ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রোমা সম্প্রদায়ের লোকজন বর্ণবাদ ও অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন, বলে মন্তব্য করেছেন জার্মানির টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বোডো রামেলো৷
বিজ্ঞাপন
রোমা হলোকাস্ট দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার পোল্যান্ডের আউশভিৎস-বিরকেনাউ ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন৷ রামেলো বাম দলের প্রধান এবং জার্মানির ১৬টি রাজ্যের চেম্বার বুন্দেসরাটেরও প্রেসিডেন্ট৷ তিনি ইউরোপীয়ান রোমা হলোকাস্ট দিবস উপলক্ষে পোল্যান্ডে নাৎসি বাহিনীর ক্যাম্প আউশভিৎস-বিরকেনাউ পরিবদর্শন করেন৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘এখনো তারা অনেক জায়গায় কোণঠাসা৷ তারা বিভিন্ন দেশে ঘৃণা, বৈষম্য, বর্ণবাদ, সহিংসতার শিকার এবং তাদের নাগরিক ও সামাজিক অধিকার বঞ্চিত৷''
ইউরোপে রোমা জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটির মত৷ এরা ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷ রামেলো ছাড়াও সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ জার্মান সিনটি ও রোমার চেয়ারম্যান রোমাইনি রোজে নিহতদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন৷
১৯৪৪ সালের ২ আগস্ট নাৎসিরা পোল্যান্ডের এই ক্যাম্পের গ্যাস চেম্বারে চার হাজার ৩০০-র মতো সিনটি ও রোমা সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করে৷ ইউরোপজুড়ে তাদের হাতে রোমা জনগোষ্ঠীর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়৷
২০১৫ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ২ আগস্টকে ইউরোপীয় রোমা হলোকাস্ট দিবস হিসেবে ঘোষণা করে৷
‘‘পাঁচ লাখ সিনটি ও রোমা সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্য করে নাৎসি কর্তৃত্ববাদ সরকার,'' রামেলো বলেন৷ ‘‘ইহুদি ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো সিনটি ও রোমাদের একটি বর্ণ বিদ্বেষের বশে হত্যা করা হয়৷''
১৯৮২ সালে রোমানিদের একটি উপগোষ্ঠী সিনটি হত্যাকেও গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়া হয়৷
রোমা জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কতটা জানেন?
দশম শতকে ভারত থেকে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলেন রোমারা৷ এখন তাঁরা শিক্ষা-চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার৷
ছবি: DW/V. Bayryamova
ইউরোপের সবচেয়ে বড় নৃতাত্বিক গোষ্ঠী
রোমারা ইউরোপের সবচেয়ে বড় নৃতাত্বিক গোষ্ঠী৷ মোট ১ কোটি ২০ লাখ রোমা জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ থাকেন মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে৷ দশম শতকে ভারত থেকে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলেন রোমারা৷
ছবি: I. Punuskovic
দরিদ্র্যপীড়িত
রোমা জনগোষ্ঠীর ৮০ ভাগেরই বাস দারিদ্র সীমার নীচে৷ ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নয়টি সদস্যরাষ্ট্রের ৩৪ হাজার মানুষের উপর চালানো জরিপে উঠে আসে এমন তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/Winfried Rothermel
রোমা-বিরোধী বৈষম্য
ইউরোপে রোমা-বিরোধী বৈষম্য প্রকট৷ ২০১৬ সালের এক জরিপে দেখা যায়, চারজনের একজন রোমা বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন৷ বৈষম্য নিয়ে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাদের মাত্র ১০ শতাংশ৷
ছবি: Imago/C. Mang
‘জিপসি চাই না’
রোমারা অনেকক্ষেত্রে জিপসি, আশকালি ও সিনটি নামে পরিচিত৷ ২০০৮ সালে অর্ধেকেরও বেশি ইউরোপীয় বলেছেন, তাঁরা প্রতিবেশী হিসাবে ‘জিপসিদের’ চান না৷ যদিও এমন অপছন্দের তালিকায় সাধারণত মাদকাসক্ত আর অপরাধীরা থাকেন৷
ছবি: DW/V. Bayryamova
গড় আয়ুতে কম, শিশুমৃত্যু হারে বেশি
রোমারা আয়ুর দিক থেকে ইউরোপীয়দের গড় আয়ুর তুলনায় ১০ বছর কম বাঁচেন৷ অন্যদিকে তাঁদের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হারও ইউরোপীয় গড়ের চেয়ে বেশি৷
ছবি: DW/S. Kljajic
৭৫ ভাগের কাজ নেই
কাজের দিক থেকেও বৈষম্যের শিকার ইউরোপের রোমা জনগোষ্ঠী৷ ২০১৬ সালের জরিপে তাঁদের প্রতি চারজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে চাকরিতে পাওয়া গেছে৷ নারীদের মধ্যে কাজ করেন মাত্র ১৬ শতাংশ৷
ছবি: DW/S. Kljajic
শিক্ষায় পিছিয়ে
প্রতি চারজনে মাত্র একজন রোমা বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন৷ এক জরিপে শতকরা ২০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক রোমা বলেছেন, তাঁরা লিখতে ও পড়তে জানেন না৷
ছবি: Privat
দেশহীন হওয়ার ঝুঁকি
দেশহীন জনগোষ্ঠী হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন রোমারা৷ তবে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি৷ ২০১৬ সালে জাতিসংঘের এক জরিপে উঠে আসে, কেবল ইটালিতেই স্বদেশহীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে ১৫ হাজার রোমা শিশু৷ সম্প্রতি ইতালি ও বুলগেরিয়ায় রোমাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত করার ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Reinhardt
ব্রাজিল-কলম্বিয়ায় স্বীকৃত জনগোষ্ঠী
ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে শুধু কলম্বিয়া আর ব্রাজিলে সরকারিভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি পেয়েছেন রোমারা৷ এর মাধ্যমে সেখানে অতিরিক্ত আইনি সুরক্ষা ও অধিকার পাচ্ছেন তাঁরা৷