মিয়ানমারে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে আসা শতশত রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বাস করছে৷ তবে এখন এখান থেকেও পালাতে চাইছেন তাঁরা৷ বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজন্য নিজেদের যা কিছু আছে তা নিয়ে তাঁরা পাচারকারীদের শরণাপন্ন হচ্ছেন৷ বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার কথা অস্বীকার করেছে৷ সাগরপথে রোহিঙ্গাদের আসার সব পথ বন্ধ করে ফেলা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সকারের দাবি৷
এএফপিকে শরণার্থী ক্যাম্পের স্থানীয় নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘‘ক্যাম্প ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা৷ তাঁদের কাছে যে টাকা বা গয়না আছে, সেগুলো পাচারকারীদের দিয়ে বিমানে করে দেশত্যাগ করতে চাইছেন তাঁরা৷ যাঁদের সেই সম্বল নেই তাঁরা অন্য ব্যবস্থা খুঁজছেন৷''
এএফপি জানায়, কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে৷ গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারে তাঁদের উপর নির্যাতন শুরু হওয়ার পর থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে আসে৷ উন্নত এবং নিরাপদ জীবনের আশায় এলেও বাংলাদেশ তাঁদের কাজ করার কোনো সুযোগ দেয়নি৷ তাঁদেরকে এমন একটি দ্বীপে আশ্রয় দিয়েছে, যেখানে প্রচুর মশা হয় ও নিয়মিতই বন্যা হয়৷
Younis Arman - MP3-Stereo
অনেকদিন ধরেই পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় সাগরপাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড যাওয়ার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা৷ ২০১৫ সালে সাগরে ডুবে অনেকের মৃত্যুর পর বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়৷ বিশ্বজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা৷ পাচারকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো৷
তবে পাচারকারীরা বাংলাদেশ থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন করে আকাশপথ ও স্থলপথের ব্যবস্থা করেছে৷ আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করার জন্য তাঁরা মোবাইলের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছেন৷ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা মোহাম্মদ এখন সৌদি আরবে বাস করছেন৷ আর এজন্য তাঁকে ৬ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানান তিনি৷ ২০ বছর বয়সি এই তরুণ বলেন, ‘‘আমি পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্রের জন্য একজনকে টাকা দেই৷ তিনি আমাকে পরিবারের নাম ব্যবহার করতে নিষেধ করেন৷''
বাংলাদেশ ত্যাগ করা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাওয়ায় অনেকে অন্য স্থান বেছে নিচ্ছে৷ যাঁরা বিমানভাড়া দিতে সক্ষম নন, তাঁরা বাস কিংবা পায়ে হেটেই বাংলাদেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন৷ কেউ কেউ ভারত, নেপাল কিংবা পাকিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ অনেকে কাশ্মীর যাওয়ারও চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু তাঁদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশই ছিল৷
Abdul Aziz - MP3-Stereo
মানবপাচারে কত টাকা খরচ হয়, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ধারণা করা হয়, শুধু বাংলাদেশেই লাখ লাখ ডলার খরচ হয়৷ মানবপাচারকারী চক্রগুলো রোহিঙ্গাদের নকল বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জন্মসনদ তৈরি করে দেয়৷ কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বাস করলেও সেই দেশ তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করেছে৷ আর পাসপোর্ট না থাকায় কোনো দেশেই যেতে পারছিলেন না তাঁরা৷ এই সুযোগ তাঁদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পাচারকারী চক্র৷
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য যে, তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে পাচারকারীরা দেশজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে৷''
অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জালালুদ্দিন শিকদার বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের কারণে পাচারকারীদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে পাচার করা এখন শুধু একটি ফোনের ব্যাপার৷
গত বছরের একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, পাচারকারীরা বিশ্বজুড়ে লেনদেনে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা সহজে নজরদারিতে আসে না৷ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের গবেষক সেলিম আহমেদ পারভেজ বলেন, ‘‘তারা এখন টাকা আদান-প্রদানে খুবই দক্ষ৷ আর এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে স্থানীয় পাচারকারী, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও মাদক ব্যবসায়ীরা৷''
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন৷ অনেক গর্ভবতী মা বাংলাদেশে এসে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
স্বামীর খবর জানেন না তিনি
রামিদা বেগমের স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ এরপর তাঁদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ তার সপ্তাহখানেক পর পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান তিনি৷ ফলে স্বামীর খবর এখন জানেন না রামিদা৷ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন তাঁর কন্যার বয়স ছিল ১০ দিন৷ তখনও মেয়ের কোনো নাম দেয়া হয়নি রামিদার৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এই শিশুর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে
স্বামীকে মিয়ানমারের সেনারা হত্যা করায় বাবামা-র সঙ্গে বাংলাদেশে চলে যান ১৮ বছরের নূর কায়েস৷ কোলে তাঁর ২৬ দিনের সন্তান, যার এখনও কোনো নাম দেননি তিনি৷ ছবিটি ৯ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সাত দিনের মেয়ে
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন আসমত আরার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাত দিন৷ মাসখানেক আগে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান৷ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার আগে তাঁর শ্বশুরকেও হত্যা করা হয়৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সন্তানদের বাঁচাতে বাংলাদেশে
একমাস বয়সি ছেলে সন্তানের সঙ্গে রাজুমা বেগম৷ যখন বাংলাদেশে আসছিলেন তখন গর্ভবতী ছিলেন তিনি৷ সঙ্গে ১১ মাসের আরেকটি সন্তানও ছিল৷ ‘‘আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি কারণ মিয়ানমারের ভয়ের মধ্যে ছিলাম৷ আমার সন্তানদের বাঁচাতে চেয়েছি আমি’’, রয়টার্সকে বলেন বেগম৷ ছবিটি ১২ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
দেশে ফিরতে আগ্রহী সানোয়ারা
৯ ফেব্রুয়ারি তোলা এই ছবিতে ২৫ দিনের কন্যা কোলে ২০ বছর বয়সি মা সানোয়ারা বেগমকে দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় আড়াই মাস আগে স্বামীর সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি৷ এখন আছেন কক্সবাজারের কুতুপালাং আশ্রয়কেন্দ্রে৷ মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভাল হলে নিজ ঘরে আবারও ফিরে যেতে চান সানোয়ারা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা এই ছবিতে মারিজানকে তাঁর ২৫ দিন বয়সি কন্যা সন্তান সহ দেখা যাচ্ছে৷ পাশে তাঁর ছেলে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাসখানেক আগে তাঁরা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
কন্যার জ্বর
দু’মাস বয়সি মেয়ের জ্বর কিন্তু মা আরাফা বেগম জানেন না ক্লিনিক কোথায়৷ আড়াই মাস আগে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেনি তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না
মিনারা বেগমের এক মাস বয়সি সন্তান পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, কারণ তার মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পান না৷ ফলে স্বাস্থ্যকর না হলেও স্থানীয় বাজার থেকে গুঁড়া দুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে তাকে৷ ছবিটি ১০ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এলোপাথাড়ি গুলি
১৬ দিনের সন্তান কোলে মা আমিনা৷ ‘‘মাস দেড়েক আগে মিয়ামারের সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ আমি কোনোরকমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বেঁচেছি৷ তারা আমার চাচা আর ছোটভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ তারা বেঁচে আছে কিনা জানিনা’’, ৮ ফেব্রুয়ারি রয়টার্সকে কথাগুলো বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বয়স মাত্র একদিন
ফাতেমার সন্তানের বয়স মাত্র একদিন৷ ছবিটি ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা৷ মিয়ানমারে তাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাস দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন৷ এখন তাঁর স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
10 ছবি1 | 10
র্যাব বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে দাবি করেন, তাঁরা রোহিঙ্গাদের পাচার রোধে কাজ করে যাচ্ছেন৷ কক্সবাজারে র্যাব কমান্ডার নুরুল আমিন বলেন, ‘‘আমরা পাচারকারীদের ব্যবহৃত পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি৷ আমরা নৌকায় আসা সম্পূর্ণভাবে থামিয়ে দিয়েছি৷ এবার স্থলের অংশগুলোতে কড়া নজর রাখছি আমরা৷''
তবে তিনি মনে করেন, পাচারকারীদের থামালেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে যাবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি সত্যিই পালিয়ে যেতে চায়, তাকে কি থামানো সম্ভব?'' তিনি মনে করেন, কক্সবাজারের ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন যে, তাঁরা সেখান থেকে পালানোর জন্য যে কোনো কিছু করতেই সক্ষম৷
এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইউনূস আরমান বুধবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী সমুদ্র বা অন্য কোনো পথে মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে পালিয়ে যাচ্ছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই৷ আর বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকেও নজরদারি আগের চেয়ে অনেক বেশি৷ ফলে কেউ চাইলেও যাওয়ার সুযোগ নাই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ক্যাম্পে যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থীআছেন, তাঁরা অনেক কষ্টে আছেন৷ বৃষ্টি এবং পানিতে তাঁদের জীবন অনেক কষ্টের৷ অনেকেরই মাথার ওপর ছাদ নেই৷ তবে এখন কিছু ত্রাণ সহায়তা এবং বৃষ্টির জন্য প্লাস্টিক পেপার দেয়া হয়েছে৷''
ভুলে যাওয়া শরণার্থীরা: বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
গত অক্টোবরে মিয়ানমারে দমনপীড়ন শুরুর পর ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে বর্তমানে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছেন৷ কুতুপালংয়ের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে তাদের অনেকের বাস৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
মিয়ানমার থেকে পালানো
মিয়ানমারে গত অক্টোবরে নয় পুলিশ হত্যার অভিযোগ ওঠে এক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে৷ তারপর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর আবারো দমনপীড়ন শুরু হয়৷ ফলে সত্তর হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা যেসব ক্যাম্পে বসবাস করেন সেগুলোর একটি এই কুতুপালং৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
স্বনির্ভরতা দরকার
কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ আছে বটে, তবে জীবন সেখানে মোটেই সহজ নয়৷ সেখানে সত্যিকারের কোনো অবকাঠামো নেই, সবই শরণার্থীদের গড়া অস্থায়ী আবাস৷ তারা নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছেন, কেননা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ করেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
শিশুদের খেলা নয়
আশ্রয়শিবিরটির অধিকাংশ এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েক হাজার শরণার্থী শিশুর খেলোধুলারও কোন ব্যবস্থা নেই৷ ক্যাম্পের লেক থেকে মাটি সংগ্রহ করছে এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
কুঁড়েঘরে বসবাস
কাদা মাটি এবং সহজলভ্য অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করেন শরণার্থীরা, যাতে মাথার উপরে অন্তত ছাদ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস
সেই ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সেদেশে রোহিঙ্গারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ তাদেরকে নাগরিকত্ব এবং ভোট দেয়ার অধিকার দিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
বাংলাদেশেও বৈষম্যের শিকার?
বাংলাদেশেও বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ ক্যাম্পে আর জায়গা নেই- বলে বাংলাদেশে জলপথে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গাকে তাদের নৌকাসহ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষীরা৷ পাশাপাশি কক্সবাজার ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি দুর্গম দ্বীপে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দ্বীপটি বর্ষাকালে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
নির্জন দ্বীপে সরিয়ে নেয়া
ঠ্যাঙ্গার চর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা এক দ্বীপ৷ শুধুমাত্র নৌকায় করে সেখানে যাওয়া যায় এবং চরটিতে অতীতে একাধিকবার জলদস্যু হানা দিয়েছে৷ এক উন্নয়নকর্মী সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে দ্বীপটিতে কর্মসংস্থানেরও তেমন কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বীকার করেছেন যে, ঠ্যাঙ্গার চরকে বসবাসের উপযোগী করতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্বীপটিতে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার পর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে৷’’ তবে সরকার অতীতে এরকম প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের তেমন কোন উন্নয়ন সাধন করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
ইতিহাস থেকে মোছার চেষ্টা
নিরাপদ আবাসভূমি না থাকায় রোহিঙ্গাদে ভবিষ্যত ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার তাদের অতীত মুছে ফেলতে কাজ করছে৷ দেশটির সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যবই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে যেখানে রোহিঙ্গাদের কথা একেবারেই উল্লেখ থাকবে না৷ গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়টি দাবি করেছে, মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে কখনো রোহিঙ্গা নামে আখ্যায়িত করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
9 ছবি1 | 9
কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল আজিজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণত শীতকালে সাগর দিয়ে পাচারের ঘটনা ঘটে৷ এখন বর্ষাকাল সাগর উত্তাল৷ তাই সমুদ্রপথে পাচারের ঘটনা ঘটছে না৷ তাছাড়া থাইল্যান্ডে গণকবর আবিষ্কার হওয়ার পর কক্সবাজারের স্থানীয় পাচারকারীরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে৷ তাদের একাংশ জামিনে ছাড়া পেলেও, তারা সক্রিয় নয়, তাঁরা পুলিশের নজরদারিতে আছে৷ এছাড়া মিয়ানমার থেকেও এখন আর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসছে না৷''
তবে তিনি বলেন, ‘‘আগে কিছু ধনী রোহিঙ্গা শরণার্থী বিমানে অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরবে গেছে৷ কিন্তু এখন যাচ্ছে বলে কোনো খবর নাই৷'' আর কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক মাঝি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনেভাবেই কেউ এখন আর ক্যাম্প ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যেতে চান না৷ আমরা মিয়ানমারেই ফিরে যেতে চাই৷''
যাঁরা একটু ধনী বা যাঁদের টাকা পয়সা আছে, তাঁরা বিমানে বা অন্য কোনো পথে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো খবর নাই৷''