বাংলাদেশে নতুন করে আসা প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীর জন্য নির্ধারিত ক্যাম্পে নেই পর্যাপ্ত পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা৷ তবে ক্যাম্পের অনেক অংশেই রয়েছে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, সৌরবিদ্যুতের কল্যাণে৷
বিজ্ঞাপন
ক্যাম্পে তীব্র গরমসহ নানা অসুবিধার মধ্যেও এই সৌরবিদ্যুৎ তাঁদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়৷ নিজ নিজ অংশ কিছুটা সময়ের জন্য হলেও আলোকিত করা সম্ভব হয়, ব্যবহার করা যায় ফ্যান, বিশেষ করে মোবাইল ফোন বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চার্জ দিতে পারা অনেকটাই স্বস্তি এনে দেয় তাদের জীবনে৷
মিয়ানমারে জাতিগত নিধন শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা যে মূল্যবান বস্তুটি সাথে করে নিয়ে এসেছেন, তা হলো সোলার প্যানেল৷ আবার অনেক রোহিঙ্গা তাঁদের সাধ্যের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের দোকানদারদের কাছ থেকে কিনে নেন সোলার প্যানেল৷
মিয়ানমারে চিংড়ি ঘেরে কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়সি কবির আহমেদ৷ এ বছরের আগস্টে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি৷ বালুখালি ক্যাম্পে ঢোকার মুখেই তাঁর অস্থায়ী মুদি দোকানটিও আলোকিত সোলার প্যানেলের সাহায্যে৷ ‘‘এখন রাতের বেলায় আমরা আলো জ্বালাতে পারি আর খুব গরমের সময় ফ্যানের বাতাস আমাদের অনেক স্বস্তি দেয়৷'' কবির আহমেদের ছেলে জানায়, ক্যাম্পে সৌরবিদ্যুৎই ভরসা৷ তবে পালিয়ে আসার সময় তাঁরা সেখানকার সোলার প্যানেলটা নিয়ে আসতে পারেননি, এখন যেটা ব্যবহার করছেন সেটা তাঁরা বাংলাদেশ থেকেই কিনেছেন বলে জানান৷ কাছের বাজারে ৩০ টাকা দিয়ে মোবাইল চার্জের ব্যবস্থা আছে বলেও জানান তাঁরা৷ অবশ্য বেশিরভাগ রোহিঙ্গারই সে সামর্থ্য নেই৷
জ্বালানির যত উৎস
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ বা ডাব্লিউইসি-এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদনে কোন জ্বালানি কী পরিমাণ ব্যবহত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১. তেল
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানি হচ্ছে তেল৷ মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় ৩২.৯ শতাংশই হচ্ছে তেল৷ আর তেল উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে সৌদি আরব (বছরে ৫৬৯ মিলিয়ন টন), যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৫৬৭ মিলিয়ন টন) ও রাশিয়া (বছরে ৫৪১ মিলিয়ন টন)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২. কয়লা
২৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেলের পরেই আছে কয়লা৷ তবে নব্বই দশকের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়লা উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন (বছরে ২ দশমিক ৬২ হাজার এমটিওই), যুক্তরাষ্ট্র (৫৬৯ এমটিওই) ও ভারত (৪৭৪ এমটিওই)৷ উল্লেখ্য, এমটিওই মানে হচ্ছে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন অফ ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Roland Weihrauch
৩. গ্যাস
তিন নম্বরে আছে গ্যাস (প্রায় ২৪ শতাংশ)৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির তালিকায় কয়লার (৪০ শতাংশ) পরে আছে গ্যাস (২২ শতাংশ)৷ শীর্য তিন গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৬৯১ এমটিওই), রাশিয়া (বছরে ৫১৬ এমটিওই) ও ইরান (বছরে ১৭৩ এমটিওই)৷
ছবি: Imago
৪. পানিবিদ্যুৎ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে পানি বা জলবিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ ২০১৫ সালে উৎপাদিত মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৭১ শতাংশই এসেছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেল (৩৩ শতাংশ), কয়লা (২৯ শতাংশ) ও গ্যাসের (২৪ শতাংশ) পরেই আছে পানিবিদ্যুৎ (প্রায় ৭ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী চীন (বছরে ৯৬.৯ এমটিওই), ব্রাজিল (৩২.৯ এমটিওই) ও ক্যানাডা (৩২.৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Jourdier
৫. পরমাণুশক্তি
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এটি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)৷ অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি উৎস পানিবিদ্যুতের (প্রায় ৭ শতাংশ) চেয়েও এর ব্যবহার কম৷ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান (বছরে ২২ দশমিক ৮ হাজার টন), ক্যানাডা (৯ দশমিক ১৪ হাজার টন) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৯৮ হাজার টন)৷
ছবি: Kerry Skyring
৬. বায়ুশক্তি
বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৭ শতাংশ আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে৷ ২০১৫ সালে ৪৩২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪২০ গিগাওয়াট অনশোর (ভূমি) ও ১২ গিগাওয়াট অফশোর, অর্থাৎ সাগরে বসানো টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় ছয়ে আছে এটি (১.৪৪ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন বায়ুশক্তি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ১৫.৮ এমটিওই), চীন (১৩.৬ এমটিওই) এবং জার্মানি (৪.৯৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn
৭. সৌরশক্তি
২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২২৭ গিগাওয়াটে৷ ফলে মোট বিদ্যুতের এক শতাংশ এসেছিল সৌরশক্তি থেকে৷ সৌরশক্তি উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ চীন (৪৩ দশমিক ১ গিগাওয়াট), জার্মানি (৩৯ দশমিক ৬ গিগাওয়াট) ও জাপান (৩৩ দশমিক ৩ গিগাওয়াট)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
৮. অন্যান্য উৎস
জিওথার্মাল, ই-স্টোরেজ, মেরিন এনার্জি, বর্জ্য থেকে শক্তি, বায়োএনার্জি (যেমন বায়োমাস) ইত্যাদি সহ আরও অনেক উৎস দিয়েও জ্বালানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে৷ ছবিতে আইসল্যান্ডের একটি জিওথার্মাল পাওয়ার স্টেশন দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউইসি-র প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন উপরের ‘+’ চিহ্নে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
8 ছবি1 | 8
যেহেতু ক্যাম্পে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই, সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশই সোলার প্যানেল ব্যবহার করে৷ রান্নার জন্য তাঁরা ব্যবহার করেন কাঠ৷
কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম তাঁর ছোট সোলার প্যানেলটাকে সরু পথের উপর একটা ইটের উপর বসিয়েছেন, যাতে যতটা সম্ভব বেশি সূর্যের আলো পাওয়া যায়৷ ভেতরে একটা ছোট ব্যাটারির সাথে সোলার প্যানেলটি সংযুক্ত, যা দিয়ে একটা লাইট জ্বালানো আর মোবাইল চার্জ দেয়া সম্ভব হয়৷ গত মাসের শুরুর দিকে ৩০ বছর বয়সি আনোয়ারা বেগম বাংলাদেশে আসেন৷ তিনি জানান, সোলার প্যানেল থাকায় সাড়ে পাঁচটার সময় সূর্য অস্ত গেলেও এখন আর অন্ধকারে বসে রাতের খাবার খেতে হয় না৷
মিয়ানমারের উত্তরে অনুন্নত এক অংশে মূল জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাস করতো রোহিঙ্গারা, যেখানে অনেক মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাবের পাশাপাশি ছিল না কোনো বিদ্যুতের ব্যবস্থাও৷ রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সরকার তাঁদের অবৈধ মনে করতো, ফলে দেশের যে অংশে তাঁরা থাকতন, সেখানে কোনো রকম বিনিয়োগই করা হয়নি৷ যদিও কেবল রোহিঙ্গারা নয়, মিয়ানমারের ৫০ ভাগ মানুষই বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত৷
জাতিসংঘের হিসাব মতে, বাংলাদেশে আগস্ট থেকে প্রায় ৫ লক্ষ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
আরএন/এসিবি (এফপি)
১৫ হাজার মসজিদ চলবে সৌরপ্রযুক্তি দিয়ে
মরক্কোর মোট জ্বালানির ৯৫ শতাংশ আসে বিদেশ থেকে৷ এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে দেশটি৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
মহাপরিকল্পনা
মরক্কো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১৫ হাজার সরকারি মসজিদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে৷ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷ এই পরিকল্পনার আওতায় মসজিদগুলোতে জ্বালানি-সাশ্রয়ী বাতি, সৌরচালিত ওয়াটার হিটার ও সৌরপ্যানেল বসানো হবে৷
ছবি: DW/J. Thurau
উদ্দেশ্য
একটি উদ্দেশ্য অবশ্যই পরিবেশ রক্ষা৷ সঙ্গে আছে খরচ কমানো এবং নাগরিকদেরও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করে তোলা৷ কারণ কোনো নাগরিক যখন দেখবেন এই জ্বালানি ব্যবহার লাভজনক, তখন তিনিও তা শুরু করবেন৷
ছবি: DW/D. Guha
খরচ কমেছে ৮০ শতাংশ
এটি আস-সুন্না মসজিদ৷ রাজধানী রাবাতে অবস্থিত৷ ইতিমধ্যে সেখানে সোলার প্রযুক্তি বসানো হয়েছে৷ ফলে জ্বালানি খরচ কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ৷ ঐ মসজিদে সৌরপ্রযুক্তি বসাতে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ডলার৷ তবে এর ফলে জ্বালানি বাবদ খরচ প্রতি বছর কমবে ৭ হাজার ডলার করে৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/S. Assier
পাওয়ার গ্রিডে সরবরাহ
সৌরপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আস-সুন্না মসজিদে যে জ্বালানি উৎপাদিত হবে তার বাড়তি অংশ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে৷
ছবি: DW/D. Guha
২০৩০ সালের মধ্যে...
ঐ সময়ের মধ্যে মরক্কোতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে তার অর্ধেক নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটি৷ এই লক্ষ্য পূরণে সৌরশক্তিসহ অন্যান্য উৎস খুঁজে বের করতে অনেকদিন ধরে কাজ করছে মরক্কো৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Daniel Csörföly
চাকরির সুযোগ
লক্ষ্য পূরণে প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ হাজার নাগরিককে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে গড়ে তুলছে দেশটি৷ এছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি তৈরি ও স্থাপনের মতো বিষয়গুলো কোর্স কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷