রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুতে সমালোচিত হলেও এখন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা মনে করছেন, বাংলাদেশ বিশ্ব মানবিক জনমত গড়েছে৷ পেরেছে বিশ্বকে অমানবিকতা অনুধাবন করাতে৷
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার স্যাটেলাইট দৃশ্য প্রকাশ করেছে৷ বলেছে, ‘‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ‘পরিকল্পিতভাবেই' রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে৷''
স্যাটেলাইট থেকে তোলা রাখাইন রাজ্যের অনেক ছবি বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি জানায়, ‘‘গত তিন সপ্তাহে আশিটিরও বেশি জায়গায় বিশাল এলাকা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ আর এই কাজ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো৷''
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরো জানায়, ‘‘রোহিঙ্গা নির্মূলের জন্য ‘স্কর্চড আর্থ' বা ‘পোড়া মাটি কৌশল' অবলম্বন করছে মিয়ানমারসেনাবাহিনী৷ এ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যাঁরা পালাতে চাইছেন তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে৷''
মুনশি ফয়েজ
ওদিকে মিয়ানমার সরকার বুধবার দাবি করে, ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে রোহিঙ্গাদের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্রামকে টার্গেট করে সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালিত করা হচ্ছে৷ ৪৭১টি গ্রামের মধ্যে ১৭৭টি গ্রাম জনশূন্য এবং ৩৪টি আংশিকভাবে পরিত্যক্ত৷
উল্লেখ্য, অভিযানের নামে নির্যাতনের মুখে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা বাংলাদেশে ১০ লাখ লোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসার আশঙ্কা করছে৷ প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার রোহিঙ্গা আসছেন বাংলাদেশে৷
বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং উদ্যোগের কারণে ইউএনএইচসিআর ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠাচ্ছে৷ ভারতের অবস্থান শুরুতে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থাকলেও, এই অবস্থান পরিবর্তন এসেছে৷ কারণ ইতিমধ্যেই ত্রাণ পাঠিয়েছে ভারত৷ দেশটির পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন৷ চীন এখনও মিয়ানমার সরকারের নীতির প্রতি সমর্থন দেখালেও, তারাও ত্রাণ পাঠাচ্ছে বলে ঢাকায় সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে৷ অন্যদিকে নিরপত্তা পরিষদে এ নিয়ে সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য৷
তানজুম উদ্দীন
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্ব রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে৷ তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেছে৷ তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের সমাধান ও নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ অবশেষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে একটি মানবিক ঐক্য স্থাপনে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্ব জনমতও গড়ে উঠেছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুরুতে দ্বিধা থাকলেও, রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট৷ আর এই স্পষ্ট অবস্থান নিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে জনমতের চাপ এবং দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম৷ মিয়ানমারকে ঘিরে চীন ও ভারতের যে কর্পোরেট স্বার্থ, সেখান থেকে তাদের অবস্থানেরও পরিবর্তন হচ্ছে জনমতের চাপে৷ ভারতের শিখ জনগোষ্ঠির একটি সংগঠন রোহিঙ্গাদের সাহায্য দিতে শুরু করেছে এরই মধ্যে৷''
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
22 ছবি1 | 22
তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের বর্তমান সংকট একটি মানবিক সংকট৷ আর মানবিক সংকটের কোনো দেশ, ধর্ম বা বর্ণ নেই৷ সেই দিক থেকে একটি বিশ্ব জনমত তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে৷ সেই মানবিক চাপ সরকারগুলোকে প্রভাবিত করছে, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যাই হোক না কেন৷ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেয়ার ফলে একটা ‘সেন্স অফ ইউনিটি' তৈরি হয়েছে৷ পাঁচ বছর চেষ্টার পর নিরাপত্তা পরিষদও সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করতে পেরেছে৷''
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই শিক্ষক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সামনে এই বিশ্ব জনমত একটি সুযোগ তৈরি করেছে৷ বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ ধেকে আসা ত্রাণ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিতরণ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের আস্থা আরো বাড়বে৷ যা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নির্ধারণ এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে৷ তবে বাংলাদেশের এখন কাজ হলো রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা, যাতে মিয়ানমার ভবিষ্যতে এই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে৷ মিয়ানমার আগেও এই জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করেছে৷ তাই আবারো যে করবে না, তা বলা যায় না৷''
সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথমদিকে হয়ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং কৌশল অতটা দৃশ্যমান ছিল না৷ ফলে অনেকে মনে করেছেন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট নয়৷ এখন তা দৃশ্যমান হয়েছে এবং তার ফল পাওয়া যাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে একমত হচ্ছে৷ বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে৷ বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যাকে মানবতার সংকট হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে৷ তাই এখন সবাই এগিয়ে আসছে৷ প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসছে৷ নিরপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ একটি বড় ধরনের অগ্রগতি বলে আমি মনে করি৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান তখনই হবে যখন তাঁদের নাগরিকত্ব নির্ধারণ হবে এবং তাঁরা তাঁদের নিজ দেশে ফিরতে পারবেন৷ এবার মানবতার পক্ষে যে ঐক্যমত তৈরি হচ্ছে, তাতে আমি আশাবাদী যে রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যারও সমাধান হবে, তবে সময় লাগবে৷ বাংলাদেশকে এখন কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে আরো জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে৷ আর মানবতার পক্ষে ঐক্যমত সৃষ্টি করে বাংলাদেশ বিশ্বের যে আস্থা অর্জন করেছে, তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷''
ভুলে যাওয়া শরণার্থীরা: বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
গত অক্টোবরে মিয়ানমারে দমনপীড়ন শুরুর পর ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে বর্তমানে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছেন৷ কুতুপালংয়ের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে তাদের অনেকের বাস৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
মিয়ানমার থেকে পালানো
মিয়ানমারে গত অক্টোবরে নয় পুলিশ হত্যার অভিযোগ ওঠে এক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে৷ তারপর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর আবারো দমনপীড়ন শুরু হয়৷ ফলে সত্তর হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা যেসব ক্যাম্পে বসবাস করেন সেগুলোর একটি এই কুতুপালং৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
স্বনির্ভরতা দরকার
কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ আছে বটে, তবে জীবন সেখানে মোটেই সহজ নয়৷ সেখানে সত্যিকারের কোনো অবকাঠামো নেই, সবই শরণার্থীদের গড়া অস্থায়ী আবাস৷ তারা নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছেন, কেননা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ করেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
শিশুদের খেলা নয়
আশ্রয়শিবিরটির অধিকাংশ এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েক হাজার শরণার্থী শিশুর খেলোধুলারও কোন ব্যবস্থা নেই৷ ক্যাম্পের লেক থেকে মাটি সংগ্রহ করছে এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
কুঁড়েঘরে বসবাস
কাদা মাটি এবং সহজলভ্য অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করেন শরণার্থীরা, যাতে মাথার উপরে অন্তত ছাদ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস
সেই ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সেদেশে রোহিঙ্গারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ তাদেরকে নাগরিকত্ব এবং ভোট দেয়ার অধিকার দিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
বাংলাদেশেও বৈষম্যের শিকার?
বাংলাদেশেও বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ ক্যাম্পে আর জায়গা নেই- বলে বাংলাদেশে জলপথে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গাকে তাদের নৌকাসহ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষীরা৷ পাশাপাশি কক্সবাজার ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি দুর্গম দ্বীপে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দ্বীপটি বর্ষাকালে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
নির্জন দ্বীপে সরিয়ে নেয়া
ঠ্যাঙ্গার চর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা এক দ্বীপ৷ শুধুমাত্র নৌকায় করে সেখানে যাওয়া যায় এবং চরটিতে অতীতে একাধিকবার জলদস্যু হানা দিয়েছে৷ এক উন্নয়নকর্মী সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে দ্বীপটিতে কর্মসংস্থানেরও তেমন কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বীকার করেছেন যে, ঠ্যাঙ্গার চরকে বসবাসের উপযোগী করতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্বীপটিতে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার পর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে৷’’ তবে সরকার অতীতে এরকম প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের তেমন কোন উন্নয়ন সাধন করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
ইতিহাস থেকে মোছার চেষ্টা
নিরাপদ আবাসভূমি না থাকায় রোহিঙ্গাদে ভবিষ্যত ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার তাদের অতীত মুছে ফেলতে কাজ করছে৷ দেশটির সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যবই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে যেখানে রোহিঙ্গাদের কথা একেবারেই উল্লেখ থাকবে না৷ গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়টি দাবি করেছে, মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে কখনো রোহিঙ্গা নামে আখ্যায়িত করা হয়নি৷