ইটালির রাজধানী রোম ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্থাপত্য, শিল্পকলা, সভ্যতার নানা চিহ্নে সমৃদ্ধ৷ পর্যটকরা তার কিছুটা স্বাদ পেলেও অতীত যুগ থেকে শহরের বিবর্তন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান না৷ এবার অ্যানিমেশনের মাধ্যমে সেই অভাবও পূর্ণ হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন যুগে রোম শহরের বিবর্তন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে৷ ফলে ‘চিরন্তন' বা ‘অমর' বলে পরিচিত এই শহরের অতীতে পাড়ি দেবার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ কম্পিউটার অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ ইয়োর্গ কুর্টিয়াল বলেন, ‘‘মনে হয়, রোম যেন আমাদের জীবনের ব্লুপ্রিন্ট৷ আমরা যেভাবে বাঁচি, আমাদের সভ্যতা, আইন প্রণয়ন, রাজনীতি, আমাদের আশেপাশের সবকিছু৷ স্থাপত্য, শিল্প ও নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা – এ সবের ভিত্তি আসলে এই সংস্কৃতি৷''
জার্মানির ডার্মস্টাট শহরে ‘ফাবার কুর্টিয়াল' স্টুডিওতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রোম সৃষ্টি করা হয়েছে৷ বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে হারিয়ে যাওয়া জগত সৃষ্টি করা হয়৷ খুঁটিনাটি বিষয়গুলি ফুটিয়ে তুলে টিমের সবাই গর্ব অনুভব করে৷
তবে কম্পিঊটারের পর্দায় রোম শহর সৃষ্টি করা বিশেষজ্ঞদের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ৷ ১০ জন কর্মী প্রায় ৬ মাস ধরে সেই কাজে ডুবে ছিলেন৷ কুর্টিয়াল বলেন, ‘‘শহরটিতে প্রায় ৪০,০০০ বাড়িঘর, ২,০০০ ভিলা ও ভবন, অসংখ্য মন্দির, ১১টি থার্মাল বাথ রয়েছে৷ বিশাল মাত্রার কাজ৷ আজও সেই রোমে পা রাখলে আমরা তাজ্জব বনে যেতাম৷''
শুধু তাই নয়, আসলে এখানে রোম শহরের তিনটি সংস্করণ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ যতটা নিখুঁতভাবে সম্ভব শহরের প্রাচীন আমল, সাম্রাজ্যের শেষ পর্ব এবং রেনেসাঁ আমলের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ টিমে একজন প্রত্নতত্ত্ববিদও রয়েছেন৷ তবে শিল্পের খাতিরে কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি রয়েছে৷ ইয়োর্গ বলেন, ‘‘আমরা সৃজনশীল মানুষ৷ তাই কল্পনার অবশ্যই একটা ভূমিকা রয়েছে৷ আমরা এখানে যা করছি, তা এক অভিযানের মতো৷ একটা গন্তব্যে পৌঁছতেই আমরা রওয়ানা হয়েছি৷''
যে ১০টি কারণে আপনারও ইটালিতে যাওয়া উচিত
ইউরোপীয় অতীত; স্থাপত্য ও চিত্রকলা; ভেনিস, ফ্লোরেন্স, রোমের মতো শহর, অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য, সমুদ্রসৈকত – কি নেই এই আশ্চর্য দেশটিতে!
ছবি: picture-alliance/robertharding/N. Clark
ডলোমাইট্স, ইটালির আল্প্স
দক্ষিণ-পূর্ব ইটালির এই চুনাপাথর পর্বতমালা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে কোনো পর্যটককে মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে৷ গোটা এলাকাটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷ এখানে গ্রীষ্মে হাইকিং, সাইক্লিং অথবা বেস জাম্পিং, শীতকালে স্কি করা যায়৷
ছবি: Fotolia/Krasnevsky
পাহাড়ের কোলে হ্রদ...
...আর হ্রদের গা ঘেঁষে বাগান ঘেরা প্রাসাদ৷ ইংরেজ রোম্যান্টিক কবি শেলি কোমো হ্রদের ধারে এমনই একটি ‘ভিলা’ কিনেছিলেন৷ উত্তর ইটালির এই সব হ্রদ আর লাগোয়া জনপদে টুরিস্টদের না থেমে উপায় নেই৷
ছবি: Picture-alliance/P. Barritt
শপিং করতে হলে যেতে হবে মিলান
ইটালীয় ফ্যাশন দেখতে চান তো মিলানের দ্বিতীয় ভিত্তোরিও এমানুয়েল মল-এ চলে আসুন৷ এই শপিং মলটি খোলা হয় ১৮৭৭ সালে! ভ্যালেন্তিনো, ভেরসাচে, প্রাদা ও আরমানি-র মতো বড় বড় লেবেলের হেডকোয়ার্টার্স এই মিলান শহরে৷
ছবি: Getty Images/V. Z. Celotto
পৃথিবীর আশ্চর্যতম শহর ভেনিস
রাস্তার বদলে খাল, দু’ধারে গথিক প্রাসাদ, খালের জলে ভাসছে গন্ডোলা – আর কার্নিভালের মরশুম হলে প্রাচীন সব সাজগোজ আর ভেনিসের সুবিখ্যাত মুখোশের ভিড়৷ সারা দুনিয়ার মানুষ ভেনিসে আসার স্বপ্ন দেখে৷ প্রতিবছর সে স্বপ্ন সফল করেন লক্ষ লক্ষ পর্যটক৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
মিকেলাঞ্জেলোর শহর ফ্লোরেন্স
পিয়াৎসালে মিকোলাঞ্জেলো চত্বর থেকে আর্নো নদীর ধারে অবস্থিত গোটা শহরটিকে দেখা যায়৷ রেনেসাঁসের জন্মই যে শহরে, তার মধ্যমণি হলো ব্রুনেলেস্কির গম্বুজ দেওয়া ডুওমো গির্জা৷ এই শহরেই রয়েছে মিকেলাঞ্জেলোর ১৭ ফুট উঁচু শ্বেতপাথরের ডেভিড মূর্তি৷
ছবি: Picture-alliance/D. Kalker
টাস্কানির আঙুরখেত
মধ্য ইটালির এই অঞ্চলে ‘কিয়ান্তি’-র মতো নানা নামকরা ওয়াইন তৈরি হয়৷ তবে এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য টাস্কানির নিজস্ব, সেই সঙ্গে রয়েছে সিয়েনা বা পিসার মতো বিশ্ববিখ্যাত শহরের টান৷ পিসার হেলানো টাওয়ারের কথা মনে আছে তো?
ছবি: Picture-alliance/Arco Images/J. Moreno
‘সব পথ যেখানে গিয়ে শেষ হয়’
রোম আজও ইটালির রাজধানী৷ অপরদিকে পোপের বাসও এখানে, ভ্যাটিকানে (ছবিতে সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রাল)৷ পর্যটকরা রোমে আসেন দু’ হাজার বছর আগের রোমক সভ্যতার নিদর্শন দেখতে: কলোসিয়াম, প্যান্থিওন, রোমান ফোরাম৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/N. Clark
পিৎসা মার্গেরিটার জন্ম যেখানে
নেপলসের পিৎসা নির্মাতা রাফায়েলো এস্পোসিতো ১৮৮৯ সালের ১১ই জুন তারিখে এই পিৎসার রেসিপিটি সৃষ্টি করেন ইটালির রানি, মার্ঘেরিতা অফ স্যাভয়-এর সম্মানে৷ আজ সেই পিৎসা দুনিয়ার সর্বত্র এবং বিশেষ করে কচিকাঁচাদের ফেবারিট৷
ছবি: picture alliance / Pacific Press
আমাল্ফি উপকূল
সাগরের ধার ঘেঁষে পাহাড়, মাঝেমধ্যে নেমে এসেছে একটি ঝর্না৷ কোন সুদূর অতীতে সেই পাহাড়ের গা আঁকড়ে গড়ে উঠেছে একটির পর একটি জেলেদের গ্রাম৷ আজ দেখলে মনে হবে যেন কোনো চিত্রকর সোজা পাহাড়ের গায়ে ছবি আঁকার চেষ্টা করেছিলেন৷
ছবি: Samaneh
সিসিলি বলতে শুধু মাফিয়া বোঝায় না
না বেশি ঠান্ডা, না বেশি গরম, সিসিলি সারা বছর ধরে পর্যটকদের টানে৷ পালের্মো, তাওরমিনা বা সিরাকিউজের মতো শহরে যদি মন না মানে, তাহলে আছে মাউন্ট এটনা, ইউরোপের ‘জাগ্রত’ আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে অন্যতম!
ছবি: picture-alliance/robertharding/S. Black
10 ছবি1 | 10
ইয়োর্গ এমন অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছেন৷ পর্যবেক্ষকরা যাতে নিজেকে সেই সব জায়গায় কল্পনা করতে পারেন, প্রত্যেকবার সেই লক্ষ্যই সামনে ছিল৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টেলিভিশনের জন্যই এমন অ্যানিমেশন সৃষ্টি করা হয়৷ যেন টাইম মেশিনে চেপে অতীতে পাড়ি দিয়ে কাল্পনিক মুহূর্তের ছবি দেখা যাচ্ছে৷ এমন সৃষ্টির পেছনে কি শিশু বয়সের ইচ্ছা কাজ করেছে? সে কথা স্বীকার করে নিয়ে ইয়োর্গ কুর্টিয়াল বলেন, ‘‘কার না এমন সাধ থাকে! অবশ্যই সেই ইচ্ছা থেকে গেছে৷ শিশু বয়স থেকেই টাইম মেশিনের স্বপ্ন ছিল৷ সেটাই যেন চরম প্রাপ্তি৷''
ভার্চুয়াল রিয়ালিটির কল্যাণে ইয়োর্গ তাঁর স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন৷ ফলে রোমের কলোসিয়ামে সম্রাটের গ্যালারিতে ঢুঁ মেরে আসা যায়৷ অথবা সাহস থাকলে গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াইয়ের মাঝে গিয়ে পড়া যায়৷ ইয়োর্গ বলেন, ‘‘আসলে বিষয় হিসেবে রোম কখনো শেষ হয়নি৷ আমার মতে, সব সহকর্মী ও আমি বাকি জীবন ধরে এই মডেল নিয়ে কাজ করে যেতে পারি৷ তাতে নানা দিক ও নতুন জ্ঞান যোগ করা যেতে পারে৷ সেই বৈচিত্র্য মডেলটিকে অনন্ত করে তুলতে পারে৷ কখনোই সেই কাজ সমাপ্ত হতে পারে না৷''
ডিজিটাল রোম অ্যানিমেশন কোম্পানির কম্পিউটারে ‘অনন্তকালের শহর' হিসেবে অমর থাকতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে৷