রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন আরেকটি সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
বিজ্ঞাপন
রাখাইনে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মতোই আচরণ করছে সেখানে এখনো অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। আর এই সুযোগে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন "নাগরিকত্বের” ফাঁদ পেতেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আর তার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ওপরও।
উখিয়া ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন," আমাদের জন্য আরাকান আর্মি মোটেই ভালোনা। আমরা যে খবর পাচ্ছি তাতে রাখাইনে তাদের অধিকৃত এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে। তাদের হত্যা করা হচ্ছে বলেও খবর পাচ্ছি। তারা এখন নতুন আশ্রয়ের খোঁজে আছেন।”
তিনি জানান," এখন মিয়ানমার সরকার চাইছে রোহিঙ্গারাযেন মিয়ামনমার সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাহলে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তারা এখন রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে চাইছে। কেউ কেউ যুদ্ধে যোগ দিয়েছে বলে শুনেছি। এখান থেকেও(ক্যাম্প) দুই-একজন গিয়েছে। আমাদের জন্য আসলে কেউই ভালোনা। আমরা চাই নাগরিকত্ব। নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা না পেলে আমরা রাখানে ফিরব না।”
'আমাদের জন্য আরাকান আর্মি মোটেও ভাল নয়'
কুতুপালং ক্যাম্পের আমির হোসেনও একই ধরনের কথা বলেন। তার ভাষায়," আরাকান আর্মি আমাদের জন্য মোটেই ভালোনা। তারাও রাখাইনে আমাদের লোকজনের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সম্প্রতি নির্যাতন ও বাড়িঘরে আগুনে কিছু ভিডিও এবং ফটো আমার কাছে আছে। তারা সেখানকরা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আহ্বানে এখানে(কক্সবাজার) রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিলে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলছে। তবে তারাও আমাদের জন্য কোনোভাবেই ভালো না।”
এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল(অব.) এম শহীদুল হক বলেন, "আরাকান আর্মি কিন্তু রোহিঙ্গাবিরোধী। তারা বুধিডং ছেড়ে রোহিঙ্গাদের চলে যেতে বলেছে। এর আগে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আসলে পুরো রাখাইনের দখল নিয়ে রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। রোহিঙ্গারা কোন দিকে যাবে? তাদের জন্য বাংলাদেশে আসার পথই খোলা আছে। এখন ওই রোহিঙ্গারা কোন দিকে মুভ করে তা বাংলাদেশের নজরে রাখা উচিত। তা নাহলে নতুন একটি সংকট হতে পারে।”
'আমাদের স্টেট টু স্টেট কূটনীতির বাইরেও আলাদা কূটনীতি দরকার'
তিনি বলেন," এখন আমাদের স্টেট টু স্টেট কূটনীতির বাইরেও আলাদা কূটনীতি দরকার। মিয়ানমারকে বলা তোমরা তাদের স্বীকৃতি দিলে রোহিঙ্গারা তোমাদের পক্ষে কাজ করবে আমরা সেই ব্যবস্থা করব। তোমরা তাদের নাগরিকত্ব দাও। আর আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা দরকার। তাদেরকে বলতে হবে তোমরা আমাদের সহায়তা পাবে যদি রোহিঙ্গাদের নির্যাতন বন্ধ করো। তাদের গ্রহণ করো। এখন আমাদের এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এটা দোদুল্যমনতা তৈরি হচ্ছে। সেটা দূর করতে হবে। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক এনগেজমেন্ট বাড়াতে হবে। পরে হয়তো তাদের আরো কাজে লাগানো যাবে। এগুলো না করলে রোহিঙ্গা সংকট আরো জটিল হতে পারে।”
আর মিয়ানমারের সিটুয়েতে বাংলাদেশের মিশনের সাবেক প্রধান মেজর(অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন," আমরা তো চাই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে। এছাড়া আমাদের তো আর কোনো স্বার্থ নাই। ফলে নতুন যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেটাকে এখন আমাদের অ্যাড্রেস করতে হবে, বুঝতে হবে।”
তিনি বলেন," আরাকান আর্মির নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে তাদের হয়ে যুদ্ধ করলে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। আমরা কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে কিছু রোহিঙ্গা এরইমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এতে আরাকান আর্মি আবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
তার কথায়, "এই পলিসি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ব্রিটিশ এবং জাপানও এক সময় নিয়েছিলো। কিন্তু রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত কিছু পায়নি। আমরা যেহেত এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চাই তাই আমাদের উচিত হবে নেপিদোর সাথে আরেকটি ডায়ালগ ওপেন করা। তাদের রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে চাপ দেয়া। তারা যে এখন আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের চায় তার সুযোগ নেয়া। আর আমার মনে হয় আরাকান আর্মি শেষ পর্যন্ত রাখাইনে টিকতে পারবেনা। তাই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম শহীদুজ্জামান বলেন," মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে নতুন পরিস্থিতর সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের দিক থেকে এখনো নতুন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। প্রধানমন্ত্রী তো ভারত সফর থেকে ফিরলেন। সামনের মাসে চীন যাবেন। এই দুইটি দেশ কী বলে। সরকার কার পলিসি গ্রহণ করে সেটা দেখার বিষয়।”
'রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার বাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান করা হচ্ছে'
তার কথায়, "তবে আমার মতে আরাকান আর্মিকে এখন আমাদের বড় ধরনের চাপের মুখে রাখা উচিত। সেটা হতে হবে দৃশ্যমান চাপ। তাদের চাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। আমরা চাপ দিলে আমাদের সামনে আরাকান আর্মি দাঁড়াতে পারবে না। আর মিয়ানমারে সামরিক জান্তারাও চাপের মুখে আছে। সেটাকেও ব্যবহার করা যায়। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের সামনে মিয়ানমারে নতুন পরিস্থিতিতে একটি নতুন সুযোগ এসেছে। এটাকে এখন কূটনৈতিক দক্ষতার সঙ্গে শক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে কাজে লাগাতে হবে। সেটা না পারলে রোহিঙ্গা সংকট আমাদের জন্য আরো জটিল হবে।''
তার কথায়," এখানে ভারত ও চীনকেও আমাদের বুঝতে হবে। কারা আমাদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে সেটা না বুঝলে সমস্যা আছে।”
এদিকে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনে আতঙ্ক কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। তিনি জানান," এখন আমাদের দিকে কয়েকদির ধরে গুলিগোলা আসছেনা। আমরা মিয়ানমার সেবাহিনী আর আরাকান আর্মির মধ্যে গুলিগোলার শব্দ কয়েকদিন ধরে তেমন পাচ্ছিনা। তবে সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ এখনো শুরু হয়নি।”
নির্বাসিত রোহিঙ্গাদের জীবন ও বাংলাদেশের উভয় সংকট
গত আট দশক ধরে নির্বাসন ও প্রত্যাবাসনের চক্রে আটকা পড়েছেন রোহিঙ্গারা৷ সবশেষ যে আশার আলো দেখা গিয়েছিল তা-ও নতুন বাস্তবতায় ফিকে হতে শুরু করেছে৷ রোহিঙ্গাদের ঘরছাড়া করার ও ঘরে ফেরানোর প্রচেষ্টার কাহিনি থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: Mohibulla Mohib
রোহিঙ্গা কারা
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আরাকান রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিমরা রোয়াইঙ্গা, যাম্ভইকা, কামানচি, জেরবাদি ও দিন্নেত এই পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত৷ এর মধ্যে রোয়াইঙ্গা জাতিগোষ্ঠিই রোহিঙ্গা নামে পরিচিত৷ উদ্ভব নিয়ে নানা মত থাকলেও বাংলাপিডিয়া বলছে, ‘‘চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকান রাজ্যে বসতিস্থাপনকারী চট্টগ্রামি পিতার ঔরসজাত ও আরাকানি মাতার গর্ভজাত বর্ণসংকর জনগোষ্ঠীই রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গ্যা৷’’
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
প্রথম দাঙ্গা
১৯৪০ সাল থেকে আরাকানে বৌদ্ধ মগ জনগোষ্ঠী ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু হয়৷ ১৯৪২ সালে এক লাখ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হন৷ অনেকে আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন৷ ১৯৪৮ সালে তৎকালীন বার্মার স্বাধীনতার পর এবং ১৯৬২ সালে পুনরায় তারা নিপীড়ন, নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হন৷ এ সময় বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হয়ে আসতে বাধ্য হন তারা৷
স্বাধীন বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা
আরাকানে জাতিগত আন্দোলন দমনের জন্য মিয়ানমারের (তখন বার্মা) তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল নে-উইন (ছবিতে) ১৯৭৮ সালে ‘নাগামিন ড্রাগন অপারেশন’ নামের অভিযান চালান৷ আরাকান ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার কারণে নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হয়৷ অভিযানের কারণে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম প্রত্যাবাসন
সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য বাংলাদেশের তখনকার সরকার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানায়৷ জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামের চাপের মুখে নে-উইন সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সম্মত হয়৷ দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বড় অংশ নিজ দেশে ফিরে যান৷ থেকে যান ১৫ হাজার৷ ছবিটি ২০১৮ সালের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য বানানো একটি ‘মডেল গ্রাম’৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. H. Kyaw
আবারও সংকট
মিয়ানমার সরকারের আইন ও নীতির কারণে ১৯৯১ সালে আবারও রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ঘরছাড়া হন৷ ৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী অং সান সুচিকে বন্দি করার পর সেনাবাহিনী আবারও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত রাখাইনসহ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে৷ রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণে ১৯৯১ সালের ২৬ জুনের মধ্যে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
দ্বিতীয় প্রত্যাবাসন
দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি হয়৷ সে অনুযায়ী, এই দফায় আগতদের দুই লাখ ৩১ হাজার জনকে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নেয়৷ বাকি থাকে ২২ হাজার৷ তাদের ফেরানোর অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি দেশটি৷ প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং এবং টেকনাফ থানার নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Huda
২০১৬ সালের পর
মিয়ানমারে নির্যাতনের জেরে ২০১৬ সালের পর থেকে আবারও বড় আকারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন৷ বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরসিসিসি) হিসাবে ২০১৬ সালে ৮৭ হাজার এবং ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় নয় লাখ ৭২ হাজারে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিনটি ব্যর্থ উদ্যোগ
২০১৭ সালের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তিনটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে নেয়া এসব উদ্যোগের কোনোটিরই ফল মেলেনি৷ এর মধ্যে ২০১৮ সালে আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ৷ তার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়৷ পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১১৪০ জনকে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা ভেস্তে যায়৷
ছবি: bdnews24.com
উদ্যোগী চীন
গত বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সবশেষ উদ্যোগটি শুরু হয়৷ প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের একটি দল পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমারে যান৷ প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের বিশেষ দূত ডেং জিজুন দেশটি সফরে যান এবং রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে না, নিজ গ্রামে ফিরতে পারেন তার উদ্যোগ নেন৷ সেপ্টেম্বরে আলোচনার জন্য মিয়ানমারে যায় বাংলাদেশের একটি দল৷ এর অধীনে সে বছর ১২ হাজার জনকে পাঠানোর পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Qing
দুই ঝড়
এই পরিকল্পনায় প্রথম আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হামুন৷ এরপর সম্ভাবনাটিকে আরো ফিকে করে দেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী বিদ্রোহের নয়া ঝড়৷ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল লড়াই শুরু করে৷ আরাকান আর্মি রাখাইনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জান্তার ১৬০টি ঘাঁটি দখল করে৷
ছবি: Handout/Kokang Information Network/AFP
আন্তর্জাতিক বাধা
মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনায় শুরু থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলো৷ সম্প্রতি নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়৷’’
ছবি: AFP
‘ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ’
সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা ডিসপ্লেসড পিপলের কারণে আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতি বছর ৩৫ হাজার করে নতুন সন্তান জন্মগ্রহণ করে৷ এই পরিস্থিতিতে আসলে; মানবিকতার কারণে তখন আমরা রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছিলাম৷ আমরা মনে করি, মিয়ানমারে পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব৷’’ রাখাইনে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
শিবিরে বন্দি জীবন
বাংলাদেশে সীমিত জায়গায় বিপুল রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবেতর জীবন যাপন করেন৷ কিছুদিন পরপর আগুনে তাদের ঘর পোড়ে, ঝড়ে বিপদে পড়েন৷ ঘটে চলেছে সহিংসতাও৷ তাদের সন্তানেরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, নেই কর্মসংস্থানও৷ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহয়তার হারও চাহিদার চেয়ে ক্রমাগত কমছে৷ সর্বশেষ ২০২৩ সালে যা ৪৭ ভাগে নেমে এসেছে৷
ছবি: AFP via Getty Images
ভাসমান জীবন
ভাগ্যবদলের চেষ্টায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গা৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে, ২০২৩ সালে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের শিবির থেকে নৌকায় সাগরপথে রওনা দেন, যাদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন নারী ও শিশু৷ বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান পেরুতে গিয়ে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫৬৯ জন, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ৷ সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে তাদের আগমনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা৷