সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম টিকটক বলেছে, যদি মার্কিন সরকার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে রোববার থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে সেবা বন্ধ করতে বাধ্য হবে৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে তারা এই ঘোষণা দেয়৷ শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস ও বিচার বিভাগ টিকটকের জন্য প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা ও নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা টিকটকের সেবা চালিয়ে যাবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷
এর আগে শুক্রবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, টিকটকের চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে রোববারের মধ্যে প্ল্যাটফর্মটি বিক্রি করতে হবে৷ অন্যথায় এটি নিষিদ্ধ হবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট টিকটকের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মূলত জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে৷ কারণ চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের তথ্য চীন সরকারের কাছে দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছে৷
মার্কিন সরকার মনে করে, চীনের জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী বাইটড্যান্স চীনা সরকারের কাছে তথ্য সরবরাহে বাধ্য, যা মার্কিন নাগরিকদের গোপনীয়তার জন্য হুমকিস্বরূপ৷ দেশটির ‘Protecting Americans from Foreign Adversary Controlled Applications Act' আইন অনুযায়ী, টিকটককে নিষিদ্ধ করা হতে পারে, যদি তারা মালিকানা বিক্রি না করে৷ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেহেতু বাইটড্যান্স বিক্রির শর্ত পূরণে ব্যর্থ৷
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি৷
হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ
01:16
টিকটক বলেছে, ''যদি বাইডেন প্রশাসন অবিলম্বে পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য আইন প্রয়োগ না করার বিষয়ে স্পষ্ট বিবৃতি প্রদান না করে, তবে দুঃখজনকভাবে টিকটক ১৯ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যাবে৷''
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে, গুগল ও অ্যাপলের মতো অ্যাপ স্টোরগুলোতে টিকটক ডাউনলোড করা যাবে না৷ তবে বিদ্যমান ব্যবহারকারীরা আপাতত অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন৷ কিন্তু নতুন আপডেট না পাওয়ায় অ্যাপটির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে যাবে৷
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদ সোমবার শেষ হচ্ছে এবং ডনাল্ড ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন৷ হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই আইনের প্রয়োগের দায়িত্ব পরবর্তী প্রশাসনের উপর ন্যস্ত হবে৷ ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি এই নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে, যদিও শুরুতে তিনি এটি সমর্থন করেছিলেন৷
তিনি বলেছেন, ''টিকটক সম্পর্কে আমার সিদ্ধান্ত শীঘ্রই নেওয়া হবে, তবে আমাকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য সময় প্রয়োজন৷''
বাইটড্যান্স টিকটক বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ কোম্পানিটি বলছে, যদি কোনো সমাধান না হয়, তবে তারা রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করবে৷
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা টিকটকের চীনা সরকারের সাথে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ টিকটক বারবার বলেছে, তারা বেইজিংয়ের সাথে কোনো তথ্য শেয়ার করে না৷
জেডএ/এআই (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
টিকটকের মালিকানার বিস্তারিত
যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে পারে টিকটক৷ দেশটির হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এক বিল পাসের পর টিকটিক নিষিদ্ধ হতে পারে এমন আলোচনা শুরু হয়৷
ছবি: Mike Blake/REUTERS
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিল পাস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’ বুধবার একটি যুগান্তকারী বিল পাস করেছে, যার ফলে দেশটিতে টিকটক নিষিদ্ধ হতে পারে৷ এই বিল পাসের পর এখন জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে অ্যাপটির মালিকানা ছেড়ে দেয়ার জন্য ছয় মাস সময় বেঁধে দেয়া হতে পারে৷
ছবি: Olivier Douliery/AFP/Getty Images
নিষিদ্ধ হতে পারে টিকটক
এই সময়ের মধ্যে মালিকানা হস্তান্তর করা না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষে বিলটি বিপুল ভোটে পাস হয়েছে৷ এটি আইনে পরিণত করার জন্য এখন সিনেটের অনুমোদন পেতে হবে৷
ছবি: CFOTO/picture alliance
বাইটডান্স কী?
বাইটড্যান্স কোম্পানি লিমিটেড হলো একটি চাইনিজ ইন্টারনেট টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান৷ বিভিন্ন সময়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বাজারে আনার কারণে অনেকেই এটিকে অ্যাপ ফ্যাক্টরি নামে চেনে৷ চীনা প্রকৌশলী ঝাং ইমিং ২০১২ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন৷
ছবি: CFOTO/picture alliance
ফ্ল্যাগশিপ অ্যাপ
বাইটড্যান্সকে প্রায়ই অ্যালগরিদমে বিশ্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বলা হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে এর তিন ফ্ল্যাগশিপ অ্যাপ টিকটক, ডোয়িন এবং টুইয়ুটিয়াও জন্য কোম্পানিটি বেশি পরিচিতি পায়৷
ছবি: Drew Angerer/Getty Images
একে একে সাফল্য
২০১২ সালে বাইটড্যান্স প্রথম বাজারে আনে টুইয়ুটিয়াও৷পার্সোনালাইজড কন্টেন্ট ফিডের জন্য এটি বেশ সাড়া জাগানিয়া হয়ে উঠে৷ ২০১৬ সালে বাজারে আসে ডোয়িন৷ পাঁচ বছরে একশ মিলিয়ন ব্যবহারকারী পায় অ্যাপটি৷ পরের বছর এর আন্তর্জাতিক সংস্করণ বাজারে আনে কোম্পানিটি৷ নাম দেয় টিকটক৷
ছবি: Greg Baker/AFP/Getty Images
বন্ধুর কাছে দায়িত্ব ছাড়লেন ঝাং
২০২১ সালে বাইটড্যান্সের সিইও’র দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন ঝাং৷ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট লিয়াং রুবোর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন তিনি৷ কারণ হিসেবে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতার ঘাটতি আছে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Shannon Stapleton/REUTERS
মালিকানার ভাগ কার কত
গত বছর টিকটিকের প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, বাইটড্যান্সের শতকরা ৬০ ভাগ মালিকানায় রয়েছে কারলাইল গ্রুপ, জেনারেল আটলান্টিকসহ কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান৷ ২০ ভাগের মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এবং বাকি ২০ ভাগ ঝাংয়ের হাতে৷
ছবি: HPIC/dpa/picture alliance
চীন সরকারের সাথে সম্পর্ক
বড় বড় চাইনিজ প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ২০১৪ সালে বাইটড্যান্সে নিজেদের একটি শাখা গড়ে তোলে যা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরিতা
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র অংশের মালিকানা বিক্রি করে দেয়ার নির্বাহী আদেশ দেয়া হয়েছিল৷ বিক্রি করা না হলে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হবে এমন হুমকি দেয়া হয়৷ যদিও পরে দেশটির ফেডারেল কোর্ট এমন আদেশ বাতিল করে৷
ছবি: Petr Svancara/CTK/dpa/picture alliance
ব্যবহারকারীদের তথ্য নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি৷ ট্রাম্পের আমলে টিকটকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠে যে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের তথ্য বেইজিংয়ের হাতে তুলে দিচ্ছে৷ বিষয়টি অস্বীকার করে টিকটক৷ পরে পরিস্থিতি সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওরাকল প্রতিষ্ঠানের সাথে অ্যালায়েন্স গড়ে তোলে টিকটিক৷ ২০২০ সাল থেকে ওরাকলের ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ডেটা সংরক্ষণ শুরু করে টিকটক৷