২০১৩ সালে এক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করেছিলেন মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি৷ নিজের স্মৃতিকথা ‘ফর দ্য রেকর্ড'-এ এর উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন৷
বিজ্ঞাপন
১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর ২০১২ সালে প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটি সফর করেন ক্যামেরন৷ কিন্তু এরপর দেশটির অবস্থা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে সু চির অবস্থান নিয়ে স্মৃতিকথায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷
ক্যামেরন লিখেছেন, ‘‘আমি গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করি৷ তিনি শিগগিরই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করবেন৷ ১৫ বছরের গৃহবন্দিত্ব থেকে সত্যিকার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা, তার এই দারুণ গল্প নিয়েই আমরা কথা বলেছি৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘কিন্তু ২০১৩ সালের অক্টোবরে সু চি যখন লন্ডন সফরে আসেন, সবার চোখ তখন রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর৷ বুদ্ধ রাখাইনরা তাদের নিজ বাসস্থান থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিলো৷ ধর্ষণ, হত্যা, জাতিগত নিধনসহ অনেক কিছুই আমরা শুনেত পাচ্ছিলাম৷ আমি তাকে বললাম, বিশ্ব সব দেখছে৷ তিনি উত্তর দিলেন, ‘তারা আসলে বার্মিজ নয়৷ তারা বাংলাদেশি৷' এরপর ২০১৫ সালে তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নেতা হলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চলতেই থাকলো৷''
২০১০ সাল থেকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্যামেরন৷ ২০১৬ সালে গণভোটে ব্রেক্সিটপন্থিদের জয়ের পর পদত্যাগ করেন তিনি৷
যা যা হারালেন সুচি
রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে কোনো ভূমিকা না রাখার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুচি৷ ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অবদানের জন্য পাওয়া স্বীকৃতিও হারাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Khin Maung Win
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের খেতাব
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে দেওয়া সর্বোচ্চ খেতাব ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনশেন্স’ প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marquez
এলি উইজেল অ্যাওয়ার্ড
যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজয়াম মানবাধিকারের বিষয়ে অবদানের জন্য ২০১২ সালে সুচি’কে এ পুরস্কার দিয়েছিল৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেনি দাবি করে পদকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Ye Aung Thu
ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড
নিজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে যাওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে সুচি’কে ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ সম্মাননা প্রদান করে৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরুর পর এ সম্মাননা ফিরিয়ে নেয়া হয়৷ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এমন কাউকে এ সম্মানে ভূষিত করতে চান না যিনি মানবাধিকার লংঘনের সময় ‘চোখ বন্ধ’ করে রাখে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Aung Shine Oo
ফ্রিডম অব গ্লাসগো অ্যাওয়ার্ড
রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে নিস্ক্রিয় ভূমিকার জন্য ফ্রিডম অব গ্লাসগো অ্যাওয়ার্ডও হারিয়েছেন সুচি৷ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এক চিঠিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালে পালটা প্রতিক্রিয়া দেখান সুচি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Maye-E
অক্সফোর্ডের কক্ষ থেকে বিতাড়িত
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুনিয়র কমন রুম’ টাইটেল থেকে মুছে ফেলা হয়েছে সুচির নাম৷ রোহিঙ্গা বিষয়ে সুচির কোনো ভূমিকা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীরা সুচির নাম মুছে ফেলার পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance /dpa/L. Bo Bo
ইউনিসন অ্যাওয়ার্ড
রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে হারানো পদকগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো ইউনিসন অ্যাওয়ার্ড৷ যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন সুচিকে তাঁর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদান রাখার জন্য এ পদকটি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Thu
এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ড
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহর কর্তৃপক্ষ সুচিকে ২০০৫ সালে দেয়া এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ডটি বাতিল করে দেয়ার চিন্তা করছে৷ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে গত নভেম্বরে এডিনবার্গ শহর কর্তৃপক্ষ সুচিকে চিঠি লেখে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী৷ চলতি সপ্তাহেই অ্যাওয়ার্ডটি প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
নোবেল বাতিলের আহ্বান
রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকার কারণে ১৯৯১ সালে শান্তিতে পাওয়া সুচির নোবেল পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য একটি আন্তার্জাতিক ক্যাম্পেইন হয়েছিল৷ কিন্তু নোবেল কমিটির প্রধান বলেছেন, এ পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়া সম্ভব নয়৷