রোম শহরের নীচে রয়েছে রহস্যময় সুড়ঙ্গের এক জগৎ৷ কিন্তু মানুষের পক্ষে সেই প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রের সব অংশে প্রবেশ করা কঠিন৷ তাই রহস্য উন্মোচন করতে সেখানে পাঠানো হচ্ছে বিশেষ রোবট৷
বিজ্ঞাপন
এবার মাটির নীচে রহস্য উন্মোচন করবে রোবট
04:04
রোম শহরের নীচে অন্ধকার জগতে পা রাখছে এক রোবট৷ প্রায় ২,০০০ বছর আগে সেখানে ভূগর্ভস্থ সমাধি ছিল৷ এখনো পর্যন্ত প্রতিটি সুড়ঙ্গ খুঁজে দেখা সম্ভব হয় নি, কারণ অত্যন্ত সরু পথগুলি ধসে পড়ার ভয় রয়েছে অথবা সেখানে তেজস্ক্রিয় ‘ব়্যাডন' গ্যাস ছেয়ে আছে৷
‘মাটিল্ডা' নামের স্বয়ংক্রিয় রোবট পরীক্ষার জন্য একেবারে আদর্শ পরিবেশ৷ এই রোবট ভূগর্ভের থ্রিডি মানচিত্র তৈরি করে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিল স্টাখনিস বলেন, ‘‘রোম শহরের নীচে সমাধিগুলি একদিকে আমাদের সিস্টেমের মূল্যায়নের জন্য জরুরি৷ অন্যদিকে আমরা এর মাধ্যমে প্রত্নতাত্ত্বিকদের হাতে এমন আধুনিক থ্রিডি মডেল তুলে দিতে পারি, যার সাহায্যে তাঁরা সমাধিগুলি বিশ্লেষণ করে সেগুলির বর্তমান অবস্থা নির্ণয় করতে পারেন৷''
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপারদের এক দল এমন অ্যালগোরিদম তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে রোবট রোম শহরের প্রাচীন আমলের খ্রিষ্টানদের সন্ধান করছে৷ সেকেন্ডে ৩০ সেন্টিমিটার গতিতে হাইটেক যন্ত্রসহ এই রোবট অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ সফটওয়্যার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে থ্রিডি মানচিত্র ও ভিডিও তৈরি করছে৷ অধ্যাপক সিরিল স্টাখনিস বলেন, ‘‘এই সফটওয়্যার ত্রিমাত্রিক পরিবেশ তৈরি করে, স্বাধীনভাবে তা পর্যবেক্ষণ করে৷ যাত্রাপথে বাধাবিপত্তি শনাক্ত করে তা এড়িয়ে যেতে পারে৷ গোটা সমাধি চষে বেড়িয়ে যতটা সম্ভব নিখুঁত এক মডেল তৈরি করতে পারে এই রোবট৷''
একাধিক ক্যামেরার মাধ্যমে এই রোবট সেকেন্ডে ২০ বার তার চারপাশের পরিবেশের ছবি তোলে৷ ৫০ ওয়াট এলইডি বাতি ভিডিও-র আলো হিসেবে কাজ করে৷ বাধা দেখলে সযত্নে তা এড়িয়ে গিয়ে কাজ চালিয়ে যায়৷
পথ হারানোর কোনো আশঙ্কা নেই৷ ‘মাটিল্ডা' ঘুরে ঘুরে একই জায়গায় ফিরে যায় এবং তারপর ধাপে ধাপে নতুন জায়গায় পা বাড়ায়৷ অধ্যাপক স্টাখনিস বলেন, ‘‘ঘুরে চলার এই কায়দার মাধ্যমে যতটা সম্ভব নিখুঁত মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব৷ রোবট বার বার চেনা জায়গায় গিয়ে আগের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে সঠিক হিসেব করতে পারে৷''
জীবন বাঁচাবে বাংলাদেশের রোবট
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন৷
ছবি: RoboticsBD
আগুন নেভাবে রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে৷ আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে জানান শিবলী ইশতিয়াক৷ রোবট তৈরির উপকরণ পাওয়া যায় এমন একটি ওয়েবসাইট রোবটিক্সবিডি ডটকমের অ্যাডমিন তিনি৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
স্বয়ংক্রিয় বা রিমোট কন্ট্রোল
ইশতিয়াক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অনেক ফ্যাক্টরি আছে যেগুলো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ততটা ভালো না৷ তাই কিছু কিছু রোবট ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর কাজ করবে৷ অথবা সেগুলো রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চালানো যেতে পারে৷'' এ ধরনের রোবটকে কোথায়, কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: RoboticsBD
কোয়াডকপ্টার
ইশতিয়াক বলেন, বর্তমানে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণকাজে কিংবা সরাসরি কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে বাংলাদেশে তৈরি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করছে৷
ছবি: Getty Images
সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা
কোয়াডকপ্টারের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহারের কথাও জানান ইশতিয়াক৷ সাগরে ডুবে যাচ্ছে এমন কোনো ব্যক্তির কাছে কোয়াডকপ্টারের মাধ্যমে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে৷
ছবি: RoboticsBD
ঘরের কাজে রোবট
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহ ঘরের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সব রোবট ডেভেলপ করতে গবেষণা করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: AP
অনলাইনে রোবট তৈরির যন্ত্রপাতি
রোবটিক্সবিডি ডটকমে (http://store.roboticsbd.com/) গেলে রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাওয়া যাবে৷ আগে এসব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো৷
ছবি: store.roboticsbd.com
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে
ইশতিয়াক জানান, সাইট চালুর শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০১২ সালে তেমন একটা ব্যবসা করতে না পারলেও পরের দুই বছরে বিক্রি বেড়েছে প্রায় দুইশো শতাংশ৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল শিক্ষার্থীরা ইউটিউব সহ অন্যান্য মাধ্যমে বিদেশে রোবট নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে৷ ফলে তারাও এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে৷’’
ছবি: RoboticsBD
প্রশিক্ষণ
যারা রোবট বানানোর চেষ্টা করছেন তাদের আরেকটু সহায়তা করতে রোবটিক্সবিডি বেশ কিছু কোর্সও পরিচালনা করে থাকে৷
ছবি: RoboticsBD
8 ছবি1 | 8
ঠিকমতো কাজ করতে হলে রোবটকে যে কোনো সারফেসের উপর সহজে চলাফেরা করতে হয়৷ মাটির নীচে যাত্রার সময়ে নানা ধরনের বাধাবিপত্তির সামনে পড়তে হয় এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হয়৷
আজ এক পরীক্ষামূলক অভিযানের সময় রোবটকে প্রমাণ দিতে হবে, যে তার এমারজেন্সি সফটওয়্যার সত্যি কাজ করছে৷ বন শহরের কাছে এক গুহায় তা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ অধ্যাপক স্টাখনিস বলেন, ‘‘আমরা রোবট নিয়ে বেরিয়ে এই গুহায় অভিযান চালাবো৷ তারপর তাকে এক কৃত্রিম অবস্থায় ফেলে ত্রুটি শনাক্ত করাবো৷ অর্থাৎ সে তখন কাজ করবে না এবং প্ল্যাটফর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে যাবার পথ খুঁজে নেবে৷ এভাবে আমরা নিশ্চিত হতে চাই, যে রোবট কখনো হারিয়ে যাবে না৷''
ঐতিহাসিক নিদর্শন পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভবিষ্যতে প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ বা ইঞ্জিনিয়াররা এই রোবট ব্যবহার করবেন৷ তাই সহজেই যাতে তা ব্যবহার করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ এর মধ্যে রয়েছে আপদকালীন অবস্থায় উৎসে ফিরে আসার এক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা৷ কিন্তু সেটা কি সত্যি কাজ করে?
বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে মারাত্মক এক ‘সিস্টেম এরর' সৃষ্টি করেছেন৷ ফলে রোবটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ রোবট পরীক্ষায় পাশ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার গুহার মুখে ফিরে এসেছে৷ এই রোবট এর মধ্যে রোম শহরের নীচে সমাধিক্ষেত্রের প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশের মানচিত্র তৈরি করেছে৷ ইন্টারনেটে থ্রিডি ভিডিওর মাধ্যমে যে কেউ বাড়িতে বসেই রহস্যজনক সুড়ঙ্গ দেখতে পারবে, যেমনটা আজ ‘গুগল স্ট্রিট ভিউ'-এর মাধ্যমে সম্ভব৷
রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করবে রোবট?
রোবট, যন্ত্রের তৈরি মানুষগুলো শুধু যে চোখ পিটপিট তাকাতে আর শব্দ করতে পারে, তা নয়৷ চীনের বেশ কিছু রোস্তোরাঁয় আজকাল অতিথি আপ্যায়নেও কোমর বেঁধেছে তারা৷ চলুন যন্ত্রমানবের কাজ দেখতে ঘুরে আসা যাক সেরকমই একটি রেস্তোরাঁ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Zhang
আপনার অর্ডার, প্লিজ...
শুধু প্রযুক্তিগত চমক দেখানোই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে একেবারে সামনের সাড়িতে রয়েছে চীন৷ তবে সেই সব আধুনিক প্রযুক্তি আদৌ ব্যবহারযোগ্য কিনা – সেটা অবশ্য দেখার বিষয়৷ ছবিতে দেখুন অতিথিদের খাওয়ার অর্ডার নোওয়াসহ হাজারো কাজ নিয়ে মেতেছে রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার তৈরি!
এই ছোট্ট হিউম্যানয়েড রোবটগুলো খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী৷ এদের সুবিধা হলো এই যে, এরা ক্লান্ত হয় না আর কাজ করতেও কোনো ঝামেলা করে না৷ বরং ওরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে জানে৷ অবশ্য রোবটের পরিবেশিত খাদ্য খেতে অতিথিদের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
শেফকুক রোবট
রোবট শুধু অতিথিদের অর্ডারই নেয় না, তারা উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে খাবার গরমও করে৷ ছবিতে দেখুন আগে থেকে তৈরি করা খাবার গরম করছে রোবট৷ তবে তরকারি কাটাবাছা বা এ ধরনের কাজগুলো মানুষ সহকর্মীদেরই আগে থেকে করে দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
নানা ধরনের রোবট
তবে সব রেস্তোরাঁর রোবট কিন্তু এই গ্যালারির ছবিগুলোর মতো দেখতে যন্ত্রমানবের মতো নয়৷ এখানে যে কাজটা করা হচ্ছে, সে অংশটুকুই দেখানো হচ্ছে৷ অর্থাৎ শুধু মাথাটাই দেখানো হচ্ছে, হাত বা পা নয়৷ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের রোবটগুলো, অর্থাৎ যে রোবটগুলো রেস্তোরাঁর অতিথিদের সামনে যায় না, সেগুলো এরকমই হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিনোদনেও রোবট
সাংহাই-এর কাছে এই রোবট-রেস্তোরাঁতে খাবারের চেয়ে কিন্তু বিনোদন অনুষ্ঠানই বেশি আনন্দদায়ক৷ ইন্টারনেটে করা মন্তব্য থেকে অন্তত এ তথ্যই জানা যায়৷ অর্থাৎ এই রেস্তোরাঁয় অতিথিরা খাবারের চেয়ে বিনোদনটাই বেশি উপভোগ করেন৷