কলকারখানা, গবেষণাগার, পরিষেবা – অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের কাজ করছে রোবট৷ এবার বিপজ্জনক উদ্ধার অভিযানেও রোবট কাজে লাগানোর লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা৷ উদ্দেশ্য সফল হলে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে৷
বিজ্ঞাপন
একটি গুদামঘরের ছাদের অংশবিশেষ ভেঙে পড়েছে৷ উদ্ধারকারী দল জীবিত মানুষের খোঁজ করছে৷ দমকল ও অ্যামবুলেন্স কর্মীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করেই সেখানে কাজ করতে পারেন৷ কারণ যে কোনো সময় নতুন করে বাড়ির অংশ ভেঙে পড়তে পারে৷ উদ্ধারকর্মীরা একটি রোবট পাঠিয়ে আহত মানুষের খোঁজ করছেন৷ রোবট এমন সব জায়গায়ও যেতে পারছে, উত্তাপ, বিকিরণ বা ধ্বংসলীলার কারণে যেখানে উদ্ধারকর্মীদের যাবার উপায় নেই৷
এমন পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত শুধু কল্পনা করা সম্ভব৷ কিন্তু বন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের এক বিশেষজ্ঞ দল একটি ‘হিউম্যানয়েড' বা মানুষের মতো দেখতে উদ্ধারকারী রোবট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ এই টিম এরই মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নিয়েছে৷ আজ তাঁরা ‘নিমব্রো'-র ক্ষমতা পরীক্ষা করতে চান৷
মানুষের মতো রোবট
আজকাল কিছু কিছু রোবট দেখতে অনেকটা মানুষের মতো হয়৷ আবার যারা দেখতে মানুষের মতো নয়, তারা আবার কাজে পুরোপুরি মানুষের মতো৷ সেরকম কয়েকটি রোবটের কথাই থাকছে আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাত মেলায়, কথাও বলে রোবট
এই রোবটটির নাম ‘রোবয়’৷ এর ত্বক এবং মাংসপেশি মসৃণ৷ রোবয় হ্যান্ডশেক করলে মনে হয় যেন কোনো মানুষের সঙ্গেই হাত মেলানো হলো৷ এই রোবট কথা বলতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতো আবেগও প্রকাশ করে৷
ছবি: Getty Images/Afp/John MacDougall
যে রোবট জানালা পরিষ্কার করে
জার্মানির তৈরি এই রোবটটির নাম ‘জাস্টিন’৷ ওকে তৈরি করা হয়েছিল মহাকাশযানের জন্য৷ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাঁচ বছর ছিল সে৷ পৃথিবীতে ফিরে তাকে মানুষের মতো অনেক কাজই করতে হয়৷ ঘরের জানালা পরিষ্কার করায় সে ওস্তাদ৷
ছবি: DW/F. Schmidt
‘লেখক’ রোবট
‘বায়োস’ নামের এই রোবটটি পেশাদার লেখকদের চেয়েও দ্রুত লিখতে পারে৷ তার বাহুর সঙ্গে লাগানো আছে কলম৷ সেই কলমে প্রয়োজন মতো কালি জোগান দেয়ার ব্যবস্থাও আছে৷ কালি-কলম হাতে সদাপ্রস্তুত ‘বায়োস’ ৮০ মিটার কাগজে মাত্র দশ সপ্তাহে হিব্রুতে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮০৫টি অক্ষর লিখে দেখিয়েছে৷
ছবি: robotlab
রেস্তোরাঁয় অর্ডার নেয়ার কাজও রোবটের
চীনের রেস্টুরেন্টে এ ধরনের রোবট ইতিমধ্যে কাজে নেমে পড়েছে৷ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে খাবারের ‘অর্ডার’ নেয় এমন রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার পরিবেশনে মানুষের চেয়েও দক্ষ
এই রোবটগুলো রেস্টুরেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাবার পরিবেশন করতে পারে৷ ‘ওয়েটার’ মানুষ হলে এক সময় তো ক্লান্ত হয়, কিন্তু রোবট কখনোই ক্লান্ত হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
খাবার গরম করে রোবট
রেস্টুরেন্ট বা ঘরে রান্নার কাজটুকু একবার করে দিলে তারপর যতবার খুশি সেই খাবার গরম করতে পারবে রোবট৷ খাবার গরম করার কাজে এই রোবট আসলেই খুব দক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
6 ছবি1 | 6
গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আজ এই রোবট লিফট ব্যবহার করছে৷ টিমের প্রধান টোবিয়াস রোডেহুটকর্স বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের পেছনে আইডিয়া হলো, অনেক বিপর্যয় ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে উদ্ধারকর্মী পাঠানো যায় না৷ যেমন বাড়ি ধসে পড়া বা গ্যাস লিকের আশঙ্কা থাকলে৷ তখন মানুষের বদলে রোবট পাঠিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব৷ রোবট সক্রিয়ভাবে কিছু পদক্ষেপও নিতে পারে৷''
ধসে পড়া গুদামঘরে প্রবেশ করতে রোবট নিজেই পথ খালি করে এগিয়ে যাচ্ছে৷ এখনো সে পুরোপুরি স্বাধীন বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে না, তার সহায়তার প্রয়োজন পড়ে৷ রোবটের শরীরে সাতটি ক্যামেরা, একটি লেজার স্ক্যানার এবং বিভিন্ন জয়েন্ট ও চাকার মধ্যে ৬০টি মোটর রয়েছে৷ রোডেহুটকর্স বলেন, ‘‘আমার পেছনে অপারেটররা রোবট-টি নিয়ন্ত্রণ করছে৷ একজন শুধু গতিবিধি, আরেকজন পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করেন৷ অন্য এক জন রোবটের হাতের নড়াচড়া স্থির করেন৷''
উদ্ধার অভিযানের সময় দেখা গেল, পাইপের মধ্যে ত্রুটির ফলে গ্যাস লিক করছে৷ ফলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে৷ এ ক্ষেত্রেও রোবট পাঠিয়ে সেই পাইপ বন্ধ করা হলো৷ দূরে বসে একজন এই কাজে রোবটের হাত নিয়ন্ত্রণ করছেন৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবাস্টিয়ান শ্যুলার বলেন, ‘‘আমি রোবটের হাত নিয়ন্ত্রণ করি৷ রোবট যা দেখছে, এই চশমার মাধ্যমে আমিও তা দেখতে পাই৷ চারিপাশের ত্রিমাত্রিক জগত ফুটে ওঠে৷ ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলি মিলিয়ে আমার ওরিয়েন্টেশন স্থির হয়৷ তাছাড়া কন্ট্রোলার দিয়ে আমি রোবটের হাত নাড়াতে পারি, একটি মডেলের সাহায্যে হাত নাড়াতে, মুঠো খোলা বা বন্ধ করতে পারি৷''
সব সিদ্ধান্ত নেবে গাড়ি!
এমন গাড়ির কথা তো শুনেছেন যা আপনাআপনি চলে, কোনো চালক লাগেনা? সেসব গাড়িতে সব সিদ্ধান্ত কে নেয়? মানুষ, নাকি গাড়ি?
ছবি: media.daimler.com
চালক ছাড়া ৬০০ মাইল
এ বছরের শুরুর দিকে এই আউডি-৭ গাড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি থেকে নিজে নিজেই পৌঁছে যায় ৬০০ মাইল দূরের লাস ভেগাসে৷ সাবধানের মার নেই- ভেবে স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে একজন বসেছিলেন বটে, কিন্তু তাঁকে কিছুই করতে হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Fets/Audi AG
চালকের আসনই নেই!
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কেমন হতে পারে তার একটা নমুনা মার্সিডিজ বেঞ্জের এই এফ০১৫ মডেল৷ গাড়িতে চালকের আসন নেই৷ যাত্রীদের আসনগুলোই মুখোমুখি৷ পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি এ গাড়ি রাস্তায় নামলে ঘণ্টায় ১২৫ মাইল বেগে ছুটতে পারবে৷
ছবি: media.daimler.com
অস্থির লোকদের জন্য নয়
যাঁরা সবসময় শুধু দ্রুতই ছুটতে চান তাঁদের জন্য কিন্তু এই গাড়ি নয়৷ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বিপদ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনে যে-কোনো মুহূর্তে গতি মন্থর করবে৷ সামনের গাড়ি বা অন্য কোনো বাহন থেকে নিরাপদ দূরত্বও বজায় রাখবে সবসময়৷
ছবি: imago/Jochen Tack
একে অন্যকে অনুসরণ করবে
মিউনিখে অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় নেমেছিল জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুটি গাড়ি৷ প্রথমটিকে দ্বিতীয়টি সবসময় পেছন থেকে অনুসরণ করবে- এমন প্রতিযোগিতা৷ পেছনের গাড়িটি কিন্তু একবারও নিয়ম অমান্য করেনি!
ছবি: DW
দুর্ঘটনা এড়ানো
অনেক সময় চালক সামনের পথ না দেখেও যখন দ্রুত গাড়ি চালাতে যান তখনই দুর্ঘটনা ঘটে৷ কুয়াশায় ঢাকা পথ, কিংবা প্রবল বর্ষণের মধ্যে প্রায়ই এমন হয়৷ কিন্তু রোবোটিক গাড়ির বেলায় কখনো এমন হবেনা৷ এ গাড়ি নিজেকে যেমন সামনের গাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখবে, তেমনি পেছনের গাড়িকেও সতর্ক করবে৷ ভবিষ্যতে এমন গাড়ি তৈরি করা হবে যে গাড়ি সামনে যে বাধা আছে সে খবর পেছনের গাড়িকেও জানিয়ে দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব তথ্যের জন্য আলাদা আলাদা সেন্সর
রোবোটিক গাড়ি তার চারপাশের সবকিছু আলাদা আলাদা চোখ দিয়ে দেখে৷ চোখের কাজটা করে সেন্সর৷ গুগল কার-এ থাকে এই ধরণের লেজার সেন্সর যার মাধ্যমে চারপাশের সবকিছুর ত্রিমাত্রিক ছবি ফুটে ওঠে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
লেজার স্ক্যানারের চোখে....
জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গাড়িটি কেমন দুর্গম পথ দিয়ে চলছে দেখুন! চলতে কিন্তু সমস্যা হচ্ছেনা৷ লেজার স্ক্যানার চার পাশটাকে স্ক্যান করছে, কম্পিউটার ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে দিচ্ছে আর তা দেখে দেখে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি৷
ছবি: Universität der Bundeswehr/TAS
মেড ইন জার্মানি
ডাইমলারের গবেষকরা নিরাপদ গাড়ি তৈরির জন্য অপটিক্যাল ক্যামেরাও ব্যবহার করছেন৷ উইন্ডশিল্ডের পেছনের সেন্সরটা রাস্তায় কী ঘটছে তা দেখে৷ গাড়ি চালনার এই নিরাপদ ব্যবস্থা ২০১১ সালে জার্মানির সেরা উদ্ভাবনের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
পথচারীদের ভাবনা কম
কম্পিউটার গাড়িকে জানায় চারপাশের কোন বস্তু কোন দিকে যেতে পারে৷ গাড়ি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়৷ ছবির এই গাড়ির সামনের পথচারী ডান দিক থেকে রাস্তা পার হচ্ছেন৷ তাঁকে কমলা রংয়ে আর ডান দিকের গাড়িগুলোকে সবুজ রংয়ে দেখানো হচ্ছে, যার অর্থ, এখন কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
9 ছবি1 | 9
গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করার ভাল্ভ নাগালের বাইরে হলেও রোবট দমে যায় না৷ উপযুক্ত যন্ত্র হাতে পেলে রোবট ড্রিল বা কাটার কাজ করে নেয়৷ টিমের প্রধান রোডেহুটকর্স বলেন, ‘‘এই রোবটের বিশেষত্ব হলো, তার শরীরে উপরের অংশ হিউম্যানয়েড – অর্থাৎ মানুষের মতো দুটি হাত রয়েছে৷ স্থিতিশীলতার স্বার্থে ও সহজে চলাফেরার স্বার্থে নীচে দু'টির বদলে চারটি পা রাখা হয়েছে৷''
এই মহড়ার সময় ভবনটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থাকায় উদ্ধারকর্মীরা রোবট পাঠিয়ে আহতদের খোঁজ করছেন৷ এর জন্য রোবট-কে অনেকগুলি দরজাও খুলতে হচ্ছে৷ এর প্রয়োগ শুরু হলে অনেক আহত মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে৷ তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান মাক্স শোয়ার্ৎস বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা এমন এক পরিস্থিতি দেখছি, যেখানে একজন মাটিতে পড়ে রয়েছে৷ ক্যামেরায় তোলা থ্রিডি ছবিতে তা খুব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে৷ সেই অনুযায়ী উদ্ধারকার্য শুরু করা যেতে পারে৷''
এখনো রোবট স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করেনি৷ লক্ষ্য হলো, ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি বুঝে রোবট নিজস্ব বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে৷ ততদিন পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীদের একাই কাজ করতে হবে৷