কল্পবিজ্ঞান কাহিনি ও চলচ্চিত্রে রোবটের নানা কেরামতি আমরা দেখেছি৷ বাস্তবেও রোবট আজ অনেক ক্ষমতা আয়ত্ত করলেও এখনো আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠতে পারেনি৷ এবার রোবটের ‘অনুভূতি’ বাড়িয়ে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করে তুলতে এদের ডিজাইন করা হয়েছে৷ মানুষের পেশিশক্তির কাজ তারাই করবে, দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করবে, সমাজে বয়স্ক মানুষদের সেবা করবে, যাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷
‘সোশাল রোবটিক্স’ আমাদের ভবিষ্যতের জানালা৷ তবে আরও যান্ত্রিক করে তোলার বদলে রোবটকে আমাদের সহযোগী করার চেষ্টা চলছে৷
মিউনিখের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নতুন ধরনের রোবট সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ সান্ড্রা হিয়র্শে যতটা সম্ভব মানুষের আদলে রোবট তৈরির চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অচেনা পরিবেশে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া অত্যন্ত জটিল এক কাজ৷ আমরা যখন শহরের মধ্য দিয়ে অথবা একটা ঘরের মধ্যে হাঁটি, অথবা গাড়ি চালিয়ে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাই, তখন অনেকগুলি প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে চলে৷ কোনো রোবটকে তার জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করলে বোঝা যায়, সেই সব কাজ আসলে কতটা জটিল৷’’
রোবট যদি কোনোদিন আমাদের বাড়ির চেনা পরিবেশের অংশ হয়ে ওঠে, তাদের সবার আগে উপলব্ধি করতে শিখতে হবে৷ মানুষ ও নানা বস্তু চারিপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও তাদের অবস্থান বদলাচ্ছে৷ ফলে রোবটের নিজস্ব স্পেসও সমানে বদলে চলেছে৷
মানুষের মতো রোবট
আজকাল কিছু কিছু রোবট দেখতে অনেকটা মানুষের মতো হয়৷ আবার যারা দেখতে মানুষের মতো নয়, তারা আবার কাজে পুরোপুরি মানুষের মতো৷ সেরকম কয়েকটি রোবটের কথাই থাকছে আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাত মেলায়, কথাও বলে রোবট
এই রোবটটির নাম ‘রোবয়’৷ এর ত্বক এবং মাংসপেশি মসৃণ৷ রোবয় হ্যান্ডশেক করলে মনে হয় যেন কোনো মানুষের সঙ্গেই হাত মেলানো হলো৷ এই রোবট কথা বলতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতো আবেগও প্রকাশ করে৷
ছবি: Getty Images/Afp/John MacDougall
যে রোবট জানালা পরিষ্কার করে
জার্মানির তৈরি এই রোবটটির নাম ‘জাস্টিন’৷ ওকে তৈরি করা হয়েছিল মহাকাশযানের জন্য৷ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাঁচ বছর ছিল সে৷ পৃথিবীতে ফিরে তাকে মানুষের মতো অনেক কাজই করতে হয়৷ ঘরের জানালা পরিষ্কার করায় সে ওস্তাদ৷
ছবি: DW/F. Schmidt
‘লেখক’ রোবট
‘বায়োস’ নামের এই রোবটটি পেশাদার লেখকদের চেয়েও দ্রুত লিখতে পারে৷ তার বাহুর সঙ্গে লাগানো আছে কলম৷ সেই কলমে প্রয়োজন মতো কালি জোগান দেয়ার ব্যবস্থাও আছে৷ কালি-কলম হাতে সদাপ্রস্তুত ‘বায়োস’ ৮০ মিটার কাগজে মাত্র দশ সপ্তাহে হিব্রুতে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮০৫টি অক্ষর লিখে দেখিয়েছে৷
ছবি: robotlab
রেস্তোরাঁয় অর্ডার নেয়ার কাজও রোবটের
চীনের রেস্টুরেন্টে এ ধরনের রোবট ইতিমধ্যে কাজে নেমে পড়েছে৷ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে খাবারের ‘অর্ডার’ নেয় এমন রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার পরিবেশনে মানুষের চেয়েও দক্ষ
এই রোবটগুলো রেস্টুরেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাবার পরিবেশন করতে পারে৷ ‘ওয়েটার’ মানুষ হলে এক সময় তো ক্লান্ত হয়, কিন্তু রোবট কখনোই ক্লান্ত হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
খাবার গরম করে রোবট
রেস্টুরেন্ট বা ঘরে রান্নার কাজটুকু একবার করে দিলে তারপর যতবার খুশি সেই খাবার গরম করতে পারবে রোবট৷ খাবার গরম করার কাজে এই রোবট আসলেই খুব দক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
6 ছবি1 | 6
এখনো পর্যন্ত শিল্পক্ষেত্রের রোবট ও আমাদের মতো মানুষদের পরস্পরের থেকে দূরে রাখা হয়েছিল৷ তারা আমাদের শরীরে আঘাত করতে পারে, এমন বিপদের আশঙ্কা কম নয়৷ কোনো কিছু কাছে এলে রোবটকে তা বুঝতে হবে৷ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে ইঞ্জিনিয়ার ফিলিপ মিটেনডর্ফার এক কৃত্রিম ত্বক তৈরি করছেন৷
কৃত্রিম ত্বক মানুষের ত্বকের নকল করবে, সেভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে৷ তবে এত জটিল কাঠামো নকল করা সত্যি কঠিন কাজ৷ লক্ষ লক্ষ ইন্দ্রিয় কোষের দৌলতে মানুষ বাতাসের সামান্য ছোঁয়াও টের পায়৷ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ফিলিপ মিটেনডর্ফার এ বিষয়ে বললেন, ‘‘সম্প্রতি আমাদের শরীরে কিছু বিশেষ ধরনের রিসেপ্টর আবিষ্কৃত হয়েছে, যার সঙ্গে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ জড়িয়ে রয়েছে৷ হালকা করে হাত বোলানো বা আলিঙ্গনের মতো সামাজিক যোগাযোগ শনাক্ত করে সেগুলি৷ মানুষ কাছে এলে রোবটকেও এমন স্টিমুলাসের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শিখতে হবে৷’’
সব সিদ্ধান্ত নেবে গাড়ি!
এমন গাড়ির কথা তো শুনেছেন যা আপনাআপনি চলে, কোনো চালক লাগেনা? সেসব গাড়িতে সব সিদ্ধান্ত কে নেয়? মানুষ, নাকি গাড়ি?
ছবি: media.daimler.com
চালক ছাড়া ৬০০ মাইল
এ বছরের শুরুর দিকে এই আউডি-৭ গাড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি থেকে নিজে নিজেই পৌঁছে যায় ৬০০ মাইল দূরের লাস ভেগাসে৷ সাবধানের মার নেই- ভেবে স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে একজন বসেছিলেন বটে, কিন্তু তাঁকে কিছুই করতে হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Fets/Audi AG
চালকের আসনই নেই!
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কেমন হতে পারে তার একটা নমুনা মার্সিডিজ বেঞ্জের এই এফ০১৫ মডেল৷ গাড়িতে চালকের আসন নেই৷ যাত্রীদের আসনগুলোই মুখোমুখি৷ পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি এ গাড়ি রাস্তায় নামলে ঘণ্টায় ১২৫ মাইল বেগে ছুটতে পারবে৷
ছবি: media.daimler.com
অস্থির লোকদের জন্য নয়
যাঁরা সবসময় শুধু দ্রুতই ছুটতে চান তাঁদের জন্য কিন্তু এই গাড়ি নয়৷ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বিপদ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনে যে-কোনো মুহূর্তে গতি মন্থর করবে৷ সামনের গাড়ি বা অন্য কোনো বাহন থেকে নিরাপদ দূরত্বও বজায় রাখবে সবসময়৷
ছবি: imago/Jochen Tack
একে অন্যকে অনুসরণ করবে
মিউনিখে অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় নেমেছিল জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুটি গাড়ি৷ প্রথমটিকে দ্বিতীয়টি সবসময় পেছন থেকে অনুসরণ করবে- এমন প্রতিযোগিতা৷ পেছনের গাড়িটি কিন্তু একবারও নিয়ম অমান্য করেনি!
ছবি: DW
দুর্ঘটনা এড়ানো
অনেক সময় চালক সামনের পথ না দেখেও যখন দ্রুত গাড়ি চালাতে যান তখনই দুর্ঘটনা ঘটে৷ কুয়াশায় ঢাকা পথ, কিংবা প্রবল বর্ষণের মধ্যে প্রায়ই এমন হয়৷ কিন্তু রোবোটিক গাড়ির বেলায় কখনো এমন হবেনা৷ এ গাড়ি নিজেকে যেমন সামনের গাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখবে, তেমনি পেছনের গাড়িকেও সতর্ক করবে৷ ভবিষ্যতে এমন গাড়ি তৈরি করা হবে যে গাড়ি সামনে যে বাধা আছে সে খবর পেছনের গাড়িকেও জানিয়ে দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব তথ্যের জন্য আলাদা আলাদা সেন্সর
রোবোটিক গাড়ি তার চারপাশের সবকিছু আলাদা আলাদা চোখ দিয়ে দেখে৷ চোখের কাজটা করে সেন্সর৷ গুগল কার-এ থাকে এই ধরণের লেজার সেন্সর যার মাধ্যমে চারপাশের সবকিছুর ত্রিমাত্রিক ছবি ফুটে ওঠে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
লেজার স্ক্যানারের চোখে....
জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গাড়িটি কেমন দুর্গম পথ দিয়ে চলছে দেখুন! চলতে কিন্তু সমস্যা হচ্ছেনা৷ লেজার স্ক্যানার চার পাশটাকে স্ক্যান করছে, কম্পিউটার ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে দিচ্ছে আর তা দেখে দেখে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি৷
ছবি: Universität der Bundeswehr/TAS
মেড ইন জার্মানি
ডাইমলারের গবেষকরা নিরাপদ গাড়ি তৈরির জন্য অপটিক্যাল ক্যামেরাও ব্যবহার করছেন৷ উইন্ডশিল্ডের পেছনের সেন্সরটা রাস্তায় কী ঘটছে তা দেখে৷ গাড়ি চালনার এই নিরাপদ ব্যবস্থা ২০১১ সালে জার্মানির সেরা উদ্ভাবনের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
পথচারীদের ভাবনা কম
কম্পিউটার গাড়িকে জানায় চারপাশের কোন বস্তু কোন দিকে যেতে পারে৷ গাড়ি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়৷ ছবির এই গাড়ির সামনের পথচারী ডান দিক থেকে রাস্তা পার হচ্ছেন৷ তাঁকে কমলা রংয়ে আর ডান দিকের গাড়িগুলোকে সবুজ রংয়ে দেখানো হচ্ছে, যার অর্থ, এখন কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
9 ছবি1 | 9
কৃত্রিম কোষের দৌলতে যন্ত্র তার শরীর সম্পর্কে অনুভূতি পাচ্ছে৷ এমন রোবট তৈরি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যা সহযোগিতা করতে পারে এবং মানুষের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে৷
মানুষও অন্যের চেহারা দেখে তার মতলব বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে৷ একটি পরীক্ষার আওতায় রোবট ও মানুষ একসঙ্গে একটি টেবিল সরাচ্ছে৷ রোবটকে বুঝতে হবে, তার সহযোগী মানুষটি কোন দিকে এগোচ্ছে৷
একই সঙ্গে রোবট তার আশেপাশের স্পেস বা জায়গা পর্যবেক্ষণ করে বাধা শনাক্ত করে চলেছে৷ কোন দিকে যেতে হবে, সে সেটাও দেখাচ্ছে৷ প্রো. সান্ড্রা হিয়র্শে বলেন, ‘‘কোনো এক সময় রোবট বাসায় সারাদিন ভৃত্যের মতো আমাদের পাশাপাশি থাকবে, কারখানা বা কৃষিকাজেও সঙ্গে থেকে কাজ করবে – এটা একটা বড় স্বপ্ন৷ তবে কোনো রোবট বাসায় ভালো কাজ করছে, এই দৃশ্য দেখতে সম্ভবত আরও ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে৷’’
ধাপে ধাপে যন্ত্র নতুন ক্ষমতা আয়ত্ত করছে ও আশেপাশের পরিবেশ আরও নিখুঁতভাবে অনুধাবন করতে পারছে৷ তারা আমাদের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদানও করছে৷ কোনো এক সময় হিউম্যানয়েড রোবট আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে পড়বে৷