ধরুন একটি স্টুডিওতে বসে আছেন, আর আপনার পোর্ট্রেট আঁকছে পাঁচটি রোবট৷ তাদের একচোখো ক্যামেরা, মানে এক ক্যামেরার চোখ দিয়ে আপনাকে ধীরস্থিরভাবে দেখছে আর আঁকছে তারা...৷
বিজ্ঞাপন
একটি ড্রয়িং ক্লাসের আঁকা ছবি৷ কিন্তু কোনো সাধারণ আঁকার ক্লাস নয়৷ এ ক্লাসের সব ছাত্রই রোবট৷ এই আঁকিয়ে যন্ত্রগুলোকে নিয়েই বার্লিনের ডিক্সিট আলগোরিৎসমি আর্ট গ্যালারিতে একটি ইনস্টলেশন রাখা হয়েছে৷ ইনস্টলেশনটির নাম ‘পল নামের পাঁচটি রোবোট', কেননা, প্রতিটি রোবোটের নামই ‘পল'৷ সব ‘পল'-এরই আছে একটি করে চোখ, অর্থাৎ ক্যামেরা – এবং একটি করে আঁকার ‘হাত'৷
ডিক্সিট আলগোরিৎসমি আর্ট গ্যালারির পেটার-ব্রাউন হিমেরিশ বলেন, ‘‘পুরোটাই সাবেক অর্থে আঁকার ক্লাস, যেখানে পাঁচজন ছাত্র আঁকা শিখছে৷ আসলে তারা রোবট৷ আঁকার ক্লাসের ‘ছাত্রদের' আঁকার ক্ষমতায় ফারাক আছে, কিন্তু তারা সবাই অখণ্ড মনোযোগের সঙ্গে ছবি এঁকে থাকে৷''
যেভাবে প্রতিকৃতি আঁকে রোবট
04:27
ছবি আঁকছে ‘পল'
ওদের প্রত্যেকের আঁকার ধরনও আলাদা৷ একজন ‘পল' যদি বাস্তবধর্মী আঁকে, তো আরেকজনের স্কেচগুলি প্রধানত বিমূর্ত – প্রায় বিষাদপূর্ণ বলা চলে৷
একটি পোর্ট্রেট সেশনে লাগে মোট ৩০ মিনিট৷ কিন্তু অন্য সব আঁকার স্কুলের মতো এখানেও কোনো ছাত্রের আঁকা আগেই শেষ হয়ে যায়, কারো হয়ত আবার একটু বেশি সময় লাগে৷
পোর্ট্রেট মডেল টর্স্টেন প্লাৎস বললেন, ‘‘বেশ মজা লেগেছে, কেননা, এই ছোট ছোট যন্ত্রগুলো শুধু যে কাজ করেছে, শুধু তাই নয়, বরং দেখেছেও বটে: আমাকে দেখেছে, তারপর আবার তাদের ড্রয়িংয়ের দিকে তাকিয়েছে৷ আমি এটা প্রত্যাশা করিনি৷ ওটা একটা খুব মজার ব্যপার, খুব মজার অভিজ্ঞতা৷''
শিল্পী হতে গিয়ে রোবটের আবিষ্কর্তা
লন্ডন ইউনিভার্সিটির গোল্ডস্মিথস কলেজে এই আঁকিয়ে রোবটগুলিকে সৃষ্টি করা হয়৷ তাদের আবিষ্কারক পাত্রিক ত্রেসে৷ ত্রেসে ফরাসি৷ শিল্পকলা ও প্রযুক্তি, ত্রেসে চিরকালই এ দু'টি ব্যাপারে আগ্রহী৷ তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনো করার পর তিনি ছবি আঁকা শুরু করেন৷
একটি মানসিক রোগের চিকিৎসার সময় হঠাৎ নিজের হাতে আঁকার ইচ্ছে চলে যায় ত্রেসের – জানালেন তিনি৷ কাজেই আঁকার কাজটা আজ তিনি রোবটদের হাতেই ছেড়ে দেন৷ কিন্তু তাই বলে তাঁর কাছে রোবটরা কিছু স্বাধীন, নিরপেক্ষ শিল্পী হয়ে ওঠেনি৷
মানুষের মতো রোবট
আজকাল কিছু কিছু রোবট দেখতে অনেকটা মানুষের মতো হয়৷ আবার যারা দেখতে মানুষের মতো নয়, তারা আবার কাজে পুরোপুরি মানুষের মতো৷ সেরকম কয়েকটি রোবটের কথাই থাকছে আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাত মেলায়, কথাও বলে রোবট
এই রোবটটির নাম ‘রোবয়’৷ এর ত্বক এবং মাংসপেশি মসৃণ৷ রোবয় হ্যান্ডশেক করলে মনে হয় যেন কোনো মানুষের সঙ্গেই হাত মেলানো হলো৷ এই রোবট কথা বলতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতো আবেগও প্রকাশ করে৷
ছবি: Getty Images/Afp/John MacDougall
যে রোবট জানালা পরিষ্কার করে
জার্মানির তৈরি এই রোবটটির নাম ‘জাস্টিন’৷ ওকে তৈরি করা হয়েছিল মহাকাশযানের জন্য৷ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাঁচ বছর ছিল সে৷ পৃথিবীতে ফিরে তাকে মানুষের মতো অনেক কাজই করতে হয়৷ ঘরের জানালা পরিষ্কার করায় সে ওস্তাদ৷
ছবি: DW/F. Schmidt
‘লেখক’ রোবট
‘বায়োস’ নামের এই রোবটটি পেশাদার লেখকদের চেয়েও দ্রুত লিখতে পারে৷ তার বাহুর সঙ্গে লাগানো আছে কলম৷ সেই কলমে প্রয়োজন মতো কালি জোগান দেয়ার ব্যবস্থাও আছে৷ কালি-কলম হাতে সদাপ্রস্তুত ‘বায়োস’ ৮০ মিটার কাগজে মাত্র দশ সপ্তাহে হিব্রুতে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮০৫টি অক্ষর লিখে দেখিয়েছে৷
ছবি: robotlab
রেস্তোরাঁয় অর্ডার নেয়ার কাজও রোবটের
চীনের রেস্টুরেন্টে এ ধরনের রোবট ইতিমধ্যে কাজে নেমে পড়েছে৷ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে খাবারের ‘অর্ডার’ নেয় এমন রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার পরিবেশনে মানুষের চেয়েও দক্ষ
এই রোবটগুলো রেস্টুরেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাবার পরিবেশন করতে পারে৷ ‘ওয়েটার’ মানুষ হলে এক সময় তো ক্লান্ত হয়, কিন্তু রোবট কখনোই ক্লান্ত হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
খাবার গরম করে রোবট
রেস্টুরেন্ট বা ঘরে রান্নার কাজটুকু একবার করে দিলে তারপর যতবার খুশি সেই খাবার গরম করতে পারবে রোবট৷ খাবার গরম করার কাজে এই রোবট আসলেই খুব দক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
6 ছবি1 | 6
শিল্পী ও বিজ্ঞানী পাত্রিক ত্রেসে বললেন, ‘‘সব কিছুতেই তো কম্পিউটার টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়৷ শিল্পকলাতেই বা হবে না কেন? রোবটদের ব্যাপারটা একটু স্পেশাল হলেও, এমনিতেই বহু শিল্পী নানান ভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন৷ কম্পিউটার তো শুধু একটা কাজের জিনিস৷''
পাত্রিক ত্রেসে আজও নিজেকেই এই প্রতিকৃতিগুলির আঁকিয়ে মনে করেন৷ তিনি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে সেগুলো আঁকেননি, কিন্তু এই যন্ত্রগুলি তাঁর শিল্পীসত্তার অঙ্গ৷ ত্রেসে বললেন, ‘‘ব্যাপারটা জটিল, কেননা, ওরা আমার কাছে যন্ত্র, সব প্রোগ্রাম করা৷ অন্যদিকে ওরাই আমার ক্যারিয়ার তৈরি করে দিয়েছে৷ কাজেই ওরা এক ধরনের আত্মপ্রতিকৃতিও বটে৷ আমার আর রোবটগুলোর সম্পর্ক বেশ জটিল৷ কিন্তু আমার কাছে ওরা পুতুলও বটে, এমন সব পুতুল যারা অধিকাংশ সময় ঠিক আমি যা চাই, তা-ই করে৷''
আর্ট গ্যালারিতে
বার্লিন৷ আঁকিয়ে রোবটরা এখানে একটি আর্ট গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে৷ পাত্রিক ত্রেসেরও একাধিক পোর্ট্রেট টাঙানো রয়েছে – পাঁচ ধরনের অঙ্কণশৈলীতে৷ তারপরও চেনা যায়, অন্তত আংশিকভাবে৷
তবে রোবটরা যে সব কিছু আঁকতে পারে, এমন নয়৷ হিমেরিশ বললেন, ‘‘আমি ঐ পাঁচটি রোবটকে দিয়ে আমার কুকুরের পোর্ট্রেট আঁকানোর চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু কুকুরটাকে চেয়ারে বসানো সত্ত্বেও রোবটরা আঁকাই শুরু করেনি৷ তার কারণ সম্ভবত এই যে, ওরা শুধু মানুষের মুখ চিনতে জানে৷ কাজেই ওরা কুকুর দেখে চিনতে পারেনি, ছবিও আঁকেনি৷''
শুধু মানুষের প্রতিকৃতি হলেও, খারাপ আঁকেনি কিন্তু রোবটরা৷
যন্ত্ররা জীবনের বহু দিকে ও বিভাগে মানুষের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে৷ তাহলে ছবিই বা আঁকবে না কেন?
রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করবে রোবট?
রোবট, যন্ত্রের তৈরি মানুষগুলো শুধু যে চোখ পিটপিট তাকাতে আর শব্দ করতে পারে, তা নয়৷ চীনের বেশ কিছু রোস্তোরাঁয় আজকাল অতিথি আপ্যায়নেও কোমর বেঁধেছে তারা৷ চলুন যন্ত্রমানবের কাজ দেখতে ঘুরে আসা যাক সেরকমই একটি রেস্তোরাঁ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Zhang
আপনার অর্ডার, প্লিজ...
শুধু প্রযুক্তিগত চমক দেখানোই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে একেবারে সামনের সাড়িতে রয়েছে চীন৷ তবে সেই সব আধুনিক প্রযুক্তি আদৌ ব্যবহারযোগ্য কিনা – সেটা অবশ্য দেখার বিষয়৷ ছবিতে দেখুন অতিথিদের খাওয়ার অর্ডার নোওয়াসহ হাজারো কাজ নিয়ে মেতেছে রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার তৈরি!
এই ছোট্ট হিউম্যানয়েড রোবটগুলো খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী৷ এদের সুবিধা হলো এই যে, এরা ক্লান্ত হয় না আর কাজ করতেও কোনো ঝামেলা করে না৷ বরং ওরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে জানে৷ অবশ্য রোবটের পরিবেশিত খাদ্য খেতে অতিথিদের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
শেফকুক রোবট
রোবট শুধু অতিথিদের অর্ডারই নেয় না, তারা উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে খাবার গরমও করে৷ ছবিতে দেখুন আগে থেকে তৈরি করা খাবার গরম করছে রোবট৷ তবে তরকারি কাটাবাছা বা এ ধরনের কাজগুলো মানুষ সহকর্মীদেরই আগে থেকে করে দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
নানা ধরনের রোবট
তবে সব রেস্তোরাঁর রোবট কিন্তু এই গ্যালারির ছবিগুলোর মতো দেখতে যন্ত্রমানবের মতো নয়৷ এখানে যে কাজটা করা হচ্ছে, সে অংশটুকুই দেখানো হচ্ছে৷ অর্থাৎ শুধু মাথাটাই দেখানো হচ্ছে, হাত বা পা নয়৷ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের রোবটগুলো, অর্থাৎ যে রোবটগুলো রেস্তোরাঁর অতিথিদের সামনে যায় না, সেগুলো এরকমই হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিনোদনেও রোবট
সাংহাই-এর কাছে এই রোবট-রেস্তোরাঁতে খাবারের চেয়ে কিন্তু বিনোদন অনুষ্ঠানই বেশি আনন্দদায়ক৷ ইন্টারনেটে করা মন্তব্য থেকে অন্তত এ তথ্যই জানা যায়৷ অর্থাৎ এই রেস্তোরাঁয় অতিথিরা খাবারের চেয়ে বিনোদনটাই বেশি উপভোগ করেন৷