ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বর্তমান পরিসংখ্যান হলো, ১০৯৭টি ম্যাচ, ৮০১ গোল। আর্সেনালের বিরুদ্ধে দুই গোল করে এই কৃতিত্ব অর্জন রোনাল্ডোর।
আটশর বেশি গোল করলেন রোনাল্ডো। ছবি: Luca Bruno/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও আর্সেনালের বিরুদ্ধে খেলার ফলাফল ছিল ৩-২। ম্যানচেস্টারের তিন গোলের মধ্যে রোনাল্ডো দুইটি গোল করেছেন। তার ফলে তিনি বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হলেন। দেশ ও ক্লাব মিলিয়ে মোট ৮০০টি গোল দেয়ার কৃতিত্ব। এর মধ্যে কোনো ফ্রেন্ডলি ম্যাচ বা স্বীকৃতিহীন প্রতিযোগিতায় ম্যাচের হিসাব ধরা নেই।
দেশের হয়ে ১১৫টি গোল করেছেন তিনি। জুভেন্টাসের হয়ে ১০১টি, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৪৫০টি, স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে পাঁচটি এবং ম্যনচেস্টার উইনাইটেডের হয়ে দুই দফায় মোট ১৩০টি গোল করেছেন। তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সব চেয়ে বেশি গোল করেছেন।
প্রিমিয়ার লিগের সব চেয়ে বেশি গোল যিনি করেছেন, সেই অ্যালেন শিয়েরার অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওকে বলেছেন, ''ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো খেললে শুধু বসে দেখে যেতে হয়, ওয়াও বলতে হয় এবং তার প্রশংসা করতে হয়।'' তার মতে, ''রোনাল্ডোর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব রয়েছে। ফুটবলের শীর্ষে পৌঁছানো শক্ত। একবার পৌঁছালে সেখানে দীর্ঘদিন থাকাটা আরো কঠিন। প্রত্যেক সপ্তাহে পারফরমেন্সের উপর গোটা বিশ্ব নজর রাখে।''
রোনাল্ডো কে?
রোনাল্ডোকে চেনেন? হ্যাঁ, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর কথা বলছি৷ ফুটবলের এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম সিআর সেভেন৷ আরো জানতে দেখুন এই ছবিঘর৷
ছবি: REUTERS
নামকরণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো দস সান্তোস ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন৷ রাঁধুনি মা ও পৌরসভার মালি ও একজন খণ্ডকালীন ফুটবল কিটম্যান বাবা তাঁদের চতুর্থ ও কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রেখেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের নাম অনুসারে৷
ছবি: picture-alliance/Newscom/DoD
দুরন্ত রোনাল্ডো
দুরন্ত ছিলেন ছোটবেলা থেকেই৷ স্কুলে জনপ্রিয়ও ছিলেন৷ তবে একবার এক শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবিও করেন৷ চেয়ার ছুঁড়ে মারেন৷
ছবি: dpa
হার্টের সমস্যা
ছোটবেলাতেই ফুটবল খেলা শুরু করেন রোনাল্ডো৷ প্রথমে তাঁর বাবা যে ক্লাবের কিটম্যান ছিলেন, সে ক্লাবেই৷ এরপর দু’বছর খেলেন নাৎসিওনালে৷ ১২ বছর বয়সেই তিনি স্পোর্টিং সিপি’র সঙ্গে চুক্তি করেন দেড় হাজার ইউরোতে৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তাঁর হৃৎপিণ্ডে৷ তাঁর হার্ট রেট সাধারণের চেয়ে বেশি ছিল, যাকে বলা হয় রেসিং হার্ট৷ সে সময় একটি অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাঁকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C.A. Messinis
মায়ের সঙ্গে চুক্তি
১৪ বছর বয়সে রোনাল্ডো টের পান যে তিনি প্রাক-পেশাদার ফুটবল খেলার সামর্থ্য রাখেন৷ তখন মায়ের সঙ্গে চু্ক্তি করেন যে, পড়ালেখায় আপাতত ইস্তফা দেবেন এবং ফুটবলে মনোযোগ দেবেন৷
ছবি: AP
এক সিজনেই সব
১৬ বছর বয়সে তিনি স্পোর্টিংয়ের যুব দলে সুযোগ পান৷ এরপর এক সিজনেই তিনি অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ ও মূল দলে খেলেন৷ ২০০২ সালে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয় সিআর সেভেনের৷ প্রথম ম্যাচেই করেন দুই গোল৷ এরপর লিভারপুল, বার্সেলোনার ম্যানেজারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর প্রতিনিধির৷ আর্সেনালের তৎকালীন ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গারও দেখা করেন তাঁর সঙ্গে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Suki
চিনতে ভুল করেননি স্যার অ্যালেক্স
স্পোর্টিংয়ের কাছে ২০০৩ মৌসুমে ৩-১ গোলে হেরে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড৷ ম্যানইউ ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন তখনই রোনাল্ডোকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নেন৷ এর জন্য ১.২২৪ কোটি ডলার খরচ করতে পিছপা হননি তিনি৷
ছবি: NICOLAS ASFOURI/AFP/Getty Images
থিয়েটার অফ ড্রিমসের সময়গুলো
ফার্গির আস্থার প্রতিদান দেন রোনাল্ডো ২০০২-০৩ থেকে ২০০৮-০৯ মৌসুম পর্যন্ত রেড ডেভিলদের হয়ে ২৫৯ ম্যাচে ১১৩টি গোল করে৷ শুধু তাই নয়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে পরপর তিনটি লিগ, একটি এফএ কাপ, একটি লিগ কাপ, একটি কমিউনিটি শিল্ড, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও একটি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ জেতান ক্রিস্টিয়ানো৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Shimizu
গ্যালাকটিকোদের দলে
ইংল্যান্ড জয়ের পর এরপর স্পেন পাড়ি জমান সিআর সেভেন৷ সে সময়ের রেকর্ড ৮ কোটি পাউন্ড ট্রান্সফার ফি’তে ২০০৯-১০ মৌসুমে যোগ দেন রেয়াল মাদ্রিদে৷ ২০১৭-১৮ মৌসুম পর্যন্ত ৪৩৮টি ম্যাচ খেলে ৪৫০টি গোল করেন গ্যালাকটিকোদের হয়ে৷ শিরোপা জিতেছেন, দুটি লা লিগা, দুটি কোপা ডেল রে, দুটি সুপারকোপা ডে এসপানা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি উয়েফা সুপার কাপ ও একটি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ডকাপের৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Wu
এবার ইটালিতে
ইংল্যান্ড ও স্পেনে পৃথিবীর সেরা তিন লিগের দু’টি জয় করা শেষ৷ তাই তিনিই যে নাম্বার ওয়ান তা প্রমাণ করতে এবার ২০১৮-১৯ মৌসুমে ইটালিতে পা রাখেন ক্রিস্টিয়ানো৷ ইয়ুভেন্তুসে ১০ কোটি ইউরোর ট্রান্সফার ফিতে যোগ দেন তিনি৷
লিওনেল মেসির মতো রোনাল্ডোরও পর্তুগালের হয়ে বিশ্বসেরার মুকুট পরা হয়নি৷ কিন্তু একক নৈপুণ্যে না হলেও তাঁর কারণেই পর্তুগাল ইউরো ২০১৬-এর শিরোপা জেতে, যদিও ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে তিনি খেলেছেন মাত্র ২৫ মিনিট৷ শুধু তাই নয়, তিনি তাঁর দেশের পক্ষে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Duarte
ব্যক্তিগত অর্জন
মেসির মতো রোনাল্ডোও চারবার বালঁ দর (ফিফা বালঁ দর ও বালঁ দর) জিতেছেন৷ আর ২০০৮-এ হয়েছেন ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন৷ এছাড়া অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে৷ ওয়ার্ল্ড সকার ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা নির্বাচিত হয়েছেন রেকর্ড ৫ বার৷ তিনবার ইউরোপ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন৷ ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতেছেন চারবার৷
ছবি: picture-alliance/AP/L'Equipe/F. Faugere
ব্যক্তিগত জীবন
রোনাল্ডোর ব্যক্তিগত জীবন বর্ণময়৷ বিয়ে করেননি৷ সম্পর্ক গড়েছেন ও ভেঙেছেন একাধিকবার৷ তাঁর চার সন্তান৷ প্রথম সন্তানের মাতৃপরিচয় প্রকাশ করেননি৷ পরের দুই সন্তান জমজ৷ যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভ ভাড়া করে এই সন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ সবশেষ স্প্যানিশ বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজের সঙ্গে আরেক সন্তান আছে তাঁর৷ রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া ধর্ষণের অভিযোগও এনেছেন এক নারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Buholzer
12 ছবি1 | 12
রোন্যাল্ডোই কি এক নম্বরে?
ফুটবলের সব চেয়ে বেশি গোল কে করেছেন, তা নিয়ে ডেটাবেস নেই। কিন্তু শুধু সর্বোচ্চ পর্যায়ের অফিসিয়াল ম্যাচ ধরলে রোনাল্ডোর গোলের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি।
চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে, চেকোস্লোভাকিয়া ও অস্ট্রিয়ার হয়ে খেলা জোসেফ বিক্যান অফিসিয়াল ম্যাচে ৮২১টি গোল করেছেন। অন্যদের দাবি, তিনি ৮০৫টি গোল করেছেন, কিন্তু সেটা অফিসিয়াল, নন-অফিসিয়াল ও রিসার্ভ টিমের হয়ে।
পেলে ও রোমারিও এক হাজারের বেশি গোল করেছেন। কিন্তু ফ্রেন্ডলি ম্যাচ বাদ দিলে তাদের গোলসংখ্যা দাঁড়ায় সাতশর বেশি। বেসরকারি হিসাবরক্ষকরা বলেন, পেলে ৭৬৯ ও পুসকাস ৭৬১টি গোল করেছেন।
লিওনেল মেসি ৭৫৬টি গোল করেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে ৮০টি, বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২ ও পিএসজি-র হয়ে চারটি।
রোন্যাল্ডোর সামনে
ম্যানচেস্টার ইউনাইডেটে এবার নতুন অন্তর্বর্তী ম্যানেজার দায়িত্ব নেবেন। বৃহস্পতিবারের খেলা তিনি দর্শকাসন থেকে দেখেছেন। বলা হচ্ছিল, নতুন ম্যানেজারের স্টাইলের সঙ্গে রোনাল্ডোর মানিয়ে নিতে অসুবিধা হতে পারে। কারণ, তিনি বেশি পাস খেলা পছন্দ করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রোনাল্ডো আবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন তাকে দলে দরকার এবং কেন তাকে মহান ফুটবলার বলা হয়।