রোহিঙ্গারা আসছেই, সংকট বাড়ছেই
৬ ডিসেম্বর ২০১৬কক্সবজারের সাংবাদিক আব্দুল আজিজ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘গত নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি অন্তত ২০০ নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছে৷ ঐ সব নৌকায় করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল৷ এ পর্যন্ত আড়াই হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে বিজিবি ফেরত পাঠিয়েছে৷ তবে বাংলাদেশে প্রতিদিনই মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলামানরা প্রবেশ করছে৷ জাতিসংঘ ১০ হাজারের কথা বললেও আইএমও কর্মকর্তারা বলছেন, এ পর্যন্ত ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷''
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও আইএমও কর্মকর্তা সংযুক্তা সাহানিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, কক্সবাজারে নতুন করে আরো রোহিঙ্গা এসেছে৷ তবে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি৷
এদিকে সোমবার কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীর মিয়ানমার জলসীমায় রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ ঐ নৌকায় ৩৫ জন রোহিঙ্গা ছিল বলে জানা গেছে৷ বাকি ৩২ জন এখনো নিখোঁজ৷ টেকনাফের স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, ‘‘নিখোঁজ ৩২ জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম৷ সোমবার বাংলাদেশের জেলেরা এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছেন৷ তবে লাশটি রোহিঙ্গা নারীর কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ আব্দুল আজিজ জানান, নৌকাডুবির খবর পেয়ে বিজিবিও পরে অনুসন্ধান চালিয়েছে৷ তবে তারা কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি৷
মিয়ানমার থেকে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবজারের লেদা, নয়াপাড়া ও কুতুপালং এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা আগে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কষ্ট করে থাকছে৷ ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না৷ কেউ কেউ আশেপাশের বস্তিতে অবস্থান করছে৷ কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরাণার্থী আমির হোসেন ১৯৯২ সালে নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন যারা আসছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ৷ আমরা যে-যার মতো আশ্রয় দিচ্ছি৷ তবে ভয়ে থাকি৷ যদি কোনো সমস্যা হয়৷ আমার বাসায় গুলিবিদ্ধ একজনকে আশ্রয় দিয়েছি৷ কিন্তু তার চিকিৎসা করাতে পারছি না৷''
তিনি জানান, ‘‘এখানে যারা আসছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷ কেউ না খেয়ে, কেউ আধ-পেট খেয়ে আছেন৷ যারা মিয়ানমার থেকে এসেছেন তারা নিজেরাও নির্যাতনের শিকার৷ নির্যাতরে চিহ্ন রয়েছে তাদের শরীরে৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘গতকাল (সোমবার) নাফ নদীতে যে নৌকাডুবি হয়েছে তাতে ১৬ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধারের কথা শুনেছি৷ তবে নিশ্চিত কোনো খবর নেই৷''
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সোমবার সংসদে বলেছেন, ‘‘আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে৷ আশা করি, এই সম্মেলন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে৷''
অং সান সুচি প্রসঙ্গে সংসদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘তিনি (সু চি) সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন৷ তার সরকারের মধ্যে অনেক সমস্যা আছে৷ সম্পূর্ণ জিনিসটা অত্যন্ত সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে যা বলতে পারি, তা হলো, আপনারা দেখেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘ, অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা আমাদের পক্ষে আছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘লাওসে এশিয়ান রিজিওনাল ফোরামে গিয়ে আমি এ বিষয়ে সুচির সঙ্গে কথা বলেছি৷ এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ফরেন সেক্রেটারিকে পাঠানো হয়েছিল৷ আমাদের সঙ্গে সুচি যে কথাবার্তা বলেছেন, তা আশাব্যঞ্জক৷ আমাদের কর্তব্য হলো, বিভিন্ন লেভেলে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা৷ আমরা এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি৷ মানবিক কারণে যা করা দরকার, তা করছি৷ মিয়ানমার থেকে যারা চলে আসছে, তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে৷''
বর্তমানে কক্সবাজারের তিনটি রিফিউজি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩৩ হাজার৷ তবে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি হবে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে৷ এর সঙ্গে এবার আরো ২১ হাজার মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা যুক্ত হলো৷
এ ব্যাপারে আপনার কি কিছু বলার আছে? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷