1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আন্তর্জাতিক সহায়তা কমতে পারে, তবে সংকট হবে না’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে কী সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ? বিশ্বব্যাপী আরও কিছু মানবিক সমস্যা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে৷ ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য কিছুটা কমে যেতে পারে৷

রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ
সম্প্রতি রোহিঙ্গারা ‘গণহত্যা স্মরণ দিবস’ পালন করেছেছবি: Munir uz Zaman/AFP

তবে খুব বেশি সংকট হবে না বলেই মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি৷

ডয়চে ভেলে : রোহিঙ্গারা যখন আসে তখন তো বিরোধী দল, সরকারি দল সবাই স্বাগত জানিয়েছিল৷ তাহলে এখন কেন তাদের বোঝা মনে হচ্ছে?

আসিফ মুনীর : আসলে সংখ্যাটা একটা বড় বিষয়৷ ২০১৬ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যাটা ছিল তিন লাখের মতো৷ ২০১৪-২০১৫ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে একটা শুমারিও হয়েছিল৷ সেখানেও সংখ্যাটা তিন লাখের মতো এসেছিল৷ শুধু কক্সবাজার না, চট্টগ্রামসহ আশপাশের সবগুলো জায়গা থেকেই হিসাবটা নেওয়া হয়েছিল৷ যদিও শুমারির রিপোর্টটা আর প্রকাশিত হয়নি৷ তখন যে সংখ্যাটা ছিল, সেটা ক্যাম্পে হোক আর বাইরে হোক সবকিছু মিলিয়ে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থার মধ্যে ছিল৷ ২০১৭ সালে তারা যখন আসল তখনও কিন্তু একটা বড় মানবিক ব্যাপার ছিল৷ দেশীয় গণমাধ্যম বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রিপোর্ট থেকে তাদের উপর যে ধরনের নির্যাতন হয়েছে সেটার চিত্র উঠে এসেছিল৷ ফলে স্থানীয় মানুষই কিন্তু প্রথম তাদের সহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন৷ এরপর যেটা হয়েছে সেটা দু'টি বিষয় লক্ষ্য করার মতো৷ প্রাকৃতিক সম্পদ বলি, কাজের কথা বলি বা বাজার বলি সবকিছুর উপরই একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ স্থানীয়ভাবে দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে৷ অনেক সময় তারা কম পারিশ্রমিকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছে৷ তাদের প্রাথমিক সমস্যটা যখন মিটেছে তখন মনে হয়েছে এটা তো দীর্ঘস্থায়ী এটা ব্যাপারের দিকে যাচ্ছে৷ প্রাথমিকভাবে সাধারণ মানুষের সেই ধারণা ছিল না৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাপটা অনুভূত হয়েছে৷

‘আমি আসলে এটাকে বোঝা হিসেবে দেখতে চাই না’

This browser does not support the audio element.

রোহিঙ্গারা যে বোঝা হয়ে উঠেছে, সেটা কত বড় বোঝা? 

আমি আসলে এটাকে বোঝা হিসেবে দেখতে চাই না৷ তবে আমাদের কক্সবাজারের উপর অর্থনৈতিক, সমাজিক, প্রাকৃতিক বনজ সম্পদের উপর একটা চাপ পড়েছে৷ একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কতজন মানুষ থাকতে পারবে, বসবাস করতে পারবে সেটি কিন্তু একটা বড় বিষয়৷ আপনি যদি একটা গ্লাসের কথা ভাবেন, সেই গ্লাসটি পরিপূর্ণ হয়ে গেলে তার মধ্যে তো আমি জোর করেও আর কিছু দিতে পারব না৷ তখন তো সেটা উপচে পড়বে৷ এখানে সেরকমই একটা উপচে পড়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷ এটিই সবচেয়ে বড় চাপের জায়গা৷   

আশ্রয় দেওয়ার সময় কী আমরা বুঝতে পারিনি তাদের ফেরত পাঠানো কঠিন হবে?

বিশ্লেষক মহলে হয়ত কিছুটা ধারণা ছিল৷ ৭০ এর দশক থেকেই তো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে বা আসতে বাধ্য হয়েছে৷ মিয়ানমারের সংকটটি কত জটিল সেটা ২০১৭ সালের পর থেকে স্পষ্ট হতে শুরু করে৷ আমরা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ যেটা জেনেছি, এটা অল্প সময়ের জন্য একটা সাময়িক সমস্যা, এর সমাধান হয়ে যাবে৷ তখন আসলে বিশ্বাস করার মতো অবস্থা ছিল না যে, এটা অনেক সময়ের জন্য৷ কিন্তু আমরা যখন এটা বিশ্লেষণ করি তখন দেখতে পাই যে সমস্যার কারণে তারা দেশ ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে সেটার সমাধান দ্রুততম সময়ের মধ্যে হবে না৷ এটা তখনও অনেকেই অনুমান করেছে৷ প্রকাশ্যে আলাপটা হয়নি৷ এই রূঢ় বাস্তবতাটাকে আমরা প্রকাশ্যে মেনে নিতে পারিনি৷

রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা কী কমছে?

কিছুটা হয়ত কমতির দিকে৷ কিন্তু খুব বেশি সংকটের জায়গায় যাবে না বলে মনে হয়৷ কারণ এক ধরনের দায়বদ্ধতা আন্তর্জাতিক মহলের আছে৷ রোহিঙ্গা সমস্যাটি এখন আর দুই দেশের সমস্যার মধ্যে নেই, এটা এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা৷ একটি জাতিকে তার অধিকার নিজ দেশ দিচ্ছে না, এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লংঘন৷ জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো যখন এই সংকটের সমাধান করতে পারিনি তখন মানবাধিকারের জায়গা থেকে সহায়তার কাজটুকু তারা করবেন৷ সবচেয়ে বেশি জনগোষ্ঠী বাংলাদেশেই আছে৷ যেহেতু কেউ সমস্যা সমাধানে খুব বেশি সহায়তা করতে পারছে না, ফলে মানবিক সহায়তার জায়গাটা তারা অব্যাহত রাখবেন৷ তবে চাপ পড়বে৷ কারণ আরও কিছু মানবিক সমস্যা  তৈরি হয়েছে৷ আফগানিস্তানের অনেক শরণার্থীকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে৷ সম্প্রতি ইউক্রেনের ঘটনা জানি৷ এখানে কিছু অর্থায়নের প্রয়োজন পড়বে৷ তবে যাই হোক বাংলাদেশের অবস্থাটা খুব বেশি সংকটাপন্ন জায়গায় যাবে না৷ হয়ত কিছু ঘাটতি পড়বে৷ তবে সেটা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে৷

এখন আমরা বিদেশ থেকে যে অর্থ পাচ্ছি সেটা কী পর্যাপ্ত?

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অর্থায়নের একটা পরিকল্পনা থাকে৷ আমরা কয়েক বছর ধরে দেখছি, তারা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে দুই বা তিন বছরের একটা পরিকল্পনা করার চিন্তা করেছে৷ সরকারের দিক থেকে প্রথমে গ্রহণ করার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি ছিল৷ কেন আমরা দীর্ঘমেয়াদী এই চিন্তা করছি৷ আসলে এই কাজের চিন্তা একটু দীর্ঘমেয়াদি করা উচিত৷ শুরুতে এখানে যে লাইভ সেভিং চিন্তা ছিল, এখন কিন্তু সেটা কমতির দিকে৷ করোনার সময় হয়ত আরেক ধরনের নিরাপত্তার দরকার ছিল৷ করোনা কিন্তু ক্যাম্প এলাকায় হয়নি, তখন এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে৷ তা না হলে বিশাল বিপর্যয় হতে পারত৷

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি কী কোন বাধা?

আন্তর্জাতিক রাজনীতি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধা, কিছু ক্ষেত্রে না৷ মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের প্রতিবেশীদের যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে বা আমেরিকাসহ ইউরোপীয়ানদের সঙ্গে তাদের যে সম্পর্ক আছে সেটা এর সঙ্গে সম্পর্কিত৷ কোন রাষ্ট্রই চাইবে না অন্য একটি জাতির কথা বলতে গিয়ে তার নিজের স্বার্থ লঙ্ঘিত হোক৷ মিয়ানমারের সঙ্গে যাদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আছে বা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য আছে সেখানে রোহিঙ্গাদের ইস্যুটি চাপা পড়ে যাচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে এটি একটি বাধা৷ তবে তাদের স্বার্থ লঙ্ঘন না করেই রোহিঙ্গাদের সমস্যাটির সমাধান করা সম্ভব৷ মিয়ানমারে তো এখন সামরিক শাসন চলছে৷ তবে যেসব দেশ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারা চাইবে সেখানে গণতন্ত্র ফিরে আসুক৷ তাহলে যে জাতিগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সেটা তখন সমাধান করা সহজ হবে৷ আমরা দেখি যে, ইন্টারনাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে আন্তর্জাতিক মহল সহায়তা করছে৷ এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের যে প্রক্রিয়া সেখানে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা আছে৷ তবে জাতিসংঘ খুব বেশি সফলকাম হতে পারিনি৷ 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নেওয়ার কথা বলেছে৷ সত্যিই যুক্তরাষ্ট্র তাদের নেবে?

এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় অর্থাৎ পররাষ্ট্রনীতি থেকে যেহেতু এটা বলা হয়েছে সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ যে, তাদের কাছে সরাসরি একটা ব্যাখা চাওয়া৷ তারা কীভাবে এটি চিন্তা করছে৷ ২০১০ সালেও ইউএনএইচসিআর, আইওএম, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে ৯১০ জনকে নেওয়ার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল৷ তখন বাংলাদেশ সরকারের আপত্তির কারণেই সেটি বন্ধ করা হয়৷ ফলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারেরও একটা ব্যাখ্যা থাকা উচিৎ৷ এটা হলেও কীসের ভিত্তিতে তালিকা হবে সেটাও জানা দরকার৷ তারা তো আর ঢালাও ভাবে নেবে না৷ সেটা সম্ভবও না৷ গত বছর রোহিঙ্গাদের নেতা মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারকে কিন্তু নিরাপত্তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছে৷ সেটা বাংলাদেশ সরকারের সম্মতিতেই৷ আসলে কোন শ্রেণির মানুষকে নেওয়া হবে তার একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার৷ তার আগে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা দরকার৷

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কী?

দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় খুব বেশি লাভ হবে না৷ বাংলাদেশকে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে৷ ভিন্নধর্মী সমাধান হলেও সেই চেষ্টা করতে হবে৷ ভাসানচরের মতো একটা মডেল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করা সম্ভব৷ দেশে তাদের সন্নিবেশিত করে ফেলার সুযোগ আমাদের নেই৷ কক্সবাজারে এটির সমাধান সম্ভব নয়৷ আঞ্চলিকভাবেও যদি তাদের স্থানান্তর করা যায় সে চেষ্টাও করতে হবে৷ পাশাপাশি আঞ্চলিক যে জোটগুলোতে মিয়ানমার আছে সেখানে আলোচনা চালিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে নিয়ে যেতে হবে৷ এখানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বা চাপ সৃষ্টিতে কোন লাভ হবে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ