রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গাই বললেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯ নভেম্বর ২০১৭বাংলাদেশের স্থানীয় সময় রবিবার দুপুর ১টার দিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও তিন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা৷ তারা হলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয় উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মোঘেরিনি, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কানো৷ তাদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম৷
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় তারা নির্যাতনের শিকার কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেন৷ উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসনকেন্দ্র আইওএম এর প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র, জরুরি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিদর্শন করেন তাঁরা৷
পরিদর্শন শেষে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল বিদেশি মন্ত্রী ও কূটনৈতিকদের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে দেখেছি৷ রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে জন্য কাজ করবে জার্মানি৷ আমরা রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আসন্ন এশিয়া-ইউরোপ (আসেম) সম্মেলনে তুলে ধরব এবং আলোচনা করব৷''
২০ এবং ২১ নভেম্বর মিয়ানমারে এই সম্মেলন হবে৷ তারা বাংলাদেশ থেকেই মিয়ানমার যাচ্ছেন৷
এদিকে, পরিদর্শন শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাঁরা এখানে এসেছেন, তাঁরা রোহিঙ্গাদের মুখে অবস্থা জেনে বিস্মিত হয়েছেন৷ রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও নিপীড়নের বর্ণনা তাঁদের ব্যথিত করেছে৷ তাঁরা এর আগে কখনও এত কম জায়গায় এত বেশি মানুষ দেখেননি৷ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আসেম সম্মেলনে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন৷''
পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ঢাকায় ফিরে সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন৷ সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা আগেও রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন৷ আর এবার এসে নিজেদের চোখে দেখে গেলেন৷ ফলে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ আরো বাড়বে বলে আশা করি৷''
তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে যতদিন রাখতে হয় তার জন্য বিরাট খরচের ব্যাপার আছে৷ আবার তাঁদের ফেরত নেয়ার সঙ্গেও বিপুল পরিমাণ অর্থের বিষয় জড়িত৷ এই বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝবে৷ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়া ছাড়া এর আর কোনো সমাধান নাই৷ তবে তাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করেই ফেরত নিতে হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা তাঁদের যে নামে পরিচয় দিতে চান, সেটাই তাঁদের পরিচয়৷ এই পরিচয় আপনি বা আমি কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারি না৷ বাংলাদেশও অফিসিয়াল কাগজপত্রে আগে তাদের রোহিঙ্গা বলতো না৷ বলতো রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলমান৷ এর বিপরীতে মিয়ানমার কাগজপত্রে রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলতো না৷ জার্মানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেছেন – এটার মাধ্যমে জার্মানির অবস্থান আরো শক্ত হয়েছে৷ রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করা ঠিক না৷'' কোফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনেও রোহিঙ্গা শব্দটি পরিহার করা হয়েছে৷
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ৬ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে৷ তারা এখন কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন৷ মিয়ানমার এরইমধ্যে মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে এখনো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত আছে৷