মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও কট্টরপন্থি বৌদ্ধরা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে ওঠে গত অক্টোবর থেকে৷ সহিংসতার মুখে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন বন্ধে ব্যর্থতার জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে৷ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও সু চি সমালোচনার মুখে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এই আলোচনা-সমালোচনা এখন আর কেবল রাজনৈতিক অঙ্গনের বিষয়বস্তু নয়৷ রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রত্যাশিতভাবেই শান্তির দূতরাও মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷ তাঁদের কারও কারও কঠোর অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার৷ আবার অনেকেই এ ব্যাপারে রহস্যজনকভাবে একেবারেই মুখ খুলছেন না সেটাও সত্য৷ এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, নোবেলজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠজনই সাহস দেখিয়েছেন সবার আগে৷ মালালা ইউসুফজাইয়ের পর একে একে ডেসমণ্ড টুটু, ড.মুহাম্মদ ইউনুসসহ অনেকে বিবৃতি দিতে শুরু করেন৷
এখন পর্যন্ত ১৩ নোবেল জয়ী এবং আরও ১৯ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চির সমালোচনা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কাছে বিবৃতি পাঠিয়েছে৷ বিবৃতিতে স্বাক্ষদানকারী নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ীদের মধ্যে আছেন, পূর্ব তিমুরের হোসে রামোস হোর্তা, উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের মেইরিড মগুইয়ের, দক্ষিণ আফ্রিকার ধর্মযাজক ডেসমন্ড টুটু, কোস্টারিকার অস্কার আরিয়াস, ইরানের শিরিন এবাদি, বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইসহ বেশ কয়েকজন৷
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সরকারের আচরণ নিয়ে নীরব ভূমিকায় থাকা দেশটির সরকারপ্রধান ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সাং সু চির সমালোচনা করেছেন আরেক নোবেল জয়ী ডেসমন্ড টুটু৷ সরকারের আচরণে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে হস্তক্ষেপ করতে সুচিকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান দক্ষিণ আফ্রিকার এই এমিরেটাস ধর্মযাজক৷
৭ সেপ্টেম্বর প্রিটোরিয়ায় নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাসের মাধ্যমে সূচিকে দেয়া এক খোলা চিঠির মাধ্যমে এই আহ্বান জানান তিনি৷ চিঠিতে তিনি সু চিকে অত্যন্ত প্রিয় বোন হিসেবে উল্লেখ করেন৷ বলেন, ‘‘আমার ডেস্কে তোমার একটি ছবি থাকত আর সেই ছবির দিকে তাকিয়ে সব সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথাই ভাবতাম সব সময়৷''
রোহিংঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘‘নীরবতাই যদি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ কার্যালয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক মূল্য হয় তাহলে এই মূল্য সত্যিই খুব চড়া৷''
‘‘রোহিঙ্গাদের দুঃখ-কষ্ট সবার মনে যন্ত্রণা আর ভয় ধরিয়ে দিয়েছে৷ মানবতা যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই রকম একটা দেশের নেতৃত্বে ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক একজন ব্যক্তির থাকা এখন খুবই বেমানান৷''
‘‘এ সব ভয়ংকর চিত্র আসার সঙ্গে সঙ্গে আপনার জন্যও প্রার্থনা করছি, আপনি আবার ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মানুষের মত্যৈক্য তৈরিতে কাজ করুন, হয়ে উঠুন স্পষ্টভাষী৷''
মালালা ইউসুফজাই
শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন৷ একইসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষে মুখ খোলার জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানান৷
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মানবাধিকারকর্মী মালালা বলেন, ‘‘হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, এ অবস্থায় আমরা চুপ থাকতে পারি না৷''
মালালা বলেন, ‘‘এটি মানবাধিকার ইস্যু৷ সরকারের উচিত প্রতিক্রিয়া দেখানো৷ জনগণ ঘরহারা হচ্ছে৷ সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে৷ শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে৷ সহিংস অবস্থার মধ্যে তাদের বাস করতে হচ্ছে৷ এমন সহিংস অবস্থার মধ্যে বাস করাটা খুবই কঠিন৷ আমাদের উচিত এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং আমি আশা করব, অং সান সু চিও সাড়া দেবেন৷''
৩ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে এক টুইটে মালালা বলেন, ‘‘মুসলমানদের ওপর ওই অমানবিকতা হৃদয়বিদারক৷ মিয়ানমারের শিশুদের ছবি আমি দেখেছি৷ এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হয় না৷''
ড. মুহাম্মদ ইউনূস
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমস্যা দূর করতে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে খোলা চিঠি দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্যদের উদ্দেশে ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় মানবিক ট্রাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে৷ এ ব্যাপারে অবিলম্বে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন৷'
ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিঠিতে জাতিসংঘের উদ্দেশে বলেন, ‘‘গত বছরের শেষে পরিস্থিতির বেশ অবনতি হলে বেশ কয়েকজন নোবেলজয়ী ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকসহ আমি এ বিষয়ে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আপনাদের নিকট যৌথভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলাম৷ আপনাদের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷''
রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিঠিতে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার ২০১৬ সালে যে রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন গঠন করেছিল, তার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে আপনারা জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন৷ এ জন্য আমার বিশেষ অনুরোধ৷''
সম্প্রতি টিআরটি ওয়ার্ল্ড নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারেও একই সুরে কথা বলেন তিনি৷
বারাক ওবামা
পরপর দুই মেয়াদে থাকা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তিতে নোবেলজয়ীও বটে৷ শাসনকালে তো বটেই এখনও দুনিয়াব্যাপী তার ভক্ত অনুসারীর অভাব নেই৷ তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখনও পর্যন্ত মুখে একেবারে কলুপ এঁটেছেন শান্তির এই দূত৷
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
22 ছবি1 | 22
কোফি আনান
গত অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যের সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার জেরে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করলে ডিসেম্বরে কোফি আনান মিয়ানমার সফর করেন৷ তিনি রাখাইন রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিউ, সশস্ত্র বাহিনীপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লায়েং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির সঙ্গেও বৈঠক করেন৷
রাখাইন রাজ্যের জনগণের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানকে প্রধান করে ওই পরামর্শক কমিটি গঠন করেন৷
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারকে পরিচয় যাচাইয়ে একটি সমন্বিত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় সেই কমিশন৷ এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াসহ দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে একটি যৌথ কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়৷ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া ও তাঁদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের অবাধে রাখাইন এলাকায় যাওয়ার জন্যও সুপারিশ করে কমিশন৷
তবে এখনও ওই কমিশন গঠনের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি মিয়ানমার৷
নোবেলজয়ী কোফি আনান এখন পর্যন্ত এই কমিশন নিয়ে কাজ করলেও এর বাইরে কোন মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দেখাননি৷
শিরিন এবাদি
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া বিশেষ ব্যক্তিদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি৷ এছাড়া সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শিরিন শান্তিতে নোবেলজয়ী আরেক ‘ফেলো' সু চির কঠোর সমালোচনা করেন৷ বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে অবহেলা করছেন সু চি৷ তারপরও আমি বলবো, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য তিনি যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন৷''
নোবেল বিজয়ীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
রোহিঙ্গা সংকট: কার কী অবস্থান?
হিংসালীলা ও বৈরি মনোভাবের মুখে মিয়ানমার থেকে দলে দলে পালাতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের৷ তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সমাজে সহানুভূতি সত্ত্বেও মূলত কৌশলগত কারণে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Armangue/AP
বাংলাদেশ
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশেই আশ্রয় নিচ্ছে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ এত সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়া অবশ্যই বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ চলছে৷ শরণার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ নিয়ে তথ্যভাণ্ডার গড়ার কথা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/Z. H. Chowdhury
ভারত
দেশের উত্তর পূর্বে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে এবং চীনের প্রভাব সীমিত রাখতে ভারতের একের পর এক সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও প্রথম মিয়ানমার সফরে গিয়ে সে দেশের সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷ রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যেও প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
তুরস্ক
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে তুরস্ক৷ শুধু কথায় নয়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্য দিতেও তৎপর সে দেশ৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন৷ জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরতেও তৎপর হতে চায় তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/abaca/K. Ozer
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয়ের আশ্বাস দিয়েছে৷ তবে অন্যান্য নথিপত্রহীন বহিরাগতদের মতো তাদেরও নির্দিষ্ট কেন্দ্রে আটক রাখা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেশনে স্বাক্ষর করেনি৷ তাই সেখানে শরণার্থীরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচিত হয়৷
ছবি: Reuters/Stringer
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি-র প্রতি অগাধ আস্থা দেখিয়েছিলেন৷ বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়নি৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলেও সরাসরি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো কূটনৈতিক অবস্থান নেয় নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Watson
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সহযোগিতা দাবি করেছে৷ সেইসঙ্গে এই সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর উপর নিপীড়ন বন্ধ করার ডাক দিয়েছে ইইউ৷ শরণার্থীদের সহায়তা করতে বাংলাদেশে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে এই রাষ্ট্রজোট৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
চীন
মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ সে দেশে কৌশলগত স্বার্থের খাতিরেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সরকারের বিরোধিতা করছে না চীন৷ জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের সরকারের জন্য জরুরি৷
ছবি: Reuters/R. Dela Pena
রাশিয়া
চীনের মতো রাশিয়াও মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে৷ জাতিসংঘে সে দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে এই দুই ভেটো শক্তি৷ এদিকে রাশিয়ার মুসলিম-প্রধান চেচনিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মস্কোর উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z.Bairakov
জাতিসংঘ
জাতিসংধের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতির মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে হিংসালীলা বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন৷ প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নানের নেতৃত্বে এক কমিশন পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে৷ তবে নিরাপত্তা পরিষদ এখনো প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷