টেকনাফে রোহিঙ্গা বন্দুকধারীরা এক কিশোরকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ এ সময় অপহরণকারীদের হাত থেকে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরেক যুবক৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে পাঁচ বাংলাদেশিকে অপহরণের সময় তিনজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পালিয়ে এলেও দুইজনকে অপহরণ করে বন্দুকধারী ‘রোহিঙ্গা'রা৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ১০টায় টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডেইল পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম৷
‘অপহৃত' আব্দুর রহমান ওরফে আবছার (১৬) ওই এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহের ছেলে৷ গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ শরীফ (৩০) একই এলাকার সোনা আলীর ছেলে৷
ইউপি সদস্য সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, সকালে বড়ডেইল পাহাড়ি এলাকায় পানের বরজে কাজ করতে যান আবছার ও শরীফ৷ এ সময় গহীন পাহাড় থেকে একদল ‘রোহিঙ্গা' অস্ত্রধারী অতর্কিতে তাদের ওপর হামলে পড়ে৷
‘‘এক পর্যায়ে ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা' কিশোর আবছারকে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে৷ এ সময় শরীফ দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে অপহরণকারীরা৷ এতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷ পরে কিশোর আবছারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷
‘‘স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ শরীফকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে৷ তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷’’ ঘটনার ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান এই ইউপি সদস্য৷
টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘‘ ঘটনার ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা পুলিশকে অবহিত করেছেন৷ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে৷’’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাঁচ জন স্থানীয় বাংলাদেশিকে অপহরণের সময় তিনজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পালিয়ে এলেও দুই জনকে অপহরণ করে ‘রোহিঙ্গা' অস্ত্রধারীরা৷ পরে অপহৃত দুইজন ‘মুক্তিপণ দিয়ে' ছাড়া পান৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় যত সমস্যা
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বনভূমি উজাড় হয়েছে, পানির স্তর নীচে নেমে গেছে৷ স্থানীয়ভাবে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা কাজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
বনভূমির উপর প্রভাব
২০১৯ সালে বনবিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কারণে ৮ হাজার একর বন ধ্বংস হয়েছে৷ এরমধ্যে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ একরের উপর৷ আর রোহিঙ্গাদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে ১ হাজার ৮৩৭ একর জমি৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
পানির স্তর নেমে যাচ্ছে
বনবিভাগের ঐ রিপোর্টে আরও জানানো হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে এ পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি টিউবওয়েল স্থাপন করতে হয়েছে৷ এ কারণে পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নীচে নামছে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
অপরাধ
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্যের বরাতে সময়নিউজ জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরণের অপরাধে ২ হাজার ৪৩৮টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি৷ ধর্ষণ মামলা ৮৮টি৷ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায় চেষ্টায় মামলা ৩৯টি৷ ৫ বছরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ১১০টিরও বেশি৷ এসব মামলায় আসামির সংখ্যা পাঁচ হাজার ২২৬ জন৷
ছবি: bdnews24.com
শ্রমবাজারের রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, রোহিঙ্গারা অনেক সময় কম পারিশ্রমিকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷ অনলাইন মিডিয়া ‘সারাবাংলা ডটনেট’ গত এপ্রিলে জানায়, কক্সবাজারের শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিক্ষোভ করেছে ‘কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্যপরিষদ’৷ তাদের অভিযোগ, মজুরি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু রোহিঙ্গারা অল্প টাকাতেই কাজে নেমে পড়ছেন৷
ছবি: Guven Yilmaz/AA/picture alliance
হাতির সমস্যা
গত ১১ আগস্ট এক সেমিনারে কক্সবাজার বনবিভাগের দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় ৭০ থেকে ৮০টি হাতি রয়েছে৷ এসব হাতি রোহিঙ্গাদের কারণে চলাচলে বাধা পাচ্ছে৷ ফলে মানুষ আর হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে৷ এছাড়া বনাঞ্চলের নানা স্থাপনা, জবর দখল, রাস্তাঘাট তৈরি হওয়ায় হাতির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে৷
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
বছরে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে৷ তাই সেখানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএফপিএ-কে অনুরোধ করেছে সরকার৷ পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি বলেন, ‘‘প্রতিবছর যে ৩০ হাজার করে যোগ হচ্ছে, এতে করে ক্যাম্পে ওভারঅল পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে৷’’
ছবি: ED JONES/AFP
‘পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়’
পরিবেশ, প্রতিবেশের ক্ষতি প্রসঙ্গে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিক বলেন, ‘‘তারা মানবিক কারণে এখানে আছেন৷ এর সাথে পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়৷ সারাদেশে বন উজার করা হচ্ছে৷ গাছপালা কাটা হচ্ছে, সেদিকে আমাদের নজর নেই৷ আর নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বাড়িয়ে বলে আসলে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিতদের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়৷ তারা ক্যাম্পের মধ্যে থাকেন৷ সেখানে যে পরিবেশে থাকেন তাতে সামাজিক অপরাধ হতেই পারে৷’’