রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইন্দোনেশিয়া৷ মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আশ্বাস দেন৷
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনটো মারসুদি বলেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বলেছি, আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকব৷ তবে আমাদের সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের উপর এই অমানবিক নির্যাতনের অবসান হতে হবে৷'' এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় আসেন মারসুদি৷ বিকেলে বৈঠক হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে৷ সন্ধ্যায় হয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক৷ একই ইস্যুতে আলোচনা করতে বুধবার রাতে ঢাকায় আসছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু৷
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এরই মধ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারসুদি৷ সেখান থেকে আসেন ঢাকায়৷ এ ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য গত ডিসেম্বরেও প্রথমে মিয়ানমার, তারপর বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি৷
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিচার্স ইউনিটের প্রধান নির্বাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটা সমস্যা হয়েছে বলেই তো বিদেশি উচ্চ পদস্থরা এটা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন৷ তবে তার আগে আমাদের নীতি ঠিক করতে হবে৷ আমাদের এখন দ্বিমুখী নীতি চলছে৷ একদিকে আমরা এই নির্যাতনের প্রতিবাদ করছি, অন্যদিকে আমাদের বিজিবি প্রধান তাদের সঙ্গে যৌথ সীমান্ত টহলের কথা বলছেন৷ এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়৷''
সি আর আবরার
বুধবার আসছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার গভীর রাতে বাংলাদেশে আসছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু৷ নিজস্ব বিমানে আসছেন তিনি৷ তাঁর সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়ার কথা রয়েছে৷ রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে তুরস্কের নীতির সঙ্গে বাংলাদেশের নীতির মিল থাকায় এ আলোচনাটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন, রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ এবং কোফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন পরামর্শ কমিশনের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ৷ এই তিনটি বিষয়ে তুরস্কের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷
মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশে থাকা মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিথিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারনোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷ প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে এসে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আছে৷
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশ যাত্রা
নিজের দেশে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা৷ তবে জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও সীমান্তে কড়াকড়ি অব্যাহত রেখেছ বাংলাদেশ৷ আজও রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে মিয়ানমার৷
আশ্রয়ের সন্ধান
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের পরিকল্পিত হামলার জের ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমনপীড়ন শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী৷ ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ছুটছেন রোহিঙ্গারা৷ সর্বশেষ অস্থিরতায় ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে একশ’র বেশি মানুষের৷
ব্যাপক উদ্বাসন
বাংলাদেশের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার মাঝখান থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুকে পার করছেন এক ব্যক্তি৷ মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সাতটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, একটি চেকপোস্ট এবং এক শহরের দুই প্রান্তে হামলা করেছে৷
ছবি: Getty Images/R.Asad
বৌদ্ধ শরণার্থীরা ছুটছে দক্ষিণের দিকে
নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার বৌদ্ধরাও নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছেন৷ রোহিঙ্গা মুসলমান এবং রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ২০১২ সালে সেখানে রক্তাক্ত দাঙ্গা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রবেশ নিষেধ
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা আশ্রয়প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ তবে এ সব বাধার মাঝেও তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন৷ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চারলাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
মানবিক সংকট
একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার কর্মী লিখেছেন: ‘‘অনেক রোহিঙ্গাকে আমরা অসুস্থ অবস্থায় পাচ্ছি৷ এর কারণ তাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে দীর্ঘসময় সীমান্তে আটকে ছিলেন৷ অসুস্থদের মধ্যে নারী এবং শিশুদের সংখ্যা বেশি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Alam
বাংলাদেশে স্বাগত নয়
কক্সবাজারের কুতুপালাং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে যেটি বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
নো ম্যান’স ল্যান্ডের আটকে থাকা
পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা শিশুরা৷ এই মুহূর্তে ছ’হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
7 ছবি1 | 7
বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়াদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেও মেনে নিতেও তারা নারাজ৷ এদিকে গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর সীমান্তে নতুন করে এই রোহিঙ্গাদের ঢল নামে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে, গত ১৩ দিনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে মালদ্বীপ৷
কূটনীতিক তত্পরতা অব্যাহত
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনীতিক তত্পরতা অব্যাহত আছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের দুই জন প্রভাবশালী মন্ত্রী৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন৷ প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন৷ সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে৷ একইসঙ্গে কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত আছে৷''
একই প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে, তা বন্ধে অতি সত্বর জাতিসংঘের একটি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, বিশ্ববাসীরও এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত৷''
ভুলে যাওয়া শরণার্থীরা: বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
গত অক্টোবরে মিয়ানমারে দমনপীড়ন শুরুর পর ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে বর্তমানে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছেন৷ কুতুপালংয়ের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে তাদের অনেকের বাস৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
মিয়ানমার থেকে পালানো
মিয়ানমারে গত অক্টোবরে নয় পুলিশ হত্যার অভিযোগ ওঠে এক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে৷ তারপর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর আবারো দমনপীড়ন শুরু হয়৷ ফলে সত্তর হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা যেসব ক্যাম্পে বসবাস করেন সেগুলোর একটি এই কুতুপালং৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
স্বনির্ভরতা দরকার
কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ আছে বটে, তবে জীবন সেখানে মোটেই সহজ নয়৷ সেখানে সত্যিকারের কোনো অবকাঠামো নেই, সবই শরণার্থীদের গড়া অস্থায়ী আবাস৷ তারা নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছেন, কেননা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ করেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
শিশুদের খেলা নয়
আশ্রয়শিবিরটির অধিকাংশ এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েক হাজার শরণার্থী শিশুর খেলোধুলারও কোন ব্যবস্থা নেই৷ ক্যাম্পের লেক থেকে মাটি সংগ্রহ করছে এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
কুঁড়েঘরে বসবাস
কাদা মাটি এবং সহজলভ্য অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করেন শরণার্থীরা, যাতে মাথার উপরে অন্তত ছাদ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস
সেই ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সেদেশে রোহিঙ্গারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ তাদেরকে নাগরিকত্ব এবং ভোট দেয়ার অধিকার দিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
বাংলাদেশেও বৈষম্যের শিকার?
বাংলাদেশেও বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ ক্যাম্পে আর জায়গা নেই- বলে বাংলাদেশে জলপথে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গাকে তাদের নৌকাসহ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষীরা৷ পাশাপাশি কক্সবাজার ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি দুর্গম দ্বীপে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দ্বীপটি বর্ষাকালে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
নির্জন দ্বীপে সরিয়ে নেয়া
ঠ্যাঙ্গার চর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা এক দ্বীপ৷ শুধুমাত্র নৌকায় করে সেখানে যাওয়া যায় এবং চরটিতে অতীতে একাধিকবার জলদস্যু হানা দিয়েছে৷ এক উন্নয়নকর্মী সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে দ্বীপটিতে কর্মসংস্থানেরও তেমন কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বীকার করেছেন যে, ঠ্যাঙ্গার চরকে বসবাসের উপযোগী করতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্বীপটিতে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার পর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে৷’’ তবে সরকার অতীতে এরকম প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের তেমন কোন উন্নয়ন সাধন করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
ইতিহাস থেকে মোছার চেষ্টা
নিরাপদ আবাসভূমি না থাকায় রোহিঙ্গাদে ভবিষ্যত ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার তাদের অতীত মুছে ফেলতে কাজ করছে৷ দেশটির সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যবই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে যেখানে রোহিঙ্গাদের কথা একেবারেই উল্লেখ থাকবে না৷ গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়টি দাবি করেছে, মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে কখনো রোহিঙ্গা নামে আখ্যায়িত করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
9 ছবি1 | 9
বালুখালিতে আশ্রয় পাবে রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালিতে বনবিভাগের ৫০ একর জমিতে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসন৷ কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, গতবছরের অক্টোবরে রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হলে উখিয়ার বালুখালিতে বনবিভাগের ওই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ মাস ছয়েক আগে এই বরাদ্দ দেয়া হয়৷
খালেদ মাহমুদ বলেন, গত বছর আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাও সেখানে আছে৷ নতুন করে যাঁরা আসছেন, তাঁদেরও সেখানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে৷ নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে ওই ক্যাম্পের আশেপাশে থাকতে বলা হয়েছে৷ সেখানে থাকলে কাউকে বাধা দেওয়া হবে না৷ অন্য কোথাও থাকলে তাঁদের উচ্ছেদ করা হবে৷ গত কয়েক দিন ধরে উখিয়ার কুতুপালং থেকে শুরু করে থাইংখালী পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাহাড়ে পাহাড়ে বাঁশ আর পলিথিনের অসংখ্য ঝুপড়ি গড়ে তুলেছে তারা৷ রোহিঙ্গাদের নতুন বসতি দেখা গেছে টেকনাফ সীমান্তবর্তী হোয়াইক্যং ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকাতেও৷
ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের জীবন
সাগরে মানব পাচারকারীদের অত্যাচার সহ্য করে, দীর্ঘদিন অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে, অবশেষে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন তাঁরা৷ আচেহ রাজ্যে পৌঁছানো রোহিঙ্গা এবং দরিদ্র বাংলাদেশিদের জীবন কীভাবে কাটছে সেখানে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/Beawiharta
নাম, পরিচয় লেখানো
ইন্দোনেশিয়ার জুলক গ্রামে পৌঁছানোর পরই তাঁদের লাইনে দাঁড়াতে হলো৷ নাম, ঠিকানা সব লিখিয়ে তবেই নিস্তার৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
রোগযন্ত্রণা
কুটা বিনজের জুলোক গ্রামে অনেকে এসেছেন হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে৷ এতদিন সাগরে ভেসেছেন নামমাত্র খেয়ে আর মানব পাচারকারীদের অকথ্য নির্যাতন সহ্য করে৷ স্থলে পৌঁছানোর আগেই নানা ধরণের অসুখে আক্রান্ত তাঁরা৷ শয্যাশায়ী একজনকে কোলে নিয়েছেন একজন, পাশেই আরেকজন তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন গলায় একটু পানি ঢেলে৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
শান্তি
নৌযানে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছে এতদিন৷ ভালো করে বসে একটু বিশ্রাম নেয়ারই উপায় ছিল না, আরাম করে নাওয়া-খাওয়া তো দূরের কথা৷ ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে একটা বাথটাবের দেখা পেতেই তাই গোসল শুরু করলেন কয়েকজন৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
ক্ষুধার্ত শিশু
এক শিশুর হাতে বিস্কুট তুলে দিচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার এক স্বেচ্ছাসেবী৷ খুব কাছ থেকে বিস্কুটের দিকে তাকিয়ে আছে আরেক শিশু৷ চোখই বলছে, অনেকদিন পর ভালো খাবারের দেখা পেয়েছে শিশুটি!
ছবি: Reuters/Beawiharta
শান্তির বারি
তৃষ্ণার্ত সন্তানের মুখে মায়ের হাতের পানি৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা
কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এক নারী৷ ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হলো দুজনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা৷