রেয়াল মাদ্রিদ আর ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন৷ রেয়ালকে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো ছাড়াও ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যেতে সহায়তা করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ফলে ১০ বছর পর ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসির বাইরে অন্য একজন ফিফার বর্ষসেরা হলেন৷
সোমবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে মডরিচের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়৷ তবে সেই অনুষ্ঠানে মেসি কিংবা রোনাল্ডো কেউ উপস্থিত ছিলেন না৷ সেরা তিন ফুটবলারের তালিকায় রোনাল্ডোর নাম থাকলেও তিনি অনুষ্ঠানে যাননি৷ আর গত ১২ বছরের মধ্যে এই প্রথম সেরা তিনের তালিকায় ছিলেন না মেসি৷
এমন অনুষ্ঠানে রোনাল্ডো-মেসির অনুপস্থিতির সমালোচনা করেছেন অনেকে৷ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মডরিচও৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকের নিজস্ব কারণ থাকে৷ অবশ্যই তাঁরা এখানে থাকলে আমার ভালো লাগত, কিন্তু তাঁরা নেই৷'' অবশ্য ঐ দুই খেলোয়াড়ের প্রশংসাও করেন মডরিচ৷ তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা এই বিশ্বের প্রধান দুই খেলোয়াড়৷'' তবে এবার ঐ দুজনের বাইরে অন্য খেলোয়াড়দের স্বীকৃতি দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মডরিচ৷ ভবিষ্যতে আরো ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডার এই অ্যাওয়ার্ড জিতবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
এর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় এবং উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মডরিচ৷ ‘‘এটা একটা অবিশ্বাস্য বছর ছিল৷ আমার জীবনের সেরা মরসুম,'' বলেন ৩৩ বছর বয়সি মডরিচ৷ বিশ্বকাপে দুটি গোল করা ছাড়াও রাশিয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে গোল করেন মডরিচ৷
ফিফার বর্ষসেরা তিন খেলোয়াড়ের তালিকায় মডরিচ ও রোনাল্ডো ছাড়া অন্য নামটি হচ্ছে লিভারপুল ও মিশরের মোহামেদ সালাহ৷ লিভারপুলের হয়ে গত মরসুমে ৪৪ গোল করায় সেরা তিনে ঠাঁই পান তিনি৷
এদিকে, চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ছয়বারের মতো সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন রোনাল্ডো৷ গত মরসুমে ঐ প্রতিযোগিতায় তিনি গোল করেন ১৫টি৷ এরপর বিশ্বকাপে গিয়ে চারটি গোল করেন৷ তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল না পাওয়ায় বর্ষসেরার প্রতিযোগিতায় মডরিচের পেছনে পড়ে যান রোনাল্ডো৷
খালি হাতে ফেরেননি সালাহ
বর্ষসেরা খেতাব না পেলেও সেরা গোলের পুরস্কার ‘পুসকাস অ্যাওয়ার্ড' জিতে নিয়েছেন সালাহ৷
এভারটনের বিপক্ষে করা সালাহর এই গোল চ্যাম্পিয়নস লিগে করা রোনাল্ডো ও গ্যারেথ বেলের গোলকে পেছনে ফেলে দেয়৷ সমর্থকরা অনলাইনে ভোট দিয়ে সালাহর গোলকেই সেরা হিসেবে রায় দেন৷
মেসি, রোনাল্ডোর ভোট পেয়েছেন যাঁরা
ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচনে সব দেশের অধিনায়ক ও কোচ ছাড়াও নির্বাচিত সাংবাদিকরা ভোট দিয়ে থাকেন৷ এবার অবশ্য প্রথমবারের মতো সমর্থকরাও অনলাইনে ভোট দিতে পেরেছেন৷
আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে মেসি যথাক্রমে মডরিচ, এমবাপ্পে ও রোনাল্ডোকে ভোট দিয়েছিলেন৷ তবে পর্তুগালের অধিনায়ক হিসেবে রোনাল্ডোর কোনো ভোট পাননি মেসি৷ রোনাল্ডো তাঁর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন যথাক্রমে রাফায়েল ভারান, মডরিচ ও গ্রিজমানকে৷
বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার সেরা তিন হলেন রোনাল্ডো, মেসি ও মডরিচ৷ আর কোচ জেমস ডে'র পছন্দ রোনাল্ডো, এমবাপ্পে ও গ্রিজমান৷
অন্যান্য পুরস্কার
সেরা কোচ: ফ্রান্সের দিদিয়ে দেশঁ
সেরা গোলরক্ষক: বেলজিয়ামের টিবো কর্তুয়া
সেরা নারী খেলোয়াড়: ব্রাজিলের মার্তা
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
ফুটবলারদের সবচেয়ে দামি দশ দলবদল
রেয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ইউভেন্টুসে গেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ এই ট্রান্সফারের জন্য ক্লাবটিকে গুনতে হচ্ছে ১১২ মিলিয়ন ইউরো৷ চলুন হালনাগাদ তালিকাটি দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
দশম স্থান: ফ্যঁর জ্যু ফন ডেইক
কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের আশা পূর্ণ হয়েছে৷ ডাচ রক্ষণভাগের ১ দশমিক ৯৩ মিটার লম্বা খেলোয়াড় ফ্যঁর জ্যু ফন ডেইককে চলতি বছরের শুরুতে এফসি সাউদাম্পটন ছেড়ে এফসি লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন৷ তাঁর ট্রান্সফার ফি ছিল ৮৪ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ইউরো৷ ফুটবল ইতিহাসের সবচয়ে দামি ডিফেন্ডার তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Kirk
নবম স্থান: রোমেলো লুকাকু
নিজের অবস্থানে এক অপ্রতিরোধ্য খেলোয়াড় রোমেলো লুকাকু৷ বল নিয়ে যখন তিনি ছুটতে শুরু করেন, তখন তাঁকে আটকানো প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে৷ ১ দশমিক ৯১ মিটার লম্বা এই বেলজিয়ান স্ট্রাইকার প্রিমিয়ার লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অন্যতম গোলদাতা৷ গতবছর ৮৪ দশমিক সাত মিলিয়ন ইউরো দিয়ে এভারটন থেকে তাঁকে দলে টেনে নেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড৷
ছবি: picture-alliance/empics/N. French
অস্টম স্থান: গঞ্জালো হিগুয়েইন
ভক্তদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও ২০১৬ সালে এসএসসি নাপোলি থেকে নব্বই মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’র বিনিময়ে ইউভেন্টুসে বদলি হন গঞ্জালো হিগুয়েইন৷ সেই সময় এই ট্রান্সফার ফি ছিল ইটালির ‘সিরি আ’ লিগের এক রেকর্ড৷ অবশ্য এত পয়সা খরচ করে লাভই হয়েছে ইউভেন্টুসের৷ লিগের ৩৫ খেলায় ৩৬ গোল করেছেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Di Marco
সপ্তম স্থান: গ্যারেথ বেল
রেয়াল মাদ্রিদ ২০১৩ সালে টটেনহাম হটস্পার থেকে গ্যারেথ বেলকে দলে ভেড়াতে ট্রান্সফার ফি হিসেবে খরচ করে ১০১ মিলিয়ন ইউরো৷ এটা ছিল সেসময় সবচেয়ে বড় ট্রান্সফার৷
ছবি: Getty Images/S. Forster
ষষ্ঠ স্থান: পল পগবা
গ্যারেথ বেলের রেকর্ড ভেঙেছেন পল পগবা, ২০১৬ সালে৷ ইউভেন্টুস থেকে এই ফরাসিকে দলে ভেড়াতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ট্রান্সফার ফি হিসেবে গুনেছে ১০৫ মিলিয়ন ইউরো৷
ছবি: Imago/Contrast
পঞ্চম স্থান: উসমান ডেম্বেলে
ট্রান্সফার ফি’র বিবেচনায় পগবার মতো হলেও উসমান ডেম্বেলেকে ডর্টমুন্ড থেকে নিজেদের দলে ভেড়াতে ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ‘অ্যাড-অনস’ হিসেবে গুনেছে বাড়তি অর্থ৷ অর্থাৎ, ট্রান্সফার ফি ১০৫ মিলিয়ন ইউরো৷ আর ‘অ্যাড-অনস’ যা হতে পারে সর্বোচ্চ ৪২ মিলিয়ন ইউরো৷ ফলে দুই বিবেচনায় সেসময় এই ট্রান্সফার ছিল এক রেকর্ড৷
ছবি: Reuters/A. Gea
চতুর্থ স্থান: ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো
এটা সত্যি যে, সবচেয়ে ব্যয়বহুল ট্রান্সফারের তালিকার শীর্ষে নেই ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ তবে এই তালিকায় দু’বার প্রবেশ করেছেন তিনি৷ ২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তাঁকে পেতে ৯৪ মিলিয়ন ইউরো গুনেছিল রেয়াল মাদ্রিদ৷ আর সম্প্রতি ১০০ মিলিয়ন ইউরোর মতো খরচ করে স্পেনের রাজধানী থেকে তাঁকে নিয়ে গেছে ইউভেন্টুস৷
ছবি: picture-alliance/SvenSimon/F. Hoermann
তৃতীয় স্থান: ফেলিপে কুটিনিয়ো
ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ফেলিপে কুটিনিয়োর ২০১৭ সালে এফসি লিভারপুল থেকে এফসি বার্সেলোনায় যাওয়ার ট্রান্সফার ফি ছিল ১২০ মিলিয়ন ইউরো৷ পাশাপাশি তাঁর সাফল্যের ভিত্তিতে বোনাস পেমেন্টও ছিল ৪০ মিলিয়ন পর্যন্ত৷ রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অন্যতম সফল খেলোয়াড় ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/A. Caparros
দ্বিতীয় স্থান: কিলিয়ান এমবাপে
বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল মেধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় কিলিয়ান এমবাপেকে৷ পাঁরি স্যঁ জার্মেই তাঁকে দলে পেতে ১৪৫ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি এবং ২০১৭/২০১৮ মৌসুমের জন্য ‘রেন্টাল ফি’ হিসেবে ৩৫ মিলিয়ন ইউরো গুনেছে৷ ১৯ বছর বয়সি এই তারকাকে ভবিষ্যৎ মেসি বা রোনাল্ডো হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Cacace
প্রথম স্থান: নেইমার
নেইমারের জন্য অনেকটা মজা করে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি চেয়েছিল এফসি বার্সেলোনা৷ ক্লাবটি মনে করেছিল, এত টাকা একজন খেলোয়াড়ের পেছনে কেউ খরচ করবে না৷ কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে কাতারের ব্যবসায়ী নাসের আল-খালিফি’র পাঁরি স্যঁ জার্মেই ক্লাব ২০১৭ সালে ব্রাজিলের এই ফুটবল তারকাকে দলে ভেড়ায়৷ খেলোয়াড় বদলের এই রেকর্ড শীঘ্রই কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না৷