1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমলে বাড়বে অপরাধ’

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দিলে তাদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

Bangladesh I Rohingya Refugee Camp in Cox's Bazar
ছবি: Kazi Salahuddin Razu/NurPhoto/picture alliance

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে রোহিঙ্গারা হতাশ হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ এমন পরিস্থিতে মানবপাচারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের৷

নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফের দুঃসংবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাব্লিউএফপি) তহবিল ঘাটতি দেখিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ শুক্রবার ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে৷

দাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা না পাওয়া, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্থসামাজিক অস্থিরতাসহ নানান সমস্যা নিয়ে এমনিতেই বাংলাদেশ সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ এরইমধ্যে খাদ্যসহায়তা কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা রোহিঙ্গা সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে মত দিয়েছে মানবাধিকারকর্মীরা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা তো খুবই খারাপ খরব৷ কোনভাবেই জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমাতে পারে না৷ প্রয়োজনে অন্যদিকে বাজেট কমাতে পারে৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমানো সঠিক সিদ্ধান্ত না৷ এতে করে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে তাদের উৎসাহিত করা হবে৷ বাংলাদেশ এমনিতেই নানা সংকটে আছে৷ অল্প জায়গায় বিপুল জনগোষ্ঠীর বাস৷ সেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ এতে করে বাংলাদেশও চাপে পড়বে৷’’

রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমানো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়: ড. আমেনা মহসিন

This browser does not support the audio element.

বিবৃতিতে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও মহামারির কারণে দাতাদের বাজেট কমে গেছে৷ এতে তহবিল ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷ এ কারণে মার্চ থেকে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ ১৭ শতাংশ কমিয়ে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার করা হবে৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক দাতারা যদি বাংলাদেশে আশ্রিত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শিশু ও তাদের পরিবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সেটা প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ হবে৷’’

এদিকে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এমন ঘোষণায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷

জানতে চাইলে ২৩ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা ও টেকনাফ লেদা ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সহায়তা কমিয়ে দিলে আমাদের জীবনযাত্রার ওপর খুব বাজে প্রভাব পড়বে৷ কারণ, বাইরে কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় দুঃখকষ্টে জীবন চালাতে হয়৷ এখন তা আরো তীব্র হবে৷ এতে রোহিঙ্গাদের অভাব আরো বেড়ে যাবে৷ লোকজন অভাবে থাকলে বিভিন্ন অপরাধে জড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ এই সিদ্ধান্তের ফলে শরণার্থী শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে৷’’

ডব্লিউএফপির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন করে অর্থ সহায়তা না পেলে এই রেশন আগামী এপ্রিল মাস থেকে আরো কমানো হতে পারে৷ এই পরিস্থিতি এড়াতে দাতাদের কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চাওয়া হয়েছে৷

বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সহায়তা কমানোয় খুবই খারাপ প্রভাব পড়বে৷ খাদ্যের অভাব থাকলে রোহিঙ্গারা কাজের সুযোগ খুঁজতে ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবে৷ অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়বে৷ যারা অতিরিক্ত উপার্জন করতে পারবে না, তাদের পুষ্টির সমস্যা আরো বাড়বে৷ এখন ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খেতে পারে না৷ শিবিরে প্রায় ৪০ শতাংশের মতো শিশুর সঠিক শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি হয় না৷ অন্তঃসত্ত্বা ও সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীদের ৪০ শতাংশই রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন৷ এটাও বাড়বে৷’’

খাদ্য সহায়তা কমলে অনেকেই অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হবেন: মোহাম্মদ জুবায়ের

This browser does not support the audio element.

টেকনাফের এক নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ জুবায়ের ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খাদ্য সহায়তা কমলে চুরি, ডাকাতি ও মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বেড়ে যাবে৷ অনেকেই এই ধরনের অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হবেন৷ এখন বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে খাদ্যসামগ্রী ছাড়াও জামাকাপড়সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে রোহিঙ্গারা হিমশিম খাচ্ছে৷ এ অবস্থায় বরাদ্দ কমে গেলে রোহিঙ্গাদের পাচার কিংবা সমুদ্রপথে যাওয়ার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে৷ আমরা বুঝতে পারছি যে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ কমছে৷ কিন্তু ডাব্লিউএফপির সর্বশেষ দুই ডলার কমানোর সিদ্ধান্ত শিবিরগুলোতে মানবিক সংকটের পথ প্রশস্ত করবে৷’’

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রেশন কমানো হলে শিবিরে অপরাধ বাড়বে, নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ এটি একটি বিধ্বংসী আঘাত হবে৷ সন্ত্রাস, মাদক ও মানব পাচার বৃদ্ধি পাবে৷’’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হত্যা ও নিপীড়নে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা৷ ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা৷ তার আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও কয়েক লাখ৷ কক্সবাজার ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে সব মিলিয়ে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ