ঐতিহাসিকভাবে ফুটবলের পরাশক্তি বলে পরিচিত দলগুলোর কেউই এবার বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে সন্তোষজনক খেলা দেখাতে পারেনি৷ তবে অন্য কয়েকটি দলের পারফরম্যান্স রোমাঞ্চকর এক নকআউট পর্বের আভাস দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
এখন পর্যন্ত আটটি দলের মধ্যে বিশ্বকাপের শিরোপাগুলো ভাগাভাগি হয়েছে৷ এর মধ্যে দুটি দল নকআউট পর্বে নেই৷ ইটালিতো এবার বিশ্বকাপ খেলারই সুযোগ পায়নি৷ আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানিসবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম পর্বেই বিদায় নিয়েছে৷
বাকি থাকলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, উরুগুয়ে, স্পেন আর ইংল্যান্ড৷ এর মধ্যে প্রথম চারটি দেশ আছে বিশ্বকাপ ড্র-এর এক অংশে৷ অর্থাৎ, এদের মধ্য থেকে একটি দলের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ আর ড্র এর অন্যপাশে আছে স্পেন আর ইংল্যান্ড৷ তাদের মধ্য থেকেও একটি দলের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে নীচের টুইটটি খেয়াল করুন৷
তবে প্রথম পর্বে শক্তিশালী দল আর দ্বিতীয় স্তরের শক্তিশালী দলগুলোর খেলা বলে দিচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সবকিছু হিসেব অনুযায়ী না হওয়ার আশঙ্কা বেশি৷ যেমন, গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার অপরাজিত থাকার রেকর্ড আর স্পেনের দূর্বল ডিফেন্স (তিন ম্যাচে পাঁচ গোল খেয়েছে দলটি) বলছে, দল দুটি কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হলে ক্রোয়েশিয়ার জেতার সম্ভাবনা থাকবে৷
তেমনিভাবে ইংল্যান্ড যদি কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টারে যেতে পারে, তাহলে সেখানে তাদের সুইডেনের সঙ্গে লড়তে হতে পারে৷ মনে রাখতে হবে, সুইডেন গ্রুপ পর্বে মেক্সিকোকে তিন গোলে হারিয়েছে৷ এছাড়া ইটালির এবার বিশ্বকাপে আসার পথে বাধা ছিল এই সুইডেনই৷ গ্রুপ পর্বে জার্মানির সঙ্গে খেলায় হেরে গেলেও সুইডেনের ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া গেছে৷ ফলে কোয়ার্টারের সম্ভাব্য খেলায় ইংল্যান্ড সহজে সুইডেনকে পেরিয়ে যাবে, তা ভাবার যুক্তি নেই৷
অর্থাৎ ক্রোয়েশিয়া আর সুইডেন যদি তাদের গ্রুপ পর্বের পারফর্ম্যান্স ধরে রাখতে পারে, তাহলে তাদের বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে রাশিয়া বিশ্বকাপ একটি নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উপহার দিলেও দিতে পারে৷
এবার ড্র এর অন্য পাশটার আলোচনায় যাওয়া যাক৷ সেখানে সাবেক চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স আর উরুগুয়ের সঙ্গে আছে বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, মেক্সিকো আর জাপান৷ এর মধ্যে মেসির আর্জেন্টিনা আর গ্রিজমানের ফ্রান্স দ্বিতীয় পর্বেই মুখোমুখি হচ্ছে৷ ফলে সেখানেই সাবেক এক চ্যাম্পিয়ন ঝরে পড়বে৷
গ্রুপ পর্বের খেলায় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স কেউই প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেনি৷ ‘‘আমরা শুরুটা সেরাভাবে করতে পারিনি৷ আমরা আসলেই একটি বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিলাম,'' প্রথম পর্ব শেষে বলেন আর্জেন্টিনার মাসচেরানো৷ আর ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন মেধাবী খেলোয়াড় থাকলেও কোচ দিদিয়ে দেশঁ এখন পর্যন্ত তাঁদের সেরাটা বের করে আনতে পারেননি৷
প্রথম পর্বে একমাত্র উরুগুয়ে তাদের জালে কোনো বল প্রবেশ করতে দেয়নি৷ সাম্প্রতিক বিশ্বকাপগুলোতে দেখা গেছে, যে দল ভালোভাবে তাদের গোলপোস্ট সামলাতে পেরেছে, তারাই সফল হয়েছে৷ যেমন ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেন মাত্র দুইবার তাদের জালে বল ঢুকতে দিয়েছিল৷
দ্বিতীয় পর্বে উরুগুয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের মুখোমুখি হবে৷ এই খেলায় যে জিতবে তার সঙ্গে খেলবে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচের বিজয়ী দল৷ ফলে কোয়ার্টারে মেসি-রোনাল্ডো কিংবা মেসি-সুয়ারেজের দেখা হতে পারে৷
দ্বিতীয় পর্বের আরেক খেলায় মেক্সিকোর মুখোমুখি হবে ব্রাজিল৷ গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় ব্রাজিল ছন্দ ফিরে পাওয়ার আভাস দিয়েছে৷ সেটি আরেকটু বাড়াতে পারলে কোয়ার্টারের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বেলজিয়ামকে টপকাতে পারবে তারা৷ সেক্ষেত্রে বিশ্ববাসী হয়ত সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দ্বৈরথ দেখতে পাবেন৷
কিন্তু তার আগে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বেলজিয়ামকে ছোট করে দেখার কারণ নেই৷ কেননা, তারায় ভরপুর বেলজিয়াম এবার বিশ্বকাপ জিতে নিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
বিশ্বকাপে বেশি গোল করেছেন যাঁরা
বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশি আলোচনায় ছিলেন মেসি, রোনাল্ডো, নেইমাররা৷ তারকাদ্যুতিতে যে অনেক এগিয়ে তাঁরা! কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে তাঁরা থেকে গেলেন নিষ্প্রভ৷ সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল হ্যারি কেন৷ তাঁর পরে কারা?
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
হ্যারি কেন, ৬ গোল
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ‘গোল্ডেন বুট’ পুরস্কার দেয়ার চল শুরু ১৯৮২-র আসর থেকে৷ সেবার সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইটালি৷ আরো অবাক করেছিলেন পাওলো রসি৷ আসর শুরুর আগে যাঁকে কেউ প্রায় চিনতোই না, সেই রসিই পুরস্কারটি জিতেছিলেন প্লাতিনি, জিকো, মারাদোনাদের পেছনে ফেলে৷ এবারের আসরে পানামার বিপক্ষে একটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ৬ গোল করায় ‘গোল্ডেন বুট’ জিতে নিলেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন৷
ছবি: Reuters/C. Barria
গ্রিসমান, ৪ গোল
২০ বছর পর ফ্রান্স আবার চ্যাম্পিয়ন৷ দলকে চ্যাম্পিয়ন করায় গ্রিসমানের অবদান ৪ গোল৷
ছবি: Reuters/A. Vaganov
কিলিয়ান এমবাপে, ৪ গোল
আর্জেন্টিনাকে বলতে গেলে একাই বিদায় করেছেন তিনি৷ ১৯ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ড নিজে করেছেন দুই গোল আর পেনাল্টি আদায় করে আরেকটি গোলেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান৷ ফাইনাল শেষে তাঁর নামের
পাশে লেখা চার গোল৷ এমবাপের মাঝে আগামীর সুপারস্টারকে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
রোমেলু লুকাকু, ৪ গোল
বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লুকাকুও কম যান না৷ ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে ১৫৩ মিনিট খেলে ৫ গোল করেছেন হ্যারি কেন৷ লুকাকু খেলেছেন তার চেয়েও কম, মাত্র ১৪৯ মিনিট৷ ওই সময়েই আদায় করে নিয়েছেন ৪ গোল৷
ছবি: imago/Photonews/Panoramic
ডেনিস চেরিশেভ, ৪ গোল
রাশিয়ার এই মিডফিল্ডারও করেছেন ৪ গোল৷ তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটিই ছিল এ আসরে তাঁর শেষ গোল৷ কারণ, সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় তাঁর দেশ রাশিয়ার জন্য শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপ অভিযান৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, ৪ গোল
পর্তুগালের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর নামের পাশেও লেখা হয়ে যায় ৪ গোল৷ তারপর অবশ্য আর গোলের দেখা পাননি৷ তাঁর বিশ্বকাপ জয়ের বাসনা অপূর্ণ রেখেই উরুগুয়ের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
এডেন হ্যাজার্ড, ৩ গোল
বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড ৭ ম্যাচে করেছেন ৩ গোল৷ দলের সাফল্যে তাঁর অবদান অবশ্য তার চেয়ে অনেক বেশি৷ মধ্যমাঠে দলের মধ্যমণিই ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
মারিও মানসুকিচ, ৩ গোল
ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ডও সাত ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/GES/M. Gilliar
ইভান পেরিসিচ, ৩ গোল
মদ্রিচ, মানসুকিচের মতো ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচের খেলাও এবার সবার নজর কেড়েছে৷ ৭ ম্যাচে তিনিও করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: Reuters/D. Staples
এডিনসন কাভানি, ৩ গোল
প্রথম রাউন্ডে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি৷ তিন ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১ গোল৷ কিন্তু ঠিক সময়েই জ্বলে উঠে উরুগুয়েকে তুলে দিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে৷ কাভানির জোড়া গোলের কারণেই রোনাল্ডোর আশাভঙ্গ হয়েছে, বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
আর্টেম জিয়ুবা, ৩ গোল
রাশিয়ার এই ফরোয়ার্ডে প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন দুই গোল নিয়ে৷ কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে বিদায় করা ম্যাচে এক গোল করায় তিনিও উঠে এসেছে স্বদেশী চেরিশেভের পাশে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ইয়েরি মিনা, ৩ গোল
খামেস রদ্রিগেস দলে থাকতেও এবার কলম্বিয়ার ইয়েরি মিনা নজর কেড়েছেন৷ দ্বিতীয় রাউন্ডে ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি রদ্রিগেস৷ মিনার গোলেই ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিল কলম্বিয়া৷ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় অবশ্য সেখানেই শেষ হয়ে যায় কলম্বিয়া আর মিনার ২০১৮-র বিশ্বকাপ মিশন৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
দিয়েগো কস্তা, ৩ গোল
পর্তুগালের বিপক্ষে তিনি যেন রোনাল্ডোর সঙ্গে গোল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন৷ তবে কস্তা দুই গোল করে থামলেও রোনাল্ডো থেমেছেন শেষ মুহূর্তের গোলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে৷ প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন তিন ম্যাচে তিন গোল নিয়ে৷ তারপরই স্পেনের বিদায় এবং কস্তার জন্যও বিশ্বকাপ আপাতত শেষ৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
জন স্টোনস, ২ গোল
এই তালিকায় জন স্টোনসের নামটা কিন্তু বিস্ময় জাগানোর মতো৷ ডিফেন্ডার হয়েও ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন ২ গোল৷ পানামাকে ৬-১ গোলে হারিয়ে এ আসরে প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি গড়েছে ইংল্যান্ড৷ সেই ম্যাচেই দুই গোল করেছিলেন স্টোনস৷
ছবি: Reuters/M. Childs
ফিলিপে কুটিনিয়ো, ২ গোল
নেইমার যখন গোলের দেখা পাচ্ছেন না, তখনই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন কুটিনিয়ো৷ প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের একমাত্র গোলটি এসেছিল তাঁর পা থেকেই৷ কোস্টারিকা ম্যাচেরও গোল-বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়েছিলেন প্রথম পর্বের পারফর্ম্যান্সে নেইমারসহ অনেক বড় তারকাকেই ছাড়িয়ে যাওয়া এই মিডফিল্ডার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
মোহামেদ সালা, ২ গোল
ভক্তদের অনেক আশা ছিল তাঁর কাছে৷ কিন্তু ইনজুরির কারণে বেশি কিছু করতে পারেননি মিশরের মোহামেদ সালা৷ দুই ম্যাচ খেলে করেছেন দুই গোল৷
ছবি: Reuters/H. Romero
আরো যাঁদের ২ গোল
ব্রাজিলের নেইমার, জাপানের তাকাশি ইনুই, নাইজেরিয়ার আহমেদ মুসা, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ, উরুগুয়ের লুই সুয়ারেজ, সুইডেনের আন্দ্রেয়াস গ্রাঙ্কভিস্ট, আর্জেন্টিনার আগুয়েরো, দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউংমিন, টিউনিশিয়ার খাজরি আর অস্ট্রেলিয়ার জেডিনারও করেছেন দু’টি করে গোল৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
পারলেন না মেসি
এবারও বিশ্বকাপ জেতা হলোনা লিওনেল মেসির৷ দ্বিতীয় রাউন্ডেই আর্জেন্টিনার ৪-৩ গোলে হেরে গেছে ফ্রান্সের কাছে৷ মেসির বিশ্বকাপ মিশনও শেষ হয়েছে মাত্র ১ গোল নিয়ে!