রাঁধুনী রোবট হলে রেস্তোরাঁর খাবারের মান অবিকল থাকার কথা৷ প্যারিসে রোবটের মাধ্যমে চটজলদি পিৎসা তৈরি করে সেই মান বজায় রাখা হচ্ছে৷ তিন বারের এক বিশ্ব পিৎসা চ্যাম্পিয়ন রাঁধুনী স্বয়ং রোবটকে শিক্ষা দিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
বেস, টমেটো সস, চিজ আর উপরে দেবার উপকরণ৷ এ সবই ক্লাসিক পিৎসার মালমশলা৷ কিন্তু যিনি এই পিৎসা তৈরি করছেন তিনি মানুষ নন৷ বিশ্বের প্রথম রোবট পিৎসা প্রস্তুতকারকের নাম পাৎসি৷ পাৎসিরির সহ প্রতিষ্ঠাতা সেবাস্তিয়াঁ রোভের্সো বলেন, ‘‘এই রোবট সত্যি অনবদ্য৷ ঘণ্টায় ৮০টি পিৎসা তৈরি করতে পারে৷ একইসঙ্গে কয়েকটি পিৎসা ওভেনে গরম করে৷ ইটালিয়ান ভাষায় পাৎসি শব্দটির অর্থ পাগল, যা এই প্রকল্পের সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খেয়ে যায়৷ পিৎসা শব্দটির সঙ্গেও ছন্দের মিল রয়েছে৷ আমাদের কাছে এটাই রোবটের আদর্শ নাম ছিল৷''
সাত বছরেরও বেশি সময় জুড়ে সহ প্রতিষ্ঠাতা সেবাস্তিয়াঁ রোভের্সো ও তাঁর টিম এই রোবট তৈরির কাজ করেছে৷ বেশ কয়েক লাখ ইউরো ব্যয় হয়েছে৷ কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে একই মানের পিৎসা তৈরি এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷
প্যারিসের এই রোবট প্রায় সব কাজ একাই করতে পারে৷ স্মার্টফোন বা টার্মিনালের মাধ্যমে পিৎসা অর্ডার দেওয়া যায়৷ কর্মীরা একমাত্র ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করেন৷
রোবটের হাতে তৈরি পিৎজা পাবেন যেখানে
03:37
রোবট সবার আগে ময়দার তাজা তাল থেকে পিৎসার বেস তৈরি করে৷ তার উপর টমেটো সস লাগানো হয়৷ শুধু টপিং-এর উপকরণ রোবট নিজে কাটাকুটি করে না৷ পিৎসা সাজানোর কাজ শেষ হলে রোবট সেটিকে ওভেনে ঢুকিয়ে দেয়৷ সবশেষে তৈরি পিৎসা কার্টনের মধ্যে রেখে ছুরি দিয়ে টুকরোগুলি ভাগ করা হয়৷
অর্ডার দেবার পর পাঁচ মিনিটের কম সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা একটি খোপ থেকে পিৎসা সংগ্রহ করতে পারেন৷ দেখতে সহজ মনে হলেও গোটা প্রক্রিয়াটি কিন্তু অত্যন্ত জটিল৷ সেবাস্তিয়াঁ রোভের্সো মনে করেন, ‘‘সবকিছুর প্রোগ্রামিং ছিল সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ৷ আমাদের সব নতুন করে উদ্ভাবন করতে হয়েছিল৷ এমনকি আলাদা করে ওভেন ও ডিশ ওয়াশার রোবট তৈরি করাতে হয়েছে৷ সেটি প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর নিজে থেকে চালু হয়ে যায়৷ শুধু রোবট নয়, গোটা প্রক্রিয়ার সব ধাপ, অর্থাৎ গোটা রান্নাঘর তৈরি করতে হয়েছে৷''
ঢাকায় রোবট রেস্তোরাঁ
ঢাকার আসাদ গেট এলাকার ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় চালু হয়েছে একটি ভিন্নধর্মী রেস্তোরাঁ৷ সেখানে মানুষের পরিবর্তে খাবার পরিবেশন করে রোবট৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
বাংলাদেশে প্রথম
ওয়েটার মানুষ নয়, রোবট৷ এ ধরনের রেস্তোরাঁ বাংলাদেশে এটাই প্রথম৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
এ রোবটের একটাই কাজ
সদ্য চালু হওয়া বিশেষ এ রেস্তোরাঁয় এখন শুধু খাবারই পরিবেশন করে রোবট৷ তবে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের কাছ থেকে খাবারের আর্ডার নিয়ে সেটা রান্নাঘরে পৌঁছেও দেবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
বাংলাদেশ-চীনের যৌথ উদ্যোগ
ঢাকার রোবট রেস্তারাঁটি চালু হয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে৷ এতে কারিগরি সেবা দিচ্ছে চীনের রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এইচজেডএক্স টেকনলজি কোম্পানি৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
খাবার-দাবার
শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় কয়েকটি খাবারসহ দেশি খাবারের নির্দিষ্ট কয়েকটি মেন্যু নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে রোবট রেস্তোরাঁ৷ সব খাবারের দাম পাঁচশত টাকার মধ্যে৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
দুটি রোবট
শুরুতে দুটি রোবট দিয়ে যাত্রা করেছে রেস্তোরাঁটি৷ এর মধ্যে একটি নারী ও অন্যটি পুরুষের আদলে তৈরি৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
রোবট সমাচার
রোবট দু’টির প্রতিটির ওজন ৩০ কেজি৷ উচ্চতায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট৷ এরা একনাগাড়ে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে সক্ষম৷ প্রতিটি রোবট বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
চলমান সুখ
চীনে তৈরি এই রোবট দুটি রোবটের নাম একই আর তা হলো ‘ইয়োইদং’৷ এর অর্থ হলো ‘মুভিং হ্যাপিনেস’ বা ‘চলমান সুখ’৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
শিশু-কিশোরদের কাছে জনপ্রিয়
সব বয়সি মানুষই রোবট রেস্তোরাঁয় যাচ্ছেন, তবে রেস্তোরাঁটি ইতিমধ্যে শিশু-কিশোরদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Md. Asaduzzaman Pramanik
8 ছবি1 | 8
রোবট পিৎসা তৈরির কাজ মূলত একজনের কাছ থেকেই শিখেছে৷ তিয়েরি গ্রাফানিয়েনো তিন বার পিৎসা তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব জয় করেছেন৷
তিনি রন্ধনপ্রণালী, উপকরণ বাছাই ও ময়দার তাজা তাল তৈরির মতো বিষয়গুলির দেখাশোনা করেন৷ প্রতিদিন নতুন করে এমন ময়দার তাল তৈরি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ তিয়েরি বলেন, ‘‘রোবট নিজেই ময়দার তালের ভুলত্রুটি দূর করতে পারে৷ ইঞ্জিনিয়াররা সেন্সর বসিয়েছেন, যার সাহায্যে রোবট বুঝতে পারে যে বেলার সময় কতটা জায়গা লাগবে৷ ভুল হলেই রোবট সেটা সংশোধন করতে পারে৷ ময়দার তাল মান অনুযায়ী না হলে সেটা দিয়ে আর পিৎসা তৈরি করা হয় না৷''
পিৎসা যখন শিল্পীর অনুপ্রেরণা
ইউনেস্কো ২০১৭ সালে পিৎসা তৈরির শিল্পকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷ অনেক শিল্পীর শিল্পকর্মের পরিকল্পনাও এসেছে পিৎসা থেকে৷
ছবি: Paul Barsch
পিৎসা, নাকি রুটি?
দেখে খুব সাধারণ পিৎসা মনে হচ্ছে? অনেকে হয়ত একে পিৎসাই বলবেন না৷ কারণ, টপিং কোথায়? মনে হচ্ছে যেন রুটির উপর শুধু একটি টমেটো বসিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তবে যখন জানবেন মার্কিন শিল্পী লুক ফুলার এই পিৎসার ডিজাইন করেছেন, তখন আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, এটি আসলে পিৎসাই৷ ২০১৫ সালে ভেনিসে অনুষ্ঠিত ‘কন্টেম্পরারি ভিজ্যুয়াল আর্টস’ প্রদর্শনীতে এই পিৎসার ডিজাইন করেছিলেন ফুলার৷
ছবি: Paul Barsch
দেয়ালে পিৎসা
শিল্পী পাউল বার্শের কাছে পিৎসা শুধু খাওয়ার জিনিসই নয়৷ পিৎসা দিয়ে তিনি এই শিল্পকর্মটি তৈরি করেছেন৷ নাম ‘পিৎসা ভোইয়ার’৷ দেখুন কেমন টেলিভিশনের মতো এটি দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Paul Barsch
যেন ভাস্কর্য
এ আবার কেমন পিৎসারে বাবা! ইটালীয় শিল্পী মার্কো ব্রুজোন তাঁর জাতীয় খাবারকে বোধ হয় একটু অন্যরূপে দেখতে চেয়েছেন৷ তাই তো চোখ আর মুখসহ দেখতে অনেকটা ভাস্কর্যের মতো করে তৈরি করেছেন এই পিৎসা শিল্পকর্ম৷ নাম দিয়েছেন ‘সেন্ডিং আউট ফর ইউ’৷ এটি তৈরিতে ময়দা নয়, সিরামিক ব্যবহার করেছেন ব্রুজোন৷
ছবি: Marco Bruzzone
কাপড়ের পিৎসা
ফরাসি শিল্পী ক্লদ ভিয়ালার পুরনো কাপড়ের টুকরো জোড়া লাগিয়ে এই পিৎসাটি তৈরি করেছেন৷ ১৯৯০ সালে তৈরি এই শিল্পকর্মটির নাম ‘১৯৯০/১১২’৷
ছবি: Aurélien Mole
‘পিৎসা গড’
নিউ ইয়র্কের শিল্পী স্পেন্সার সুইনি’র এই শিল্পকর্মের নাম ‘পিৎসা গড’৷ ইটালির নাপোলিতে জন্ম নেয়া পিৎসা, গত শতকের পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছিল৷
ছবি: Jake Palmert
5 ছবি1 | 5
পাৎসি-কে কিন্তু নেপলস শহরের এই ক্লাসিক পিৎসা কারিগরদের বিকল্প করে তোলার চেষ্টা চলছে না৷ তিয়েরির কাছে এই রোবট পিৎসা তৈরির নতুন এক পদ্ধতিমাত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘তিনবারের পিৎসা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমি পাৎসির জন্য কাজ করছি, কারণ সব সময়ে আজকের বিশ্বের উদ্ভাবন সম্পর্কে আমার খোলা মন রয়েছে৷ আমরা এমন বিশ্বে থাকি, যেখানে সবকিছু চটজলদি পাবার তাগিদ রয়েছে৷ পিৎসার ক্ষেত্রেও সেটা হবে না কেন?''
বৃহত্তর প্যারিস এলাকায় এখনো পর্যন্ত পাৎসিরির দুটি দোকান রয়েছে৷ ভবিষ্যতে বিদেশেও রোবটের মাধ্যমে পিৎসা তৈরি করতে রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে৷