মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন৷ বুধবার মিয়ানমার সফরে দেশটির সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সাথে আলোচনা শেষে এ আহ্বান জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও গণতন্ত্রের প্রতীক অং সান সু চির সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টিলারসন বলেন, ‘‘রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা এড়িয়ে যাঁরা তদন্ত করেছেন, তাঁদের দেয়া রিপোর্টে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতনের খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷'' এ সময় তিনি মিয়ানমার সরকারের প্রতি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘রাখাইনে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটে যাওয়া নির্যাতনের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ তাই সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের প্রতি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতায় এ ঘটনার কার্যকর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি আমি৷''
রোহিঙ্গা শিশুদের খোঁজ নিচ্ছে না কেউ
01:26
এর আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং লাইং, যার অধীনস্ত বাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, তার সাথে বৈঠক করেন টিলারসন৷ মিন অং লাইংয়ের ফেসবুক পেজে এ প্রসঙ্গে লেখা হয়, টিলারসনের সাথে বৈঠকে রাখাইনের প্রকৃত অবস্থা, মুসলিমরা কেন পালিয়েছেন, কীভাবে সামরিক বাহিনী সরকারের সাথে একযোগে সহায়তা দিচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনার কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা জানানো হয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে অর্থনৈতিক এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে৷ টিলারসন বলেন, এখনই মিয়ানমারের উপর কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা না চাপানোর বিষয়ে তিনি মত দেবেন৷ তবে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি৷
রোহিঙ্গাদের বর্তমান দিনকাল
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কেয়ার-এর ত্রাণ সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঘুরে এলেন জেনিফার বোস৷ সেখানকার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দিনযাপনের ছবি তুলে এনেছেন তিনি৷
ছবি: DW/ P. Vishwanathan
উদ্বাস্তু জীবন
এ বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা৷ এর আগে বিভিন্ন সময়ে যারা এসেছিলেন তারাসহ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাস করছে৷
ছবি: CARE/T. Rahman
শিশুদের অসহায়ত্ব
নির্যাতন, সহিংসতার স্মৃতি গাঢ় হয়ে চেপে বসেছে রোহিঙ্গা শিশুদের চোখে-মুখে৷ প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার জন শিশু রয়েছে এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে৷
ছবি: CARE/J. Bose
টিকে থাকার সংগ্রাম
স্বল্প পুঁজি নিয়ে ক্যাম্প এলাকার মধ্যেই ব্যবসা শুরু করেছেন এক রোহিঙ্গা ৷ এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গাই দিনমজুরের কাজ থেকে শুরু করে ছোটখাট ব্যবসা করে আয়ের পথ সচল রাখছেন৷
ছবি: CARE/J. Bose
ক্যাম্পজীবন
প্লাস্টিক ঢাকা বাঁশের আচ্ছাদনে দিন কাটছে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের৷ কক্সবাজারের নির্ধারিত ক্যাম্পে গাদাগাদি করে বাস করছে রোহিঙ্গারা৷
ছবি: CARE/J. Bose
বনভূমি উজাড়
কক্সবাজারে পাহাড় ও বনভূমি উজাড় করে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা বসতি৷ ক্যাম্প এলাকার আশেপাশের অনেক গাছ এরই মধ্যে উজাড় হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন ও জ্বালানির প্রয়োজনে৷
ছবি: CARE/J. Bose
অনিশ্চয়তা
পরিবারের সাথে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা এই রোহিঙ্গাদের সংগ্রাম টিকে থাকার প্রয়োজনে৷ অন্যসব অনিশ্চয়তা ছাপিয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চিন্তাই বড় হয়ে দাঁড়ায়৷
ছবি: CARE/J. Bose
ক্যাম্পে শিশুকাল
মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা নারীদের মধ্যে অন্তত ৫৪ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী রয়েছেন৷ অনেকে ক্যাম্পের আসার পথে বা ক্যাম্পেই জন্ম দিয়েছেন শিশুর৷
ছবি: CARE/J. Bose
নিবন্ধিত রোহিঙ্গা
গত দু’ মাসে নিবন্ধিত হয়েছেন অন্তত ৩ লাখ রোহিঙ্গা৷ ক্যাম্প এলাকায় কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে এই নিবন্ধন কার্যক্রম৷
ছবি: CARE/T. Haque
টিকাদান কর্মসূচি
শরণার্থী শিবিরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের প্রয়োজনীয় টিকা দেয়া হচ্ছে৷ বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা৷
ছবি: CARE/J. Bose
ত্রাণ সহায়তা
সরকারের আশাবাদ সত্ত্বেও ৬ লাখেরও বেশি নতুন আসা রোহিঙ্গার জন্য মিলছে না পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা৷
ছবি: CARE/A. Captain
রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা এতিম শিশুকে পুর্নবাসিত করতে কাজ করছে মনোচিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসক৷
ছবি: CARE/T. Rahman
11 ছবি1 | 11
সংবাদ সম্মেলনে সু চি বলেন, ‘‘দেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন এবং তা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব৷ সবাইকে এটা বুঝতে হবে, কাউকে শাস্তি দেয়া না, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষাই মূল কাজ৷''
এ বছরের আগস্ট থেকে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী সহিংসতার হাত থেকে নিজেদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন৷ তারপরও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷
এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর করা এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেটা মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘হোয়াইট ওয়াশ' বলে আখ্যায়িত করেছে৷