সারা দেশে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করবে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বেড়া স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে কবে নাগাদ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে এই বেড়া স্থাপনের কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি৷
এএফপি জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি গার্ড টাওয়ার এবং ক্যামেরাও বসানো হবে৷
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধিকার কর্মী সরকারের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ এই বেড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে একটি বড় কারাগারে পরিণত করবে৷’’
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ৷ তবে দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হওয়ায় তা রোহিঙ্গাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/A. Islam
মূল ভূখন্ড থেকে দূরে
বিশ বছরেরও কম সময় আগে ভাসান চর জেগে উঠেছিল৷ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/A. Islam
যাওয়া সহজ নয়
ভাসান চরে যেতে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো বাহন নেই৷ ঐ দ্বীপের কয়েকজন দোকানি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্ষার সময় সাগর উত্তাল থাকায় সাধারণ মাছ ধরার নৌকায় করে ভাসান চরে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
তিন মিটার উঁচু বাঁধ
উঁচু ঢেউ ও বন্যার হাত থেকে ভাসান চরকে বাঁচাতে সরকার ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে৷ এক দোকানি জানালেন, মাসে দু’বার বাঁধের বাইরের দিকে থাকা বাজার এক মিটার পর্যন্ত ডুবে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
একইরকম ভবন
রোহিঙ্গাদের জন্য ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি ভবনে ১৬টি ঘর রয়েছে৷ ১২x১৪ ফুটের একেকটি ঘরে একটি পরিবারের অন্তত চার জন সদস্যকে থাকতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
সৌরশক্তি
ভবনগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সেগুলোতে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য দুটি ডিজেল জেনারেটর ও বিশাল এক মাঠে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ খাবার পানির জন্য রয়েছে নলকূপ৷ আরও আছে বৃষ্টির পানি থেকে খাবার পানি পাওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/A. Islam
ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে ২০০২ সালে প্রথম এই দ্বীপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ এরপর কয়েকবার এটি স্থান পরিবর্তন করেছে৷ ভূমিক্ষয় ঠেকাতে সরকার চরটিতে তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
দ্বীপটি কি বাসযোগ্য?
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বীপটি এখনও বসবাসের উপযোগী নয়৷ তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করছেন, বাঁধের উচ্চতা যদি সাড়ে ছয় থেকে সাত মিটার করা যায় তাহলে দ্বীপটি বসবাসযোগ্য হতে পারে৷ তবে ভাসান চরে ফসল ফলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গাদের ভয়
কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা মারা যেতে পারেন৷ তবে প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘‘চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য এক স্বর্গ৷’’
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গারা কি ভাসান চরে যাবেন?
কয়েকটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে, নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ তবে রোহিঙ্গারা সেখানে না গেলে গৃহহীন বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷
ছবি: DW/A. Islam
9 ছবি1 | 9
জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নেওয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ এরা কীভাবে পাসপোর্ট পেলো তা-ও তদন্ত করছে সরকার৷
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্রসফায়ারে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনা ঘটছে৷ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার হওয়ায় সম্প্রতি সরকার ক্যাম্পগুলোতে এসব সেবা বন্ধ করে দিয়েছে৷
অন্যদিকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গার তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও তাদের কেউই স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে না চাওয়ায় কাউকেই পাঠানো যায়নি৷ কোনো রোহিঙ্গাকেই জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে না বলে আশ্বস্ত করে আসছে সরকার৷
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছিল আরো চার লাখ রোহিঙ্গা৷