারপর তো জাতীয় দলে আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে আছি। তার দাবি, রোনাল্ডো এবং আমি কখনোই আমাদের পেশাদার পরিচয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়কে গুলিয়ে ফেলি না। আমাদের টিমে রোনাল্ডো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।
রোনাল্ডো কী করলেন?
পর্তুগালের ফুটবল টিম মাঠে নামছে, আর রোনাল্ডো রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে যাচ্ছেন, এই ঘটনা ২০০৬-এর পর দেখা যায়নি। রোনাল্ডো রিজার্ভ বেঞ্চে বসে বসে দেখলেন দল একের পর এক গোল করছে। রামোসের প্রথম গোল নির্বিকারভাবে গালে হাত দিয়ে দেখলেন তিনি। পেপের গোলের পর তিনি কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে ছুটে গিয়ে তাদের অভিবাদন জানালেন।
রোনাল্ডো কে?
রোনাল্ডোকে চেনেন? হ্যাঁ, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর কথা বলছি৷ ফুটবলের এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম সিআর সেভেন৷ আরো জানতে দেখুন এই ছবিঘর৷
ছবি: REUTERS
নামকরণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো দস সান্তোস ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন৷ রাঁধুনি মা ও পৌরসভার মালি ও একজন খণ্ডকালীন ফুটবল কিটম্যান বাবা তাঁদের চতুর্থ ও কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রেখেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের নাম অনুসারে৷
ছবি: picture-alliance/Newscom/DoD
দুরন্ত রোনাল্ডো
দুরন্ত ছিলেন ছোটবেলা থেকেই৷ স্কুলে জনপ্রিয়ও ছিলেন৷ তবে একবার এক শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবিও করেন৷ চেয়ার ছুঁড়ে মারেন৷
ছবি: dpa
হার্টের সমস্যা
ছোটবেলাতেই ফুটবল খেলা শুরু করেন রোনাল্ডো৷ প্রথমে তাঁর বাবা যে ক্লাবের কিটম্যান ছিলেন, সে ক্লাবেই৷ এরপর দু’বছর খেলেন নাৎসিওনালে৷ ১২ বছর বয়সেই তিনি স্পোর্টিং সিপি’র সঙ্গে চুক্তি করেন দেড় হাজার ইউরোতে৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তাঁর হৃৎপিণ্ডে৷ তাঁর হার্ট রেট সাধারণের চেয়ে বেশি ছিল, যাকে বলা হয় রেসিং হার্ট৷ সে সময় একটি অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাঁকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C.A. Messinis
মায়ের সঙ্গে চুক্তি
১৪ বছর বয়সে রোনাল্ডো টের পান যে তিনি প্রাক-পেশাদার ফুটবল খেলার সামর্থ্য রাখেন৷ তখন মায়ের সঙ্গে চু্ক্তি করেন যে, পড়ালেখায় আপাতত ইস্তফা দেবেন এবং ফুটবলে মনোযোগ দেবেন৷
ছবি: AP
এক সিজনেই সব
১৬ বছর বয়সে তিনি স্পোর্টিংয়ের যুব দলে সুযোগ পান৷ এরপর এক সিজনেই তিনি অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ ও মূল দলে খেলেন৷ ২০০২ সালে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয় সিআর সেভেনের৷ প্রথম ম্যাচেই করেন দুই গোল৷ এরপর লিভারপুল, বার্সেলোনার ম্যানেজারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর প্রতিনিধির৷ আর্সেনালের তৎকালীন ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গারও দেখা করেন তাঁর সঙ্গে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Suki
চিনতে ভুল করেননি স্যার অ্যালেক্স
স্পোর্টিংয়ের কাছে ২০০৩ মৌসুমে ৩-১ গোলে হেরে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড৷ ম্যানইউ ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন তখনই রোনাল্ডোকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নেন৷ এর জন্য ১.২২৪ কোটি ডলার খরচ করতে পিছপা হননি তিনি৷
ছবি: NICOLAS ASFOURI/AFP/Getty Images
থিয়েটার অফ ড্রিমসের সময়গুলো
ফার্গির আস্থার প্রতিদান দেন রোনাল্ডো ২০০২-০৩ থেকে ২০০৮-০৯ মৌসুম পর্যন্ত রেড ডেভিলদের হয়ে ২৫৯ ম্যাচে ১১৩টি গোল করে৷ শুধু তাই নয়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে পরপর তিনটি লিগ, একটি এফএ কাপ, একটি লিগ কাপ, একটি কমিউনিটি শিল্ড, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও একটি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ জেতান ক্রিস্টিয়ানো৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Shimizu
গ্যালাকটিকোদের দলে
ইংল্যান্ড জয়ের পর এরপর স্পেন পাড়ি জমান সিআর সেভেন৷ সে সময়ের রেকর্ড ৮ কোটি পাউন্ড ট্রান্সফার ফি’তে ২০০৯-১০ মৌসুমে যোগ দেন রেয়াল মাদ্রিদে৷ ২০১৭-১৮ মৌসুম পর্যন্ত ৪৩৮টি ম্যাচ খেলে ৪৫০টি গোল করেন গ্যালাকটিকোদের হয়ে৷ শিরোপা জিতেছেন, দুটি লা লিগা, দুটি কোপা ডেল রে, দুটি সুপারকোপা ডে এসপানা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি উয়েফা সুপার কাপ ও একটি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ডকাপের৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Wu
এবার ইটালিতে
ইংল্যান্ড ও স্পেনে পৃথিবীর সেরা তিন লিগের দু’টি জয় করা শেষ৷ তাই তিনিই যে নাম্বার ওয়ান তা প্রমাণ করতে এবার ২০১৮-১৯ মৌসুমে ইটালিতে পা রাখেন ক্রিস্টিয়ানো৷ ইয়ুভেন্তুসে ১০ কোটি ইউরোর ট্রান্সফার ফিতে যোগ দেন তিনি৷
লিওনেল মেসির মতো রোনাল্ডোরও পর্তুগালের হয়ে বিশ্বসেরার মুকুট পরা হয়নি৷ কিন্তু একক নৈপুণ্যে না হলেও তাঁর কারণেই পর্তুগাল ইউরো ২০১৬-এর শিরোপা জেতে, যদিও ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে তিনি খেলেছেন মাত্র ২৫ মিনিট৷ শুধু তাই নয়, তিনি তাঁর দেশের পক্ষে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Duarte
ব্যক্তিগত অর্জন
মেসির মতো রোনাল্ডোও চারবার বালঁ দর (ফিফা বালঁ দর ও বালঁ দর) জিতেছেন৷ আর ২০০৮-এ হয়েছেন ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন৷ এছাড়া অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে৷ ওয়ার্ল্ড সকার ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা নির্বাচিত হয়েছেন রেকর্ড ৫ বার৷ তিনবার ইউরোপ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন৷ ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতেছেন চারবার৷
ছবি: picture-alliance/AP/L'Equipe/F. Faugere
ব্যক্তিগত জীবন
রোনাল্ডোর ব্যক্তিগত জীবন বর্ণময়৷ বিয়ে করেননি৷ সম্পর্ক গড়েছেন ও ভেঙেছেন একাধিকবার৷ তাঁর চার সন্তান৷ প্রথম সন্তানের মাতৃপরিচয় প্রকাশ করেননি৷ পরের দুই সন্তান জমজ৷ যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভ ভাড়া করে এই সন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ সবশেষ স্প্যানিশ বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজের সঙ্গে আরেক সন্তান আছে তাঁর৷ রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া ধর্ষণের অভিযোগও এনেছেন এক নারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Buholzer
12 ছবি1 | 12
রামোসের বাকি দুই গোলের সময় হাততালি দিলেন তিনি। তারপর ৭৩ মিনিটে মাঠে নামলেন রোনাল্ডো। মুখে হাসি। তাকে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড দিলেন পেপে। অফসাইডে গোল দিলেন। ফ্রিকিক বিপক্ষের প্লেয়ারদের গায়ে মারলেন। গোলের মুখ খুলতে পারলেন না।