ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্থানভেদে ভোক্তাদের ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দিতে পারে৷ কিন্তু ওপেন ইন্টারনেট হিসেবে ব্রাসেলসের সংস্কার ঘোষণার পর এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
আপনি কি দেশের বাইরে বেড়ানোর পর ফিরে এসে আপনার মোবাইলে অর্থের বিরাট একটা অঙ্ক দেখে ভয় পেয়েছেন? যদি আপনি ইউরোপের কোনো দেশে থাকেন, তবে রোমিং-এর কারণে স্থানীয় মোবাইল কোম্পানিগুলো আপনার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেবে, কেবল আউটগোয়িং কলের জন্য নয়, ইনকামিং-এর জন্যও৷ এমনকি ইন্টারনেটে ‘থ্রটল' বা ডেটা প্যাকেজের নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা পেরিয়ে গেলে নেটের গতি কমে যায়৷
স্থান পরিবর্তনের ফলে অনলাইনে হঠাৎ করেই কোনো কোনো অ্যাপ্লিকেশন ব্লক করে দেয়া হয়৷ ইউরোপে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সময় এমন ঝামেলা আপনাকে পোহাতে হতে পারে৷
ইউরোপীয় কমিশনের এক পরিসংখ্যান বলছে, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স বা আইএসপিএস এখন চেষ্টা করছে এই সমস্যা থেকে ভোক্তাদের রক্ষা করতে৷
ইউরোপীয় কমিশন প্রধান জোসে মানুয়েল বারোসো বুধবার স্ট্রাসবুর্গে স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নে দেয়া বক্তব্যে ইউরোপের টেলিযোগাযোগ শিল্পে সংস্কারের ঘোষণা দেন৷ সেখানে ইউরোপের ভোক্তাদের কীভাবে নতুন নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে সহায়তা করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলেন তিনি৷
তবে, যেখানে ২৮টি দেশের টেলিযোগাযোগ মার্কেট, সেখানে বিষয়টটি আসলেই জটিল৷
গন্তব্য, পার্টি! জার্মানরা বেপরোয়া যেখানে...
সংস্কৃতি? না, ধন্যবাদ৷ অনেক জার্মানের কাছে ছুটি মানে ‘পার্টি টাইম’৷ অবশ্য মায়র্কা দ্বীপের ‘বালারমান ৬’ সমুদ্রসৈকতে মদ্যপানের উপর খানিকটা বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে৷ তাই বেপরোয়া হতে বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য অনেকে৷
ছবি: Getty Images
বিদায় ‘বালারমান ৬’?
পাব, গান এমনকি সিনেমাতেও খুঁজে পাওয়া যায় ‘বালারমান ৬’ সমুদ্রসৈকতকে৷ মায়র্কা-র এই (অ)খ্যাত সৈকত কোনো এক কারণে অধিকাংশ জার্মানের অত্যন্ত প্রিয়৷ কিন্তু সম্প্রতি এই সৈকতে মদ্যপানের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ দশটার পর মদ্যপান করা যাবেনা, ককটেল পান করতে হবে নির্দিষ্ট হারে – এসব নিয়মে হতাশ অনেকে৷ কিন্তু তাই বলে কি থেমে থাকবে পার্টি?
ছবি: picture-alliance/dpa
সকাল আটটায় পার্টি শুরু
মায়র্কা-র দক্ষিণের দ্বীপ ইবিজা৷ গত শতকের নব্বই দশক থেকেই দ্বীপটি ক্লাবের জন্য বিখ্যাত৷ এখানকার ‘স্পেস’ ক্লাবটি বিশ্বের সবচেয়ে সেরা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সংগীত বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ডিজেম্যাগ’৷ সম্ভবত ক্লাবটির অস্বাভাবিক পার্ট টাইমের জন্য এই স্বীকৃতি৷ এখানে পার্টি শুরু হয় সকাল আটটায়৷
ছবি: Getty Images
অন্য ঠিকানা
মায়র্কা এবং ‘বালারমান’ ছাড়াও স্পেনের মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকা তরুণ পর্যটকদের বিশেষ পছন্দ৷ উত্তর ইউরোপের হাজার হাজার পর্যটক কস্টা ব্রাভা’র লোরে ডে মার-এ যেতে পছন্দ করেন৷ জার্মানদের মধ্যে ১৩ শতাংশ স্পেন ভ্রমণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন পছন্দ: ক্রোয়েশিয়া
পহেলা জুলাই থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছে ক্রোয়েশিয়া৷ সেদেশের স্রচে সৈকতে প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন৷ জার্মানরাও সেখানে নিজেদের একটি জায়গা করে নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/PIXSELL
কৃষ্ণ সাগরে বিনোদন
বুলগেরিয়ার কৃষ্ণ সাগরের সৈকতও পার্টির জন্য উপযুক্ত৷ বিকেল থেকেই এখানে জমে আড্ডা৷ আর গ্রিসেও জার্মানদের ভালো ভিড় থেকে৷ ব্রিটিশ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মানুষও এসব জায়গা পছন্দ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন নাগরিকত্বের সন্ধান?
গোটা বিশ্বের আড্ডাবাজদের আমন্ত্রণ জানায় ইউক্রেনের ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের ‘মিনিস্টার অফ গুড মুডস’৷ কাজান্ট্রিপ উৎসবের কর্মকাণ্ড অনেকটা একটি দেশের মতো পরিচালিত হয়৷ এই উৎসবের জন্য রয়েছে ভিসা, সরকারি চাকুরি এবং সংবিধান৷ প্রতি বছর এক লাখ সত্তর হাজারের মতো তরুণ-যুবা এই উৎসবে হাজির হন৷ জার্মানরা এই উৎসবের ‘নাগরিক’ হতে পারেন, এ জন্য প্রয়োজন শুধু ‘ভালো মুড’ এবং কমলা রংয়ের পোশাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্যাপনে আভিজাত্য
যারা বৈচিত্রময়তার চেয়ে রুচিকে বেশি প্রাধান্য দিতে আগ্রহী, তাদের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে স্যাঁ ত্রোপে বা সেন্ট ট্রপেজ৷ দক্ষিণ ফ্রান্সের এই পার্টি গন্তব্য সেই ১৯৭০ থেকেই বিশেষ প্রসিদ্ধ৷ তবে খরচাপাতির ক্ষেত্রে হিসেবী পার্টিপ্রেমিদের জন্য এই গন্তব্য বিশেষ আকর্ষণীয় নয়৷ যদিও এখন সেখানেও দরদামের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং নির্দিষ্ট দরে অনির্দিষ্ট হারে মদ্যপানেরও সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
উত্তর সাগরের সৈকতে
জার্মানদের সবচেয়ে প্রিয় ছুটি কাটানোর গন্তব্য আপন দেশ জার্মানি৷ ফলে জার্মানির উত্তরাঞ্চলের সিল্ট দ্বীপে পার্টি করতে যান অনেক জার্মান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রঙিন এবং উষ্ণ
উত্তর জার্মানির ফিশ স্যান্ডউইচ এবং স্পার্কলিং ওয়াইন হয়ত এখানে পাওয়া যাবেনা, তবে পার্টির উপযোগী সবকিছুই আছে এখানে৷ বলছি ভারতের গোয়ার কথা৷ পার্টির খোঁজে দুনিয়া ঘোরাদের জন্য একটি পছন্দ হতে পারে এই এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মায়ামিতে স্বাগতম
মায়ামি সৈকতের অন্যতম পরিচিত এক রাস্তার নাম ‘ওশেন ড্রাইভ’৷ টেলিভিশনের কল্যাণে জার্মান পর্যটকরাও এই জায়গা সম্পর্কে পরিচিত৷ অনেক টেলিভিশন সিরিজে মায়ামিকে দেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শালোম, পার্টি!
তেল আভিভে এই তরুণ-যুবাদের হাতে হঠাৎ পানি পিস্তল দেখে যে কেউ হয়ত ঘাবড়ে যেতে পারেন, তবে এগুলো শুধুই মজা করার জন্য৷ রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ইসরায়েল ক্রমশ পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে৷ সে দেশে রয়েছে অসংখ্য ক্লাব, পাব, রেস্তোরাঁ এবং লম্বা সমুদ্র সৈকত৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
নিরপেক্ষ করার পক্ষে
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ৭ কোটি ৬০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হন৷ ৪ কোটি ৪০ লাখ ব্যবহারকারীর স্কাইপ ব্যবহারেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ এমনকি মেসেঞ্জার সফটওয়্যার – যেমন হোয়াটস-অ্যাপের ক্ষেত্রেও সমস্যার মুখোমুখি হন তারা৷
আইএসপিএস চেষ্টা করছে, মোবাইল চার্জ কমানোর এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো যাতে সহজলভ্য হয় তার ব্যবস্থা করা৷
ইউরোপীয় কমিশন চাইছে, ইউরোপের প্রতিটি দেশের টেলিকমিনিকেশন কোম্পানি এবং আইএসপিএস নিরপেক্ষ নেটের দিকে মনোযোগ দিবে৷ কেননা এর ফলে সব প্রযুক্তি কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়া প্রতিযোগিতা করতে পারবে৷
কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানান, বেশিরভাগ কোম্পানি কমিশনের এই পরিকল্পনার বিপক্ষে৷
ইউরোপের দেশগুলো এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যদি রাজি হয়, তাহলে ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে৷ এর ফলে ভোক্তারা সবধরনের বৈধ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারবে, তবে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত ব্যবহার ছাড়া৷
যদি রোমিং চাও
ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাব হলো, ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জন্য একটি টেলিকম মার্কেট থাকবে, সেইসাথে রোমিং ব্যবস্থা তুলে দেয়া হবে৷ তাদের এ প্রস্তাবটি ভেবে দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বা রেগুলেটর৷
২০১৪ এর জুলাইয়ে নতুন পরিকল্পনা কার্যকর হতে পারে বলে জানালেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনার নিলি রয়েস৷ এর ফলে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের ইউরোপের এক দেশ থেকে অন্যদেশ ভ্রমণের সময় একটি মোবাইল ফোন প্ল্যান কিনতে হবে৷ এর ফলে অপ্রত্যাশিত রোমিং চার্জের ভয় থাকবে না৷
ইউরোপের টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলো সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অংশীদারিত্ব থাকায় তারা ভোক্তাদের রোমিং চার্জ বাতিল করতে চাইছে না৷ কেননা ইউরোপীয় জনগণের ৮৫ ভাগ টেলিফোন ব্যবহার করে৷ ফ্রান্স টেলিকম বলছে, রোমিং ফি বাতিল করলে ৭ বিলিয়ন ইউরোর লোকসানের মুখে পড়বে তারা৷
কমিশনের সংস্কার বাধার মুখে
কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারে কয়েকটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ৷ তারা তথ্য উপাত্ত আদান প্রদান ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে৷ বেশিরভাগ দেশের সরকার বলেছে, জাতীয় আগ্রহের কথা বলে কমিশন নতুন পরিকল্পনা তাদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে৷ তবে, কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে এসব দেশের সরকারের ভেটো কোন কাজে আসবে না৷