1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের চাপে স্থানীয়রাই ‘সংখ্যালঘু’

রেশমী নন্দী
১৭ অক্টোবর ২০১৭

অন্য অনেক দেশ যখন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ঝুঁকি নেয়নি, তখন তাঁদের জন্য বাংলাদেশ বুক পেতে দিয়েছে মানবতার দায় মাথায় নিয়ে৷ কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দুর্ভোগ চরমে ওঠায় ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে স্থানীয়রা৷

ছবি: Reuters/C. McNaughton

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেদেশের সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে আগস্টের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে৷ বিচ্ছিন্নভাবে সীমান্তের নানা পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ পুরোপুরি থামেনি এখনো৷ এর আগে গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আসা অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা হিসেবে আনলে বাংলাদেশের মূল জনসংখ্যার সাথে এরই মধ্যে যোগ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সরকারিভাবে নেয়া হচ্ছে নানা ব্যবস্থা৷ এছাড়াও বেসরকারিভাবে ত্রাণ জোগানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও সাহায্য আসছে তাঁদের বাস্তুচ্যূত জীবনকে সহনীয় করতে৷

আবদুস সালাম

This browser does not support the audio element.

মূলত বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য ক্যাম্প রয়েছে৷ স্থানীয়দের দাবি, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার চাপে তাঁরাই হয়ে পড়েছেন সংখ্যালঘু৷ তাঁদের অভিযোগ, স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের বাড়তি চাপ মেনে নিতে হচ্ছে তাঁদের৷ পাঁচ লক্ষ অধিবাসীর উপযোগী বাজারে দ্রব্যমূল্যের বিপুল চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না বাড়ায় প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ, যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাপনে৷ উখিয়ার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে৷ ফলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে সেখানে৷ এছাড়াও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের কারণে বন্ধ রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ফলে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে৷

এস এম মনিরুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে যেতে না পারেন, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হলেও অনেকক্ষেত্রেই তা সম্ভব হচ্ছে না৷ বেশিরভাগ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় কথা বলায় মূল স্রোতে মিশে যেতে অনেকক্ষেত্রেই খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না তাঁদের৷ অনেকেই ক্যাম্পের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন৷ অন্যদিকে, কয়েকদশক ধরে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গারাও এক্ষেত্রে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে বলেও দাবি স্থানীয়দের৷ অনেকেই রোহিঙ্গা নারীদের বিভিন্ন দালাল চক্রের মাধ্যমে দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনার কথাও বলেন৷ সেখানকার বাসিন্দা মাহামুদুল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, এ বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বাড়তি চাপের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবক্ষেত্রে৷ বসতি স্থাপন, জ্বালানি সংগ্রহ – এ সব কিছুর চাপে প্রচুর গাছপালা এরই মধ্যে বিনষ্ট হয়েছে৷ যেখানে সেখানেরোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি তৈরির কারণে একদিকে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক বনায়ন, অন্যদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন পতিত জমিতেও বসতি গেড়েছেন তাঁরা৷ ফলে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হচ্ছে মতবিরোধ৷ তিনি বলেন, শুরুর দিকে ততটা কঠোর নজরদারি না থাকায় রোহিঙ্গাদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এখন প্রশাসনের নজরদারি বাড়ায় এ প্রবণতা কিছুটা কমলেও পুরোপুরি তা বন্ধ হয়ে যায়নি৷

ড. দানেশ মিয়া

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ অন্তত ২৪ জন রোহিঙ্গাকে পাওয়া গেছে, যাঁরা এইডসে আক্রান্ত৷ এর মধ্যে মারাও গেছেন কেউ কেউ৷ এছাড়াও, টিবি, হাম, হেপাটাইটিস-বি সহ নানা পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে রাখা সম্ভব না হলে এ সব রোগের মোকাবেলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা়৷ এরই মধ্যে সরকারিভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বলেন, ১০ লক্ষ লোককে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া বড় একটা চ্যালেঞ্জ৷ কোনো রোগাক্রান্ত মানুষ চিকিৎসাসেবার আওতায় না এলে এইচআইভি শনাক্ত করারও সুযোগ নেই৷ অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপ যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি৷

তবে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো প্রান্ত থেকে আটক করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের৷ ফলে ছোঁয়াচে রোগ ছড়ানোর আশংকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে তাঁদের অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার আশংকা৷ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনিরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত শুধু চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকেই  অন্তত ২৮ হাজার ছয়শ' রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷দালাল আটক হয়েছে সাড়ে তিনশ' জনেরও বেশি৷’’ বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোষ্ট বসানোর পাশাপাশি পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে কোনো রোহিঙ্গা নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে অবস্থান নিতে পারছেন না বলে দাবি তাঁর৷

কামাল

This browser does not support the audio element.

সরকারি হিসেবে, দেশের বনজ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড়শ' কোটি টাকারও বেশি৷ কক্সবাজার এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে পরিবেশবিদরা বলছেন, অচিরেই ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের বসতি গড়তে এরই মধ্যে ২৫টিরও বেশি ছোট-বড় পাহাড় উজাড় হয়ে গেছে৷ রোহিঙ্গা জনবসতির জ্বালানির জোগান দিতে গড়ে প্রতিদিন ব্যবহৃত হচ্ছে পাঁচ লক্ষ কেজি কাঠ৷ ফলে খুব দ্রুত উজাড় হচ্ছে এখানকার প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ৷’’ অনেকেই পরবর্তীতে প্ল্যানটেশনের মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার কথা বললেও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক বনভূমি উজাড় হয়ে গেলে এ ক্ষতি কৃত্রিম বনায়নের মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়া দুরুহ৷

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো, বন্ধু? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ