অ্যালগোরিদমের বদলে মানুষের হাতেই থাকুক ‘কিলার রোবট’ বা খুনি রোবটের নিয়ন্ত্রণ, মতামত অস্ট্রিয়া কর্তৃপক্ষের৷ এবিষয়ে আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়নের ডাক দিয়েছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধক্ষেত্রে ‘কিলার রোবট' বা খুনি রোবটের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা বেশ কিছু বছর ধরেই চলে আসছে৷ অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী আলেকজান্ডার শালেনবের্গের মন্তব্যের পর নতুন করে ইউরোপে আলোচিত হচ্ছে বিষয়টি৷
শালেনবের্গ জার্মান পত্রিকা ‘বিল্ড আম জনটাগ'-কে বলেন, ‘‘পৃথিবীর যুদ্ধক্ষেত্রে এই খুনি রোবটের আবির্ভাব ঘটার আগেই আমাদের এ বিষয়ে কিছু নিয়ম তৈরি করতে হবে৷’’ শুধু এই রোবটগুলির ক্ষেত্রেই নয়, এমন নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করতে হবে ল্যান্ডমাইন ও গুচ্ছ বোমা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও, বলেন শালেনবের্গ৷
এই নীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ভিয়েনায় ২০২১ সালে একটি সম্মেলনের আয়োজন করবে অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ৷ শালেনবের্গ জানান, এই সম্মেলন হবে ‘‘বিশ্বজুড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে নীতি নির্ধারণের আলোচনার'' সূত্রপাত৷
কূটনৈতিক স্তরে এমন নীতি নিয়ে এর আগে আলোচনা হয়নি বলে জানান শালেনবের্গ৷ ‘‘এই সম্মেলন থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্র, বিশেষজ্ঞ ও রেড ক্রসের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সাথে নিয়ে একটি আন্দোলন গড়ে তোলা হবে,’’ বলেন অস্ট্রিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
যে কারণে প্রয়োজন এই আন্দোলন
শালেনবের্গের মত, যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত যন্ত্রের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়৷ শালেনবের্গ বলেন, ‘‘জীবন-মৃত্যু বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত একজন মানুষেরই হাতে থাকা উচিত৷ সকল নৈতিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত মানুষই নেবে, কোনো সংখ্যার ভারে চলা অ্যালগোরিদম তা নেবে না৷''
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে অবস্থান করে বিশ্বের তিন ‘হেভিওয়েট' সামরিক শক্তি, ইসরায়েল, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ এদের বিপরীতে রয়েছে ‘স্টপ কিলার রোবটস' প্রচারণা, যাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ মোট ৬৬টি রাষ্ট্র৷ এরমধ্যে, ৩০টি সদস্যরাষ্ট্র কিলার রোবটের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছে৷ (সূত্র: স্টপকিলাররোবটস)
রিচার্ড কনর/এসএস
ফাইভ-জি দিয়ে যা করা যাবে
পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা ফাইভ-জি, যা আমূল পালটে দেবে মানুষের প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা৷ ইন্টারনেটের গতি বর্তমানের ফোর-জির তুলনায় হবে ১০০ গুণ বেশি৷ সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়েছে ফাইভ-জি সুবিধার ফোন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
ফাইভ-জি কি?
মোবাইল প্রযুক্তিতে বিবর্তনের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ পর্যায় ফাইভ-জি৷ পঞ্চম প্রজন্মের এই নেটওয়ার্কের গতি হবে ঈর্ষণীয়৷ ইন্টারনেট সংযোগের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি এটা অন্যান্য ডিভাইসকেও মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবে৷ এই প্রযুক্তি নিয়ে উল্লসিত মোবাইল কোম্পানিগুলো নানা রকমের উদ্যোগ নিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/R. Marchante
ফাইভ-জির পরিক্রমা
আশির দশকে প্রথম আসে ওয়ান-জি মোবাইল, যাতে শুধু কথা বলা যেত৷ এরপর কথা বলার সঙ্গে এসএমএস আদানপ্রদান সুবিধা নিয়ে আসে টু-জি৷ ২০০৩ সালে আসে থ্রি-জি, যার মাধ্যমে মুঠোফোনে যুক্ত হয় ইন্টারনেট৷ এরপর ২০০৮ সালে ফোর-জির কারণে উচ্চগতি পায় মোবাইল ইন্টারনেট৷ ফাইভ-জি অতি উচ্চগতির পাশাপাশি হ্যান্ডসেট ছাড়া অন্যান্য ডিভাইসকেও সমানতালে সংযুক্ত করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
এক মিনিটের কম সময়ে নামবে সিনেমা!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইভ-জির কারণে ইন্টারনেটের গতি বর্তমানের তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি বেড়ে যাবে৷ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি সিনেমা ডাউনলোড করা যাবে মাত্র এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে!
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zhihao
স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ির প্রয়োজনে
২০৩৪ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ির বাজার দাঁড়াবে ৫৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷ ফাইভ-জিকে এই খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে ধরা হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকবিহীন গাড়ির পাশাপাশি অন্য গাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ, সরাসরি ম্যাপ এবং যানবাহন চলাচলের তথ্য পাওয়া যাবে এতে৷
ছবি: DW/K. Ferguson
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ামক
দেশ-বিদেশ ঘুরে রোবট সোফিয়া যখন সবার সঙ্গে আলাপ করে তখন কে-না আনন্দ পায়৷ বর্তমানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বড় রকমের জায়গা দখল করে নিচ্ছে সোফিয়ার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট আর এআই প্রযুক্তি৷ ফাইভ-জি থেকে আসা বিপুল পরিমাণের ডেটা এআই প্রযুক্তির এমন কাজকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে৷
ছবি: DW/K. Ferguson
রোবটিক্স কমিউনিকেশন
শিল্প কল-কারখানা আর দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে রোবটকে ব্যবহার বাড়ছে সারাবিশ্ব৷ ফাইভ-জিতে ইন্টারনেটের গতি বাড়লে রোবটের মধ্যে যোগাযোগের পরিধি বেড়ে যাবে অনেক৷ শিল্প উৎপাদনের ধারাও আমূল পালটে যাবে এর মাধ্যমে৷
ছবি: picture alliance/Imaginechina/R. Xi
বদলে যাবে ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা
ভিডিও, মিউজিক স্ট্রিমিংসহ বিভিন্ন বিনোদন মাধ্যমের জনপ্রিয়তার কারণে সারাবিশ্বে ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত৷ কিন্তু বর্তমানে স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ ব্যবহারের বিদ্যমান সক্ষমতার কারণে এ সেবায় ছেদ পড়ে নানা সময়৷ এর বিপরীতে ফাইভ-জিতে হাজার হাজার ডিভাইস সমানতালে চালানোর সক্ষমতা থাকবে৷ ফলে মোবাইল থেকে শুরু করে ইকুইপমেন্ট সেন্সর, ভিডিও ক্যামেরা থেকে স্মার্ট স্ট্রিট লাইট সবকিছুর অভিজ্ঞতা পালটে যাবে৷