রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে৷ শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এদিন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত পাঠানোর মামলার রায় দেয়ার কথা থাকলেও ‘‘এ বিষয়ে আরো স্বাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে’’ উল্লেখ করে শুনানি আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷ রোহিঙ্গাদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, ‘‘এ সময়ের মধ্যে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারবে৷’’ আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ‘‘রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে একটা বড় অংশ নারী, শিশু ও বৃদ্ধ৷ তাদের কথা বিবেচনার সময় জাতীয় সুরক্ষার পাশাপাশি মানবাধিকারের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে৷
গত আগস্টে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবক’টি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেয় যে, ‘‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷’’ এ নির্দেশের বিরোধিতা করে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা ৩২ অনুচ্ছেদ নিয়ে যে আবেদন করেছে, তা শুনানিযোগ্য নয়, কারণ, ৩২ অনুচ্ছেদ দেশের নাগরিকদের জন্য; অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য নয়৷ রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে, সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতেও মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে ভারত৷
রোহিঙ্গা সংকট: কার কী অবস্থান?
হিংসালীলা ও বৈরি মনোভাবের মুখে মিয়ানমার থেকে দলে দলে পালাতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের৷ তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সমাজে সহানুভূতি সত্ত্বেও মূলত কৌশলগত কারণে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Armangue/AP
বাংলাদেশ
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশেই আশ্রয় নিচ্ছে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ এত সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়া অবশ্যই বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ চলছে৷ শরণার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ নিয়ে তথ্যভাণ্ডার গড়ার কথা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/Z. H. Chowdhury
ভারত
দেশের উত্তর পূর্বে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে এবং চীনের প্রভাব সীমিত রাখতে ভারতের একের পর এক সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও প্রথম মিয়ানমার সফরে গিয়ে সে দেশের সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷ রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যেও প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
তুরস্ক
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে তুরস্ক৷ শুধু কথায় নয়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্য দিতেও তৎপর সে দেশ৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন৷ জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরতেও তৎপর হতে চায় তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/abaca/K. Ozer
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয়ের আশ্বাস দিয়েছে৷ তবে অন্যান্য নথিপত্রহীন বহিরাগতদের মতো তাদেরও নির্দিষ্ট কেন্দ্রে আটক রাখা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেশনে স্বাক্ষর করেনি৷ তাই সেখানে শরণার্থীরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচিত হয়৷
ছবি: Reuters/Stringer
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি-র প্রতি অগাধ আস্থা দেখিয়েছিলেন৷ বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়নি৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলেও সরাসরি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো কূটনৈতিক অবস্থান নেয় নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Watson
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সহযোগিতা দাবি করেছে৷ সেইসঙ্গে এই সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর উপর নিপীড়ন বন্ধ করার ডাক দিয়েছে ইইউ৷ শরণার্থীদের সহায়তা করতে বাংলাদেশে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে এই রাষ্ট্রজোট৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
চীন
মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ সে দেশে কৌশলগত স্বার্থের খাতিরেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সরকারের বিরোধিতা করছে না চীন৷ জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের সরকারের জন্য জরুরি৷
ছবি: Reuters/R. Dela Pena
রাশিয়া
চীনের মতো রাশিয়াও মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে৷ জাতিসংঘে সে দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে এই দুই ভেটো শক্তি৷ এদিকে রাশিয়ার মুসলিম-প্রধান চেচনিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মস্কোর উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z.Bairakov
জাতিসংঘ
জাতিসংধের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতির মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে হিংসালীলা বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন৷ প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নানের নেতৃত্বে এক কমিশন পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে৷ তবে নিরাপত্তা পরিষদ এখনো প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ভারতে বর্তমানে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতার পর সেখানে আশ্রয় নিয়েছে৷ ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করে থাকে এবং তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে এদের কয়েকজনের যোগাযোগ আছে বলে দাবি করে৷ তাই এদের ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে মনে করে তারা৷
আরএন/এসিবি ( এএফপি, এপি, ডিপিএ)