লকডাউনের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোববার থেকে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে শুক্রবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে৷
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, "ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে নির্দেশনা জারি করা হল, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার/সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷''
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে চলছে ‘সর্বাত্মক লকডাউন', যা ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বহাল থাকছে ৷
এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সব ধরনের অফিস ও পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় ৷ তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় ৷
লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৷ সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো ৷
তবে শেষ দফায় লকডাউন ঘোষণার আগে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় ও ঈদ সামনে রেখে তা শিথিল করার ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
লকডাউনে পুলিশ চেকপোস্টের অভিজ্ঞতা
করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী ‘‘সর্বাত্মক লকডাউন’’ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে ২২ এপ্রিল৷ জরুরি প্রয়োজনে চলাফেরার জন্য পুলিশ কর্তৃক ‘মুভমেন্ট পাস’ চালু করা হলেও অনেকের কাছে তা পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Mohammad P. Hossain/REUTERS
মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দেয়া
মিরপুরের একটি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় পেশায় ঠিকাদার মোঃ জামাল উদ্দিন নামের একজনকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কথা বলে জানা গেলো, রাইড শেয়ারিং এর মাধ্যমে মোটরবাইকে করে দুইজন চলাফেরা করা নিষেধ হওয়ায় পুলিশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ইউনিফর্ম পরায় ঝামেলা হয়নি
মাহমুদুল হাসান নামের একজন প্রকৌশলী জানান, লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই তিনি বের হচ্ছেন৷ তবে তার প্রতিষ্ঠানের দেয়া বিশেষ পোশাক (ইউনিফর্ম) পরে গত কয়েকদিন চলাফেরা করছেন৷ প্রতিষ্ঠানের জরুরি সেবার কাগজপত্র সঙ্গে থাকায় আর কোন ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়নি বলে জানান তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
হেঁটে যেতে বাধ্য করা
ঢাকার মগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সহকারী হিসেবে কাজ করেন তানিশা রহমান৷ লকডাউনের প্রথমদিন তাঁকে রিক্সা থেকে নামিয়ে দিয়ে কর্মস্থলে হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়েছে৷ জরুরি সেবাদানকারী পরিচয় দিয়েও কোন লাভ হয়নি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পুলিশের ধাওয়া
মান্নান আহমেদ নামের একজন রিক্সাচালক জানান, ৪-৫ দিন আগে মিরপুর ১০ নম্বরের চেকপোস্টে পুলিশ তাকেসহ আরও অনেক রিক্সাচালককে ধাওয়া করে৷ যাত্রী থাকার পরেও তাদের কোন রকম কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এখন আর পুলিশ ধরে না’
ধানমন্ডির একটি সুপারশপে ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে কর্মরত মনিরা আক্তার জানান, তার কর্মস্থল বাসা থেকে অনেক দূরে৷ লকডাউন শুরু প্রথম দুই দিন চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ বেশ তৎপর থাকলেও এখন আর কোন সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘মামলার ভয়ে গাড়ি চালাই না’
রাজু আহমেদ নামের একজন মোটরবাইক চালক জানান, লকডাউন শুরুর দিন যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ চেকপোস্টে তাকে এক হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়৷ এরপর থেকে তিনি আর গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন না৷ কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘যা কামাই করি সবই যদি জরিমানা দিতে হয়, তাইলে আর লাভ হইলো কি?’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে ছাড়
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত মারিয়া গোমেজ জানান, লকডাউনে স্বাস্থ্যসেবাদানকারী হিসেবে চলাফেরার সময় তার ব্যক্তিগত কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই৷ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে সহকর্মীদের হেনস্তা হওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে তিনি জানান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শেষ রক্ষা হলো না
সৌদিআরব প্রবাসী জাকির হোসেন কারওয়ান বাজার থেকে বিমানের টিকেট নিতে এসেছেন টাঙ্গাইল থেকে৷ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় বিজয় সরণি মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তাকে ১২০০ টাকা জরিমানা করে৷ এর আগে আরো দুই জায়গায় ছাড় পেলেও এখানে এসে অনেক অনুরোধ করেও শেষ রক্ষা হলো না বলে জানান তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সমস্যা হয়েছে প্রথম তিন দিন
সৈয়দা রাকিবা আক্তার নামের একজন ওষুধের ব্যবসায়ী জানান, লকডাউন শুরুর প্রথম ২-৩ দিন চলাচলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে পড়তে হলেও এখন নিয়ম কানুন ঢিলেঢালা হয়ে গেছে৷ এভাবে দিনের পর দিন কর্মজীবী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে থাকা সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ক্ষমা চেয়ে রক্ষা
সিএনজি অটোরিক্সা চালক মোঃ কামাল হোসেন লকডাউনের পর আজই প্রথম বের হয়েছেন৷ বিজয় সরণির মোড়ে তিনজন যাত্রী নেওয়ার অপরাধে পুলিশ তাকে মামলা দিতে চায়৷ পরে বিশেষ কারণ দেখিয়ে এবং হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ৷