মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়াই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান৷ আর জাতিগত নিধনের যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চায় দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী সাইমন হেনশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট৷ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও উপস্থিত ছিলেন৷ মার্কিন মন্ত্রী মিয়ানমার সফরের পর বাংলাদেশে আসেন৷ তিনি একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ বাংলাদেশে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন৷
রোহিঙ্গাদের দিকে বাংলাদেশের সাহায্যের হাত
গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ তাঁদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি নানান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ছবিঘরে তারই কিছু নমুনা...
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে দীর্ঘ লাইন
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য রোহিঙ্গাদের লাইন৷ কুতুপালং ছাড়াও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে এই নিবন্ধন কার্যক্রম৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধনে বিজিবি
কতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে কাজ করছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা৷ একেকটি কেন্দ্রে দিনে গড়ে ৭০০ জনের মতো রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধিত
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পর দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী হারুনুর রশীদ ও মোহাম্মদ দিনার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
সরকারি ত্রাণ
রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে নানাভাবে এগিয়ে এসেছে বাংলদেশ সরকার৷ উখিয়ার কুতুপালংয়ে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী৷
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী৷ ৪৬টি দেশের কূটনীতিকরাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
কূটনীতিকদের আশ্বাস
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন কূটনীতিকরা৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তার ঘোষণাও দেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
শিশুসেবা
টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের টিকা দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন শিবির
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বালুখালীতে দুই হাজার একর জায়গায় শিবির গড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
তাঁবুর রাজ্য
শরণার্থীর চাপে এরইমধ্যে বালুখালীর এই অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের সীমানা কয়েকগুণ বড় হয়েছে৷ উখিয়ার পাহাড়-টিলার সবখানেই এখন শরণার্থীদের অস্থায়ী তাঁবু৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন বসতি
নতুন নতুন পাহাড়ের গাছপালা কেটে প্রতিদিনই নিজেদের বসতি গড়ছেন রোহিঙ্গারা৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
11 ছবি1 | 11
সাইমন হেনশ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের নাগরিকদের উদারতা এবং মানবিকতার প্রশংসা করি আমি৷ তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন৷ রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে৷ এবং ২৫ আগস্টের পর থেকে ছয় লাখের মত রোহিঙ্গা নারী শিশু ও পুরুষ বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে৷ এটা একটি বড় মানবিক সংকট৷''
তাঁর মতে এই সংকটের সমাধান হতে পারে শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার মধ্য দিয়েই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি৷ তারা যাতে সেখানে ফেরত গিয়ে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷''
বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে দেরী করছে মিয়ানমারের এমন দাবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ফেরত নেয়ার কাজটি মিয়ানমারকেই করতে হবে৷ এটা তাদেরই কাজ৷ কত দ্রুত তারা ফেরত নিতে পারে সেটা তাদের বিষয়৷ বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দিয়েছে৷ আর এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ত্রাণ সহায়তা চালাচ্ছে৷ তাই বাংলাদেশ বিদেশি সহায়তার আশায় রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে দেরি করছে এমন কথা মানা যায়না৷''
মার্কিন মন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে যে আলোচনা শুরু করেছে সেটা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ৷ এই আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান আসবে৷ এই সংকটটি একটি জটিল এবং এর দীর্ঘ ইতিহাস আছে৷''
মিয়ানমারের ওপর আরো কোনো কঠোর অবরোধ যুক্তরাষ্ট্র আরোপ করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মিয়ানমারকে বলেছি যারা বা যেসব ব্যক্তি জাতিগত নিধনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে৷ যেসব ব্যক্তি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি৷ মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে৷ আমরা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছি৷ কূটনীতিক তৎপরতা চালাচ্ছি৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কাজ করছি৷''
রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি
ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া, পেছনের টান আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা- এই সব নিয়ে একরাশ হতাশা আর বেদনা স্পষ্ট প্রতিটি রোহিঙ্গার চোখেমুখে৷ সম্প্রতি রয়টার্সের ক্যামেরায় ধরা পড়া এমন কিছু অবয়ব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/D. Sagoli
অশ্রু
মাত্র একদিন আগেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন ৩০ বছর বয়সি আমিনা খাতুন৷ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর প্রথম রাত কেটেছে কক্সবাজারের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের পাশের সড়কে৷ সাথে ছিল তারই মতো নতুন আসা আরও হাজার হাজার মানুষ৷ সামনের দিনগুলোর কথা ভেবেই হয়তো এই অশ্রুসজল চোখ!
ছবি: Reuters/D. Sagoli
শিশুদের চাহনি
ছবি তোলা হচ্ছে দেখলেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা দৌড়ে আসে- এই দৃশ্য খুবই পরিচিত৷ কিন্তু শিশুদের চোখেও এত অবিশ্বাস আর হতাশা বোধহয় পরিচিত নয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
জীবন যুদ্ধ
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৭০ এর বেশি বয়সি এই নারী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কিছুক্ষণ আগেই৷ জীবনের এই শেষ দিনগুলোতেও জীবন বাঁচাতে এমন যুদ্ধ করতে হবে কখনও হয়ত ভাবেননি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
অসহায়ত্ব
এই শরণার্থী শিশুর অপেক্ষা একটু ওষুধের জন্য৷ সারা মুখে নানা ক্ষত আর তার ওপর মাছির আনাগোনাতেই বোঝা যাচ্ছে, একটু ওষুধ কতখানি দরকার তার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
নিরুপায়
বৃষ্টি মাথায় ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা৷ আর তো কোন উপায় নেই!
ছবি: Reuters/C. McNaughton
আশ্রয়ের অপেক্ষা
মাত্রই বাংলাদেশে এসেছেন৷ শুরুতে জায়গা হয়েছে এক স্কুল ঘরে৷কিন্তু সেখানে তো আর থাকা যাবে না৷থাকতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রে৷নতুন সেই ঠিকানার অপেক্ষাতেই এখন তারা৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
ত্রাণের আশা
কক্সবাজারের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে আর সবার মতোই একটু ত্রাণের আশায় কোলের সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষায় এই নারী৷
ছবি: REUTERS
চৌদ্দ দিন পর
সালেহা বেগম নামের এই মা এতটুকুন শিশুকে নিয়ে ১৪ দিন ধরে জঙ্গল পথে হেঁটেছেন৷ তারপর পেরেছেন সীমান্ত পাড়ি দিতে৷ এখন অপেক্ষা একটু আশ্রয়ের৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
বিশ্রাম
টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত নৌকায় গাদাগাদি করে এসে কোনমতে পৌঁছেছে সবাই৷ নতুন আশ্রয়ে যাবার আগে তাই একটু বিশ্রাম৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
দায়িত্বের ভার
টেকনাফে পৌঁছেই ছুটতে হচ্ছে ত্রাণের আশায়৷ নিজেই এক শিশু, তার ওপর কোলে, পাশে আরও ভাই-বোন থাকায় দায়িত্ব যেন বেড়ে গেছে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
প্রতিক্রিয়া
এত মানুষের টানাহ্যাঁচড়ার মধ্যেই দাঁড়াতে হয় ত্রাণের লাইনে৷ ধাক্কাধাক্কি সহ্য করে আর কতক্ষণ৷ তাল সামলাতে না পেরে তাই চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
অনিশ্চয়তা
আদরের ধন নাতিকে কোলে নিয়ে এই নারী বসে আছেন ত্রাণের আশায়৷ কিন্তু একটু ত্রাণই তো সব নয়৷ নাতির ভবিষ্যত কী, সেই ভাবনাতেই খানিকটা উদাস হয়ে পড়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
12 ছবি1 | 12
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন মিয়ানমারে যাচ্ছেন, বাংলাদেশে আসবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেন, ‘‘সংকটের যেখানে শুরু সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে যাচ্ছেন৷ আমি ঢাকায় আসার আগে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছি৷ তিনি আমাকে বলেছেন রোহিঙ্গা সংকটকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷''