কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঐ এলাকায় ইন্টারনেট সেবা চালুর আহ্ৱান জানিয়েছে জাতিসংঘ৷
বিজ্ঞাপন
গত বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ফলে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে রোহিঙ্গারা পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতারা৷
‘‘আমাদের অনেকেই জানেন না এই ভাইরাসটা কী, এর মাধ্যমে কী রোগ ছড়ায়? মানুষ শুধু শুনেছে এর কারণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ ইন্টারনেট না থাকায় কী ঘটছে, আমরা জানতে পারছি না,'' বলেন রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ৷ ইন্টারনেট না থাকায় অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘আমরা আল্লাহর দয়ার উপর ভরসা করছি,'' এএফপিকে বলেন সৈয়দ উল্লাহ৷
বিদেশে বাস করা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অনেকে ইতিমধ্য টেলিফোনে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন৷
এছাড়া গত সপ্তাহে ভারত থেকে ফেরা চার সদস্য়ের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কোয়ারান্টিনে নেয়ার খবরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়৷ এরপর কক্সবাজারে এক নারীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর এই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়৷
হোম কোয়ারান্টিনের খুঁটিনাটি
সব দেশেই হাসপাতালে কোয়ারান্টিনের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাসায়ও কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ কিভাবে থাকতে হয় হোম কোয়ারান্টিনে? চলুন জেনে নেই এর খুঁটিনাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কোয়ারান্টিন কী?
১৪শ শতকে ইউরোপে মহামারি আকার নিয়েছিল প্লেগ, যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত৷ প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল মহামারিতে৷ ভেনিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে, বন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়লে যাত্রীদের নামানোর আগে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে। ৪০ সংখ্যাকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় কোয়ারানতা, আর অপেক্ষার সময়টিকে কোয়ারানতিনো৷ তখন থেকে সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় কাউকে আলাদা করে রাখাকে কোয়ারান্টিন বলা হয়৷
ছবি: London Museum of Archeology
আইসোলেশন কী?
কোয়ারান্টিন আর আইসোলেশনের তফাত কী? কোয়ারান্টিন সাধারণত হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে অথবা নিজ বাসাতেও হতে পারে৷ তবে আইসোলেশন সাধারণত সরাসরি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই করা হয়, যাদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাদের রাখা হয় কোয়ারান্টিনে, উপসর্গ৷ তেমন প্রকট না হলে তাকেও কোয়ারান্টিনে রাখা হয়৷ কিন্তু কারো মধ্যে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে, তখন তাকে রাখা হয় আইসোলেশনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photoshot
হোম কোয়ারান্টিন কেন?
সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত বা শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে এমন সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন৷ যাদের মধ্যে অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের হাসপাতালে বিশেষ কোয়ারান্টিন বা আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে৷ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত এত বেশি মানুষকে একসঙ্গে হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়৷ এ কারণে অনেককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
হোম কোয়ারান্টিন কী?
‘হোম’ মানে বাসা, কোয়ারান্টিন মানে পৃথক করা৷ সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় রোগীকে সবার আগে আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে রোগ অন্যদের শরীরে না ছড়ায়৷ রোগীকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে নেয়া হয় বিশেষ ব্য়বস্থা৷ এই ব্যবস্থাকেই বলে কোয়ারান্টিন৷ করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের বাসায় নিজের তত্ত্বাবধানেই কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷ এটিকেই বলা হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিন৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
কী করতে হবে?
হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে আলাদা থাকতে হবে৷ সবচেয়ে ভালো হয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখতে পারলে৷ সে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ আলাদা ঘর সম্ভব না হলে রাখতে হবে আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা৷ আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত এক মিটারের মধ্যে অন্য কারো শোয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না৷ রোগীকে নিয়মিত মেডিক্যাল মাস্ক পরতে হবে এবং সে মাস্ক নিয়মিত পালটাতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Fouladi
যা যা করবেন না
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা৷ আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না, কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না৷ নিজের ব্যবহার্য দ্রব্য ছাড়া অন্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো৷ নিজের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা স্থান, যেমন রান্নাঘর এমনকি বৈঠকখানাতেও যাওয়া উচিত হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Duff
যা যা আলাদা করবেন
রোগীর ঘর বা বিছানা তো আলাদা থাকবেই, পাশাপাশি রোগীর ব্যবহার করা টুথব্রাশ, থালা-বাসন, তোয়ালে, গামছা, কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ, সবই রাখতে হবে অন্যদের থেকে দূরে৷ বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তাকেও আক্রান্তের সঙ্গে মিশতে দেয়া যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Baba Ahmed
নবজাতকের মা কী করবেন?
মা আক্রান্ত হলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো বাধা নেই৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুকের দুধ থেকে শিশু আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ তারা এখনও পাননি৷ তবে শিশুকে স্পর্শ করার আগে মাকে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ মুখে মেডিক্যাল মাস্ক পরে নিতে হবে৷ অন্য সময় শিশু থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
বাড়ির অন্য সদস্যরা?
সেবার জন্য নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি থাকলে ভালো হয়৷ একেক দিন একেক জন রোগীর সেবা করলে বাড়ির সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যত দূরে রাখা সম্ভব ভালো৷ সেবাদানকারী সেবা দেয়ার সময় মেডিক্যাল মাস্ক ভালো করে পরে নেবেন৷ ব্যবহার করার সময় মাস্কে আর হাত দেয়া যাবে না৷ রোগীর ঘর থেকে বের হয়েই সে মাস্ক ঢাকনা দেয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/G. Markowicz
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘর নিয়মিত ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে মুছতে হবে৷ তার ব্যবহার করা চেয়ার টেবিল বা অন্য যেকোনো কিছু নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগী যে টয়লেট ব্যবহার করবেন, সেটি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করেন তাহলে সাবধানে থাকতে হবে৷ রোগী টয়লেট ব্যবহার করার পর প্রতিবার ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগীর কাপড় ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে নিয়মিত ধুয়ে দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ena
দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজ নিতে বা সুস্বাস্থ্য কামনা করতে ফলমূল-উপহার নিয়ে আমরা হাজির হই রোগীর বাড়িতে৷ কিন্তু করোনা ভাইরাসের মতো মারাত্মক সংক্রমণে কারো সঙ্গে দেখা করতে না যাওয়াই ভালো৷ এতে করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে আপনি নিজেই তা ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার অন্য প্রিয়জনের শরীরে৷ বরং আক্রান্তের সঙ্গে দেখা না করলেই তাকে সবচেয়ে নিরাপদে রাখতে পারেন আপনি৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
ডাক্তারের কাছে যাবেন না
অনেকেই আতঙ্কে বা না জেনে নিজেই চলে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে৷ কিন্তু এর ফলে আপনার শরীর থেকে যেমন ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, আপনি সুস্থ থাকলে অন্যের শরীর থেকে আপনার শরীরেও ভাইরাস চলে আসার ঝুঁকি থাকে৷ আগে স্থানীয় চিকিৎসক বা চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ফোনে যোগাযোগ করুন৷ কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ বেশি মাত্রায় অনুভব করলে রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের হটলাইনে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
কতদিন কোয়ারান্টিন?
সাধারণত চিকিৎসকেরা ১৪ দিন পর্যন্ত বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলবেন৷ এর মধ্যে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা৷ তবে ব্যক্তিবিশেষে এই কোয়ারেন্টাইন কম-বেশিও হতে পারে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে তা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে৷ ফলে কেউ ৩-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আবার কারো ১৪ দিনের বেশি সময় লাগলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
করোনায় করণীয়
আমরা সবাই সচেতন থাকলে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেই ঠেকানো যাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব৷ তাই গুজবে বিশ্বাস না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন৷ ভাইরাসের লক্ষণ শরীরে দেখা দিয়েছে মনে করলে আগেই সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হটলাইনে কল করুন৷ রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷
‘‘আমরা খুবই আতঙ্কিত৷ ভাইরাস যদি এখানে আসে তাহলে দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়তে পারে'' বলে মনে করছেন আরেক রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের৷ ‘‘অনেক ত্রাণকর্মী ও স্থানীয় কমিউনিটি কর্মী প্রতিদিন ক্যাম্পে ঢোকেন৷ অভিবাসী কয়েকজন রোহিঙ্গাও সম্প্রতি এখানে ফিরে এসেছেন৷ তারা হয়ত ভাইরাসটা বহন করছেন,'' বলেন তিনি৷
ক্যাম্পে বাস করা আরেক রোহিঙ্গা লোকমান হাকিম ক্যাম্পগুলোতে করোনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শুধু সাবান দেয়া হয়েছে এবং হাত ধুতে বলা হয়েছে৷''
টেকনাফের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের বেশিরভাগ রাস্তার প্রস্থ দুই মিটারের মতো৷ করোনার বিস্তার কমাতে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের এক অপরের চেয়ে এই পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছে৷
এছাড়া ক্যাম্পগুলোর ১০ বর্গমিটার আকারের একেকটি ঘরে সর্বোচ্চ ১২ জন করে থাকেন৷ ‘‘পাশের ঘর থেকে প্রতিবেশীর শ্বাস নেয়ার শব্দ শোনা যায়,’’ বলে জানান একজন ত্রাণকর্মী৷
ডক্টর উইদাউট বর্ডারের বাংলাদেশ প্রধান পল ব্রোকম্যান বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ‘‘আসলে অসম্ভব’’৷
ইতিমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে হাত ধোয়া ও হাইজিন ক্যাম্পেন চালু করেছে জাতিসংঘ৷ এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে স্বাভাবিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে তারা৷ জীবন বাঁচানো কর্মসূচির সফলতার জন্য দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ প্রয়োজন বলে জানান ক্যাম্পে কাজ করা জাতিসংঘের মুখপাত্র লুইস ডনোভান৷
তবে ক্যাম্পে ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনারের কার্যালয়৷
অবশ্য ক্যাম্পগুলোতে বাইরের যোগাযোগ কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা বিমল চাকমা৷ ‘‘আমরা ক্যাম্পে ত্রাণ কার্যক্রম কমিয়েছি৷ শুধুমাত্র খাবার, স্বাস্থ্য ও আইন সংক্রান্ত কাজ চলবে,’’ বলে জানান তিনি৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)
নাগরিকত্ব এবং রাষ্ট্রহীন মানুষের ঠিকানা
বিশ্বে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ দেশহীন৷ বঞ্চিত মৌলিক অধিকার থেকে৷ টিকে আছে কোনোরকম৷ চলুন দেখি, কোথায় আছে ঠিকানহীন মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
বাংলাদেশ/মিয়ানমার
১৯৮২ সালে বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাশ হয়৷ আর তাতেই নাগরিকত্ব হারায় মুসলিম প্রধান রোহিঙ্গারা৷ জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন৷ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় মানবিক বাংলাদেশ৷ জনসংখ্যার চাপে থাকা ছোট্ট দেশটিতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
আইভরি কোস্ট
ছয় লাখ ৯২ হাজার ঠিকানা বিহীন মানুষকে ঠাঁই দিয়েছে আইভরি কোস্ট৷ বুরকিনা ফাসো, মালি, ঘানা থেকে এই লোকগুলো এসছে আইভরি কোস্টে৷ দেশটির কফি এবং তুলা চাষের সঙ্গে জড়িয়ে কোনোরকম দিন যাপন করছে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষ৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিদেশি নাগরিক৷ যারা এখন বাস্তুচ্যুত৷
ছবি: Benoit Matsha-Carpentier/AFP/Getty Image
থাইল্যান্ড
চার লাখ ৭৯ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষের বসতি থাইল্যান্ডে৷ পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী ইয়াও, হ্যামং এবং কারেন সম্প্রদায়ের মানুষ এরা৷ মিয়ানমার এবং লাওস সীমান্তবর্তী পর্বত এলাকায় তাদের অস্থায়ী আবাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
ইস্তোনিয়া/লাটভিয়া
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বাল্টিক রাষ্ট্র গঠন হলে, কপাল পোড়ে অন্তত দুই লাখেরও বেশি মানুষের৷ কারণ তাদের আর কোনো ঠিকানা নেই, কোনো বসতি নেই৷ তাদের দুই লাখ ২৫ হাজার আছেন লাটভিয়াতে আর ৭৮ হাজার আছেন ইস্তোনিয়ায়৷
ছবি: Reuters/I. Kalnins
সিরিয়া
১৯৬২ সালের কথা৷ আরবকরণের প্রক্রিয়ায় বলি হয়ে, নাগরিকত্ব হারান কুর্দরা৷ গৃহযুদ্ধের আগে অন্তত তিন লাখ কুর্দ হয়ে পড়ে দেশহীন৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, এখনও সিরিয়ায় নাগরিকসুবিধা বঞ্চিত হয়ে বাস করছে ১ লাখ ৬০ হাজার কুর্দ৷ অনেকে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/M. Abu Ghosh
কুয়েত
১৯৬১ সালে স্বাধীনতা এলেও নাগরিক স্বীকৃতি জোটেনি যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত বেদুঈনদের৷ জাতিসংঘের তথ্য মতে, ৯২ হাজার বেদুঈন আছে কুয়েতে৷ যারা বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চাকরির মতো নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত৷
ছবি: AP
ডমিনিকান রিপাবলিক
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে, ২০১৩ সালে জাতীয়তা বিষয়ক আইনে পরিবর্তন আনার পর, আদালত থেকে রুল জারি করা হয়৷ আর তাতেই অনেকেই হয়ে যান দেশহীন৷ এমনকি, হাইতি থেকে আসা অনেক মানুষ ডমিনিকে জন্ম নিলেও মেলেনি নাগরিকত্ব৷ জাতিসংঘের ২০১৫ সালের হিসেব বলছে, এখানে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইরাক
নাগরিক সুযোগ বঞ্চিত সাড়ে ৪৭ হাজার মানুষের আবাস ইরাক৷ এদের মধ্যে আছেন, ঐতিহাসিকভাবে ইরাক-ইরান সীমান্তে বসবাসকারী কুর্দ, ফিলিস্তিনের শরণার্থী আর বেদুঈনরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইউরোপ
ভারতীয় বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রোমা৷ এই সম্প্রদায়ের হাজার দশেক মানুষের বাস, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে৷ তারাও আছেন নাগরিকত্ব সংকটে৷ চেকোশ্লাভাকিয়া ও যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে গেলে, তাদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় নতুন রাষ্ট্র৷ কসভো আর বসনিয়ায় ঠাঁই নেয়া রোমারাও যুদ্ধের কারণে পরিচয় সংকটে পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কলম্বিয়া
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে অনেক মানুষ পাড়ি জমান কলম্বিয়ায়৷ যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে অন্তত ২৫ হাজার শিশু৷ তারাও আছে পরিচয় সংকটে৷ কারণ, কলম্বিয়া নাগরিকত্ব পেতে বাবা-মায়ের মধ্যে একজনের সে দেশের নাগরিকত্ব থাকতে হয়৷