কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘এরা অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে থাকবে৷ আমরা চাই দ্রুত তাদের ফেরত নিক মিয়ানমার৷''
বিজ্ঞাপন
তবে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিচার্স ইউনিট (রামরু)-এর প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সিআর আবরার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন৷
হাতিয়ার ওই দ্বীপে রোহিঙ্গাদের নেয়ার আগে সরকার বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ‘ডাটাবেজ' তৈরির উদ্যোগ নেবে৷ আগামী তিনমাসের মধ্যে তা ডাটাবেজ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা বাঙ্গালি সমাজের সাথে মিশে গেছে৷ তাই রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ঠভাবে চিহ্নিত করার জন্য স্থানীয় কমিটি করা হয়েছে এবং তাদের চিহ্নিত করা হবে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায়৷ ডাটাবেজ প্রস্তুত হয়ে গেলে মিয়ানমার সরকারের সাথে অথবা বিদেশি রাষ্ট্র বা সংস্থার সাথে কাজ ও কথা বলার সময়ে সুবিধা হবে৷''
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের কথা
জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ, এই তিনদিনে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে শত শত রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সহিংসতা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৬ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার জন৷ অক্টোবরের ২৭ তারিখে তোলা এই ছবিতে ঐ রাজ্যের একটি গ্রামের বাজার দেখা যাচ্ছে, যেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ শিশুরা সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করছে৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
পালিয়ে বাঁচা
সহিসংতা থেকে বাঁচতে নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা৷ উপরের ছবিটি ২১ নভেম্বরের৷ কক্সবাজারের কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারীরা নতুন আসা শরণার্থীদের দেখছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
নতুন শরণার্থী
মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নতুন শরণার্থীরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
ধরা পড়ায় কান্না
অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হওয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা তাদের ধরেছে৷ মুসলিম নারী ও তাঁর সন্তানরা তাই কাঁদছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
অপেক্ষা
কুটুপালাং ক্যাম্পে ঢোকার অপেক্ষায় নতুন আসা রোহিঙ্গারা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সন্তানসহ মা
মুসলিম এই রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানকে নিয়ে কুটুপালাং শিবিরে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
শরণার্থী শিশু
কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের রোহিঙ্গা শিশুরা স্কুলে পড়াশোনার ফাঁকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
আদি বাসিন্দা
কুটুপালাং ক্যাম্পে নিজেদের বাড়িতে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
বাড়ির আঙিনায়
একজন রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কুটুপালাং শরণার্থী শিবিরে তাঁর বাড়ির সামনে বসে আছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
9 ছবি1 | 9
শাহরিয়ার আলম জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে মিয়ানমারের অবৈধ নাগরিকদের হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে অস্থায়ী ক্যাম্পে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঠেঙ্গার চরে কাঠামো তৈরি করার কাজ চলছে৷'' তবে তিনি মনে করেন এ কাজে কিছুটা সময় লাগবে৷
জানা গেছে, কক্সবজারের কুতুপালং ক্যাম্পের ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার৷ কিন্তু সেখানে বাস করে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা৷ এর ফলে কক্সবাজার ও উখিয়াতে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে এবং সামাজিক, প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যগত সেবা দেয়া সম্ভব হয় না৷
কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গার চরে পাঠানো শুরু হতে পারে৷ এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘ ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গা পাঠানোর কাজ শুরু করতে সময় লাগবে৷ কিন্তু নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো৷ তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে থাকবে এবং আমরা চাইবো মিয়ানমার সরকার যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফেরত নেবে৷''
গত বছর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ কম অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে৷ এবং ৩০ হজারের বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে শুধু কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে৷ গত অক্টোবরের পর থেকে ৭০ হাজারে মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷
ড. সিআর আবরার
তবে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিচার্স ইউনিট (রামরু)-এর প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সিআর আবরার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সুচিন্তিত মনে করেন না৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর আগেও সরকার এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখান থেকে সরে আসে৷ কিন্তু নতুন করে এমন কী হলো যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে ঠ্যাঙ্গার চরে নিতে হবে? এটা বিশাল আয়োজন এবং খরচের ব্যপার৷ যদি আন্তর্জাতিক সহায়তা না পওয়া যায়, তাহলে সরকার কি এটা পারবে?''
তিনি বলেন, ‘‘ওই চর এলাকায় কোনো বসতি নেই৷ শরাণার্থীদের যদি ঠেঙ্গার চরে নেয়া হয়, তাহলে তাদের জীবিকার কী হবে? তাদের সব খবরচ কী সরকার বহন করবে? আর তারা একটি এলাকায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ নতুন এলাকায় গিয়ে তারা খাপ খাওয়াবে কীভাবে? আসলে এটা একটা অবাস্তব চিন্তা বলে আমার কাছে মনে হয়েছে৷ সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা৷''
নোয়াখালীর সাংবাদিক রনজিৎ চন্দ্র কুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ঠেঙ্গার চর এলাকার ওই দ্বীপটি হাতিয়া থেকেও বিচ্ছিন্ন৷ সেখানে তেমন জনবসতি নেই৷ এক বছর আগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ওই চরে প্রাথমিক জরিপের কাজ হয়৷ এখন সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে কাজ করছে৷
বন্ধু, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কি আপনি সমর্থন করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷
জীবিকার তাগিদে উত্তাল সাগর পাড়ি
উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে আফ্রিকার অনেক নাগরিক ইউরোপে যায়৷ কিন্তু সুখের দেখা কি মেলে?
ছবি: Reuters
নড়বড়ে জলযানে উত্তাল সাগর পাড়ি
এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতি বছর গ্রীষ্মে কাজের খোঁজে হাজার হাজার আফ্রিকান নাগরিক উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালির দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্থায়ী বাসস্থান
কোনোমতে সাগর পাড়ি দিতে পারলে অভিবাসীদের থাকার ব্যবস্থা হয় ছবির এমন পরিবেশে, একটি বস্তিতে৷ সেখানে থেকে তাঁরা সবজি বা ফল পাড়ার কাজ খোঁজেন৷ কিন্তু এসব পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ায় ইদানীং বেশি কাজ পাওয়া যাচ্ছে না৷
ছবি: DW/J.Hahn
‘ইউরোপীয় বস্তি’
প্রায় এক হাজার আফ্রিকান নাগরিক বাস করেন দক্ষিণ ইটালির আপুলিয়ার এই বস্তিতে৷ ‘দ্য ঘেটো’ নামে পরিচিত সেই আবাসস্থলে নেই বিদ্যুৎ, নেই টয়লেট, এমনকি নেই পানিও৷ তারপরও গ্রীষ্মকাল এলেই সেখানে আগন্তুকের সংখ্যাটা বাড়ে৷ কারণ আবহাওয়া উপকূলে থাকায় ইদানীং আরও বেশি সংখ্যক আফ্রিকান সাগর পাড়ি দিতে আগ্রহী হচ্ছেন৷
ছবি: DW/J.Hahn
সাইকেলই ভরসা
‘দ্য ঘেটো’-তে বেঁচে থাকতে হলে একজনের উদ্ভাবনী ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন৷ আর সেটা যদি হয় সাইকেল ঠিক করার দক্ষতা তাহলে ভালো৷ কেননা সাইকেলে করেই অভিবাসীরা কাজের খোঁজে বের হন৷ অনেকে সাইকেল ধারও নেন৷
ছবি: DW/J.Hahn
অর্থনৈতিক সংকট
‘দ্য ঘেটো’র সবচেয়ে কাছের বড় শহর ফোগিয়া, যেটা ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ অভিবাসীরা সাধারণত সেখানেই কাজের খোঁজ করেন৷ তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেখানে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে৷
ছবি: DW/J.Hahn
আশা যেন নিরাশা
ইবরা এমবেকে ফল (বামে) এবং নাগর সার (ডানে)৷ সেনেগালের এই দুই নাগরিক জানেন ইটালিতে টাকা আয় করা কতটা কঠিন৷ ইবরা ঘণ্টা প্রতি সাড়ে তিনশো টাকায় টমেটো তোলার কাজ করেন৷ তবে এর একটা অংশ চলে যায় মাফিয়াদের কাছে৷
ছবি: DW/J.Hahn
বাংলাদেশিদের লক্ষ্য মালয়েশিয়া
আফ্রিকানদের যেমন ইউরোপ তথা ইটালি, বাংলাদেশিদের তেমন স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া৷ কক্সবাজার থেকে ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দিয়ে সেখানে যেতে আগ্রহী হন অনেক বাংলাদেশি বেকার যুবক৷ এমনটা করতে গিয়ে মারা পড়েন অনেকেই৷