বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২০২৩ সালে যে সহায়তা চাওয়া হয়েছিল তার মাত্র ৫০ শতাংশ পাওয়া গেছে৷ এই অবস্থায় বুধবার ২০২৪ সালের জন্য ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘ৷
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুকে ২০১৬ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেমে আশ্রয় নেয়৷ ছবি: Kazi Salahuddin Razu/NurPhoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা পরিস্থিতির কারণে সামনে সহায়তা আরো কমতে পারে৷ কারণ এখন মানবিক সহায়তা ভাগ হয়ে যাচ্ছে৷ এতে বাংলাদেশের ওপর আর্থিক চাপ তৈরি হতে পারে৷ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সংকটও তৈরি হতে পারে৷
২০২৩ সালে জাতিসংঘ ও দাতারা রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল৷ কিন্তু পাওয়া গেছে মাত্র ৪৪০ মিলিয়ন ডলার৷
২০১৭ সাল থেকে কোনো বছরই প্রত্যাশিত সহায়তা পাওয়া যায়নি৷ তবে গত বছর রীতিমতো ধস নেমেছে৷ ২০১৭ সালে প্রত্যাশিত সহায়তার ৭৩ ভাগ, ২০১৮ সালে ৭২, ২০১৯ সালে ৭৫, ২০২০ সালে ৫৯, ২০২১ সালে ৭৩ এবং ২০২২ সালে ৬৯ ভাগ সহায়তা পাওয়া গেছে৷ আর ২০২৩ সালে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ অর্থাৎ ২০২৩ সালে সহায়তা কমায় রেকর্ড হয়েছে৷
এদিকে ২০২৪ সালের জন্য ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘ৷ বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এই সহায়তা চাওয়া হয়৷
আর্থিক সংকটের কারণে গত বছর থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য দৈনিক রেশন ৩৩ শতাংশ কমানো হয়৷ একজন রোহিঙ্গার জন্য এখন প্রতিমাসে আট মার্কিন ডলারের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়৷ গত বছরের শুরুতে মাথাপিছু মাসে ১২ মর্কিন ডলারের খাদ্য সহায়তা দেয়া হতো৷ সেটা মার্চে করা হয় ১০ মার্কিন ডলার৷ জুনে করা হয় আট মার্কিন ডলার৷
জাতিসংঘ বলছে, রেশনের কাটছাঁট প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জীবনে প্রভাব ফেলবে৷
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাদ্য সংকটে পড়বেন: মো. শহীদুল হক
This browser does not support the audio element.
গত বছর জুনে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছিলন, ‘‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সাহায্য কমাতে বাধ্য হচ্ছে৷ এতে তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ফলাফল হবে ভয়াবহ৷ নারী, শিশু ও সবচেয়ে নাজুক মানুষেরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷’’
‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চাপে পড়তে পারে’
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান মনে করেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে পারে৷ শুধু রোহিঙ্গা নয়, মিয়ানমারে এখন যে পরিস্থিতি চলছে তাতে অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকও বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারে৷ তখন সব দিক দিয়েই বাংলাদেশের জন্য সংকটের কারণ হবে৷''
তার কথা, ‘‘প্রথমে ইউক্রেন যুদ্ধ, এরপর গাজা পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে ফোকাস সরে গেছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন ইউরোপে অনেক নতুন শরণার্থী৷ এরপর গাজায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেই কারণে রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগ আরো কমেছে৷ মধ্যপ্রাচ্যেও সংকট বেড়ে গেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী একটা হিউম্যানিটিরিয়ান ফেটিগ তৈরি হয়েছে৷ ফলে আমাদের এখান থেকে দৃষ্টি সরে যাচ্ছে৷ সম্পদ ভাগ হয়ে যাচ্ছে৷ আমাদের ব্যর্থতা হলো আমরা কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে রাখতে পারিনি৷ আমাদের উচিত হবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে অব্যাহতভাবে বিষয়টি তুলে ধরা৷’’
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে পারে: আ ন ম মুনীরুজ্জামান
This browser does not support the audio element.
‘রোহিঙ্গারা খাদ্য সংকটে পড়বেন’
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, ‘‘সহায়তা কমে যাওয়া অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাদ্য সংকটে পড়বেন৷ তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য না পেলে অপুষ্টির শিকার হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হবেন৷ বিশেষ করে বৃদ্ধ, গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বেশি৷ এছাড়া তাদের স্বাস্থ্যসেবাসহ আরো অনেক বিষয়ে কাটছাঁট হবে৷''
তিনি মনে করেন, ‘‘এরফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ বিশেষ করে কক্সবাজার অঞ্চলে এই রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাদের খাদ্য না থাকলে তারা ক্যাম্পে এবং ক্যাম্পের বাইরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন৷’’
‘নতুন ঘটনা পুরনো ঘটনার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়’
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘২০১৭ সাল থেকে কখনোই কাঙ্খিত সহায়তা পাওয়া যায়নি৷ আর নতুন নতুন ঘটনা পুরনো ঘটনার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়৷ এখন ইউরোপেই ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাত মিলিয়ন শরণার্থী৷ স্বাভাবিক কারণে ইউরোপ ও অ্যামেরিকার নজর সেদিকেই বেশি থাকবে৷ তাই হয়েছে৷ তারপর গাজা আরেকটি নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷’’
‘‘আমাদের সমস্যা এখন দুই রকম৷ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এবং তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়া৷ আমাদের দুইটি নিয়েই এখন কাজ করা দরকার৷ কারণ আন্তর্জাতিক নানা সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়েও এখন আর তেমন কথা হচ্ছে না৷ মিয়ানমারের যা পরিস্থিতি তাতে এখন হয়তো সেখানে আমাদের পক্ষে প্রতিনিধি পাঠানো সম্ভব নয়৷ তারপরও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে চেষ্টা করা উচিত৷ আর রাখাইন যদি পুরোটা আরাকান আর্মির দখলে চলে যায় তাহলে কী করণীয় তাও ভাবতে হবে৷ তখন তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে যোগাযোগ করব তা এখনই ভাবা দরকার৷’’
নির্বাসিত রোহিঙ্গাদের জীবন ও বাংলাদেশের উভয় সংকট
গত আট দশক ধরে নির্বাসন ও প্রত্যাবাসনের চক্রে আটকা পড়েছেন রোহিঙ্গারা৷ সবশেষ যে আশার আলো দেখা গিয়েছিল তা-ও নতুন বাস্তবতায় ফিকে হতে শুরু করেছে৷ রোহিঙ্গাদের ঘরছাড়া করার ও ঘরে ফেরানোর প্রচেষ্টার কাহিনি থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: Mohibulla Mohib
রোহিঙ্গা কারা
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আরাকান রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিমরা রোয়াইঙ্গা, যাম্ভইকা, কামানচি, জেরবাদি ও দিন্নেত এই পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত৷ এর মধ্যে রোয়াইঙ্গা জাতিগোষ্ঠিই রোহিঙ্গা নামে পরিচিত৷ উদ্ভব নিয়ে নানা মত থাকলেও বাংলাপিডিয়া বলছে, ‘‘চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকান রাজ্যে বসতিস্থাপনকারী চট্টগ্রামি পিতার ঔরসজাত ও আরাকানি মাতার গর্ভজাত বর্ণসংকর জনগোষ্ঠীই রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গ্যা৷’’
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
প্রথম দাঙ্গা
১৯৪০ সাল থেকে আরাকানে বৌদ্ধ মগ জনগোষ্ঠী ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু হয়৷ ১৯৪২ সালে এক লাখ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হন৷ অনেকে আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন৷ ১৯৪৮ সালে তৎকালীন বার্মার স্বাধীনতার পর এবং ১৯৬২ সালে পুনরায় তারা নিপীড়ন, নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হন৷ এ সময় বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হয়ে আসতে বাধ্য হন তারা৷
স্বাধীন বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা
আরাকানে জাতিগত আন্দোলন দমনের জন্য মিয়ানমারের (তখন বার্মা) তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল নে-উইন (ছবিতে) ১৯৭৮ সালে ‘নাগামিন ড্রাগন অপারেশন’ নামের অভিযান চালান৷ আরাকান ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার কারণে নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হয়৷ অভিযানের কারণে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম প্রত্যাবাসন
সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য বাংলাদেশের তখনকার সরকার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানায়৷ জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামের চাপের মুখে নে-উইন সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সম্মত হয়৷ দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বড় অংশ নিজ দেশে ফিরে যান৷ থেকে যান ১৫ হাজার৷ ছবিটি ২০১৮ সালের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য বানানো একটি ‘মডেল গ্রাম’৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. H. Kyaw
আবারও সংকট
মিয়ানমার সরকারের আইন ও নীতির কারণে ১৯৯১ সালে আবারও রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ঘরছাড়া হন৷ ৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী অং সান সুচিকে বন্দি করার পর সেনাবাহিনী আবারও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত রাখাইনসহ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে৷ রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণে ১৯৯১ সালের ২৬ জুনের মধ্যে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
দ্বিতীয় প্রত্যাবাসন
দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি হয়৷ সে অনুযায়ী, এই দফায় আগতদের দুই লাখ ৩১ হাজার জনকে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নেয়৷ বাকি থাকে ২২ হাজার৷ তাদের ফেরানোর অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি দেশটি৷ প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং এবং টেকনাফ থানার নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Huda
২০১৬ সালের পর
মিয়ানমারে নির্যাতনের জেরে ২০১৬ সালের পর থেকে আবারও বড় আকারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন৷ বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরসিসিসি) হিসাবে ২০১৬ সালে ৮৭ হাজার এবং ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় নয় লাখ ৭২ হাজারে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিনটি ব্যর্থ উদ্যোগ
২০১৭ সালের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তিনটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে নেয়া এসব উদ্যোগের কোনোটিরই ফল মেলেনি৷ এর মধ্যে ২০১৮ সালে আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ৷ তার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়৷ পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১১৪০ জনকে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা ভেস্তে যায়৷
ছবি: bdnews24.com
উদ্যোগী চীন
গত বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সবশেষ উদ্যোগটি শুরু হয়৷ প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের একটি দল পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমারে যান৷ প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের বিশেষ দূত ডেং জিজুন দেশটি সফরে যান এবং রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে না, নিজ গ্রামে ফিরতে পারেন তার উদ্যোগ নেন৷ সেপ্টেম্বরে আলোচনার জন্য মিয়ানমারে যায় বাংলাদেশের একটি দল৷ এর অধীনে সে বছর ১২ হাজার জনকে পাঠানোর পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Qing
দুই ঝড়
এই পরিকল্পনায় প্রথম আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হামুন৷ এরপর সম্ভাবনাটিকে আরো ফিকে করে দেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী বিদ্রোহের নয়া ঝড়৷ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল লড়াই শুরু করে৷ আরাকান আর্মি রাখাইনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জান্তার ১৬০টি ঘাঁটি দখল করে৷
ছবি: Handout/Kokang Information Network/AFP
আন্তর্জাতিক বাধা
মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনায় শুরু থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলো৷ সম্প্রতি নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়৷’’
ছবি: AFP
‘ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ’
সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা ডিসপ্লেসড পিপলের কারণে আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতি বছর ৩৫ হাজার করে নতুন সন্তান জন্মগ্রহণ করে৷ এই পরিস্থিতিতে আসলে; মানবিকতার কারণে তখন আমরা রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছিলাম৷ আমরা মনে করি, মিয়ানমারে পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব৷’’ রাখাইনে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
শিবিরে বন্দি জীবন
বাংলাদেশে সীমিত জায়গায় বিপুল রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবেতর জীবন যাপন করেন৷ কিছুদিন পরপর আগুনে তাদের ঘর পোড়ে, ঝড়ে বিপদে পড়েন৷ ঘটে চলেছে সহিংসতাও৷ তাদের সন্তানেরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, নেই কর্মসংস্থানও৷ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহয়তার হারও চাহিদার চেয়ে ক্রমাগত কমছে৷ সর্বশেষ ২০২৩ সালে যা ৪৭ ভাগে নেমে এসেছে৷
ছবি: AFP via Getty Images
ভাসমান জীবন
ভাগ্যবদলের চেষ্টায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গা৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে, ২০২৩ সালে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের শিবির থেকে নৌকায় সাগরপথে রওনা দেন, যাদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন নারী ও শিশু৷ বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান পেরুতে গিয়ে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫৬৯ জন, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ৷ সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে তাদের আগমনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা৷