1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গাদের কি ভাসান চরে পাঠানো সম্ভব হবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ মার্চ ২০১৯

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসান চরে স্থানান্তরের ব্যাপারে শর্ত সাপেক্ষে সম্মতি দিয়েছে জাতিসংঘ৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শর্ত মেনে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠানো সম্ভব কিনা?

Rohingya Flüchtlingslager
ছবি: Getty Images/P. Bronstein

ডাব্লিউএফপি যেসব শর্তের কথা বলছে, তার মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাসান চরে স্থানান্তর করা যাবেনা৷ অর্থাৎ তাদের এই স্থানান্তর হতে হবে স্বপ্রণোদিত৷ তাদের জোর করে বা কোনো চাপের মুখে সেখানে পাঠানো যাবেনা৷

এছাড়া স্থানান্তর হতে হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি মেনে৷ কক্সবাজারে ডাব্লিউএফপি'র পক্ষে কক্সবাজারে কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত জেমা স্নোডন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের এই রূপরেখা সরকারের (বাংলাদেশ) সঙ্গে তাদের চলমান আলোচনার অংশ৷ রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ভাসান চরে স্থানান্তরের জন্য পরিকল্পনার গভীর মূল্যায়ন, প্রয়োজনী অর্থ সংস্থান, খাদ্য ও টেলিযোগাযোগের মতো অন্যান্য আরো কিছু বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে৷’’

ডাব্লিউএফপি বলছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দাতাদের কাছে প্রাথমিকভাবে এক কোটি ৯০ লাখ ডলারের অনুদান চাওয়া উচিত৷

‘কনসেপ্ট অব অপারেশন' শিরোনামে ডাব্লিউএফপি'র ওই রূপরেখার শর্ত বাংলাদেশ কতটা মানতে পারবে, এখন সেটাই বড় প্রশ্ন৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে এক ধরণের উভয় সংকটে পড়েছে৷ কারণ রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই৷ তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি কবে নিশ্চিত হবে, তা কেউই বলতে পারছেনা৷ এরইমধ্যে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দেয়া হয়েছে৷ স্থানীয়ভাবে আইন-শৃঙ্খলার সংকট ছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে৷ আর স্থানীয় জনগোষ্ঠী এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷

এছাড়া শর্ত মেনে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর কতটুকু সম্ভব, খরচের অর্থ কোথা থেকে আসবে, শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা সেখানে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হবে কিনা, কারণ এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের কেউ ভাসান চরে যেতে চায় বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেনি, বরং তারা সেখানে যেতে চায়না বলে বিক্ষোভও করেছে - এসব প্রশ্নেরও উত্তর জানার চেষ্টা চলছে৷

১০ লাখ লোক আমাদের জন্য অনেক বড় বোঝা

This browser does not support the audio element.

‘রাজি হবে বলে মনে হয় না'

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডাব্লিউএফপি'র এই পুরো প্রজেক্টটা আমরা জানলাম হঠাৎ করেই৷ ফলে এর পুরো তথ্য আমরা জানিনা৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য যা জানতে পেরেছি ততটুকুই৷ এটা ঠিক যে কক্সবাজারে এখন যে সিকিউরিটি ও ড্রাগ থ্রেট সেদিক থেকে রিফিউজিদের যদি একটু আইসোলেটেড রাখা যায় তাহলে ভালো৷ এখানে আমাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটির বিষয়ও আছে৷ কিন্তু ভাসান চরে স্থানান্তরে তাদের খাদ্য নিয়ে সমস্যা হবেনা৷ এটা ম্যানেজ করা যাবে৷ কিন্তু তাদের শিশুদের শিক্ষার বড় একটি বিষয় আছে৷ একটা লস্ট জেনারেশন ম্যানেজের বিষয় আছে৷ আর ভাসান চরে যাওয়ার বিষয়টি রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়ার অপশন আছে৷ অনেক ধরণের নেগেটিভ ক্যাম্পেইন আছে৷ রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে শেষ পর্যন্ত রাজি হবে বলে আমার মনে হয়না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘চরটি নাকি পানির নীচে চলে যায়৷ ২০ বছর আগেও নাকি ওই চরটি ছিলনা৷ তারপরও সেখানে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে৷ কনস্ট্রাকশনের কাজ প্রায় শেষ৷ ১০ লাখ লোক আমাদের জন্য অনেক বড় বোঝা৷ প্রজেক্টটি সফল হলে ভালো হতো৷ কিন্তু নানা প্রশ্ন আছে৷’’

ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য এরইমধ্যে ২৮ কোটি ডলার ব্যয় করছে বাংলাদেশ৷ চরটিতে যেতে মূল ভূখণ্ড থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় দেড় থেকে দু'ঘণ্টা লাগে৷

গত বছর জানুয়ারিতে সই হওয়া ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি৷ জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়৷ আর কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের একাংশকে ভাসান চরে স্থানান্তরে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷

আরেক সমস্যা?

বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ভাসান চরে স্থানান্তর করা যাবেনা৷ আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি৷ আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র হিসেবে রোহিঙ্গাদের সব দায়দায়িত্ব বাংলাদেশের ওপর বর্তায়৷ এটা আইন এবং মানবাধিকারের সহজ কথা এবং বাংলাদেশ সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে৷ কিন্তু যখন এধরণের বড় বিপর্যয় ঘটে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও দায় এড়াতে পারেনা৷ তাদেরও দায়দায়িত্ব আছে৷’’

’রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ভাসান চরে স্থানান্তর করা যাবেনা’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কূটকচাল তৈরি হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একদিকে বলছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার৷ তারা সেখানে হত্যা নির্যাতনের শিকার৷ তাই তারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে৷ আর বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে বড় মানবাধিকারের কাজ করছে৷ কিন্তু যে মিয়ানমার এই জাতিগত নিধন চালাচ্ছে, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা তেমন আগ্রহী হতে দেখছিনা৷ মিয়ানমারকে যে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে সেই কার্যকর চাপ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তরিক বলে আমার মনে হয়না৷’’

ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর করা হলে বাংলাদেশ আরেকটি সমস্যায় পড়তে পারে৷ কারণ তখন ধরেই নেয়া হবে রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে থাকবে৷ ফলে এটা মিয়ানমারের ওপর চাপ আরো কমাবে৷ অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাসান চরে নেয়া হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ তারা যেতে তখনই ইচ্ছুক হবে যখন ভাসান চরকে তারা বেটার অপশন মনে করবে৷ এটা কিন্তু শুধু রেশন কার্ড দিয়ে হবেনা৷ তাদের শিশুদের পড়াশুনা, তাদের জীবনমানের উন্নয়ন, সেখানে কাজের ব্যবস্থা করা এগুলোর প্রয়োজন পড়বে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘তারা যেসব শর্ত দিচ্ছেন তার অনেকগুলাই হয়ত পূরণ সম্ভব৷ কিন্তু এর জন্য বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে৷ এখন বাংলাদেশ সেই বিনিয়োগ করবে কিনা বা চাপ নেবে কিনা৷ এখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব আছে৷ এই বিনিয়োগের দায়িত্ব তাদের নিতে হবে৷ বাংলাদেশকে এইসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে৷ কোনো চাপের মুখে কেনো অসহনীয় শর্ত যেন বাংলাদেশ মেনে না নেয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ