কারখানায় কাজ করতে হলে এতকাল শুধু হাতের কাজ জানলে চলতো৷ কম্পিউটার ও রোবট-কেন্দ্রীক স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া সামলাতে শ্রমিককেও হতে হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ৷ প্রশিক্ষণের সময় এই জ্ঞান আয়ত্ত করতে না পারলে কাজ করা মুশকিল হবে৷
বিজ্ঞাপন
কারখানায় স্বয়ংক্রিয় রোবট
04:18
আজকের শিক্ষানবিশদের একদিকে হাতের কাজ শিখতে হয়, অন্যদিকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিও আয়ত্ত করতে হয়৷ রোবট-এর নিয়ন্ত্রণ ও তার প্রোগ্রামিং শেখা যেমন প্রয়োজন, যন্ত্র দিয়ে প্রয়োজনমতো ধাতু রূপান্তর করার কাজও জানতে হয়৷
‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' গড়ে তোলার কাজে শামিল হতে পেরে টোবিয়াস খুশি৷ মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার কাজের অংশ হয়ে আলিনা-ও আপ্লুত৷ টোবিয়াস ভেবার ও আলিনা হাইব জার্মানির গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী ‘বশ' কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন দুই তরুণ-তরুণী৷
অনেক যন্ত্রের সঙ্গে ‘অগমেন্টেড রিয়ালটি' সফটওয়্যার যুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে দুই শিক্ষানবিশ ভার্চুয়াল জগতেই কাজের ধাপগুলি সম্পর্কে জানতে পারছেন৷ তাঁদের কাজ ঠিক না ভুল হচ্ছে, মনিটরেই তা দেখা যাচ্ছে৷
রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করবে রোবট?
রোবট, যন্ত্রের তৈরি মানুষগুলো শুধু যে চোখ পিটপিট তাকাতে আর শব্দ করতে পারে, তা নয়৷ চীনের বেশ কিছু রোস্তোরাঁয় আজকাল অতিথি আপ্যায়নেও কোমর বেঁধেছে তারা৷ চলুন যন্ত্রমানবের কাজ দেখতে ঘুরে আসা যাক সেরকমই একটি রেস্তোরাঁ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Zhang
আপনার অর্ডার, প্লিজ...
শুধু প্রযুক্তিগত চমক দেখানোই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে একেবারে সামনের সাড়িতে রয়েছে চীন৷ তবে সেই সব আধুনিক প্রযুক্তি আদৌ ব্যবহারযোগ্য কিনা – সেটা অবশ্য দেখার বিষয়৷ ছবিতে দেখুন অতিথিদের খাওয়ার অর্ডার নোওয়াসহ হাজারো কাজ নিয়ে মেতেছে রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার তৈরি!
এই ছোট্ট হিউম্যানয়েড রোবটগুলো খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী৷ এদের সুবিধা হলো এই যে, এরা ক্লান্ত হয় না আর কাজ করতেও কোনো ঝামেলা করে না৷ বরং ওরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে জানে৷ অবশ্য রোবটের পরিবেশিত খাদ্য খেতে অতিথিদের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
শেফকুক রোবট
রোবট শুধু অতিথিদের অর্ডারই নেয় না, তারা উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে খাবার গরমও করে৷ ছবিতে দেখুন আগে থেকে তৈরি করা খাবার গরম করছে রোবট৷ তবে তরকারি কাটাবাছা বা এ ধরনের কাজগুলো মানুষ সহকর্মীদেরই আগে থেকে করে দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
নানা ধরনের রোবট
তবে সব রেস্তোরাঁর রোবট কিন্তু এই গ্যালারির ছবিগুলোর মতো দেখতে যন্ত্রমানবের মতো নয়৷ এখানে যে কাজটা করা হচ্ছে, সে অংশটুকুই দেখানো হচ্ছে৷ অর্থাৎ শুধু মাথাটাই দেখানো হচ্ছে, হাত বা পা নয়৷ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের রোবটগুলো, অর্থাৎ যে রোবটগুলো রেস্তোরাঁর অতিথিদের সামনে যায় না, সেগুলো এরকমই হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিনোদনেও রোবট
সাংহাই-এর কাছে এই রোবট-রেস্তোরাঁতে খাবারের চেয়ে কিন্তু বিনোদন অনুষ্ঠানই বেশি আনন্দদায়ক৷ ইন্টারনেটে করা মন্তব্য থেকে অন্তত এ তথ্যই জানা যায়৷ অর্থাৎ এই রেস্তোরাঁয় অতিথিরা খাবারের চেয়ে বিনোদনটাই বেশি উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Robichon
5 ছবি1 | 5
এখনো প্রশিক্ষকরা সঙ্গেই থাকছেন বটে, কিন্তু পরে একাই সব কিছু সামলাতে হবে৷ আলিনা হাইব বলেন, ‘‘ছবি দেখে বোঝা যায় কী করতে হবে৷ তাই আমার কাছে এটা বেশি সহজ লাগে৷ আগে হলে কেউ এখানে এসে বোঝাতো, কী করতে হবে অথবা নির্দেশিকা ধরিয়ে দিতো৷''
শিল্পক্ষেত্রে আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ডিজিটাল হয়ে পড়ছে৷ এই প্রক্রিয়ার পোশাকি নাম ‘ডিজাটাল ফোর পয়েন্ট জিরো'৷ অর্থাৎ সবকিছু নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ রোবটরা আরও জটিল প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে৷ তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে ভবিষ্যতে কাজ করা কঠিন হবে৷
টোবিয়াস ভেবার প্রযুক্তিকে ভয় পান না৷ প্রশিক্ষণের তৃতীয় বছরে তিনি হালের প্রজন্মের রোবট নিয়ে কাজ করছেন৷ এগুলি আর আগের মতো খাঁচা বা কাচের আড়ালে লুকানো নেই, মানুষের মতোই চারিদিকে দিব্যি চলেফিরে বেড়াচ্ছে৷ সেন্সরের সাহায্যে তারা সহকর্মীদের সামনে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সিমন হ্যুলকে বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মোবাইল, স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট ব্যবহার করে বড় হয়েছে, তার মধ্যে রোবট চালানোর সহজাত প্রবৃত্তি থাকার কথা৷ অর্থাৎ আইপ্যাড চালাতে পারলে এখানেও নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হবে না৷ দু'টোরই একই ভিত্তি৷''
ওয়ার্কশপে দুই শিক্ষানবিশের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য এক রোবট রয়েছে৷ সেটি প্রোগ্রাম করে হাতেনাতে ফল দেখা যায়৷ কারণ কোনো এক সময়ে রোবট সহকর্মী হয়ে উঠবে৷ টোবিয়াস ভেবার বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে যন্ত্র অনেক স্বাবলম্বী হবে ও অনেক জায়গায় যেতে পারবে৷ এক জায়গায় গুটিয়ে নিয়ে অন্য জায়গায় গড়ে তোলা যাবে৷ কাজ আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে৷''
বাংলাদেশের কয়েকটি রোবটের কথা
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখন অনেক ধরনের রোবট তৈরি করছেন৷ তার কয়েকটির কথা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার
জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ব্যবহারের পর থেকে শব্দটি বেশ পরিচিত৷ তবে ড্রোন দিয়ে করা যায় আরও অনেক কাজ৷ তাই বাংলাদেশের তরুণরা ড্রোন নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছেন৷ কয়েকটি টিভি চ্যানেল দৃশ্য ধারণের কাজে এ সব ড্রোন ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW
বাংলা ভাষা বোঝা রোবট
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ২০১৩ সালে একটি রোবট তৈরি করেন যেটা বাংলা ভাষা বোঝে৷ এই রোবটকে বাংলায় ‘ডানে যেতে’ বললে সেটি ডানে যেতে পারে৷ নির্মাতারা বলেন, মানব কল্যাণে বিশেষ করে হুইল চেয়ার হিসেবে এই রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ছবিতে নির্মাতাদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Shadly Salahuddin
ওয়েল্ডিং কাজে রোবট
জাহাজ নির্মাণ সহ বিভিন্ন শিল্পে ওয়েল্ডিং-এর কাজ হয় প্রচুর৷ এই কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ অথচ রোবট দিয়ে এই কাজ করানো যেতে পারে বলে জানান ‘প্ল্যানেটার বাংলাদেশ’ এর প্রধান নির্বাহী রিনি ঈশান খুশবু৷
ছবি: Rini Eshan Khushboo
টেলিপ্রেজেন্স রোবট
এর মাধ্যমে অফিসের বাইরে থেকেও অফিসে কে কী করছেন তা দেখতে পারেন অফিসের প্রধান৷ এছাড়া চিকিৎসকরা অন্য স্থানে থেকেও রোগীকে পরামর্শ দিতে পারেন৷ টেলিপ্রেজেন্স রোবটকে এমন আরও অনেক কাজে লাগানো যেতে পারে বলে জানান প্ল্যানেটার বাংলাদেশ এর খুশবু৷ ছবিতে তাঁকে নাসা-য় একটি রোবট উপস্থাপন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Rini Eshan Khushboo
দমকল কর্মী রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ সেই আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ‘রোবটিক্সবিডি ডটকম’-এর অ্যাডমিন শিবলী ইশতিয়াক৷
ছবি: Reuters
উঁচু ভবন পেইন্ট করা
ঢাকা শহরে এখন অনেক উঁচু ভবন তৈরি হচ্ছে৷ এসব ভবনের বাইরের দিকটা পেইন্ট করতে গিয়ে শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটছে৷ এই কাজে সাহায্য করতে পারে এমন রোবট তৈরির কাজ চলছে৷
ছবি: Harun Ur Rashid
গোয়েন্দাকাজে রোবট
বিখ্যাত ‘ট্রান্সফরমার’ মুভির কথা মনে আছে? ঐ যে একই জিনিস একেকবার একেক রূপ ধারণ করতে পারে! কোনো রোবট যদি এমন হয় তাকে তো গোয়েন্দা কাজে লাগানো যেতেই পারে৷ সেটাই চেষ্টা করছে প্ল্যানেটার বাংলাদেশ৷ অনেক দূর এগিয়েছেও তারা৷
ছবি: Rini Eshan Khushboo
জীবন বাঁচাতে রোবট
সাগরে ডুবে মৃত্যুর খবর প্রায়ই শুনি আমরা৷ তবে কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করে ডুবন্ত কারও কাছে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁকে বাঁচানো যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
বশ-এর মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি ভবিষ্যতের কর্মীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ যেমন স্মার্ট গ্লাস ব্যবহার করছেন তাঁরা৷ অন্যদিকে সাধারণ ভোকেশানাল স্কুল তাদের পুরানো পাঠক্রম নিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷ কোম্পানিগুলির জন্য এটা বড় সমস্যা৷ বশ কোম্পানির প্রশিক্ষণ প্রধান আন্ড্রেয়াস নস বলেন, ‘‘আজই আমাদের চাহিদা রয়েছে৷ সেই চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রম স্থির হতে সময় লাগবে৷ এটাই একমাত্র অসুবিধা৷ কিন্তু এখন হাত গুটিয়ে বসে থেকে কোনো লাভ নেই৷ এটা কোনো ভালো প্রক্রিয়া নয়৷''
শুধু কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নিয়েও কোনো লাভ নেই৷ আলিনা হাইব-কে হাতের কাজও শিখতে হয়৷ ধাতু নিয়ে কাজ করতে হলে লেদ মেশিন চালাতে হয়৷ ‘ফোর পয়েন্ট জিরো' জমানায় শিক্ষানবিশকে একাধারে টিকনিশিয়ান, মিস্ত্রী ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হতে হবে৷